× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ভুলে যাওয়া নাম

ইমদাদুল হক মিলন

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:৫১ এএম

ভুলে যাওয়া নাম

আপনি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকেন কেন?

মেয়েটির প্রশ্নে শুভ একটু থতমত খেল। না, এমনি। কোনো কারণ নেই।

নিশ্চয় কারণ আছে। কারণ ছাড়া কেউ কারও দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে না। তা ছাড়া ব্যাপারটা যে আমি আজই প্রথম খেয়াল করলাম তা না। আগে আরও তিন-চারবার খেয়াল করেছি। আমাকে দেখলেই আপনি কেমন করে যেন তাকান।

কথা লুকাতে গিয়েও পারল না শুভ। বলল, ঠিকই বলেছ। ভিড়ের মধ্যেও তোমাকে দেখলে আমি একটু বিশেষভাবে তাকাই।

মেয়েটি ভুরু কুঁচকে বলল, আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?

শুভ বেশ একটা ধাক্কা খেল। ও তাই তো! আমার ভুল হয়েছে। আই য়্যাম সরি।

তুমি অবশ্য আপনি বলতেও পারেন। কারণ আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট।

হয়তো সেই কারণেই বলেছি। তবে বলা ঠিক হয়নি। অচেনা কাউকে হঠাৎই তুমি করে বলা ঠিক না। সে ছোট হোক আর যা-ই হোক।

একটু থেমে শুভ বলল, আপনি কোন পত্রিকাতে কাজ করেন?

আপনাকে তো আমি পারমিশন দিলাম তুমি করে বলতে, তা হলে আবার আপনি আপনি করছেন কেন?

শুভ হাসল। জুতা মেরে গরু দান।

ছি। আমি অতটা খারাপ নই। হ্যাঁ, বলেছি তুমি করে বলছেন কেন? তাতে আমাকে এতটা নিচে নামানো ঠিক হলো না।

শুভ সিগ্রেট ধরাল। না না, নিচে নামাব কেন? তুমি করে বলাতে আপনি যেভাবে রিয়্যাক্ট করলেন, তা আমার খুবই মনে লেগেছে।

আপনি সেই আগের মতোই আছেন।

শুভ অবাক। পরপর দুবার সিগ্রেটে টান দিল। আগের মতোই আছি মানে? আগে আমি কেমন ছিলাম? আপনি জানলেন কী করে আগে আমি কেমন ছিলাম?

মেয়েটি মিষ্টি করে হাসল। আপনি একজন সুপারস্টার। আগে টিভি নাটক করতেন। ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটা সিনেমাও করেছেন। এখন ওটিটিতে মধ্যবয়সি চরিত্র করছেন। প্রুফ করতে চাচ্ছেন আপনি শুধু রোমান্টিক হিরোই নন, আপনি ভালো একজন অভিনেতা। মানে অমিতাভ বচ্চনের লাইনটা ধরেছেন। সেটা মন্দ হয়নি। আপনি অভিনেতা হিসেবে ভালোই। লোকে আপনাকে পছন্দ করে। দাড়ি গোঁফ রেখে, ঝুটি করে ভালো গেটাপ নিয়েছেন।

সিগ্রেটে টান দিতে গিয়ে শুভ আনমনা হলো। অপলক চোখে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

মেয়েটি হাসল। কী হলো? আমি কি ভুল কিছু বললাম?

শুভ সিগ্রেটে টান দিল। না, তা না। তোমার সঙ্গে কার চেহারার যেন খুব মিল। যেন সে আমার খুব পরিচিত ছিল। যেন বেশ কিছুদিন প্রায়ই তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। সে আমার ফ্ল্যাটে এসেছে।

পুরুষ মানুষদের এই হলো এক মুশকিল। সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তাকে নানাভাবে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করে।

আমি তা করছি না।

আমি অবশ্য সুন্দরী না। শ্যামলা রঙের খুবই অর্ডিনারি এক মেয়ে। শখের ফটোগ্রাফি থেকে এখন ফ্রিল্যান্সার। আমার তোলা ছবি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা কিনে নেয়। সেই কাজেই আপনার শুটিংস্পটে আসা। আপনার এখন শুটিং নেই। অন্যদের কাজ চলছে। আমি খবর নিয়েছি, আপনি আরও ঘণ্টা দুয়েক ফ্রি আছেন। আপনার শুটিং শুরু হবে লাঞ্চ ব্রেকের পর। আমি কি আপনার আরও কিছু ছবি তুলব?

অনেক তুলেছেন। এখন আর তুলবার দরকার নেই। বসুন। কফি খাওয়া যাক।

মেয়েটি একটা চেয়ার টেনে বসল। ক্যামেরা গলায় ঝুলাল না। কোলের ওপর ধরে রাখল। আপনি কফি খান। আমাকে চা দিতে বলুন। গ্রিন-টি হলে ভালো হয়। কফিতে আমার হার্টবার্ন করে। আমি খেতে পারি না।

এটা অবশ্য অনেকেরই হয়। তবে গ্রিন-টি খাওয়া আপনার ঠিক না। আপনি এমনিতেই স্লিম, আরও স্লিম হয়ে যাবেন।

কোথায় আমি স্লিম। আমি তো এখন সামান্য মোটার দিকে। বায়ান্ন কেজি ওজন হয়ে গেছে। পাঁচ কেজি কমতে হবে।

না না হাইট অনুযায়ী ঠিকই আছেন। আপনার ফিগারও খুব সুন্দর।

আমি আগে খুবই রোগা ছিলাম। একজন আমাকে দেখে বলেছিল, আমাকে তার মেয়েই মনে হয় না। বুক পেট সব সমান।

মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগল। শুভ মুগ্ধ হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়ের হাসি খুব সুন্দর। খুব সুন্দর। গজদাঁত আছে। হাসলে চারদিক কেমন উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছিল। আর শুভর কী যেন মনে পড়তে চেয়েও মনে পড়ছিল না।

মেয়েটি বলল, কই চা কফি বললেন না?

তাই তো!

শুভ প্রডাকশান বয়কে ডাকল। কফি আর গ্রিন-টি দিতে বলল।

মেয়েটি বলল, আপনার তাকানোর ভঙ্গিটা বদলাচ্ছেন না।

আমার আসলে কী যেন মনে পড়ি পড়ি করেও মনে পড়ছে না। একটা যেন চেনা মুখ, চেনা কণ্ঠ। আপনার মধ্যে যেন সেই মানুষটি। মানুষটির সব কিছুই আমার মনে পড়ছে, শুধু নামটা মনে পড়ছে না।

মেয়েটি গম্ভীর হলো। আসলেই কি ওরকম কারও কথা আপনার মনে পড়ছে, নাকি বানিয়ে বানিয়ে বলছেন?

সিগ্রেটে শেষটান দিয়ে ছুড়ে ফেলল শুভ। বানিয়ে বলতে যাব কেন? সত্যি বলছি! অনেক দিন আগের কথা। এক বৃষ্টিমুখর দিনে প্রথম সে আমার ফ্ল্যাটে এসেছিল। তারপর দু-একদিন পরপরই আসত। শুটিং না থাকলে আমি অনেকটা বেলা করে উঠি। সে ড্রয়িংরুমে বসেই থাকত। আমার কাজের ছেলেটা, রহমান চা দিত। অনেক দিন আমি তার সঙ্গে দেখাও করতাম না। বিরক্ত হতাম। রহমানকে বলতাম, চলে যেতে বল। আজ আমি উঠব না। সারাদিনই ঘুমিয়ে থাকব।

অর্থাৎ তাকে এভয়েড করতেন?

হ্যাঁ, পরিষ্কার এভয়েড?

কেন? মেয়েটি কি দেখতে খুব খারাপ ছিল?

না, তা না। মুখটা মিষ্টি ছিল। অনেকটা আপনার মতো। তবে শরীরে কিছু ছিল না। আপনি কিছুক্ষণ আগে বললেন না আপনাকে একজন বলেছিল বুক পেট সমান। ঠিক ওরকমই ছিল সে।

প্রডাকশান বয় দুটো মগে করে কফি আর গ্রিন-টি নিয়ে এলো। কফির মগ নিয়ে আবার সিগ্রেট ধরাল শুভ। আনমনা ভঙ্গিতে কফিতে চুমুক দিল। মেয়েটি নিজের মগে চুমুক দেওয়ার আগে আড়চোখে শুভর দিকে তাকাল। শুভ আনমনা।

আজকের দিনটি বড় চমৎকার। ঢাকায় ফাল্গুন মাসের সৌন্দর্যটা তেমন করে চোখে পড়ে না। কৃষ্ণচূড়া পলাশ শিমুল ফোটে ঠিকই, তবে দেখা যায় না তেমন। ঢাকার বাইরে গেলে ফাল্গুনের সৌন্দর্য, বসন্ত দিনের সৌন্দর্য দেখা যায়। গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। হাওয়ায় ফুলের গন্ধ। রোদের রঙ মায়াবী। পাখির গান মধুময়।

এই শুটিং স্পটটা বিশাল। সত্তর আশি বিঘা জমির ওপর হবে। মাঠ পুকুর ফুলের বাগান সবই আছে। গ্রামের ঘরবাড়ি আছে। ভারী সুন্দর পরিবেশ! ওরা বসে আছে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়। মুখোমুখি দুটো চেয়ারে। প্রডিউসার মেয়েটির পরিচিত। শুভর ছবি তোলার জন্য তাকে রিকোয়েস্ট করেছিল। প্রডিউসার রুহুল আমিন মেয়েটিকে সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের গাড়িতে করেই নিয়ে এসেছেন। শুভর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, ছবি তুলতে রাজি করিয়েছেন। পরিচয়ের সময় মেয়েটির নাম বলতে ভুলে গিয়েছেন। তাতে অবশ্য কোনো অসুবিধা হয়নি। তখন নামটা শুভও জানতে চায়নি। কয়েক পলক মেয়েটিকে দেখে বলেছিল, শুটিং শেষ করে ছবি তোলার কাজ করবে। সেসব শেষ করে মেয়েটির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিল। শুভই ডেকে নিয়েছিল মেয়েটিকে।

শুভ হঠাৎ বলল, আপনার বর কী করেন?

মেয়েটি আবার তার সেই সুন্দর হাসিটা হাসল। হাসির শব্দ হঠাৎ টিনের চালায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ার মতো। বর থাকলে তো কিছু করবেন? আমার তো বিয়েই হয়নি।

শুভ হাসল। অবশ্য আপনার তেমন বয়সও হয়নি। বিয়ের সময় আছে।

একটু থেমে, কফিতে চুমুক দিয়ে, সিগ্রেটে টান দিয়ে বলল, আমার আর সময় নেই। বিয়ের বয়স চলে গেছে।

আপনার সমস্যা কী? সালমান খান হয়ে বসে আছেন? বিয়ে করছেন না কেন? নাকি অন্য সমস্যা আছে?

মানে কী? কিসের অন্য সমস্যা?

মেয়েটি হাসি চেপে রেখে বলল, কিছুদিন আগে একটা ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কাভারে আপনার ছবি দেখলাম। আপনাকে দেখতে থার্ডজেন্ডারের মানুষের মতো লাগছিল।

শুনে মুখের এমন একটা ভঙ্গি করল শুভ, সেই মুখের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসতে শুরু করল মেয়েটি। সেই হাসি আর থামেই না।

শুভও হাসল। ওটা একটা ফিলমের জন্য তোলা। ওরকম একটা ক্যারেক্টার করতে হবে। তবে ব্যক্তিজীবনে আমাকে ওরকম ভাববার কারণ নেই।

প্রেমে ছ্যাকা খেয়েছেন নাকি?

প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেল শুভ। বলল, তবে একজন আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, জানেন?

মেয়েটি গম্ভীর হলো। জানি

শুভ আকাশ থেকে পড়ল। জানেন? মানে, আপনি জানেন কী করে?

মেয়েটির নামও জানি।

আমার অবশ্য তার নাম মনে নেই। ছোট্ট একটা মেয়ে।

তখন সে মাত্র ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়েছে। নাম চৈতি। থাকত সেন্ট্রাল রোডে।

আমার এসব মনে নেই। সে যে আমার ফ্ল্যাটে এসে বসে থাকত শুধু ওইটুকুই মনে আছে।

এক সকালে আপনার বেডরুমেও ঢুকে গিয়েছিল। চৈতি সেই সকালে তার ভালোবাসার কথা বলেছিল।

শুভর কী রকম ঘোর লেগে গেল। কথা বলতে গিয়েও বলতে পারল না। ফ্যাল ফ্যাল করে মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

মেয়েটি বলল, ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় টিভিতে আপনার নাটক দেখে দেখে এমন হয়েছিল চৈতির, আপনাকে ছাড়া কিছু বুঝতই না সে। যে পত্রিকাতেই আপনার ছবি ছাপা হতো, চিত্রালী, পূর্বাণী বা অন্যান্য সিনে ম্যাগাজিনÑ সব সে জোগাড় করত। আপনার ছবি কেটে কেটে তার রুমের দেয়ালে টাঙিয়ে রাখত। ওই বয়স থেকেই সে ভাবতে শুরু করেছিল আরেকটু বড় হয়ে সে আপনার সঙ্গে দেখা করবে। আপনি তার ডাবল বয়সি। তাতে কিছু যায়-আসে না। সে তার ভালোবাসার কথা আপনাকে জানাবে এবং আপনাকে বিয়ে করবে। তার কয়েক বছর পর আপনার ফ্ল্যাটের ঠিকানা জোগাড় করে চৈতি গিয়েছিল। প্রথম দু-একদিন আপনি ভদ্রতা করে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে এভয়েড করতে শুরু করলেন। ফ্ল্যাটে থেকেও রহমানকে দিয়ে বলাতেন, আপনি ফ্ল্যাটে নেই। একদিন রহমান ওভাবে বলার পর পানি খাওয়ার কথা বলে চৈতি আপনার ফ্ল্যাটে ঢুকল। তার পর সরাসরি ঢুকে গেল আপনার বেডরুমে। আপনি জেগেই ছিলেন। চিৎ হয়ে শুয়ে পায়ের ওপর পা তুলে ইন্ডিয়ান স্টারডাস্ট ম্যাগাজিন পড়ছিলেন। স্যান্ডোগেঞ্জি আর ট্রাউজার্স পরা। চৈতিকে দেখে খুবই বিরক্ত হলেন। সব বুঝেও চৈতি আপনাকে বলল, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আপনাকে বিয়ে করব। আপনি এমন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন। আরে তোমাকে তো আমার মেয়েই মনে হয় না। বুক পেট সব সমান তোমার। চৈতি ছটফট করে উঠল। না না, সব সমান না। এই দেখুন, এই দেখুন! বলে সে কামিজ খুলে ফেলল। এই দেখুন আমার ব্রেস্ট। তার পর সালোয়ারও খুলল সে। আমি স্লিম। রোগা নই। আপনি দেখুন, ভালো করে দেখুন। চৈতি কেঁদে ফেলেছিল।

কফি শেষ হয়ে গেছে শুভর। মগটা সে পায়ের কাছে নামিয়ে রাখল। হাতের সিগ্রেট থেকে আরেকটা সিগ্রেট ধরাল। গভীর চোখে মেয়েটির দিকে তাকাল। সেই রোগা হাড় জিরজিরে মেয়েটি, নিজেকে তুমি কেমন করে বদলালে, চৈতি?

 চৈতি উদাস, গম্ভীর গলায় বলল, আপনার ওপর জেদ করে? আমাকে আপনি মেয়েমানুষ বলতেই রাজি ছিলেন না। তার পর থেকে আমি নিজেকে বদলাবার চেষ্টা করেছি। আকর্ষণীয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। আপনার কাছে পৌঁছাবার জন্য ফটোগ্রাফি শুরু করেছি। ফটোগ্রাফিতে ডিপ্লোমা করেছি। আর আপনার কাছে অচেনা থাকবার ভান করেছি। গত কয়েকদিন ধরে ভাবছিলাম এবার আপনার সঙ্গে দেখা করে, আপনার ছবি তোলার ভান করে কোনো এক ফাঁকে কথাগুলো আপনাকে বলে দেব। আপনি আমাকে খুবই অবজ্ঞা করেছেন। আমার ভালোবাসা, প্রেম কোনোটাই আপনি পাত্তা দেননি। আমার নারীত্বকে প্রচণ্ড আঘাত করেছিলেন, তীব্র অপমান করেছিলেন আমাকে। পুরো নুড হয়ে কোন অবস্থায় গেলে একটি মেয়ে যাকে চায় তার সামনে দাঁড়ায়? আমি সেদিন সবকিছুর জন্য তৈরি ছিলাম। যদি আপনি আমাকে বিছানায় নিতেন, তাতেও আমি বাধা দিতাম না। এতটাই পাগল আমি আপনার জন্য ছিলাম। সেদিনই শেষ। তার পর আপনি আর সেই আমাকে বহু বছর দেখেননি। দেখছেন বছরখানেক ধরে। আপনি কোনো অনুষ্ঠানে গেলেই আমি আপনার ছবি তোলার জন্য হাজির হই। আপনি আড়চোখে আমাকে দেখেন, চেনার চেষ্টা করেন, চিনতে পারেন না।

শুভ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সিগ্রেটে টান দিয়ে বলল, তার পর থেকে আমি এক ধরনের অপরাধবোধে ভুগেছি। আমার আচরণটা একদমই ঠিক ছিল না তোমার সঙ্গে। ব্যাপারটা আমি অন্যভাবেও হ্যান্ডেল করতে পারতাম। তোমাকে বোঝাতে পারতাম, তোমার সঙ্গে আমার বয়সের ব্যবধান অনেক। তুমি অল্পবয়সি একটা মেয়ে। তোমার সামনে পুরো জীবন পড়ে আছে। মরীচিকার পেছনে তুমি ছুটো না। তুমি পড়াশোনা শেষ করো। ক্যারিয়ার তৈরি করো। এক সময় দেখবে আমার প্রতি আকর্ষণ কমে গেছে। তার পর পছন্দমতো বিয়ে করো। অর্থাৎ তোমাকে পথ দেখাতে পারতাম। ফেরাতে পারতাম।

তা পারতেন না। আমি ফিরতাম না।

তার মানে এখনও তুমি তোমার জায়গায় আছ?

শুভর চোখের দিকে তাকিয়ে চৈতি পরিষ্কার গলায় বলল, আছি। একটুও সরিনি।

এখনও আমাকে বিয়ে করতে চাও?

চাই।

আমার বয়স কত, জানো?

জানি। তিপ্পান্ন।

আর তোমার?

ছাব্বিশ। আপনার অর্ধেকেরও কম। তাতে আমার কিছুই যায়-আসে না। জানি আপনি জ্ঞান দিতে শুরু করবেন, আমাদের বাচ্চাকাচ্চা হলে আপনি বড় করে যেতে পারবেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি ওসবের কিছুই ভাবি না। সন্তান আমি চাই না। আমি কিছুই চাই না। আপনি আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম। আমি আমার প্রেমের মানুষটির হাত ধরে জীবনটা কাটাতে চাই।

শুভ সিগ্রেটে শেষটান দিয়ে ছুড়ে ফেলল। তার পর উঠে দাঁড়াল। ডান হাতটা চৈতির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ধরো, হাত ধরো।

চোখের জলে ভাসতে ভাসতে শুভর হাতটা শক্ত করে ধরল চৈতি। ঠিক তখুনি কাছে কোথাও কোনো উঁচুগাছের ডালে বসে কোকিল পাখিটা চারদিক মাতিয়ে ডেকে উঠল। গাছের পাতা আনন্দে কোলাহল করে উঠল। ফাগুন দিনের মধ্য দুপুরের আলো যেন আরও উজ্জ্বল হলো, আরও মায়াবী হলো। বসন্ত বাতাস প্রকৃতির অভ্যন্তর থেকে বলল, ভালোবাসি, ভালোবাসি। ফুলের বনে মধু নিতে এসে ভ্রমর থামাল তার গুঞ্জন। ফুলেরা সুবাস ছড়িয়ে মাতোয়ারা করল ফাগুনবেলা। সব আয়োজনই শুভ আর চৈতির জন্য।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা