× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্ত্রীর জন্য ৯১৩১টি কবিতা লিখতে পারবেন?

আন্দালিব রাশদী

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪১ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৭ পিএম

স্ত্রীর জন্য ৯১৩১টি কবিতা লিখতে পারবেন?

আপনার স্ত্রীর মৃত্যু হলে আপনি কী করবেন?

যদি এতদিন তার মৃত্যু কামনা করে না থাকেন, তাহলে দুঃখ কিছু তো পাবেনই, টিসুতে চোখ মুছবেন, তারপর পুষ্পস্তবক নিয়ে তার সমাধিতে যাবেন। প্রথমে সপ্তাহে এক দিন, তারপর মাসে এক দিন, তারপর বছরে এক দিন, মানে কেবল তার মৃত্যুবার্ষিকীতে। রোদ-বৃষ্টির দোহাই দিয়ে এক বছর যাবেন না। এর মধ্যে যদি নতুন কোনো সঙ্গী জুটে যায়, আর সাবেক স্ত্রীর সমাধিতে যাবার কী দরকার?

মরণোত্তর প্রণতি বাদ থাক, জীবদ্দশায় স্ত্রীকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছেন? গত ২৫ বছরে কবার তাকে চিঠি লিখেছেন? জীবদ্দশায় কদিন তার হাতে ফুল তুলে দিয়েছেন?

যারা কবি, কটি কবিতা লিখেছেন স্ত্রীকে নিয়ে? দু-একটি লিখেছেন যখন তিনি কেবলই প্রেমিকা ছিলেন তখনই। স্ত্রী হয়ে যাওয়ার পর তো পেয়েই গেলেন, কবিতার কী দরকার? কবিতা লিখেছেন পরনারীর জন্য!

পিটার গর্ডন ও এলিসন কিংয়ের প্রথম দেখা ১৯৭১ সালে, থিয়েটারে। ১৯৭৩-এ আবার দেখা এডিনবরা থিয়েটারের গ্রিনরুমে, মঞ্চে দুজনই অভিনয় করবেন। প্রেমটা মঞ্চেই। বিয়ে পরের বছর। দুজনেরই যথেষ্ট পরিচিতি মঞ্চে ও ছোট পর্দায়।

২৫ বছর আগে দুজনই ঘর বাঁধেন। মজা করার জন্য পিটার গর্ডন একটি কবিতা লিখে ফেললেন। লিখে স্ত্রীর বালিশের নিচে রাখলেন। মজাটা ভালোই জমল। স্ত্রী পছন্দ করলেন তার কবিতা। তারপর প্রতিদিন একটি করে কবিতা লিখে বালিশের নিচে রাখতেন, সকালে স্ত্রী বালিশ উঠিয়ে কবিতাটি পড়তেন এবং রেখে দিতেন। সম্ভবত কখনও বলেননি, তুমি পাগল নাকি? এ কী শুরু করলে?

সুতরাং কবিতা জমতে থাকল, সবই এলিসনকে নিয়ে। যেমন কবিতায় এমন একটি পঙক্তি লিখলেন :

এমনকি র‌্যামব্রান্টও পারেনি তোমার চোখ ছুঁতে

র‌্যাফায়েল বোঝেননি তোমার দেহের লাস্যময় বাঁক!

একদিন লিখলেন, তোমার জোড়া ছোট পাহাড়ের ওপর মাথা রাখি- শুরুতে মনে হওয়ার কথা তিনি সম্ভবত স্তনজোড়ার কথা লিখছেন, কিন্তু শেষে বোঝা গেল নিতম্ব।

এলিসন কিং ২০১৪ সালে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন। এলিসন খুব ভালো অভিনেত্রী ছিলেন। পিটার গর্ডন ভাবলেন, হোক না, ধরে নিই, এটাও তেমন কিছু নয় ক্যানসার রোগীর অভিনয়। এলিসনের জীবনে যখন কেমোথেরাপি আর রেডিওথেরাপির চক্র চলছে, তিনি তখনও মঞ্চে অভিনয় করে চলেছেন।

দুই বছর পর এলিসন সত্যি মারা গেলেন। দুটি মেয়ে ক্যাসি ডেভিস ও আনা জর্ডান।

আনা নিজে নাট্যকার এবং নাটকের পরিচালক। বাবার সঙ্গে তার কবিতার স্তূপে হাত দিলেন কবিতার সংখ্যা কমপক্ষে সাড়ে আট হাজার। ১৯৮৩ সালে লেখা কবিতা মেয়ের হাতে পড়ে :

আমি বৃষ্টিতে ফিরে আসি

আমার ঘরে আবার

আমার সন্তান, আমার স্ত্রী

আমার আত্মা সাথে যার।

এলিসনের জীবদ্দশায় লেখা শেষ কবিতাটি পিটার গর্ডন হাতে নিলেন, সেদিন বিকেলে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল :

তোমার হাতে যদি গোলাপ থাকে

আমার ভিজতে কোনো সমস্যা নেই।

পিটার ফিরছেন ৩৯৯ নম্বর বাসে। কিন্তু বাসকে তো আরও দ্রুতগামী হতে হবে : মহাকাশের তারকার মধ্য দিয়ে রাস্তার আলোর মধ্য দিয়েÑ তোমাকে আমার চুমো খেতেই হবে, নতুবা মৃত্যু হবে আমার

কবিতাগুলো এই বড় কাঠের বাক্সে রাখা। দুই মেয়ে বাবার পাশে বসে গেল; পিটার গর্ডনের অনলাইন কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। কাব্যগ্রন্থের নাম এ লাভ ইন ভার্স।

বিশেষ করে নয় হাজারের বেশি কবিতার স্তূপ থেকে ৩০০ কবিতা বাছাই করা কম ঝক্কির নয়।

এলিসনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর দিন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে লকডাউন চলছে। এর মধ্যেই সাইবার তন্তজ্বালে অবমুক্ত হলো পিটার গর্ডনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ এ লাভ ইন ভার্স।

ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে পিটার বলেন, এলিসন বালিশের নিচ থেকে কবিতা বের করত, ভাঁজ খুঁলে পড়ত। আবার ভাঁজ করে রেখে দিতÑ এভাবেই ২৫ বছর।

এলিসন জানতেন ঘুম থেকে উঠলে একটি কবিতা পাবেন, ভালোবাসার কবিতা।

আপনার স্ত্রী কি পাবেন, তিনি তা কি জানেন?

আমার স্ত্রী বালিশ উঠিয়ে কবিতা পাবে শুনলে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠত। বলত, রসিকতার একটা সীমা আছে।

পিটার গর্ডনের ৮৭ চলছে, করোনাকালে ভালো থাকুন স্ত্রীভক্ত কবি পিটার গর্ডন। আপনি ঠিকই বলেছেন, এই আতঙ্কের দিনে গ্লাভসের ভেতর হাতের মতোই ভালোবাসা ও সুখ জড়াজড়ি করে আছে। প্রেমিক কবির কয়েকটি কবিতা অনূদিত হলো :

একত্রে আমাদের শেষ খেলা

আমি পানশালায় তোমার কথাই মনে করছি

তোমাকে রেখে কখনও

রস্টারে যাইনি;

তুমি যদি থাকো, যেকোনো স্থানে যেতে রাজি।

এখন আমি প্রেমের চিঠির নিচে সমাহিত

আমার সব অভিনিবেশ এখানেই

খেলাটা শেখো, ভয়ের কিছু নেই

একটি পৃথিবী কোনো গোলাপ নেই

কাজ গোলাপ অনুমোদন করে না।

তারপর তুমি ঘণ্টা বাজালে সব ফুল গোলাপ হয়ে যায়

তোমার স্বর মধুরতম ঘণ্টা ধ্বনির মতো

সবচেয়ে ভালো গল্পটা শোনাব তোমাকে

আমার বুড়ো হৎপিণ্ড জানে, তুমি পথে আছ

 

পৃথিবী এবং তার সব উদ্বেগ

সব শেষে হয়ে আসে

শিগগির তোমার সাথে দেখা হবে

আমার হবে প্রশান্তি।

 

তোমাকে আর আঁকড়ে ধরব না

জীবন থাকতে তোমাকে আর আঁকড়ে ধরব না

তোমার দেহভস্ম যে বাক্সে আমি তা আঁকড়ে ধরেছি

আমি চিবুকের উপর মৃত্যু নিতে পারব না

অথবা স্মৃতির কোনো চাঁদ

আমার পাশে তোমার ছবি আছে

সুখের আলোকিত মুহূর্তে তোলা ছবি

উজ্জ্বল চোখে ও প্রশান্ত হাসিতে যত যাতনা

ধ্যাৎ বলে বিদায় করে দেয়

সান্ত্বনার চেয়েও বেশি আমার বেলায়

তোমার আত্মার উপর অভিনিবেশ

আর এর ভেতর কেবল আশা

কিংবা স্মৃতির প্রশান্তিই নেই

সবার উপরে আছে তোমার শক্তি

আমাকে তুলে আনে, সাহসী করে।

পঁচানব্বই-র ৩১ মে-র প্রতীক্ষা

যাকে ভালোবাসো তার জন্য প্রতীক্ষা করা ভালো

আমি সোনালি আলোর বাতির নিচে স্থির প্রতীক্ষায় আছি

মে মাসের শেষ সন্ধ্যায় ট্রেন তোমাকে বহন করে আনছে

গর্জন করা বাস ছুটে এলিং রোড ধরে

একই আকাঙ্ক্ষা ঢেকে রাখে যে লিখে তাকে

ভালোবাসতে যে নারী বাড়ি আসছে তাকে

যাকে ভালোবাসি তার জন্য চিরদিন প্রতীক্ষায় থাকব

প্রতীক্ষা যার জন্য তাকে চিরদিন ভালোবেসে যাব।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা