× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শাড়ি : ঠাকুরবাড়ি থেকে বাঙালির উঠোনে

চন্দ্রশেখর সাহা

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৩৫ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৫৪ পিএম

শাড়ি : ঠাকুরবাড়ি থেকে বাঙালির উঠোনে

শাড়ির জন্ম জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে হয়নি। বাঙালির উঠোনো ভেজা শাড়ি শুকানো হচ্ছে, এই ছবি অনেক প্রাচীন। যদিও লেখার বিষয়বস্তু একটা সময়কে নির্ধারিত করেছে। ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০ ও একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের পোশাক-আশাকের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রভাবিত রমণীকুল এ সময়ে এসে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার বিষয়বস্তুতে নিজেদের অবস্থান নিয়ে দ্বিধান্বিত। পাশ্চাত্যের পোশাকে শাড়ির কোনো ভূমিকা নেই, কিন্তু ব্লাউজ ও পেটিকোটের বংশের ধারার সূচনা হয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে- ইংরেজ নারীদের প্রভাবিত বাস্তবতায়- সেই সময়ের বিখ্যাত আধুনিক মনস্তত্ত্বের চর্চার যে সকল পরিবার নেপথ্যে ছিল, তাদের নারীশিক্ষায় উদ্যোগী নারীদের নিজস্ব ভাবনার মধ্য দিয়ে।


ঠাকুরবাড়ির নারীদের ব্লাউজের বৈচিত্র্য, শাড়ি পরার ভাঙ (ড্রেপিং) এবং সেই সময়ে ব্রিটিশ রমণীদের শেখানো ক্রুশকাঁটা লেসের ব্যবহার ইত্যাদি এক নতুন ধারার ফ্যাশনের ইঙ্গিত দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সুচিত্রা সেন-শর্মিলা ঠাকুর থেকে আজকের প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, পূজা ভাট, বিদ্যা বালান ও দীপিকা পাড়ুকোন অবধি (আরও অনেকে) চলচ্চিত্রের পোশাকের ডিজাইনারদের সম্পৃক্ততায় শাড়ি বহুবৈচিত্র্যময় দৃশ্যকল্প (লুক) তৈরি হয়েছে। ফিউশন শাড়ি থেকে ঐতিহ্যবাহী জামদানি ও অঞ্চলভিত্তিক নিজস্ব ঘরানার তাঁতের শাড়ির (টাঙ্গাইল, পাবনা, মনিপুর এবং ভারতের নানা অঞ্চলের শাড়ির) পৃষ্ঠপোষক রয়েছেন- যাদের কারণে কৌলীন্য, বংশগরিমা ও কিংবদন্তির বয়নশিল্পের গৌরবের অভাবটুকু এখনও পশ্চিমের অস্তগামী সূর্যালোকের মতো লালিমায় দেখা যাচ্ছে। আবার অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে বিলীন হয়ে যাওয়ার অজানা আশঙ্কাও রয়েছে।


ফ্যাশনের দ্রুতগামী রেসের ঘোড়ায়- অনান্য ধরনের পোশাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেনারসির সঙ্গে জামদানির সংযুক্তি কাঁথার শাড়িতে বহুলভাবে জরি চুমকির ব্যবহার, নেটের সঙ্গে রাজশাহী সিল্কের যৌথ সংগীত ইত্যাদি বিবিধ পরীক্ষামূলক কাজে ডিজাইনার ও ফ্যাশন উদ্যোক্তা ব্র্যান্ডগুলোর নাম জড়িয়ে আছে। পয়লা বৈশাখের এক দিনের বাঙালিআনা পারিবারিক-সামাজিক উৎসবে শাড়ির উপস্থিত তরুণী থেকে বয়োজ্যেষ্ঠদের মানসিক টানাপড়েনে শাড়ির আগামী দিনের চাহিদা ও চর্চায় থাকা এই বিষয়টি সত্যিকারভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। মহাভারতের দ্রৌপদীর ৫ হাজার বছর আগেই শাড়ির উল্লেখ আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। এত দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে আর কোনো পোশাক চর্চিত হয়েছে কি না, তা ভেবে দেখবার বিষয়।

১২ হাত লম্বা সুনির্দিষ্ট চওড়ার একখণ্ড বস্তু ড্রেপিংয়ের কৌশলগত কারণে- রমণীর আব্রু ও শারীরিক গঠনের সঙ্গে চমৎকার সাম্যতায় নান্দনিক হয়ে ওঠে- এ এক অবাক বিস্ময়। শারীরিক গঠন বৈচিত্র্যের কারণে যেখানে অন্য পোশাকে সাইজের বিভিন্নতা বিকল্পহীন সেখানে শাড়ি প্যাটার্নের জটিল অঙ্ক থেকে নিজেকে অবমুক্ত করে- এখনও পোশাক পরিধানের সমাধানে অনবদ্য- বাঙালির গৌরবের এই প্রশংসাটুকুতে একমত হওয়া-না হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। শাড়ি তার নিজস্বতায় আজও অনন্য। তাঁতিদের দুর্দিন, মিলের শাড়ি, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, কারচুপি, কাঁথাস্টিচ, নকশাপাড়, বুটি শাড়ি, বেনারসি, জামদানি ইত্যাদি আরও অনেক শাড়ি, অনেক রঙে, অনেক ধরনের অলংকরণে সেজে উঠছে প্রতি সামাজিক উৎসবের প্রেক্ষাপটে। ডিজাইনার, পৃষ্ঠপোষক (ক্রেতা) উদ্যোক্তা ও কারুশিল্পী একসঙ্গে মরিয়া হয়ে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রসংগীত রচনার এক অসহিষ্ণু প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। যেখানে ঐতিহ্যের বিনির্মাণ ও আপেক্ষিক ক্রেতাদের নতুনত্বের প্রতি মনোবাসনা এই জটিলতার শুদ্ধতার বিশ্লেষণ ও ধারণ ভাবনার আগামী সময়ে ঠাকুরবাড়ি ও বাঙালি উঠোনে যে শাড়ি শুকোতে দেওয়া হবে তাকে নতুন নামে কোন পোশাক বলা হবে অথবা শাড়ির বংশধররা শেষ নবাবের সমাধি কার উঠোনে নিয়তি নির্ধারণ করে রেখেছে, আমার জানা নেই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা