ইমদাদুল হক মিলন
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৫৪ পিএম
ছেলেবেলার
ঈদের সঙ্গে কুয়াশার মতো জড়িয়ে আছে শীতের স্মৃতি। রোজার ঈদটা যেন শীতকালেই হতো। আর সে
কী শীত রে বাবা! অনেকটা বেলা হয়ে যাওয়ার পরও রোদ উঠতে চায় না, সূর্য ঢাকা পড়ে থাকে
ঘন কুয়াশার আড়ালে। গাছপালা আর গৃহস্থবাড়ি জবুথবু, শস্যের মাঠ আর পুকুর ডোবা জলাভূমি
আবছা হয়ে আছে। নানাবাড়ি বড় পুকুরটার ওপর দিয়ে ছায়ার মতো ভেসে যাচ্ছে কুয়াশা। পুকুরের
পানিটা যেন বরফগোলা।
এই অবস্থায়
ঘাটপারে গিয়ে গোসল করতে হবে। গোসল করে নতুন জামা-প্যান্ট-জুতা পরব। তারপর দু-তিন রকমের
সেমাই, খেজুরের গুড়ের পায়েস খেয়ে নামাজ পড়তে যাব খানবাড়ির মাঠে। সেখান থেকে ফিরে এবাড়ি-ওবাড়ি
যাওয়া। আসল উদ্দেশ্য এবারের ঈদে কেমন শার্ট পেয়েছি, ইংলিশ প্যান্টটা কেমন, জুতা জোড়া
সুন্দর হয়েছে কি না, অন্যবাড়ির ছেলেমেয়েদের দেখানো।
তারা দেখত।
দেখে কত রকমের মন্তব্য। হিংশুটেরা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলত, একদম মানায় নাই। সহানুভূতিশীলরা
বলত, খুব মানাইছে। প্রশংসা শুনে উদ্বেলিত হতাম। মুখ থেকে পায়ের দিকে নামতো অহংকার।
জুতা পরা পা একটু যেন অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে পড়ত মাটিতে। পায়ের এই ভঙ্গির সঙ্গে জুতার
সূক্ষ্ম একটা সম্পর্ক থাকত। নতুন জুতা পায়ে টাইট হয়েছে। হাঁটতে গেলেই ‘গুড়মুড়া’য় (গোড়ালি)
লাগছে। ঘণ্টাখানেক পর বাড়ি ফিরে দেখি দুই পায়েই ফোসকা পড়েছে। এক পায়ের ফোসকা গলে নুনছাল
উঠে গেছে। তাও ওই জুতা পরেই হাঁটতে হবে, ও-ই পরে থাকতে হবে। ঈদের দিন না?
বহুবার বলা
কথা নতুন করে কিছুটা বলতে হয়। থাকি নানির কাছে। বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রাম। এখন
মেদিনীমণ্ডল চেনা খুব সহজ। মাওয়ার আগের গ্রাম। পদ্মা সেতুর এপারের টোলঘর পড়েছে আমার
নানাবাড়ির পুব দিকটায়, একটা বাড়ি আর বড় একটা জমির পর। অর্থাৎ ঢাকা-মাওয়া সড়কের পশ্চিম
পাশে। ষাট-একষট্টি সালের কথা বলছি। নাকি বাষট্টি-তেষট্টি? হতে পারে। ঢাকার জিন্দাবাহারে
আমাদের বাসা। বাবা-মা অন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে সেই বাসায় থাকেন। এতগুলো ছেলেমেয়ে একার
পক্ষে প্রতিপালন করা কঠিন দেখে মা আমাকে নানির কাছে রেখে দিয়েছিলেন। নানি আর আমার পুনু
খালা এই দুজন মানুষের হাতে-কোলে বড় হচ্ছিলাম। মাইলখানেক দূরের কাজির পাগলা হাই স্কুলে
টু-থ্রিতে পড়ি। নানিকে ডাকি বুজি, পুনু খালাকে আম্মা।
ঈদের তিন-চার
দিন আগে ছেলেমেয়েদের নিয়ে মেদিনীমণ্ডলের বাড়িতে আসতেন বাবা-মা। মা তো মা-ই, বাবাকে
ডাকি আব্বা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে সদরঘাট থেকে ভোর ৬টার লঞ্চে চড়তেন তারা। শেষ বিকালে মাওয়ার
ঘাট। আমি আর হাজামবাড়ির মজিদ ও রব গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি লঞ্চঘাটে। উত্তেজনায় বুক ফেটে যাচ্ছে।
মা আর আব্বার মায়াবী হাসিমুখ দেখতে পাব কতদিন পর, ভাই-বোনদের দেখতে পাব। এই উত্তেজনার
ভেতর লুকিয়ে আছে আরেক উত্তেজনা। এবার আমার জন্য কেমন শার্ট কিনেছেন আব্বা। কেরোলিনের
নীল রঙের একটা হাফশার্ট চেয়েছিলাম। আব্বা কি আমার জন্য সেই শার্টটা কিনেছেন? ইংলিশ
প্যান্টটা চেয়েছিলাম ঘিয়া রঙের। আব্বার কি মনে ছিল সে কথা? আর জুতার রঙটা কী কালো না
খয়েরি? অঙ্কখাতার একটা সাদা পৃষ্ঠায় পা ফেলে পেন্সিল দিয়ে এঁকে আব্বাকে পাঠানো হয়েছিল।
জুতার মাপ। সেই মাপ মতোই কি কেনা হয়েছে জুতা?
এসব উত্তেজনায়
আর বাঁচি না। পদ্মার পুবদিককার বাঁকে তাকিয়ে থাকি অপলক চোখে। লঞ্চটা আজ এত দেরি করছে
কেন? অপেক্ষার সময় আর ফুরাতে চায় না। একসময় বাঁকের ওদিক থেকে মৃদু ভটভট একটা শব্দ যেন
আসে।
শীত বিকালের
মনোরাম আলো ধীরে ধীরে ম্লান হচ্ছে। পদ্মার গভীরে এখনই যেন টুপ করে ডুব দেবে সূর্য।
আরে ওই তো লঞ্চ আসছে! আনন্দে লাফিয়ে উঠি।
বাড়ি ফিরতে
ফিরতে সন্ধ্যা। তিন শরিকের বাড়িটার অর্ধেকটাই আমাদের। এদিকটা খুব নির্জন। মাত্র তো
চারজন মানুষ। বুজি, পুনু আম্মা, আমি আর কাজের মহিলা ফতির মা। কোনো কোনো সময় ফতির মা’র তামাক খাওয়ার
শব্দ ছাড়া কোনো শব্দই থাকে না। বাগানে সারা দিন পাখি ডাকে, হাওয়ার শব্দ গাছপালায়, দিন-দুপুরে
শেয়াল এসে হানা দেয় পালা মুরগির লোভে। এরকম নির্জন বাড়িটা মুখর হয়ে ওঠে সন্ধ্যাবেলা।
যেন ঈদ শুরু হয়ে গেছে। অন্য শরিকের ছেলেমেয়েরা, মায়ের চাচাতো ভাই-বোনরা এসে ভিড় করে।
রাতেরবেলা
হারিকেনের আলোয় সুটকেস খোলেন আব্বা। এই ঈদে কার জন্য কী কিনেছেন একে একে বের করেন।
মা, বুজি আর পুনু আম্মার শাড়ি, ফতির মা’র শাড়ি, আমাদের
জামা-কাপড়। ইস নতুন কাপড়ের গন্ধটা কী সুন্দর! শিরায় শিরায় দোলা লাগে। আরে আব্বা তো
আমার জন্য কেরোলিনের নীল রঙের হাওয়াই শার্টই এনেছেন। ইংলিশ প্যান্টটাও দেখছি ঘি রঙের।
আরে! সব একদম মনের মতো। জুতা জোড়া দেখছি খয়েরি রঙের। সাদা মোজাও আছে একজোড়া। গভীর আনন্দে
বুক ভরে যায়।
এবারের রোজা
একটা কম হবে। ঊনত্রিশটা হবে রোজা। ঢাকায় শুনে এসেছেন আব্বা। হিসাব করে নাকি বের করা
হয়েছে। তার মানে ঊনত্রিশ রোজার সন্ধ্যাবেলায় ঈদের চাঁদ উঠবে। আমরা দুপুরের পর থেকেই
চাঁদের অপেক্ষায়। কখন সন্ধ্যা হবে, কখন উঠবে চাঁদ।
সেই সন্ধ্যায়
চাঁদ দেখা গেল না। বিকাল শেষ হতে না হতেই মাঠপ্রান্তর ডুবে গেল কুয়াশায়। সন্ধ্যার আগেই
সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাড়িঘর ভর্তি সাদা কুয়াশা। তবে কালই যে ঈদ বাড়ির মুরব্বিরা তা ধরে
নিয়েছেন। ঘরে ঘরে ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। ফজরের সময় উঠে সেমাই, ক্ষীর ও পায়েস
রাঁধতে হবে। দুধ জ্বাল দিয়ে রাখা হয়েছে। গুড়-চিনি-সেমাই হাতের কাছে। রাতে আর ঘুম আসে
না। কখন সকাল হবে, কখন পরব কেরোলিনের শার্ট? কখন আব্বার সঙ্গে, বাড়ির অন্যদের সঙ্গে
নামাজ পড়তে যাব খানবাড়ির মাঠে?
ভোররাতেই ঘুম
ভেঙেছে। মা আব্বা উঠে গেছেন, বুজি, পুনু আম্মা উঠে গেছেন। রান্নাঘরে চুলা জ্বলে গেছে।
কিন্তু এমন কুয়াশা পড়েছে, কিছুই দেখা যায় না। শীত শুধু হাড়ই কাঁপাচ্ছে না, হাড়ের ভেতর
ঢুকে যাচ্ছে। এই অবস্থায় বদনা হাতে পুকুরঘাটে গেছি। খালি গায়ে হি হি করে কাঁপছি। এখন
পড়তে হবে সবচেয়ে বড় আজাবে। বদনা ভরে ওই বরফগোলা পানি ঢালতে হবে মাথায়, শরীরে। বাপ রে।
কোনো রকমে
গোসল সেরে, কাঁপতে কাঁপতে ঘরে এসে শার্ট-প্যান্ট-জুতা পরে রেডি। সেমাই রান্না চলছে।
আব্বা এলেই সেমাই খেয়ে নামাজ পড়তে যাব।
আব্বা গেছেন
পুবদিককার সড়কে। এখন ওটাই ঢাকা-মাওয়া সড়ক। সড়কের লাগোয়া একজোড়া পুরনো হিজলগাছের তলায়
সবুজ ঘাসের উঁচু একটা ভিটা। সেখানে এপাড়ার মুরব্বিরা একত্রিত হয়েছেন। গত সন্ধ্যায় চাঁদ
উঠেছে কি না কেউ বলতে পারেন না। কোনো খবরও পাননি। খান বাড়িতে রেডিও আছে। আজ ঈদ কি না
রেডিওতে বলেনি।
একটু বেলা
হওয়ার পর আব্বা ফিরে এসে বললেন, আজ ঈদ হবে না। শুনে রান্নাঘরের পিছনকার জামগাছ দুটো
যেন ভেঙে পড়ল বাড়ির ওপর। বলে কী? আজ ঈদ হবে না? তাহলে আমরা যে নতুন জামা কাপড় পরে ফেললাম?
ক্ষীর সেমাই রান্না হয়ে গেছে, তিনটা বড় সাইজের মোরগ বেঁধে রাখা হয়েছে জবাই করার জন্য,
দুপুরে হবে মোরগ পোলাও। এখন?
মন খারাপ করে
নতুন জামা কাপড় খুলে রাখলাম। জুতা খুলে রাখলাম। ক্ষীর সেমাই দু-তিন পদ যা রান্না হয়ে
গিয়েছিল, ওই হলো আমাদের সকালের নাশতা। মোরগ ছেড়ে দেওয়া হলো। জবাই করা হবে কাল।
ছেলেবেলার
এই ঈদের স্মৃতি এখনও আমার চোখজুড়ে। গভীর আনন্দে ডুবে থাকা একটি সকাল কী রকম নিরানন্দে
ভরে গিয়েছিল, ভেবে উদাস হই।
তারপর কত আনন্দ-বেদনার
ঈদ এসেছে জীবনে। কত স্মৃতি সেই সব ঈদ নিয়ে।
আব্বা মারা
গেলেন ৭ অক্টোবর ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ চলছে, দেশ এগোচ্ছে স্বাধীনতার দিকে। পাকিস্তানিরা
সরাসরি গুলি করে মারল না আব্বাকে, মারল অন্যভাবে। তিনি মিউনিসিপ্যালিটিতে ছোট চাকরি
করতেন। দশটি ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালানো কঠিন। কোনো কোনো সময় কাবলিওয়ালাদের কাছ থেকে
সুদে টাকা ধার করতেন। এক কাবলিওয়ালার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নিয়েছিলেন। সুদে-আসলে সেটা
শোধও করেছিলেন। অক্টোবরের ৬ তারিখে তিনজন মিলিশিয়া নিয়া সেই কাবলি এসে হাজির। সে নাকি
সাতশ টাকা পাবে। পুরোটাই মিথ্যা। কাল সকালের মধ্যে ওই টাকা না দিলে আব্বাকে ধরে নিয়ে
যাবে। আব্বা ছিলেন অফিসে। বিকালের দিকে বাসায় ফিরে এই ঘটনা শুনে এত নার্ভাস হলেন, অবিরাম
টয়লেটে যেতে লাগলেন, তারপর একদম নেতিয়ে পড়লেন। বাড়িঅলার ছেলের চেষ্টায় এসএসসি পরীক্ষার্থী
আমি আর ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র বড় ভাই আব্বাকে একটা স্কুটারে করে নিয়ে গেলাম ঢাকা মেডিকেলে।
রাত ১টায় তিনি মারা গেলেন। আমাদের পরিবার এমন অসহায় অবস্থায় পড়ল, কী বলব! একদিকে দেশে
চলছে স্বাধীনতার যুদ্ধ, অন্যদিকে আমার মা শুরু করলেন ১০টি সন্তান বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ,
তাদের মানুষ করার যুদ্ধ। কী যে কষ্ট-বেদনার দিন!
১৯৭১ সালে
রোজার ঈদ ছিল নভেম্বরের ২০ তারিখে। ঈদের আগেই কানে এলো আমাদের পরিবারকে সাহায্য করবার
জন্য আব্বার কলিগরা মিউনিসিপ্যালিটির বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন।
আমরা স্বপ্ন দেখতে লাগলাম বেশ কিছু টাকা পাওয়া যাবে, সেই টাকায় ঈদ তো ভালো হবেই, কিছুদিন
নিশ্চিন্তে সংসারও চলবে। ঈদের সপ্তাহখানেক আগে আব্বার ঊর্ধ্বতনরা তিন-চারজন এলেন। মা’র হাতে বারোশ
টাকা আর দুটো সুতি শাড়ি দিয়ে গেলেন। তাতেই আমরা খুশি। পরে শুনলাম তারা টাকা তুলেছিলেন
সাড়ে আট হাজারের মতো। দুটো শাড়ি আর নগদ বারোশ মিলে হাজার দেড়েক আমাদের জন্য খরচ করে
বাকিটা মেরে দিয়েছেন।
মনে আছে, লোকগুলো
চলে যাওয়ার পর মা খুব কেঁদেছিলেন।
যে বাসাটায়
থাকতাম, বাড়িঅলা বয়স্ক ভদ্রলোক। তার ছেলেমেয়েদের আমরা ভাই আপা ডাকতাম। বেশ রাগী চেহারা
তার। আব্বা বেঁচে থাকতে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাড়া না পেলে কথা শোনাতেন। আব্বার মৃত্যুর
পর অনেক মাস তিনি আমাদের কাছ থেকে ভাড়াই নিলেন না। ঈদে আমাদের সব ভাই-বোনকে জামা-কাপড়
কিনে দিলেন। যে আমাদের দিকে তিনি ফিরে তাকাতেন না, সেই আমাদের কাউকে দেখলেই মাথায় রাখতেন
মায়াবী হাত। কোন মানুষের ভেতর যে কী লুকিয়ে থাকে?
ঈদের দিন আব্বার
জন্য আমরা সব ভাই-বোন খুব কেঁদেছিলাম।
আমার বন্ধু
বেলালরা খুব বড়লোক ছিল। ঈদে চার-পাঁচটা করে দামি দামি শার্ট কিনত। ওর বোনরা কিনত আট-দশটা
করে দামি শাড়ি। স্বাধীনতার পরের বছর রোজার ঈদে বেলাল তার নতুন শার্টগুলো আমাকে দেখাচ্ছে।
দুটো শার্ট আমার খুব পছন্দ হলো। বললাম, এই শার্ট দুটো খুব সুন্দর। বেলাল নির্দ্বিধায়
শার্ট দুটো ভাঁজ করে আমাকে দিয়ে দিল। তুই নিয়ে যা। দুটো শাড়ি এনে আমার হাতে দিল আমার
বড় বোনের জন্য। পরে শুনেছিলাম নিজের দুই বোনের কেনা শাড়ি থেকে দুটো চুরি করে সে আমার
বোনকে দিয়েছিল।
জার্মানিতে
থাকলাম দুই বছর। ১৯৭৯ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৮১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। সেই দুই বছরের
ঈদ যে কোথা দিয়ে এলো আর কোথা দিয়ে গেল টেরই পেলাম না। ঈদের দিন হয়তো কাজ করতে হচ্ছে।
টাকা রোজগারের আশায় ছুটছি।
কোনো কোনো
ঈদ কেটে গেছে প্লেনে। হয়তো ইউরোপের কোনো দেশে যাচ্ছি, নয়তো আমেরিকায়। একবারের ঈদে টোকিওর
হোটেলে সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর বুকটা হু হু করে উঠল। আজ ঈদ আর আমি কোথায় কোন সুদূরে
পড়ে আছি? তারপর মন চলে গিয়েছিল ছেলেবেলার কুয়াশামাখা ঈদের সকালে। সাত-আট বছরের শিশুটি
খালি গায়ে কাঁপতে কাঁপতে পুকুরঘাটে যাচ্ছে গোসল করতে। গোসল সেরেই পরবে নীল রঙের কেরোলিনের
শার্ট, ঘি রঙের ইংলিশপ্যান্ট আর খয়েরি রঙের জুতা। তখনকার দিনে শিশুদের পাঞ্জাবি-পাজামা
তেমন পাওয়া যেত না। শার্ট-প্যান্টই পরত শিশুরা। একেকটা ঈদ মানে আনন্দ-উত্তেজনায় ফেটে
পড়া দিন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়টা যেন কেটে যেত চোখের পলকে। কোথায় পাব ছেলেবেলার
সেই অতুলনীয় ঈদের দিনগুলো? কে আমায় ফিরিয়ে দেবে সেই অনাবিল আনন্দ!