× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সবুজে শ্যামলে ফুলে ফুলে রূপসী রমনা

মৃত্যুঞ্জয় রায়

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৫৯ পিএম

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:২২ পিএম

সবুজে শ্যামলে ফুলে ফুলে রূপসী রমনা

চৈত্রের মাঝামাঝি, বসন্ত এখনও ফুরিয়ে যায়নি। শাহবাগ থেকে সকালবেলায় রমনার পশ্চিম দিকের অস্তাচল তোরণ দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বৃক্ষরাজির তলার মাটি আর ঘাস ঢেকে আছে ঝরে পড়া শুকনো পাতায়। চমৎকার লেকটাকে ডাইনে রেখে সোজা যেতেই রাস্তার পাশে খোলা জায়গায় চোখে পড়ল থোকা থোকা গুঁড়িগুঁড়ি নীল ফুলে ভরা অঞ্জন ফুলের (Memecylon umbellatum) গাছটিকে। আকাশটা মেঘলা, বৃষ্টি নেই- তবে রোদও নেই। সকালটা উজ্জ্বল না হলেও ফুলের শোভায় আবছা আঁধারমাখা অঞ্জন ফুলের গাছটা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। শত শত খুদে মৌমাছি ফুলে ফুলে ঘুরছে। ফুলের কোনো সৌরভ নেই, লাল-হলুদ রঙের মতো উজ্জ্বল রঙ নেই। তবু যেন কিসের আকর্ষণে মধুপায়ী পতঙ্গেরা উড়ে বেড়াচ্ছে গাছটার আশপাশে। অঞ্জনগাছ এ দেশে খুব এটা চোখে পড়ে না। যা দু-চারটি আছে সেগুলো দেখার জন্য যেতে হয় রমনা পর্কে ও বলধা গার্ডেনে, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্যানেও আছে অঞ্জনগাছ। একটু এগিয়ে যেতেই পড়ল ছোট্ট একটা পুল। বাম দিকে তরুণ পাতায় সেজেছে বরুন গাছটা (Crateva religiosa)। উজ্জ্বল চকচকে লম্বা লম্বা বর্শার ফলার মতো পাতার ফাঁক দিয়ে ক্ষীণ চোখে তাকিয়ে আছে কয়েকটা ঘিয়া রঙের বরুন ফুল, অরুণ আলোর বরুণ ফুল। কিশোরী সে গাছের ঝাকরা মাথার গাছটাই পত্রপল্লবে সেজেছে মনোরম হয়ে- বোঝাই যাচ্ছে বসন্তের উচ্ছ্বাসটা চেপে রাখা তার জন্য কতটা কঠিন! এর পাতা দিয়ে কাঁচা আম পাকানো হয়। ফলগুলো হয় ছোট টেনিস বলের মতো, থোকা ধরে ডালের আগায় ঝুলতে থাকে। বসন্তে ফুলের পরিপূর্ণ স্ফূরণ বিমোহিত করে। টাঙ্গাইল ও মানিকগঞ্জের অনেক রাস্তার ধারে ডোবায় বরুনগাছের বেশ দেখা মেলে। শহরের এমন উঁচু জায়গায় এ গাছ ঠিক তার যুৎসই পরিবেশ পায় না। তবু রক্ষা যে এ গাছটি রমনা পার্কে একটা ছোট্ট নালার ধারে লাগানো হয়েছে।

এরপর মহুয়া চত্বরে এসে দেখা হলো পোলাও চালের গন্ধ বিলানো মহুয়া (Madhuca longifolia) ফুল ফোটা গাছটির সঙ্গে। মহুয়া বেশ বড় বৃক্ষ। এ সময় ডালপালা প্রায় পাতাবিহীন, কিছু কিছু কচি পাতা ছাড়ছে। কিন্তু প্রতিটি শাখার আগায় ঝোপা ধরা দুল বা নাকছাবির মতো দুলছে নস্যি রঙের ফুলগুলো। কিছু ফুল থেকে ফল হচ্ছে। মহুয়ার সুউচ্চ শিখর গগণমুখী হলেও ফুলগুলো মৃত্তিকামুখী। কবি রবীন্দ্রনাথের কবিতাতেও সে আভাস : ‘রে মহুয়া নামখানি গ্রাম্য তোর, লঘু ধ্বনি তার,/ উচ্চশিরে তবু রাজকুলবনিতার/ গৌরব রাখিস ঊর্ধ্বে ধরে।’ মৈয়মনসিংহ গীতিকার একটি অন্যতম পালাগানের নাম ‘মহুয়া’। ময়মনসিংহে ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজ কানাই এ পালাগান রচনা করেন, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বেদে সরদার হুমরা বেদের পালিত কন্যা মহুয়া সুন্দরী। 

মহুয়াগাছটিকে পাশে দাঁড়িয়ে সঙ্গ দিচ্ছে কয়েকটা নাগেশ্বর গাছ (Mesua ferrea)। গাছে ফুল খুব কম, কিন্তু ঘন সবুজ পাতার মধ্যে উজ্জ্বল তামাটে রঙের কচিপাতারা যেন নাগেশ্বরের গায়ে ওড়না পরিয়ে দিয়েছে। সে ওড়নার ওপর বুটিদার নকশার মতো শোভা পাচ্ছে দু-চারটে ফুল। মাতাল করা সে রূপ! দুধসাদা চারটে পাপড়ি, কোনো কোনো ফুলের পাপড়িতে গোলাপি আভা যেন লজ্জায় রাঙিয়ে দিয়েছে। চারটি পাপড়ির মাঝধানে উজ্জ্বল গাঢ় হলুদ রঙের কেশরগুচ্ছ, ছোট্ট একটা বলের মতো। পাপড়ির আকৃতি কিছু নাগ তথা সাপের ফণার মতো, আর ফুলের কেন্দ্রস্থলে থাকা কেশরগুচ্ছের জন্যই কি এ ফুলের আরেক নাম হয়েছে নাগকেশর? মৈয়মনসিংহ গীতিকায় নাগকেশরের নামে গীত পাওয়া যায়- ‘নাচেন ভালো সুন্দরী লো/ বাঁধেন ভালা চুল/ যেন হেলিয়া দুলিয়া পড়ে/ নাগকেশরের ফুল।’ নাগেশ্বর ফুলকে শ্রীলঙ্কায় ১৯৮৬ সালে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।


নাগেশ্বর গাছগুলোর কাছেই একটি বৃত্তাকার নবনির্মিত চমৎকার প্রসাধন গৃহ। তার পেছনে এক ঝোপ মাধবীলতা (Hiptage benghalensis), বসন্তকাল- তবু ফুল নেই। কদিন আগেই তরুপল্লবের তরুপ্রেমিকরা মাধবীবরণ উৎসব করে গেছে এখানে। উৎসব শেষে ঝরে গেছে মাধবীরা। এখন আছে ঝোপাল পাতা আর ডালে ডালে শুকনো পাতার মতো ফলের বাহার। ফল বা বীজ দেখতে তিন ডানাবিশিষ্ট হেলিকপ্টারের পাখার মতো। ডানা তিনটি দেখতে অনেকটা বাঁশপাতা কাগজের মতো দেখায়। ডানার গোড়ার দিকটা সরু, আগার দিকটা ভোঁতা ও কিছুটা বৃত্তাকার। একটি ফল ছিঁড়ে ওপর থেকে ছেড়ে দিতেই হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে ঘুরতে ঘুরতে মাটির ঘাসের ওপর এসে পড়ল। আরও অনেক ফল সেখানে পড়ে আছে। এভাবেই বাতাসে ভেসে ভেসে না কি মাধবীলতার দেশ-দেশান্তরেও ছড়িয়ে পড়ে। মাধবীলতার ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে দিলে তা থেকেও চারা হয়। মাধবীলতা ফুলের নামটা নিয়ে আমাদের অনেকেরই বেশ বিভ্রান্তি আছে। প্রকৃতিবিষয়ক লেখক মোকারম হোসেন মধুমঞ্জরি আর মাধবীলতার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে একাধিক লেখা লিখে মাধবীপ্রেমিকদের নামবিভ্রাট দূর করার প্রয়াস করেছেন। মাধবীলতার ফুলগুলো ঘিয়া-সাদা, হালকা হলুদ দাগ আছে পাপড়িতে, পাপড়ির কিনারা হালকা খাঁজকাটা, তীব্র ঘ্রাণের সেসব ছোট ছোট ফুল ফোটে বছরে মাত্র কয়েক দিনের জন্য। মাতাল করা সুগন্ধে ভরে যায় বাতাস। পাশেই এই নামবিভ্রাট দূর করার জন্য লাগানো হয়েছে একটি মধুমঞ্জরি লতা (Quisqualis indica) গাছও। এর আরেক পোশাকি নাম মধুমালতী। মধুমঞ্জরির ইংরেজি নাম রেঙ্গুনক্রিপার। মধুমঞ্জরি নামটা দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। চারটি গোলাপি-সাদা পাপড়ির ফুলের কেন্দ্রস্থলে যে সরু নলের মতো একটা অঙ্গ রয়েছে, ছোটবেলায় ফুল তুলে সে নলের প্রান্ত মুখে ঢুকিয়ে চোষা দিতাম। খানিকটা মিষ্টি জল জিহ্বায় এসে পড়ত। যেন ফুলের মধু! মধুমালতী নামটা কী সে জন্যই কি না জানি না। মালতী লতা (Aganosma dichotoma) আবার ভিন্ন গাছ, গ্রীষ্ম-বর্ষাকালে সাদা রঙের সুগন্ধি ফুল ফোটে সে গাছে। 

এরকম বিভ্রান্ত হতে হয় এ গাছগুলোর পাশে থাকা আরও দুই প্রজাতির গাছ দেখে। একটি প্রজাতির গাছের পাশে যেতেই সৌরভে মাতোয়ারা হয়ে উঠলাম। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাপড়ির খোঁপার মতো থোকা ধরা ফুল, রঙটা সাদা বা মলিন সাদা। চট করে দূর থেকে শ্বেতরঙ্গন ফুল বলে মনে হলো। কিন্তু সৌরভেই নিশ্চিত হলাম, ওটা শ্বেতরঙ্গন না- সুরভীরঙ্গন (Ixora pavetta)। অল্প উঁচু গাছটার ডালপালা ভরে আছে ফুলে ফুলে। অজস্র মৌমাছির আনাগোনা চলছে সেসব ফুলে। কাছেই আরেকটি গাছেও অমন সাদা থোকা ধরা ফুল ফুটেছে। ফুলের পাপড়িগুলো সুরভীরঙ্গন ফুলের চেয়ে কিছুটা বড় আর ধবধবে সাদা, অন্যান্য রঙ্গনের মতোই চার পাপড়ির ফুল। ফুলে মৃদু ঘ্রাণ আছে। এটাই তো সেই শ্বেতরঙ্গন/ (Ixora finlaysoniana)। কিন্তু দূর থেকে কোনটা সুরভী রঙ্গন, আর কোনটা শ্বেতরঙ্গন তা বোঝা খুব সোজা নয়। এ দেশে ১৮ প্রজাতির রঙ্গনগাছ আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় লালরঙ্গন (Ixora coccinea), এরপর রয়েছে খুদে পাতার খাটো গাছের ছোট ফুলের চীনা রঙ্গন (Ixora chinensis)। পলকজুঁই (Ixora undulata) গাছও এক প্রজাতির রঙ্গন। এ গাছগুলোর পাশেই একটি মণিমালার চারা গাছ, ডালের আগায় থাকা ছড়ায় ফোটা খুদে শিমফুলের মতো গোলাপি-বেগুনি ফুলগুলো ঝরে পড়ছে। বসন্তে এ গাছের শোভা দেখার মতো। কাছাকাছি রয়েছে একটা বড় মিলেশিয়া বা মণিমালা (Millettia peguensis) গাছ, ফুল ঝরিয়ে সে এখন রিক্ত। বাংলায় এ গাছের মণিমালা নামটা রেখেছিলেন অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা। এর ইংরেজি নাম ‘জুয়েল অন এ স্ট্রিং’ থেকে সম্ভবত তিনি এর বাংলা নাম রেখেছিলেন মণিমালা। মালার মতো ছড়ায় পুঁতিসদৃশ ফুলগুলো সাজানো থাকে বলেই তিনি এর এরূপ নাম দিয়েছিলেন হয়তো। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা তার ‘শ্যামলী নিসর্গ : ঢাকার সুদর্শন বৃক্ষ’ গ্রন্থে মণিমালা গাছের একটা সারি ১৯৬২ সালে ঢাকায় জিপিওর সামনে দেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। বসন্তে সেসব গাছ ছিল ফুলে ফুলে ভরা। বলেছেন, ‘গাছটি এ দেশে নতুন। ব্রহ্মদেশের শুধু প্রোম জেলাতেই একমাত্র সীমাবদ্ধ ছিল।’ লন্ডনের কিউ গার্ডেনের কিউরেটর প্রাউডলক ঢাকায রমনা পার্ক স্থাপনের কাজ পাওয়ার পর বিদেশ থেকে অনেক গাছপালা সংগ্রহ করে রমনায় লাগান। মিলেশিয়া গাছও তার হাত ধরে এ দেশে আসাটা বিচিত্র নয়। এখন রমনা পার্ক ছাড়াও এ গাছের দেখা মেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ও সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্যানে। সাভারের সেখানে ৩ ডিসেম্বর ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে একটি মিলেশিয়ার চারা লাগিয়েছিলেন ইরাকের তৎকালীন সর্বোচ্চ বিপ্লবী পরিষদের মহামান্য সহসভাপতি ইজ্জত ইব্রাহিম। 


রমনা পার্কের এ অংশেই দেখা পেলাম একটা রক্তকাঞ্চন (Bauhinia purpurea) বলে যাকে আমরা চিনি, সেই গাছের। কাঞ্চনগাছ সম্পর্কে দ্বিজেন শর্মার ছিল অসাধারণ পাণ্ডিত্য। তিনি ১৯৯৪ সালে তার এক লেখায় রমনার কাঞ্চন নিয়ে অনেক কিছু লিখেছিলেন। এর ইংরেজি নাম বাটারফ্লাই ট্রি বা অর্কিড ট্রি। এর পাশেই রয়েছে শ্বেতকাঞ্চন আর দেবকাঞ্চন গাছ। সবই বৃক্ষ, তবে শ্বেতকাঞ্চনের গাছ তুলনামূলকভাবে ছোট। রক্তকাঞ্চন ফুলের রঙ বেগুনি, লাল বা উজ্জ্বল ম্যাজেন্টা। ফুলও অন্য কাঞ্চন ফুলগুলোর চেয়ে বড়। গাছ খুব দ্রুত বড় হয়। ডালপালা বেশ ছড়ানো। শ্বেতকাঞ্চন (Bauhinia acuminata) ফুলের রঙ সাদা, দেবকাঞ্চন (Bauhinia variegata) গোলাপি বা হালকা গোলাপি। মধুপুরের জঙ্গলে আছে লতাকাঞ্চন গাছ। এটা বৃক্ষ না- লতানো গাছ, অন্য নাম চেহুর। অগ্রহায়ণ মাসে ছোট সাদা রঙের ফুল ফোটে কাষ্ঠল লতানো গাছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম, এদেশে বাউহিনিয়ার ১৭টি প্রজাতির গাছ আছে। তবে লালকাঞ্চন (Bauhinia vahlil) আমাদের দেশের তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ নয়, বছর পাঁছ-ছয় আগে সাভারের বরিশাল নার্সারির হাত ধরে থাইল্যান্ড থেকে এসেছে এদেশে। একটি মাত্র গাছই সেখানে দেখেছি, তারাও অনেক চেষ্টা করে চারা তৈরি করতে পারেননি। তাই সবেধন নীলমণি হয়েই সে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বেঁচে আছে। ফুল ও গাছের বৃদ্ধি স্বভাবের কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সব প্রজাতির কাঞ্চন গাছেরই পাতার আকৃতি এক ধরনের- জোড়পাতা যা দেখতে অনেকটা উটের খুরের মতো দেখায়। দেবকাঞ্চন পাতাঝরা স্বভাবের, চৈত্রদিনে নিষ্পত্র গাছে অজস্র ফুল ফুটে ভরে যায়- দূর থেকে দেখলে মনে হয় গাছে প্রজাপতির মেলা বসেছে। যমুনা পাড়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পেরোবার সময় একদিন চলন্ত ট্রেন থেকে অনেক দেবকাঞ্চন গাছের পুষ্পশোভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম।

কাঞ্চন কন্যাদের রেখে আরেকটু এগিয়ে গেলাম পূর্বদিকে। কাছেই রয়েছে বিশাল দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটা অশোক (Saraca indica) তরু। বেশ বয়স্ক, ছায়ার মতো বড় বড় ডালপালায় তলাটা ছায়াচ্ছন্ন করে ফেলেছে। কিন্তু হায়! অশোকের অঙ্গভরা ফুলের অলংকার কোথায়? ফুরিয়ে গেছে। দু-একটা কালচে ডালে ছিটেফোঁটা ফুলের লাল কণা লেগে আছে। এতগুলো অশোকগাছকে দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন স্বর্গের সেই এক টুকরা অশোক বন কিংবা রাবণের লঙ্কার অশোকবন। পাশেই এক বিচিত্র ফুলের গাছ, ওর বাংলা নামটাও বিচিত্রা (Brunfelsia latifolia), ইংরেজি নাম ইয়েস্টারডে টুডে এন্ড টুমরো। রঙ বদলানো এ ফুলের স্বভাব। যেদিন ফোটে সেদিন সে ফুলের রঙ থাকে বেগুনি, পরদিন তা হয়ে যায় গোলাপি বা হালকা বেগুনি, তার পরের দিন তা সাদা রঙে ম্লান হয়ে যায়। এর ইংরেজি নাম এটা হলেও অনেকে চেনেন ব্রানফেলসিয়া নামে। প্রায় পাতাহীন ঝোপাল গাছে ঠেসে ফুল ফুটেছে। ফুল অত্যন্ত সুগন্ধযুক্ত। এরপর চললাম উত্তরমুখে। পথের ধারেই পেলাম হলদে রঙের ভাদ্রা (Gmelina ohilippensis) ফুলের দোলানো ছড়া। দু-চারটা করে সবে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। বেশি করে ফুটবে গ্রীষ্ম-বর্ষায়। শিশুচত্বর শেষে ছোট্ট আর একটা পুলের পাশে ছোট্ট ঝোপ। তেঁতুলপাতার মতো পাতা, সরু ডালে পাতার কোলে ফুলে রয়েছে পাউডার মাখানো বা শেভ করা ব্রাশের মতো লাল রঙের ফুল মণিকুন্তলা (Calliendra haematocephala)। এ ফুলের আরেকটা জাত আছে, যার ফুল সাদা। ওখান থেকে আবার উল্টো ঘুরে চললাম দক্ষিণ দিকে।

পথে আসতে আসতে দেখেছিলাম নাগলিঙ্গম (Couropita guianensis) গাছ, মোটা গুঁড়ির গা ফুঁড়ে বেরোতে শুরু করেছে অসংখ্য কুড়ি, কদিন বাদেই সেগুলোতে চমৎকার ফুল ফুটবে। এবার টানা হেঁটে বট, পাকুড়, বনসুপারি, কুসুমগাছ ডিঙিয়ে পড়লাম আর এক বিরাট কুসুমগাছের (Schleichera oleosa) কাছে। পূর্বদিকে অরুণোদয় তোরণের পাশে বিশাল দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দু-একটা ডালের মাথায় তখনও লাল নিশানের মতো শোভা পাচ্ছে কচি পাতারা। কিছু ডালে মাকু আকৃতির হালকা সবুজ রঙের কচি ফল ধরেছে থোকা ধরে। সবুজে শ্যামলে ফুলে ফুলে রমনায় কেটে গেল অনেকটা সময়, এবার ফিরতে হবে। দখিনদিকের রাস্তাটায় শেষ পাক মেরে ঘুরতেই টয়লেটের পাশে একটা গন্ধ চোখ ফেরাতে বাধ্য করল। না- দুর্গন্ধ না, সুগন্ধ। কাছে গেলাম। দুটো কফি (Coffee arabica) গাছের ছড়ানো বাহুভর্তি করে দুধসাদা রঙের থোকা থোকা ফুল ফুটেছে। সুগন্ধটা আসছে সেসব ফুল থেকে। নাহ্, আজ আর না। কফি ফুলের ঘ্রাণ শুঁকে এক কাপ কফিতে চুমুক না দিলেই না। হনহন করে হেঁটে গেলাম রমনা রেস্টুরেন্টে। কিন্তু হায়! রোজার কারণে সেটা বন্ধ। তাই সকালের ওই কফি ফুলের কাঁচা গন্ধটুকু সঙ্গে নিয়েই বেরিয়ে এলাম রমনা পার্ক থেকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা