× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রনবীর যাপন ও সৃজন ঠিকানা

ইমরান উজ-জামান

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৩ ১৫:২৭ পিএম

রনবীর যাপন ও সৃজন ঠিকানা

দক্ষিণ মনিপুর। বাড়ির সদর দরজা গলে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বৃক্ষরাজির সমাহার। বামে কলাগাছের ঝাড়, তার পাশেই হাসনাহেনা। ডানে আছে আমগাছ, গন্ধরাজ ফুলগাছ। বাঁশঝাড়সহ আরও কিছু গাছ। ওপরে চোখ তুলে চাইলে, পলেস্তারাবিহীন দেয়াল দেখে মনে হতে পারে তিনতলা দালানটির কাজ শেষ হয়নি বুঝি। আসলে এই বাড়ির নকশাই এ রকম।

দ্বিতল আর ত্রিতলে আছে থাকার ঘরসমূহ। ছাদের ঘরে আছে আঁকাআঁকির জন্য স্টুডিও। বাড়িটাতে প্রথম যখন আসেন, তখন কিন্তু খুব জঙ্গলের মতো ছিল। আশপাশে সব গাছগাছড়া দিয়ে ঘেরা। মাঝখানে একটা টিনের ঘর আর আশপাশে লেবু, গন্ধরাজসহ অনেক গাছ ছিল। লেবু এতই হতো যে নষ্ট হওয়ার ভয়ে লেবুর মৌসুমে সবাইকে লেবু বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। আর গন্ধরাজের গন্ধে আশপাশের বাড়ির মানুষকে টানত। যার কারণে এই দুটি গাছের কথা খুব মনে আছে রনবীর।

নিচতলার ঘরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে শিল্পের নানা মাধ্যমের স্বরূপ। এক পাশে আছে বাঁধাই করা একটি ছবি, অড্রে হেপবার্নের স্বাক্ষর করা। জানতে চাইলে রফিকুন নবী (রনবী) বললেন, প্রিয় এক নায়িকার কথা। তখন ঢাকা চারুকলার প্রধান। বিশ্ববিখ্যাত অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন ঢাকায় এলেন অন্য এক কাজে। চারুকলায় টোকাই সিরিজের একটা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন। সেই সঙ্গে হেপবার্ন শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার একটা ছবি কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন। অড্রে হেপবার্ন এই ছবিটাতে স্বাক্ষর করে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন।

১৯৯০-৯১ সালে স্থপতি আব্দুর রশিদের ছয়তলার বেজমেন্ট নকশা নিয়ে কাজ শুরু হয় নতুন বিল্ডিংয়ের। গাছগাছালি যতটা পারা যায় বাঁচিয়ে বাড়ির ডিজাইন করতে বলা হয়েছিল। যার কারণে আশপাশের গাছ অনেকটাই এখনও বিদ্যমান। অবশেষে তিনতলা করে আর এগোনো হয়নি বাড়ির কাজে। তিনতলার ওপরে ছাদের ঘরে একটা স্টুডিও করে নিয়েছেন নিজের জন্য। সেখানে বসে আঁকাআঁকি করেন। এমন হয় অনেক সময় আঁকতে আঁকতে দিন আর রাতের তফাত ভুলে যান।

রনবীর দাদার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছত্রাজিতে, নানাবাড়ি করগোনা। বাবা রশিদুল নবী পুলিশের চাকরির কারণে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতেন। রফিকুন নবীরা ছোট থাকার কারণে মা আনোয়ারা বেগম তাদের নিয়ে নানাবাড়ি করগোনাতেই থাকতেন। ছত্রাজিতের বাড়িতে একা থাকাটা কষ্টকর ছিল বলে দাদিও প্রায় সময় করগোনায় তদের সঙ্গেই এসে থাকতেন। তবে রফিকুন নবী জানালেন, এখন আর ছত্রাজিতের বাড়িটি নেই।

স্মরণের প্রথম বাড়ির স্মৃতিচারণ করেন শিল্পী, সেটা ছিল সিংড়াতে। ব্রিটিশ আমলের কথা, ১৯৪৫ কি ৪৬ সালে হবে। টিনের বেড়ার ও চালার একটা ঘর। চারদিকে বৃক্ষরাজিতে ঝাপা বাড়ি, যেন জঙ্গল মহল। বাড়ির চৌহদ্দি ফুঁড়ে বের হলে বিশাল এলাকাজুড়ে জলরাশি। পরে শুনেছি সেটা ছিল চলনবিল। পাশেই আত্রাই নদ। আর বাড়ির পাশঘেঁষে থানা। থানার ঘাটে প্রতিদিন সকাল-বিকাল মাছের বাজার বসত। কখনও কখনও দুপুর, সন্ধ্যায়ও মাছ নিয়ে ঝাঁপি সাজিয়ে বসত জেলেরা। বিরাট আকৃতির সব রুই, কাতলা, বোয়াল উঠত বাজারে। এখনও মনে পড়ে সেই বড় বড় মাছের কথা। দেড় বছরের মতো সেখানে ছিলাম আমরা।

 

সিংড়া থেকে বাবার পোস্টিংয়ে ঢাকার ফতুল্লায় চলে এসেছিলেন। থানার পাশেই ছিল তাদের আবাস। উঁচু পাকা ভিটি, বেশ কয়েক ধাপ সিঁড়ি মাড়িয়ে ঘরে উঠতে হতো। ঘরের চালা ও বেড়া টিনের হলেও নিচের অংশ কোমর পর্যন্ত ছিল সিমেন্টের দেয়াল। বাড়ির পেছনে অনেকটা খালি জায়গা। তার পরে ফলফলাদি, তরিতরকারির গাছ। গ্রামীণ পরিবেশ। আশপাশের প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। বাড়ির পাশে নদী, অন্য পাশে বিশাল মাঠ। একটা বাজারও ছিল, সেই বাজার এখনও আছে, সপ্তাহের মঙ্গলবারে হাট বসে। আর ছিল বিশাল বিশাল কড়ইগাছ। শিল্পী বলেন- স্পষ্ট স্মরণ আছে, সেই সময় ফতুল্লায় বালু-ইটের বাজার ছিল না।

থানার পাশে হরিহরপাড়া। নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল ছোট ছোট ফিয়াট বা বক্স ওয়াগন। ফতুল্লায়ই প্রথম স্কুলে ভর্তি হলেন তিনি। তবে স্কুলের নাম মনে করতে পারলেন না। ফতুল্লায় আসার বছরখানেকের মাথায় দেশ বিভাগ হয়ে গেল। পূর্ববঙ্গ হয়ে গেল পাকিস্তান।

আমরা চলে গেলাম মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে। থানার আশপাশ বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ, কিছুদূর গিয়ে পদ্মা নদী। নদী দিয়ে জাহাজ চলাচল করত। থানার পাশে আমাদের বাড়ি থেকে তার শব্দ শোনা যেত। সেই জায়গাটা ছিল বেজগাঁও। বেজগাঁওয়ে থাকাকালীন আমি পাশের গ্রামের একটা স্কুলে ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছি, স্কুলের নামটা মনে পড়ছে না। এরপর খুব সংক্ষিপ্ত সময় এখানে-সেখানে থেকেছি-যেমন আড়িখোলায় ছিলাম, আরিচার শিবালয়ে ছিলাম। বলেন তিনি।

 আরও বলেন, আমাদের যতগুলো বাড়িতে থাকা হয়েছে সবই টিনের চালা আর ভিটি পাকা। আশপাশে প্রচুর গাছ। গ্রামীণ পরিবেশে। তবে সবশেষ ঢাকার শরৎগুপ্ত রোডের বাসাটা ছিল একটু অন্য রকমের।

১৯৫২ সালে আমরা ঢাকায় চলে আসি। বাবার বদলি হলো সূত্রাপুর থানার, নারিন্দা ফাঁড়িতে। আমরা এসে নারিন্দার ৫৭/১ নম্বর বাড়িতে উঠলাম। গাছগাছালিতে পূর্ণ ছোট্ট একটি একতলা বাড়ি। আমি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অবশ্য বাড়তি আবাসন সংস্থানের জন্য সেই বাড়ির উপরে দোতলা করা হয়। বাড়িটি ছিল শরৎগুপ্ত রোডের পশ্চিম মাথায়। সেই সময় এই রোডে অনেক সংস্কৃতিসেবীর বাস ছিল। আমাদের বাসায় আল মাহমুদ, আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন, মানিক মিয়া আড্ডা দিতে আসতেন। একই রোডে দাদাভাই, মীজানুর রহমান বাস করতেন। এ ছাড়া আবেদ খান, ফখরুদ্দিন, রাজিউদ্দিন রাজু এই এলাকাতেই বড় হয়েছে। এই বাড়িতে আমরা দীর্ঘদিন ছিলাম। এরপর আমাদের আবাসস্থল ঢাকাতেই ঘুরেছে।

১৯৭৬ সালে রফিকুন নবী স্কলারশিপ নিয়ে চলে গেলেন গ্রিসে। ১৯৭৭ সালে দেশে এসে ওয়ারীতে স্ত্রীর ভাইয়ের (মতিউর রহমান) শ্বশুরবাড়ির একটা ফ্ল্যাটে উঠলেন। সেখান থেকে একটু বাড়ি ভাড়া কম এমন এলাকা খুঁজতে খুঁজতে জিগাতলা ট্যানারি এলাকায় চলে গেলেন। নারিন্দার আড্ডা কিন্তু বন্ধ হলো না। নারিন্দার আড্ডা জিগাতলায় চলে এলো। বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী সেখানে নিয়মিত আসতেন। বছরখানেক পর সেখান থেকে বাসা একই এলাকার বাজারের পাশে নিয়ে গেলেন। এরপর গিয়ে উঠলেন ফের শ্বশুরবাড়ি, লালমাটিয়ায়। সব থাকে বিদেশে, তাই বাড়ি দেখাশোনারও একটা বিষয় ছিল। লালমাটিয়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে শেওড়াপাড়া, ৪৬৭, দক্ষিণ মনিপুরের নিজের বাড়িতে উঠেছিলেন রফিকুন নবী।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা