× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হিরণ্যগর্ভ

মূল : কেভিন জারেড হোসেন

রাজ রিডার

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪২ পিএম

হিরণ্যগর্ভ

এখনও মনে আছে, আমি কখন সেটা প্রথম দেখেছিলাম- নৌকা ম্যানগ্রোভ ভেদ করে যাচ্ছিল ক্যারোনি জলাভূমিতে। হয়তো ভোরবেলায়। এখানে-ওখানে দেখা যাচ্ছিল জোনাকি পোকার ঝলকানি। একটি মরা তেলাপিয়া মাছ চিত হয়ে ভাসছিল আর আমি সেটাকে ধরার চেষ্টা করছিলাম। এই জাতীয় দৃশ্য হারহামেশা দেখেছি; তবে এত পরিমাণে কোনোদিন দেখিনি। অসংখ্য মরা মাছ ভাসছিল পঙ্কিলের ওপর। মৃত্যুদূতের মতো মাথার ওপর শকুন কালো-চক্রে উড়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তেলাপিয়া ছিল না। ঝাঁকে ঝাঁকে কাঁকড়াও ছিল। গাদাগাদি করে মরে পড়ে আছে। কাছে গিয়ে যখন বোঝার চেষ্টা করলাম, তখন দেখি তাদের গায়ে-গতরে সোনা লেগে আছে- খানিকটা চটে দাগ দাগ লেগে থাকার মতো। পাশেই দেখি একটি লালচে সারস- তখনও বেঁচে রয়েছে। পা ছোড়াছুড়ি করছিল আর ঠান্ডাতে পাখা ঝাপ্টাচ্ছিল। একটি মরা সারসের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। পাতার ওপর জুতা মচমচ করতে করতে আমি এগিয়ে গেলাম। আর একটি গাছের ডাল দিয়ে সারসটির পাখায় টোকা দিয়ে দেখতে লাগলাম। পাখার নিচে দেখি শুকনো সোনা ঠংঠং করে উঠল।

তারপর ম্যানগ্রোভের শিকড়ে দেখি, ঝিনুকগুলো হলুদ আবের মতো ঝুলে আছে। আর পালিশ করলে যেমন চকচক করে তেমনটা চকচক করছে। শিকড়ের ছাল থেকেও সোনার আভা ছিটকে পড়ছে। তারপর সেখানে আমার চোখে আটকে যায়। ম্যানগ্রোভের থোকা থেকে সোনা চুয়ে চুয়ে পড়ছে। জিনিসটা চুয়ে চুয়ে লেবুর মতো সবুজ পানিকে ঘোলা করে দিচ্ছে। দাঁড়িয়ে গেলাম। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন কিছু জীবনে কোনোদিন দেখিনি। মনে হলো ধড়ফড় করে নৌকায় চড়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে বাড়ি পালিয়ে যাই। কিন্তু সেখান থেকে যেন অশরীরী জিনিসটা বলে উঠল- বালগোবিন! বালক! এটা তোমার দেখা দরকার। এটার কাছে যাওয়া দরকার। তাই একটু একটু করে কাছে যেতে থাকলাম। মনে মনে আমার দেহ থেকে শরীর যেন বের হয়ে যাচ্ছিল। এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে সেই সোনালি জলের দিকে টেনে নিচ্ছিল।

কিন্তু আমি থেমে গেলাম। যাদবকে ডাকা দরকার। তাই আবার যখন আমি আর যাদব ফিরে এলাম, তখন বেশ প্রস্তুতি নিয়েই এলাম। সঙ্গে ক্যামেরাটাও ছিল। আসলে আমরা ঠিক কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না- কী করা উচিত! সত্যি কথা বলতে আমরা মনে করেছিলাম কিছুদিন আগে ব্রাজিলের মতো কিছু একটা ঘটতে চলেছে- যেখানে ডোসি নদীতে একটি বাঁধ ধসের পর লৌহ রঙে নদীর পানি লাল হয়ে গিয়েছিল। ক্যারোনি জলাভূমির আশপাশে কোনো তেলের খনি কিংবা আকরিক খনিজাতীয় কিছুই ছিল না। থাকলেও যে খুব বেশি কিছু হতো তাও কিন্তু নয়। আমরা শুধু ঘটনাটির প্রথম সাক্ষী হতে চেয়েছিলাম। অন্তত যেন আমরা সেটা পরে দাবি করতে পারি।

ম্যানগ্রোভের আশপাশে খুব বেশি পানি ছিল না; সহজেই হেঁটে বেড়ানো যায়। হাতে একটা কাটারি নিলাম। আর যেখান দিয়ে মনে হচ্ছিল সোনা চুয়ে চুয়ে বের হচ্ছে, সেখানে কোপ মারতে শুরু করলাম। রঙটা আস্তে আস্তে গাঢ় হতে থাকে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম কোথা থেকে চুয়ে চুয়ে পড়ছিল। বাঁকা হয়ে থাকাতে একটা ধেয়ে আসা উন্মাদ ঈগল প্রায় আমাকে ফেলেই দিয়েছিল। আমিও সজোরে ধারালো অস্ত্রটি চালিয়ে দিলাম। এতে যাদবের মাথার খুলি প্রায় উড়ে যেতে লেগেছিল। সে অন্তত পাঁচ মিনিট ধরে গালাগালি করল। ঈগলটাই যে উন্মাদের মতো আচরণ করছিল তা কিন্তু নয়। সারসগুলোও পাগল হয়ে গিয়েছিল। ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে; একে অপরের সাথে টক্কর খাচ্ছে। ম্যানগ্রোভের সাথে ধাক্কা খাচ্ছে। স্বর্ণ জলাশয়ের যেখান থেকে পানির বুদবুদ উঠছিল তার চতুর্দিক কোরাল, শিঙ মাছ ইত্যাদি চিত হয়ে মরে পড়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই সম্পূর্ণ সোনা দিয়ে মোড়ানো। একটি অজগর জলাশয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। গিঁট বেঁধে আটকে রেখেছে নিজেকে। সম্ভবত সেই একমাত্র প্রাণী যে এই হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিতে বিপদে পড়েনি।

পাখিদের মতো কিচিরমিচির করা যাদব যখন ধুঁকধুঁক করতে থাকা জলাশয়ের দিকে তাকাল, তখন সেও আস্তে আস্তে নীরব হয়ে গেল। আমার বুক ধপধপ করছিল- যেন ভিতরে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। জলাশয়ে ভেসে থাকা সোনা দেখে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিল- অস্বাভাবিক ছিল জলাশয়ের জন্য এবং আশপাশের সবকিছুর জন্যই। এমনকি দেখেও বুঝতে পারছিলাম না যে সেসব সোনা তরল, নাকি কঠিন। এসব দেখে আমার খামারের পুকুরে জন্মে আঠালো শৈবালের কথা মনে হলো। ওটা কি রস-জাতীয় কিছু ছিল?- যেন পাইপ ফুটো হয়ে চুইয়ে পড়ছে। তারপরও আমরা কিছুই নিশ্চিত না- যেন একটা তেজস্ক্রিয় খনিজ কিছু একটা। কিছুটা জ্বলজ্বল করছে। সত্য কথা বলতে কি, যখন আমি এটা প্রথম দেখি তখন বেদের হিরণ্যগর্ভের কথা মনে হয়েছে। সোনার গর্ভ- যেখান থেকে মহাবিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টি। তবে এটাকে দেখে কোনো পবিত্র কিছু মনে হচ্ছিল না। আমি সেটার কাছে যাচ্ছিলাম না, কিন্তু যাদব সেটাতে হাত ডুবিয়ে রেখেছে। যাদব বলল- উষ্ণ। হাত বের করে দেখে তার সব আঙুল সোনার হয়ে গেছে।

এই তোর আঙুল ঠিক আছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

অসাড় হয়ে গেছে। কিছুই অনুভব করতে পারছি না- সে বলল।

দিনের শেষে সোনা তালু বেয়ে কব্জি পর্যন্ত উঠে গেছে। পরের দিন সকাল হতে হতে পুরো হাতটাই ছেয়ে গেছে। তার হাত সোনার মতো শক্ত ছিল না। চর্মরোগের মতো খসখসে ছিল। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। ঘুমের ওষুধ দেওয়া ছাড়া কেউ কিছুই বুঝতে পারছিল না কি করতে হবে। তারা একজনকে ডাকে, সে আবার আরেকজনকে ডাকে। কিছু বোঝার আগে একদল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং বিজ্ঞানী যাদবের বিছানার কাছে এসে হাজির। আঙুল থেকে ঠোঁট পর্যন্ত খসখসে অংশগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেছে, যেহেতু তা গলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

দুই মাস পরের কথা। দুইজন সাদা চামড়ার মানুষ ত্রিনিদাদে উড়ে এসে সে জলাশয়টি দেখতে চাইল। কথা বলার পর জানতে পারি, তারা প্যারানরমালিস্ট কিংবা সে রকম নামে কোনো একটা মার্কিন টিভি অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসেছে। যাদবের সঙ্গে সেই ঘটনার পর আমি আর সেই জলার দিকে যাইনি। এখনও যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু সাদা চামড়ারা যে পরিমাণ টাকা দিতে চাইছে- ওহ! সাদা টাকা। সোজাসাপটা করে বললে ঝিনুক কিংবা ধনেপাতা দিয়ে আচার বিক্রি করার জন্য নিয়ে গেলে কখনই যেতাম না।

ইতোমধ্যে আমরা নৌকায় উঠে পড়েছি এবং তারা সুটিং শুরু করে দিয়েছে। হোস্ট স্কট বালগোবিন নামটা মোটেও পছন্দ করেনি। তাই সে গোবি বলতে শুরু করেছে। ক্যামেরার সামনে সে আমাকে প্রশ্ন করল, তোরা এটাকে কি নামে ডাকিস?

আমি বললাম, আমরা এটাকে হিরণ্যগর্ভ নামে ডাকি।

আরে, না না না। এত সিলেবল হলে হবে না। খুব বেশি আদিবাসী, আদিবাসী শোনাচ্ছে। এটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফি না রে! মনে ধরে এমন কিছু একটা নাম বল।

মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম- সোনালি পুকুর।

স্কট মুখ বাঁকিয়ে বলল- সোনালি পুকুর? কি সব ফালতু কথা বলছিস রে? আমরা কি ক্যাথরিন হেপবার্ন চলচ্চিত্র করতে এসেছি নাকি?

ক্যাথরিন কি যেন?

ভাগ এখান থেকে! স্কট বলল। জোনস তোর মাথা খাটা।

মিডাস ক্রিক জোনস, একজন ক্যামেরাম্যান বলে উঠল।

স্কট নৌকায় পায়চারি করতে করতে পা দিয়ে ধপধপ শব্দ করতে করতে চিৎকার করে বলে উঠল, চমৎকার বলেছিস রে!

আমরা গভীর ম্যানগ্রোভে পৌঁছে গেলাম- যেখান থেকে সোনা চুয়ে চুয়ে পড়ছিল। তখন আবার তারা ক্যামেরা নিয়ে নড়েচড়ে বসল।

স্কট বলল, গোবি, তোমার বন্ধুর অদ্ভুত মৃত্যু সম্বন্ধে কিছু বল। যখন ঘটনাটি ঘটে তখন তো তুই সেখানে ছিলি, ছিলি না?

তারা যখন আমার মুখের কাছে মাউথপিস ধরে তখন বেশ অস্বস্তি ও ইতস্তত লাগছিল। আমাদের দর্শকদের সুন্দর করে বুঝিয়ে বল। পরে আমরা নেপথ্যকণ্ঠ দেব।

জলার কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম- সেটা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। খুব বেশি না। তবে নিশ্চিত বড় হয়েছে। আমার খারাপ লাগতে শুরু করেছে। প্রথমবার যেমন বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটাচ্ছিল, ঠিক সেই অনুভুতিটা যেন ফিরে এসেছে। স্কট ও তার দলবল ভিডিও করতে ব্যস্ত। আমরা সবাই জলাটা দেখতে পাচ্ছিলাম। জলার আশপাশের ছোট ছোট ঝোপঝাড়গুলো শক্ত শক্ত সোনা হয়ে গেছে। যেখানে সোনা শেষ হয়েছে, সেখানে আমরা সবাই থেমে গেলাম। জোনস আমাকে জিজ্ঞেস করল, এটা কি রে?

আমরা মনে হয় একটি স্বর্ণখনি আবিষ্কার করেছি। স্কট বলল।

আমরা নৌকায় ফিরে গেলাম। আর জোনস ভিডিওগুলো ল্যাপটপে নিতে লাগল। সে কিছু কিছু ভিডিও চালাতে শুরু করেছে। অদ্ভুত কিছু একটা জিনিস সে অন্য ক্যামেরাম্যানদের দেখাতে শুরু করেছে। কি দেখছো তোমরা? স্কট জিজ্ঞেস করল।

ভিডিও চালাতে চালাতে গ্রাফের ওপর কম্পন দেখিয়ে জোনস বলে উঠল, অদ্ভুত ফ্রিকোয়েন্সি। পঁচিশ হার্টজ।

এটা আমার বুকের কম্পন! বলে আরেকটি ক্যামেরাম্যান আঁতকে উঠল।

স্কট মুখ হা করে বলে উঠল, বহির্জাগতিক ফ্রিকোয়েন্সি। এই ক্যারিবীয় অঞ্চলে কি কোনো এলিয়েন ক্র্যাশ করেছিল নাকি? দেখি, ল্যাপটপটা আমাকে দাও।

না, স্কট। এটা-

স্কট থামিয়ে দিয়ে বলল, আমি এখন দেখতে পাচ্ছি আমাদের এপিসোড টাইটেল : দ্য ট্রপিক্যাল থিং : এক্সপোসড। তোমরা সবাই কি মনে করো?

কিছুক্ষণের মধ্যেই জোনস ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গেই স্কটের হাসি উড়ে গেল। তুমি ঠিক বলছো। আমরা কপিরাইট আইনে ধরা খেয়ে যাব। সেহেতু সোনার জলা যথেষ্ট নয়? তা ছাড়া তোমার দর্শকরা কি যাদবের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ নয়?

এতসব দেখে আমি ঝোঁকের মাথায় বলেই ফেললাম, এই ফালতু জিনিসটা হয়তো পুরো পৃথিবীকেই একদিন গিলে ফেলবে, মাত্র কয়েকশ গেলেই দেখবে।

এ কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নৌকা জলাভূমিতে ছুটে চলেছে আর আমার ভেতরটা তখনও বেজে চলেছে। আহ্‌! গবি! সেই বলেছিস, ব্যাটা! স্কট আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল।

এই জঘন্য বিষয়টি আমরা টিভিতে দেখাব।

ঠিক তখনই একটা লাল সারস আমাদের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে এসে ম্যানগ্রোভ গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পানিতে পড়ে গেল।

ম্যানগ্রোভের ঝোপের কাছে ভেসে থাকা মৃত পাখিটি দেখতে দেখতে জোনস জিসাস বলে উঠল। মনে হচ্ছে, জিসাসও আর আমাদের বাঁচাতে পারবে না। এটাই তো পৃথিবীর শেষ না। না। এটা পৃথিবীর পুনর্জন্ম। হিরণ্যগর্ভ। আর এই স্বর্ণগর্ভ এখানেই- ত্রিনিদাদে। ক্যারোনি জলাভূমির এক ম্যানগ্রোভ ঝাড়ে।


 

লেখক: জন্ম ১৯৮৬ সালে ত্রিনিদাদে। ২০১৮ সালে তার গল্প প্যাসেজ কমনওয়েলথ শর্ট স্টোরি প্রতিযোগিতার সেরা গল্প হিসেবে নির্বাচিত হয়। প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা তিন। সর্বশেষ উপন্যাসের নাম হাংরি গোস্ট

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা