সালেহা চৌধুরী
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৭:২৭ পিএম
বাংলা ভাষার
স্বজন উইলিয়াম রাদিচের সঙ্গে একদিন কথা বলব আশায় ওর ই- মেইল ঠিকানায় এমন অভিলাষ জ্ঞাপন
করে মেইল পাঠালে, তিনি উত্তরে লেখেন- আমার ইন্ডিয়ান কবিতার বই বেরোনোর পর হলে অনেক
বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে। বইটি বেরোবে সেপ্টেম্বরের দিকে। আমি অপেক্ষায় রইলাম। মাঝে
মাঝে ই- মেইলে কেমন আছেন, কী করছেন এবং কোনো কিছু জানতে চেয়ে ই- মেইল করলে তিনি উত্তর
দিয়ে আমার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেন। তারপর বই প্রকাশিত হলে নাম স্বাক্ষরিত একটি বই পেয়ে
বিমল আনন্দ লাভ করি। বলি, কবে দেখা হচ্ছে। উত্তরে তিনি বলেন, ২৩ নভেম্বর, সোয়াস অফিসে।
নির্ধারিত
সময়ের অনেকটা আগেই সোয়াস অফিসে পৌঁছে চারতলায় উঠে বসে থাকি। দরজায় লেখা, ফিরছি সারে
৫টায়। ঠিক যেই সময় তিনি আমার সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন।
সাড়ে ৫টায়ই উপস্থিত হলেন। কক্ষ খুলে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলে দেখি শেলফ ভর্তি বই, কম্পিউটার, টেবিল, চেয়ার ইত্যাদিতে ঘর পরিপূর্ণ। কিন্তু মোটেই অগোছালো নয়। মেঝেতেও কার্ডবোর্ডে অনেক বই সাজিয়ে রাখা। আমি আমার বাংলা হাইকু বইটি দিলে তিনি তৎক্ষণাৎ কতগুলো হাইকু পড়ে ফেলেন এবং শব্দাবলির কণা কবিতা পড়তে পড়তে বলেন, দারুণ মজার ব্যাপার তো। বলেন, পড়ে সবটুকু পড়ে ফেলবেন। এরপর তিনি বলেন, চলুন নিচে গিয়ে কিছু খাওয়া যাক। আমি বলি, আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। কিছু প্রশ্ন করব, আপনি উত্তর দেবেন। তিনি হেসে বলেন, এ প্রশ্ন করবেন না, কেন আমি বাংলা শিখলাম। এ প্রশ্নের উত্তর অসংখ্যবার দিতে হয়েছে। বললাম, আমি প্রশ্ন করব না, তবে কবে থেকে শিখতে শুরু করলেন- এমন একটি প্রশ্ন করতে পারি। তিনি এরপর আর কিছু বলেননি। ২০১৩ সালের দিকে নেয়া হয়েছিল এই সাক্ষাৎকারটি। এরপর তাঁর আর সরব উপস্থিতি কোথাও দেখা যায়নি। এ সাক্ষাৎকারে রাদিচের জীবন-চিন্তা-সাহিত্য-ভাবনা এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। নিচে আমাদের প্রশ্ন ও উত্তর।
সা. চৌ : আপনাকে
কী র্যাডিচে বলব, না রাদিচে বলব?
উ. রা : নামটি আসলে ইতালিয়ান। আমার পূর্বপুরুষ ইতালি থেকে এসেছিলেন। অনেক আগে, ১৮২১ সালে। সেখানে তাদের সারনেম ছিল রাদিচে। তারপর আমরা আস্তে আস্তে ইংরেজ হয়ে উঠি। র্যাডিচি ব্যবহার করি। র্যাডিচে বা রাদিচে দুটোই হতে পারে, কিন্তু কখনোই র্যাডিচ বা র্যাডিস না।
সা. চৌ : আপনি
বাংলা শিখবেন কবে থেকে ঠিক করলেন?
উ. রা : যখন আমি অক্সফোর্ডের ছাত্র ছিলাম তখন। সময় উনিশশ সত্তর।
সা চৌ : কোনো
কারণ আছে, না এমনি?
উ. রা : আমি আগে ভারতে গিয়েছিলাম। তবে তখন আমি বাংলাদেশে যাইনি। কারণ তখন বাংলাদেশ হয়নি। আমি ভারতে ছিলাম উনিশশ উনসত্তর সালে। অক্সফোর্ড যাওয়ার আগে আমি ভারতে গিয়েছিলাম। একটি ইন্ডিয়ান পাবলিক স্কুলে পড়িয়েছি। কয়েক মাস পড়িয়েছিলাম। তখন আমি ভারত ঘুরি। দিল্লি, বেনারস, চেন্নাই, কলকাতা- এসব জায়গা। কলকাতা থেকে চেন্নাই এসেছিলাম। আমি ভারতের যত জায়গায় গেছি, তার মধ্যে কলকাতা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
সা. চৌ : কলকাতাতে
তো অনেক লোকজন, ঘিঞ্জি। কেন ভালো লাগল?
উ. রা : ভালো
লাগল, কারণ কলকাতায় ভারতীয় সংস্কৃতি যেভাবে ধরে রাখা আছে, আর কোথাও তেমন করে ধরে রাখা
নেই। অন্য বড় বড় শহরে ভারতীয় ঐতিহ্য চলে যেতে বসেছে। কিন্তু কলকাতার বড় বড় বাড়িতে গেলে
দেখা যায়, ভারতীয় সংস্কৃতির চর্চা। তা ছাড়া ওখানে যাওয়ার আগে সত্যজিৎ রায়ের বাংলা সিনেমা
দেখে মুগ্ধ হই। এসবই কারণ হয়তো।
সা চৌ : আপনার
‘বিউটি ইজ মাই
ব্রাহ্মণ’ বইটিতে সত্যজিৎ
রায়কে নিয়ে লেখা একটি কবিতা?
উ. রা : হ্যাঁ, ওকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা আছে সেখানে।
সা. চৌ : আপনি
তো রবীন্দ্রনাথ নিয়ে অনেক কাজ করেছেন, কিন্তু থিসিস করতে গিয়ে আপনি মধুসূদনকে কেন নির্বাচন
করলেন?
উ. রা : সেসব ব্যাপার তো অনেক পড়ে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের লেখা অনুবাদ করা আর মাইকেলের ওপরে গবেষণা করা একই সময়ে। আমি অক্সফোর্ডে যখন যাই ইংরেজি পড়তে, তখনই ঠিক করি বাংলা পড়ব। তারপর অক্সফোর্ডের পড়া শেষ করে সোয়াসে চলে আসি বাংলা শেখার ইচ্ছা নিয়ে। সেখানে আমি তারাপদ মুখোপাধ্যায়ের কাছে বাংলা শিখি। এবং দুই বছর বাংলা পড়াশোনার পর বাংলায় ডিপ্লোমা করি। অবশ্য সেটা একটি অত্যন্ত আনইউজুয়াল কোয়ালিফিকেশন ছিল। আমার আগে আর কেউ ডিপ্লোমা ইন বাংলা করেনি। আমার পরেও আর কেউ না। তখন আমি ঠিক করি, বাংলা ভাষার সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করব। কিন্তু ঠিক তখনই শুরু করতে চাইনি। এরপর নানা সব চাকরি, স্কুল শিক্ষকতা। ১৯৮০ সালে আবার অক্সফোর্ডে ফিরে যাই এবং মাইকেলের ওপর থিসিস লিখতে শুরু করি। একই সময় আমি রবীন্দ্রনাথের লেখা অনুবাদ করার জন্য পেঙ্গুইন থেকে একটি কনট্রাক্ট পাই।
সা. চৌ : কি
অনুবাদ করার কনট্রাক্ট পেয়েছিলেন, গল্প না কবিতা?
উ. রা : কবিতা।
সা. চৌ : আপনি
মধুসূদন নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন, কিন্তু মধুসূদন তো যথেষ্ট কঠিন- তাই না?
উ. রা : আমার মধুসূদনকে ভালো লেগেছে। সব বাঙালিই বলেন, মাইকেল কঠিন, কিন্তু বিদেশির কাছে মাইকেল কঠিন নন। কারণ মাইকেলের শব্দাবলি সীমিত। অভিধানে অর্থ থাকে। রবীন্দ্রনাথের শব্দাবলি সীমিত নয়। আর তার সব শব্দকে অভিধান থেকে বুঝে ফেলা যায় না। আমার মতে, রবীন্দ্রনাথের শব্দাবলি অনেক বেশি কঠিন, অনেক বেশি অর্থবহ। এ ছাড়া মাইকেলের সমগ্র রচনাবলি এত বড় নয়। একটি বইতে সব ধরে যায়। (এই বলে তিনি উঠে মাইকেল সমগ্র দেখান) আমি মাইকেলের সব রচনাবলি পড়েছি, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সব রচনাবলি পাঠ করা এত সহজ কাজ নয়। তাকে নিয়ে গবেষণা করা কঠিন।
সা. চৌ : এই
যে আপনি এত কবিতা পড়ছেন রবীন্দ্রনাথ থেকে আরম্ভ করে আরও নানা কবির লেখা। এতে আপনার
কী মনে হয় ইংরেজি কবিতা থেকে বাংলা কবিতায় কি খুব পার্থক্য আছে?
উ. রা : আধুনিক বাংলা কবিতায় ইংরেজি ভাষায় কবিতা লেখার সব স্টাইল আছে। বিভিন্নতা আছে। সাধারণভাবে আমি খুব বেশি পার্থক্য করতে পারি না।
সা. চৌ : অনেক
আগে এক সাহিত্য আসরে আপনি বলেছিলেন, বাংলা কবিতায় গীতময়তা বেশি।
উ. রা : হ্যাঁ, সেটা বলা যায়। তবে বাংলা কবিতায় ছন্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি আধুনিক বাংলা কবিতায়ও। বেশিরভাগ বাংলা কবিতার আবেদন কানের কাছে কেবল; চোখ ও মস্তিষ্কের কাছে নয়। এই ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে মিউজিশিয়ান। আমার কাছে ছন্দ, রিদম, বিট, তাল খুব জরুরি ব্যাপার। বাংলা কবিতায় আমার সেই প্রিয় বিষয়গুলোর চর্চা হয়।
সা চৌ : আগের
মতো কি এত পার্থক্য আছে, নাকি পার্থক্যের দূরত্ব কমে যাচ্ছে?
উ. রা : কিছু
তো কমে যাচ্ছে। তবে বাংলা কবিতায় থাকে একটি ভিন্ন হেরিটেজ। ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব
বাংলা কবিতায় বেশি। কাজেই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিগতভাবে পূর্ব-পশ্চিমের কবিতার মধ্যে কিছু
বিভেদ তো থাকবেই। যেমন মধুসূদনের কাব্যে পাশ্চাত্য প্রভাব এসেছে অত্যন্ত ‘প্রফাউন্ড
ওয়েতে আবার রামায়ণ’ মহাভারতের প্রভাবে তাকে ভারতীয় সাহিত্য
বলা হয়। সেদিক থেকে মধুসূদনের কবিতা একেবারেই আলাদা। কোনো ইউরোপিয়ান কবিতা একে বলা
যাবে না। তিনি ইংরেজি-বাংলা দুই ভাষায়ই এপিক পড়েছিলেন। ফলে একটি নিজের মনের মতো মহাকাব্য
তৈরি করতে পেরেছিলেন।
সা. চৌ : আধুনিক কোন কোন কবিকে আপনার ভালো লাগে? জীবনানন্দকে যে ভালোলাগে তা আপনি কবিতা লিখে জানিয়েছেন।
উ. রা : জীবনানন্দকে আমার ভালো লাগে। (একটু চিন্তা করে) বাংলাদেশের শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদ আমার প্রিয় কবি। আমি যত বেশি পড়তে চেয়েছি, তত পড়া হয়ে ওঠেনি। আর যাদের পাঠ করেছি, তাদের সবাই আমাকে সমভাবে উদ্দীপ্ত করতে পারেনি।
সা. চৌ : এক
কবিতা অনুষ্ঠানে আপনি ও আমি উভয়েই কবিতা আবৃত্তি করেছিলাম। তখন আপনি শহীদ কাদরির কবিতাকে
খুব পছন্দ করেছিলেন।
উ. রা : ঠিক কথা। শহীদ কাদরির কবিতা আমার খুব ভালো লাগে। (একটু থেমে) ইউ নো সো মাচ আই হ্যাভ নট রেড।
সা চৌ : আপনার
বই প্রকাশনা সম্বন্ধে কিছু বলুন।
উ. রা : প্রথমে সত্তর ও আশির দশকে এখানে ভালো প্রকাশনা থেকে আমার কবিতার বই বেরিয়েছিল। অংগল প্রেস যারা আমার বই বের করে, তারা পরে বই প্রকাশ করতে চায়নি। তখন আমি সোজা ঢাকায় চলে যাই এবং ইউপিএল থেকে সেই বইটি প্রকাশ করি। মহীউদ্দিন সাহেব আমাকে বই প্রকাশ করতে সাহায্য করেন। এরপর আর একটি বই কলকাতার রাইটার্স ওয়ার্কসশপ প্রকাশ করে। এরপর দুই বছর আগে সাত বছর খেটে আমি যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই লিখি, তা প্রকাশ করতে গিয়ে কোনো ব্রিটিশ মেইনস্ট্রিম পাবলিশার্স খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর নিউক্যাসলের একটি স্মল প্রেস বইটি ছাপে। ২০০৩ সালে আমি একটি বই লিখি, যা এ দেশের একটি ভালো পাবলিকেশন থেকে বেরোচ্ছে। কাজেই বলা যায়, এ হলো প্রকাশনার জগতে আমার আবার ঠিকমতো ফিরে আসা। কামব্যাক ফর মি। গত কুড়ি বছর ধরে আমি সংগ্রাম করছি আমার কবিতা যেন ‘মেইনস্ট্রিম পাবলিকেশন’ থেকে ঠিকমতো প্রকাশিত হয় সেই ব্যাপারে।
সা. চৌ : আপনারও
পাবলিশার্স পেতে সমস্যা হয়েছিল? আমি ভেবেছিলাম কেবল আমাদেরই সমস্যা হয়।
উ. রা : না
না, তা ঠিক নয়। অনেক ইংরেজি ভাষার কবি সোচ্চার অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণের। আসলে অনুবাদক
হিসেবে আমার নাম আছে। ‘আই এম প্রাউড অব মাই ট্রান্সলেশন। কিন্তু
মৌলিক কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে একটু সময় লেগেছে। আমার নতুন মৌলিক বই ফ্লামবার্ট প্রেস
থেকে ছাপা হচ্ছে। এরা বেশ নামকরা প্রকাশক। নতুন বইটির নাম গ্রিন, রেড, গোল্ড। একশ একটি
সনেট দিয়ে একটি উপন্যাস লিখেছি। সেটা ওরা ছাপছে।
সা চৌ : কাব্যোপোন্যাস?
উ. রা : হ্যাঁ।
সা. চৌ : বিক্রম
শেঠ এমনি কাব্য দিয়ে উপন্যাস লিখেছিলেন? অন ও গোল্ডেন পন্ড তেমন কি?
উ. রা : অনেকটা তেমন, তবে আমার বই একেবারেই আলাদা। ইটস ডিফারেন্ট ইন স্টাইল। ফ্লামবার্ড প্রেসের অফিস উত্তর ইংলান্ডে। ওরা প্রেসটিজিয়াস পাবলিশার্স হিসেবে বিখ্যাত। ভালো ডিসট্রিউটর। খুব বেশি বড় নয়, তবে অনেক সম্মানিত প্রেস।
সা. চৌ : ভীষণ
মজার ব্যাপার তাই না, কবিতায় নভেল?
উ. রা : হ্যাঁ, এ নভেল ইন হানড্রের্ড অ্যান্ড ওয়ান সনেট। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে বেরোবে বইটি। হানা টম্পসন বইটি জার্মানিতে অনুবাদ করেছে, কাজেই আশা করছি একই সময়ে বইটি জার্মানি থেকেও প্রকাশিত হবে।
সা. চৌ : আপনি
তো রবীন্দ্রনাথের অনেক কিছু অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে কী?
উ. রা : আমার ওর সব কিছুই ভালো লাগে। আমি অবশ্য ওর আরো ছোটো গল্পের অনুবাদ করতে চাই। অবশ্য সময় ও জীবনীশক্তি প্রয়োজন তা করতে। ওর তিরিশটির মতো গল্প অনুবাদ করেছি, আরো তিরিশটি অনুবাদ করতে চাই। পেঙ্গুইন সেই তিরিশটি গল্প দিয়ে বই ছাপিয়েছে। আমি আর একটি রবীন্দ্রনাথের বাছাই করা গল্পের বই করার বাসনা রাখি। আর রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে আমি কিছু কাজ করতে চাই।
সা. চৌ : গানগুলো
ইংরেজি করে সেগুলো ইংরেজিতে গাইতে চান?
উ. রা : না, ঠিক তা নয়। আমি গান নিয়ে ক্রিটিক্যাল একটি বই লিখতে চাই।
সা. চৌ : আমরা
যারা যুক্তরাজ্যে সাহিত্যচর্চা করছি, তাদের সাহিত্যচর্চা কেমন হতে পারে বলে আপনার ধারণা।
তারা কী বাংলায় সাহিত্য করবে, না ইংরেজিতে করবে?
উ. রা : যারা
ভালো বাংলা লিখতে পারে, তারা বাংলাতেই সাহিত্যচর্চা করতে পারে। হয়তো এখানে অনেক পাঠক
পাবে না। কিন্তু বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় তাদের বইয়ের পাঠক থাকবে, বই সেখানে বিক্রি
হবে। তবে কিছু তরুণ লেখক বেরিয়ে আসছে, যারা ইংরেজি ভাষায় চমৎকার সাহিত্যচর্চা করতে
শুরু করেছে। তারা ‘মেইনস্ট্রিম’ সাহিত্যচর্চার
অংশ হয়ে উঠবে অচিরে।
সা চৌ : এখানে
যারা সাহিত্যচর্চা করে আপনি কি তাদের চেনেন?
উ. রা : কেতকি কুশারী ডাইসনকে চিনি। যিনি ব্রিটেনের বাইলিগুয়াল রাইটারদের মধ্যে অন্যতম। (ভেবে) শামিম আজাদের নাম শুনেছি। টেগোরস ইলেভেন অনুবাদক শফি আহমদের সঙ্গে অনেক আগে আলাপ হয়েছিল। তবে আমি প্রধানত মেজর রাইটার নিয়েই কাজ করি।
সা. চৌ : যদি
এখানে কেউ সাহিত্য অনুষ্ঠানে আপনাকে ডাকে, কী বলবেন ব্রিটেনের সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যচর্চা
নিয়ে?
উ. রা : খুব বেশি কিছু বলতে পারব না। আর তা ছাড়া এসব সভা-সমিতিতে যাওয়ার খুব বেশি সময় হয় না। আমার পড়াশোনা অনেক বেশি ক্লাসিক্যাল রাইটিং নিয়ে। বড় বড় পরিচিত নাম নিয়ে আমি পড়তে ও কাজ করতে ভালোবাসি।
সা. চৌ : একটি
অন্য প্রশ্ন করি। আপনার ইন্ডিয়ান কবিতার বই ‘বিউটি বি মাই
ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ বলতে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উ. রা : এটা
তো একটি ভারতীয় শব্দ। ব্রাহ্মণ হলো আলটিমেট স্পিরিট। আমার মহত্তম চেতনা সৌন্দর্যকে
ঘিরে। আমার আলটিমেট স্পিরিট সৌন্দর্য। এ-ই বলতে চেয়েছি। আলটিমেট স্পিরিট অব ইউনিভার্স
এক্সপ্রেসড থ্রু বিউটি। বেদান্তিক হিন্দুইজমে এই আলটিমেট স্পিরিটের কথাই তো বলা হয়েছে।
সা. চৌ : এই
বই ‘বিউটি ইজ মাই
ব্রাহ্মণ’ বইটিতে আদিয়াবাদ
নামে একটি বাংলা কবিতা আছে। কবিতাটি খুব সুন্দর। আপনি এমন বাংলা কবিতা আর লেখেন না
কেন?
উ. রা : আসলে আমি তো বাংলা ভাষার কবি নই। ওটাই আমার একমাত্র বাংলা কবিতা।
সা. চৌ : আপনি
অনুবাদ করেন এবং মৌলিক লেখাও লেখেন। কোনটিতে বেশি আনন্দ পান?
উ. রা : মৌলিক
কবিতা লিখতে আমি বেশি আনন্দ পাই। তবে অনুবাদ করতে প্রচুর পরিশ্রম হয়, কিন্তু কাজটা
শেষ করে প্রচুর আনন্দ বোধ হয়।
সা. চৌ : অনুবাদ
করতে গিয়ে মৌলিক কাজ করার সময় তো কমে যাচ্ছে…
উ. রা : তা
যাচ্ছে বটে। আগামী বছর আরো কিছু মৌলিক কাজ করতে চাই। তবে শুধু অনুবাদই তো নয়, আরো নানা
ধরনের কাজ থাকে। সোয়াসে পড়াই। গবেষণা দেখি। একটু বেশি আন্তর্জাতিক লোক হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন
জায়গায় গিয়ে বক্তৃতা দিতে হয়, সেমিনার করতে হয়। এর মধ্যে মৌলিক কাজ করার চেষ্টাও করি।
এর জন্য আমার অনুবাদের কাজও কমে যাচ্ছে। তবে আশা করছি, আগামী বছরে আরো কিছু অনুবাদ
করব, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের। ‘মেঘনাদবধ কাব্যের’ অনুবাদ করেছি।
সেটা শেষ হয়ে গেছে।
সা. চৌ : মেঘনাদবধ
কাব্য অনুবাদ করেছেন!
উ. রা : হ্যাঁ,
অনুবাদ করেছি। সেটা শেষ হয়ে গেছে। তবে আমি এখনও বইটি বের করিনি। পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া বের
করতে চাইছে, কিন্তু এই মুহূর্তে আমি প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। শিকাগোতে বাংলা পড়ান সেই
ক্লিনটন বি সিলি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস নিউইয়র্ক থেকে মেঘনাদবধ কাব্যের ইংরেজি
অনুবাদ বই বের করেছেন সম্প্রতি। সেই জন্য আমি একটু অপেক্ষা করছি। উনি আসছেন নেহেরু
সেন্টারে। একই সঙ্গে দুটি ইংরেজি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ অনুবাদ হবে
বলে আমি খুশি মনে অপেক্ষা করছি।
সা. চৌ : ক্লিনটন
বি সিলিরটা আগে বেরিয়ে গেল বলে আপনার কি মন খারাপ?
উ. রা : নট
অ্যাট অল।
সা. চৌ : সেই
অনুবাদটি কি আপনি দেখেছেন? কেমন লেগেছে আপনার?
উ. রা : ‘লেটস পুট ইট
দ্যাট ওয়ে হি ইজ এ স্কলার’। এখন আমি ওর অনুবাদের সঙ্গে আমার অনুবাদ
মিলিয়ে দেখতে পারি। আপনি ওয়েবসাইট পরবাসে ওর বইয়ের কথা জানতে পারবেন। (উইলিয়াম র্যাডিচি
কম্পিউটার খুলে আমাকে পরবাস ওয়েবসাইট দেখান। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট, পরবাস ডট কম)।
সা. চৌ : আচ্ছা,
আপনি তো অনেক বই পড়েছেন, কেউ যদি আপনাকে বলে একটি বইয়ের নাম করুন, যা আপনার বিশেষ ভালো
লেগেছে, আপনি কোন বইয়ের নাম করবেন?
উ. রা : (বেশ
কিছুক্ষণ ভেবে) আমার এপিক পোয়েম ভালো লাগে। যেকোনো একটি এপিক গ্রন্থের নাম করতে পারি।
ইলিয়ড বা ওডেসি। এমন কিছু। আমি সেজন্যই মেঘনাদবধ কাব্য অনুবাদ করেছি। কারণ এটি একটি
এপিক পোয়েম গ্রন্থ। বায়রন, ডনজুয়ান সব কিছুই আমার প্রিয় গ্রন্থ। আমি সময় পেলেই হোমার
খুলে বসি।
সা. চৌ : ভারতের
এপিক পোয়েম ও বিশ্বের আর সব এপিক পোয়েমের মধ্যে কি কিছু মিল আছে?
উ. রা : আছে।
পি লাল, যিনি আমার বই ছাপিয়েছেন, এখন মহাভারতের ইংরেজি করছেন খণ্ড খণ্ড করে। আড়াইশ
খণ্ড বেরিয়েছে। (একটু ভেবে) মনে হয় তিনশটি ছোট খণ্ড বেরিয়ে গেছে। আপনি আমার ওয়েবসাইট
দেখেছেন?
সা. চৌ : দেখেছি
ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট. উইলিযাম র্যাডিচি. কম। ওখানে কি আপনার কাব্য-উপন্যাসের কথা
আছে?
উ. রা : না,
সেই বইয়ের ঘোষণা এখনও দিইনি। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে একটি বিজ্ঞাপন দেব হয়তো আমার
ওয়েবসাইটে।
সা চৌ : এবার
উইলিয়াম বলেন তো কতদিন হলো আপনি বিবাহিত?
উ. রা : সে
অনেক দিন হলো আমি বিবাহিত। এই মানে উনিশশ তিয়াত্তর সালে আমি বিয়ে করেছি। দুটি মেয়ে।
একজন হার্রপিস্ট বয়স পঁচিশ বছর। আরেকজন ক্লাসিক পড়ায়, ল্যাটিন ও গ্রিক। স্ত্রী হেডমিসট্রেস।
নাম এলিজাবেথ।
সা. চৌ : আমরা
যারা অনুবাদ করতে শুরু করেছি, তাদের জন্য কিছু বলুন। যেমন আমরা কোন দিকে বেশি খেয়াল
করব, আক্ষরিকতার দিকে না এসেন্সের দিকে। কেউ কেউ বলে হোয়েন ট্রান্সলেশন ইজ ফেইথফুল
নট বিউটিফুল হোয়েন বিউটিফুল নট ফেইথফুল।
উ. রা : আমি
ফেইথফুল। আমি বলতে চাই, ইউ মুভ ফ্রম দ্য হোল টু দ্য পার্ট নট ফ্রম পার্ট টু দ্য হোল।
সমগ্র থেকে খণ্ড খণ্ড, খণ্ড থেকে সমগ্র নয়। আপনার পুরো জিনিসটির সেন্স থাকতে হবে। এ
যদি একটি ছোটো কবিতা হয় তাও কিংবা একটি বড় বই হয়, তাও। অনেকবার পড়ার পর শুরু করতে হবে।
ইউ মাস্ট রিড দ্য বুক সেভারেল টাইমস বিফোর ট্রান্সলেটিং। অনেক লোক যখন ট্রান্সলেশন
করতে শুরু করে, তারা এ কাজ করে একেবারে বিপরীতভাবে, আদার ওয়ে রাউন্ড। পার্ট টু দ্য
হোল। কবিতার বেলায় বলতে হয়, আগে কবিতার ইউনিটি ও শেপ জানতে হবে। সব কবিতার পেছনে যে
ইমোশনাল আইডিয়া বা ভাব আছে, তা বুজতে হবে। এ অত্যন্ত জরুরি ব্যাপার। ভাব জানতে হবে,
এসেন্স জানতে হবে। তারপর অনুবাদে হাত দিতে হবে। যেকোনো জেনুইন লিটারেচারে সিড বা বীজ
থাকে। সেটিকে নিজের মধ্যে নিতে হবে। তারপর অনুবাদের গাছ সেখানে আপনিই বিকশিত হবে। অনুবাদ
করতে করতে সেই বীজের কাছে চলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, অনুবাদ হলো ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক।
সা. চৌ : অনুবাদ
ক্রিয়েটিভ রচনা? সৃষ্টিশীল লেখা যাকে বলে?
উ. রা : হ্যাঁ।
অনুবাদ ক্রিয়েটিভ লেখা, সৃষ্টিশীল লেখা। কিন্তু কোনো কর্মাশিয়াল লেখার কথা বলছি না।
সা. চৌ : টেলিফোন
ডাইরেক্টরি বা কম্পিউটারের বই?
উ. রা : হ্যাঁ,
ওই রকম বইগুলো বাদে।
সা. চৌ : কোনো
কোনো শব্দ বা ব্যাপার থাকে, যাকে অনুবাদ করা যায় না। যেমন : শাস্তি গল্পে চন্দরার মরণ।
যে শব্দের কোনো ইংরেজি নেই। তাই আপনি মরণের অনুবাদ করতে পারেননি।
উ. রা : না
মরণ শব্দের কোনো ইংরেজি নেই। তাই বারবার আমি একে পরিবর্তিত করেছি। তবে প্রথম যে অনুবাদ
করেছিলাম, সেটাই ঠিক বলে আমার মনে হয়। ‘হেল উইথ হিম’।
সা. চৌ : আমার
বাড়িতে যে বই আছে সেখানে লেখা আছে ও নো নট হিম।
উ. রা : বললাম
তো বারবার ওই একটি শব্দকে আমি বদলেছি। আগামী বছর পেঙ্গুইন থেকে একটি নতুন সংস্করণ বেরোবে,
সেখানে আমি আমার সেই প্রথম অনুবাদ ব্যবহার করব, ‘টু হেল উইথ
হিম’।
সা. চৌ : আচ্ছা
আপনি অনুষঙ্গ কী করে ট্রান্সলেশন করবেন? যখন বলা হয় ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে কিংবা ঢাকার
বিকালবেলা। বলতেই যে ছবি আমাদের চোখের সামনে আসে তা কি অনুবাদে আসবে? মানে যিনি কোনো
দিন ঢাকা দেখেনি তাকে কী করে বোঝাবেন ঢাকার বৃষ্টি?
উ. রা : কাজটি
কঠিন। তবে অনুবাদ করতে গিয়ে দেখতে হবে কোন লেখা অনুবাদ করা সম্ভব। বেছে নিতে হবে সেই
সব কাজ, যা ট্রান্সলেটেবল।
সা. চৌ : আচ্ছা
ধরুন, এমন একটি ব্যাক্য ‘শ্যামলী মেয়েটি বিকালবেলার রোদে অভিমান
করে ভাবছে কেন সে ভালোবাসা পেল না?’ কী করে অনুবাদ
হবে? আমি তো শ্যামলী মেয়ের ইংরেজিই করতে পারছি না।
(হাসি)
উ. রা : সালেহা
মনে রাখতে হবে, একটা বই বা গল্প অনুবাদ করা যায় কি না, তার ওপরে নির্ভর করে সেই রচনার
লিটারেরি মেরিট। শেকসপিয়ার এই পৃথিবীতে যত ভাষা আছে তত ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। মানুষ পড়ছে।
শেকসপিয়ারকে জানছে। শেকসপিয়ারের লেখার যেটুকু নিখাদ সোনা তা ট্রান্সলেশন হয়ে যাচ্ছে।
যদি ট্রান্সলেশনকে একটি ছাঁকনির ওপর রাখা হয়, যেমন করে সোনা সিভ করা হয়, তাহলে দেখা
যাবে বাহুল্য বা বাড়তি যেটুকু তা ছাঁকনি দিয়ে পড়ে গেছে, কিন্তু যেটুকু নিরেট ও নিখাদ
তা ঠিকই ছাঁকনিতে থেকে যাবে। সেই নিখাদ নিরেটই সাহিত্যকর্মের আসল শক্তি।
সা. চৌ : আমারও
তা-ই মনে হয়। যেমন আমি ডালের বারোটি গল্পের অনুবাদ করেছি। আমার মনে হয়, এর মধ্যে এমন
বিশেষ এক গল্প আছে, যেকোনো লোক অনুবাদ করলেই গল্পের স্বাদ পাবে। আর সেটুকু অনুবাদ করা
কঠিন নয়। তবে বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, ‘অনুবাদ করতে
গিয়ে যা হারায় তা-ই কবিতা।’ আপনিও কি তাই বলেন?
উ. রা : রবার্ট
ফ্রস্ট একই কথা বলেছেন। আমি তার সঙ্গে একমত না। যেমন : আমি সম্প্রতি আবার শেকসপিয়ারের
ম্যাকবেথ দেখেছি এবং জানি যেকোনো ভাষাতেই এর অনুবাদ সম্ভব। যদি মূল লেখায় শক্তি থাকে,
তাহলে ব্যাড ট্রান্সলেশনেও সে বেঁচে থাকবে। আমি রবীন্দ্রনাথের অনেক বড় বড় কবিতা অনুবাদ
করেছি- দেবতার গ্রাস, মেঘদূত। জানি সেগুলো রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ সৃষ্টি, কিন্তু আমাকেও
কিছু ক্রেডিট দিতে হবে-এগুলো পাঠ করে যারা মূল রচনার স্বাদ পান। কাজেই রবার্ট ফ্রস্টের
‘হোয়াট গেট
লস্ট ইন ট্রান্সলেশন ইজ পোয়েট্রি’ এই মতবাদের সঙ্গে আমি একমত না।
সা. চৌ : জীবনানন্দ
কি ট্রান্সলেশন করা সহজ?
উ. রা : জীবনানন্দ
ট্রান্সলেটেবল। অনেক ভালো ভালো ট্রান্সলেশন হচ্ছে জীবনানন্দের। যেমন হোমারের লেখা।
যেকোনো ট্রান্সলেশনে টিকে থাকে।
সা. চৌ : কারণ
কী, এর মধ্যে অনেক গল্প আছে?
উ. রা : কিন্তু
ভুলে গেলে চলবে না, হোমারের ইলিয়ড এবং ওডেসি অনেক বড় কাব্যগ্রন্থ। কাব্য হিসেবেই এটি
বেঁচে থাকবে। ‘গ্রেট পোয়েট্রি ইজ হোয়াট ক্যান বি ট্রান্সলেটেড’। সেটা আমার
মত। এই যেমন বাল্মীকির কবিতার অনুভূতি প্রথমে জাগে সেই ‘মেটিং বার্ড’ থেকে, তার
মনে যে শোক আসে, সেটি তো অনুবাদ করা সম্ভব। সেখানে পোয়েট্রি অ্আট ইটস সুপ্রিম। কাজেই
গ্রেট লিটারেরি ওয়ার্কের মেরিটই হলো তাকে অনুবাদ করে একদেশ থেকে অন্যদেশে, এক কালচার
থেকে অন্যকালচারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। যুগ যুগ ধরে এই অনুবাদই একদেশ থেকে আরেক দেশে সম্প্রচারিত
হয়েছে, দুই দেশকে কাছে এনে দিয়েছে। গ্রেট এপিক পোয়েট্রিতে দেখা যায় রিয়াল হাইটস অব
পোয়েট্রি। সেজন্য আমি এপিক এত পছন্দ করি।
সা. চৌ : উপনিষদ
কি আপনার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করেছে কি না? যেমন ইলিয়টের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে।
উ. রা : আমার
ওপর? শুধু উপনিষদ নয়, সমগ্র ভারতীয় সাহিত্যে পঠন-পাঠনে আমার মৌলিক কবিতার রূপ কিছু
বদলে গেছে, তা সত্যি। আমার একটি কবিতায় ঈসা উপনিষদের ছাপ আছে। সালেহা এবার কি থামতে
পারি?
সা. চৌ : সত্যি
অনেক প্রশ্ন করেছি আপনাকে। এবারে কেবল একটি প্রশ্ন করছি, আপনি কবিতার জন্য নিউডিগেট
অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনো পুরস্কার পেয়েছেন কি?
উ. রা : আমি
আনন্দ পেয়েছি।
সা. চৌ : আনন্দ
পেয়েছেন? কত সালের দিকে?
উ. রা : ১৯৮৫
সালে।
সা. চৌ : আপনিই
বোধ করি প্রথম ইংরেজি ভাষার লেখক বা বিদেশি, যিনি ‘আনন্দ’ পেয়েছেন।
উ. রা : তা
ঠিক বলতে পারব না।
সা. চৌ : থাক
আজ আর প্রশ্ন করব না। অনেক প্রশ্ন করেছি।
উ. রা : অনেক
কিছু পেয়েছেন তো?
সা. চৌ : হ্যাঁ।
থ্যাংক ইউ।
উ. রা : থ্যাংক
ইউ।
এরপর তার অফিস
থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের দিকে আসতে আসতে আমি বলি, আজ আমি অনুবাদ সম্পর্কে
যা শুনলাম, তা সত্যিই অসাধারণ। এক অনুবাদ সৃষ্টিশীল কাজ, যদি তা সাহিত্যের অনুবাদ হয়।
আরেক অনুবাদ করতে হবে হোল থেকে পার্টে গিয়ে, পার্ট থেকে হোলে গিয়ে নয়। মূল গ্রন্থের
বীজটি নিজের ভেতরে তুলে নিতে হবে, তাহলে অনুবাদের গাছ আপনিই বিকশিত হবে। অনুবাদ করতে
করতে এগোতে হবে সেই বীজের দিকে। অনেক মূল্যবান কথার সঙ্গে আমি অনুবাদ করতে গিয়ে মনে
রাখব। আমার রাসেল স্কোয়ার এসে গেল, আমি টিউব ধরব বলে স্টেশনে আসি। তিনি চলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাশে তার বাড়িতে। পরদিন তাকে এক জরুরি বক্তৃতা দিতে হবে।