× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বৃন্দাবনের রাস্তায় কোনো কোনো নির্ঘুম রাত আমাদের

সুমন্ত আসলাম

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:২৭ পিএম

বৃন্দাবনের রাস্তায় কোনো কোনো নির্ঘুম রাত আমাদের

মুগ্ধ চোখে আমি নুভার দিকে তাকালাম। মুগ্ধতা নুভার চোখেও। অথচ দুজন দুই জিনিস দেখছি। একটা আলো নড়ছে ওর পায়ের কাছে, ও তাকিয়ে আছে সেদিকে। হঠাৎ আমার একটা হাত খামচে ধরল, উদগ্রীবতা ওর মাঝে, একটা জোনাকি এনে দিতে পারবে?

পারব।

এখনই?

হ্যাঁ, এখনই।

এই মিথ্যেটুকু বলেই আমি অন্যদিকে তাকালাম। মাঝরাতের এই শহরে সব পাওয়া যায়। ওই যে রাস্তার ওপাশে, ছোট্ট সোনালু গাছটার নিচে, আধো আলো-ছায়ায়, একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, টাকা দিলে তাকে পাওয়া যাবে। তার ঠিক ডান পাশে, ঝা ঝকঝকে বাড়িটা থেকে যে একটু পরপর চিৎকার ভেসে আসছে, ওখানে জীবনের সংজ্ঞা পাওয়া যাবে। মাঝরাস্তার কাছাকাছি সাদা ধবধবে লম্বা গাড়িটা থামিয়ে যে ভদ্রলোক মোবাইলে কথা বলছেন আধাঘণ্টা, তার কাছে প্রতিদিনের অঙ্ক না মেলানোর যন্ত্রণা পাওয়া যাবে। আর ওই যে, নান্না বিরিয়ানির দোকানের সামনে ফেলে দেওয়া সারা দিনের উচ্ছিষ্টের মাঝে যে মানুষটা রাতের খাবার খুঁজছে, তার কাছে ক্ষুধার গল্প পাওয়া যাবে। একা একা ঘুরে বেড়ানো, ফুটপাতে হঠাৎ শুয়ে পড়া বৃদ্ধটাকে চেপে ধরলেই একটা জীবন পাওয়া যাবে, যে জীবনের কোনো মানে নেই, মানে ছিলও না কখনও। কিন্তু এই শহরে তন্নতন্ন করে খুঁজলে লেজে টিপটিপ আগুন জ্বলা একটা জোনাকি পাওয়া যাবে না! অথচ এ শহরটা একসময় জোনাকিদের ছিল!

তাহলে একটা জোনাকি এনে দাও। নুভার গলায় কাতরতা।

ফুটপাতে ঠেসে থাকা নুভার হাতটা নিজের হাতে নিই আমি। ও এখন অন্যদিকে তাকিয়ে, পায়ের কাছের আলোর দিকে। আমি হাতটা আরও একটু চেপে ধরি ওর, জোনাকি দিয়ে কী করবে?

মুঠোর ভেতর নেব, ভরে রাখব সেখানে।

মুঠোয় ভরা জিনিস তো দেখা যায় না!

অনুভব করা যায়। দূরাগত গলা নুভার, অনুভব করব চুপচাপ। একটা ছোট্ট দেহ আমার মুঠোর ভেতর একটু একটু নড়ছে, বিড়বিড় পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে, এ ব্যাপারটা আমি অনুভব করতে চাই।

শুধু এটুকুই?

না, আরও আছে... কথা শেষ করে না নুভা। শাঁ করে একটা গাড়ি চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। সেটার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে হাতটা ছাড়িয়ে নেয় আমার হাত থেকে। সিঁথি কাটার মতো চুলে বুলিয়ে নেয় সেই হাতটা, নিচু করে ফেলে মাথা। আমি ওকে আরও একটু সময় দিই। কোনো তাড়া নেই আমার। ও বলবে, আমি শুনব। আমার কাজ আপাতত এটুকুই।

ওই যে মানুষটা, হোটেলের ফেলে দেওয়া খাবারে নিজের খাবার খুঁজছে, চলো আমরাও খুঁজি। আমার চোখের দিকে তাকাল নুভা, খুঁজে দেখার মধ্যে একটা আনন্দ আছে, জানো তো?

জানি। উত্তর দিলাম আমি।

কীভাবে জানো?

প্রতিটি মানুষই কিছু না কিছু খোঁজে, প্রতিদিন খোঁজে।

তুমি খোঁজো? আমার দিকে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি আগের জায়গায় স্থির করল নুভা।

খুঁজি।

কী খোঁজো?

মানুষ খুঁজি।

মানুষ! নুভার গলায় আকুতি।

মানুষটা মাটির মতো শান্ত, স্থির। চোখ দুটো ঘাসফুল, ছুঁতে চায় মন। শরতের কাশফুলের মতো যার স্পর্শ-চোখ বুজে যায় আবেশে। ছায়ার মতো স্নিগ্ধ, ঠাঁই নেওয়া যায় নীরবে। বৃষ্টির মতো কাঙ্খিত-অপেক্ষা করা যায় বহুদিন।

চোখ দুটো পূর্ণ হয়ে যায় নুভার। ও ফিরে তাকায় আমার দিকে, সম্পূর্ণ আমাকে দেখে। আমি ওকে দেখি। মিহি একটা বাতাস ছুঁয়ে যায় আমাদের, হঠাৎ। মাঝরাতের এই আধো নীরবতায় আরও নীরব হয়ে যাই আমরা। ঠিক তখনই কর্কশ স্বরে একটা পাখি ডেকে ওঠে রাস্তা বিভাজকে, ওখানে দাঁড়ানো বুড়ো হয়ে যাওয়া কড়ই গাছটায়। নুভা ফিরে তাকাল সেদিকে, নিচু গলায় বলল, মাঝরাতের পাখি দেখতে কেমন?

আমি কখনও দেখিনি।

ওদের স্বর এত কর্কশ শোনায়!

সম্ভবত কাউকে খুঁজে বেড়ায়।

মানুষের মতো?

নিজের ভেতর দাঁড় টানি আমি। নুভাকে আর এগোতে দেওয়া যাবে না এদিকে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে হবে। আমি ওর আরও একটু কাছ ঘেঁষে বসি। আরও একটু বাতাস ছুঁয়ে যায় আমাদের। উড়তে থাকা ওর চুলগুলোর দিকে তাকাই, গভীর জলের মতো রহস্যময়।

আমি এখন হাঁটব।

চমকে উঠি আমি। আমি জানি নুভা এখন হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যাবে, এই মাঝরাতে। কিন্তু ওখানে যেতে দেওয়া যাবে না ওকে। থামাতে হবে যে করেই হোক। আমি ওর পায়ের কাছে থেমে থাকা সেই টুকরো আলোর দিকে তাকাই। নুভাও তাকিয়ে আছে সেদিকে।

চলো। নুভার গলায় তাড়া। হাত টেনে ধরে ও আমার, বললাম না আমি হাঁটব।

হাঁটতে তোমার ভালো লাগে? প্রসঙ্গ পাল্টানোর পাঁয়তারা আমার।

খুব, খু-উ-ব।

একা, না দুজন? ওদিকে তাকিয়ে আছে ও। একটু ঝুঁকে বসে ওর মুখটা দেখার চেষ্টা করি আমি, না অনেকজন?

একা।

একা! কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করি আমি, কেন?

নিজের সঙ্গে কথা বলা যায়।

কী কথা বলো তুমি তখন? হাসি হাসি করে ফেলি মুখটা, কেবল নিজের সঙ্গে?

অনেক কথা।

কিছু বলা যাবে আমাকে?

যাবে। আমি আসলে... থেমে যায় নুভা। আড়চোখে আমার দিকে তাকায় আবার। আমি ওর দুই চোখ দেখি। লাইটপোস্টের ঘোলাটে আলোয় বেশ অস্পষ্ট দেখায় ও দুটো। আমি তবু বুঝে যাই ছলছল করে উঠেছে পুরো ভাগ, নাকের ডগাটা চিকচিক করছে, ঈষৎ লাল হয়ে গেছে দুই গালই। কেবল ঠোঁট দুটো শক্ত, আগের মতোই।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দূরত্ব কোনটি, জানো? নুভাকে জিজ্ঞেস করি, প্রসঙ্গ বদলানোর আপ্রাণ চেষ্টা আমার।

না।

একটু ভাবো, তারপর বলো।

জীবন থেকে মৃত্যু?

না।

তাহলে?

সবচেয়ে বড় দূরত্ব হলো যখন আমি তোমার সামনে থাকি, কিন্তু তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি।

এটা তো তোমার কথা না।

সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের। নুভার মেলে রাখা হাতটা আমি নিজের হাতে নিই আবার, আমাদের প্রত্যেকের ভেতর একজন রবীন্দ্রনাথ বাস করেন। কিংবা আমাদের প্রত্যেকের একটা রবীন্দ্রমন আছে।

আমি যখন একা একা হাঁটি, স্পষ্ট টের পাই, আমি একা নই, কেউ একজন আছে আমার সঙ্গে, হাঁটছে। পাশাপাশি না, একটু পেছনে, বাঁয়ে। কোনো কিছু জানতে চাইলে দ্রুত পাশে এসে দাঁড়ায়। মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শোনে।

তোমার প্রশ্নের জবাব দেয়?

কখনও দেয়, কখনো... কিছু একটা মনে করার মতো থেমে যায় নুভা। উচ্ছল হয়ে ওঠে হঠাৎ। সম্পূর্ণ ঘুরে বসে আমার দিকে। নেমে আসা চুলগুলো পেছনে ঠেলে দেয় দ্রুত। মোলায়েম করে একটা হাত রাখে আমার হাঁটুতে, একদিন হাঁটতে হাঁটতে আমি ভীষণ ক্লান্ত।

নিশ্চয়ই দুপুর ছিল সেদিন?

হ্যাঁ, দুপুর ছিল। নুভার গলায় উচ্ছ্বাস, তুমি জানলে কী করে?

রোদও ছিল প্রচণ্ড।

হ্যাঁ, রোদও ছিল। এই... উচ্ছ্বাস বেড়ে গেছে গেছে নুভার, এটাও জানো তুমি!

প্রতিটি দুপুরেই কিছু না কিছু রোদ থাকে। কোনো কোনো দুপুর অবশ্য আলাদা। সেই রোদ-ছাওয়া দুপুরে কারা হাঁটে, জানো?

না। স্পষ্ট জবাব দেয় নুভা।

অনেক কথা জমা আছে যাদের, বলারও আছে। কিন্তু শোনার মানুষ নেই তেমন।

হ্যাঁ। গলাটা কাতর করে ফেলে নুভা।

মানুষ না থাকুক, তারা তবু কথা বলে যায়। সেই কথা বাতাস শোনে। শিস কেটে উড়ে যাওয়া পাখি শোনে। হঠাৎ ডানা থমকানো প্রজাপতি শোনে। এমনকি সব সময় আমাদের আশপাশে অথচ আড়ালে থাকা সেই মানুষটিও শোনে।

ও আল্লাহ, এটাও জানো তুমি!

জানো তুমিও। একটা হাত নিয়ে আমি নুভার বাঁ চিবুকে রাখি, তুমি জানো বলেই তো আমি জানি। একটা শিশিরবিন্দু দেখে যেমন থমকে যাও তুমি, আমিও। রংধনুর রঙে বিভোর হও তুমি, আমিও। আর হঠাৎ খসে পড়া পাতা থেকে তুমি যেমন বেদনায় মাখো নিজেকে, বেদনা ভরে যায় আমার বুকেও। একজন নুভা তুমি, এই একজন তুমি ভালোবাসো বলেই আমি আয়ান ভালোবাসতে শিখেছি। তুমিই তো আমাকে শিখিয়েছো, ভালো বাসতে বাসতেই মরে যেতে হয় আমাদের, যে মরে যাওয়াটা একটু একটু করে আমরা প্রতিদিন মরি।

মাথা নিচু করে ফেলে নুভা। আমি হাত রাখি ওর মাথায়। ও আলতো করে নিচু করে ফেলে মাথাটা, ঠেকিয়ে দেয় আমার কাঁধে। ও স্থির, স্থির হয়ে যাই আমিও। একটা অনুভূতি আঁকড়ে ধরে আমাকে, আচ্ছন্ন হয়ে যাই একটা সুখে, নীলচে একটা আভা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। সেটার ভেতর দিয়ে পুরো আকাশটা দেখি, নীলচে দেখা যায় আকাশটাও।

সোজা হয়ে বসে নুভা হঠাৎ। দুই চোখ মেলে আমার চোখে তাকায়। ওর চাউনিতে চমকে উঠি আমি। যেন আমি অচেনা কেউ, কোনো দিন কোথাও দেখেছে কি না মনে আসছে না তা, কিংবা মস্ত একটা স্বপ্ন দেখছিল সে এতক্ষণ, হঠাৎ ঘুম ভেঙেছে তার।

একটা অবিশ্বাস্য কথা বলব আমি তোমাকে। নুভার গলাটা অনেক দূরের শোনায়।

বলো।

কথাটা বিশ্বাস করবে না তুমি।

আমি তোমার সব কথা বিশ্বাস করি।

আমি যে একটা মানুষ খুন করেছি, এটাও? দ্রুত নিজের মাঝে সংশোধন আনার মতো নুভা বলে ওঠে, না না, একটা না, দুটো।

তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়া দরকার, কিন্তু পারছি না। কোনোভাবেই নুভার হ্যাঁ শুনতে চাওয়ার প্রত্যাশায় না বলা যাবে না, কখনওই না। আমি এটা জানি, মেনেও চলি। মুক্তি পেতে চাওয়া মানুষের মতো আমি দ্রুত গলায় বলি, হ্যাঁ, এটাও বিশ্বাস করি।

সত্যি?

হ্যাঁ সত্যি।

আমি আরও খুন করব। দুই ঠোঁট হাসিতে ভরে যায় নুভার।

প্রসঙ্গ পাল্টানো দরকার দ্রুত। আমি ওর হাসির মাত্রাটা আরও বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলি, তোমার কথাটা এবার বলো। আমার শুনতে ইচ্ছে করছে খুব।

হাঁটছিলাম একদিন। খুব পানি খেতে ইচ্ছে করল আমার। আশপাশে তাকিয়ে দেখি কোনো স্টোর নেই। কিন্তু পিপাসাটা বেড়ে যাচ্ছে। একটু থামি আমি। হাঁটা বন্ধ করে এদিক-ওদিক তাকাই। হঠাৎ পাশ ফিরে দেখি একটা ছেলে দাঁড়িয়ে, হাতে একটা পানির বোতল। বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে। দ্রুত ক্যাপটা খুলে মুখে দিই আমি। অনেকটুকু পানি খাওয়ার পর সামনে তাকাই আবার। দেখি কেউ নেই। আমি একবার আমার হাতের দিকে তাকাই, বোতলটা আছে; আবার সামনের দিকে তাকাই, ছেলেটা নেই। আমি কিছুতেই ভেবে পাই না, আমার হাতে হঠাৎ এ বোতলটা এলো কোথা থেকে!

নুভার এই হাতের বোতলের একটা ব্যাখ্যা আছে আমার কাছে। কিন্তু আমি তা বলতে যাব না ওকে। ও বলেছে, আমি মুগ্ধ হয়ে শুনেছি, বিশ্বাস করার সমস্ত আয়োজন এনেছি আমার চোখে-মুখে, অবয়বেও।

আরও একটা কথা শুনবে?,

সিওর। বিগলিত একটা হাসি দিই আমি, তোমার কথা শুনতে আমার ভালো লাগে নুভা।

কেন ভালো লাগে? এবার বাচ্চাদের মতো হেসে ওঠে নুভা।

যাকে ভালো লাগে, তার ছায়াও ভালো লাগে। চোখ দুটো বিশেষ ভঙ্গিমা করি আমি, কথাটা কে বলেছিল আমাকে?

আমি। বাচ্চাদের আদলে দুই হাত এক করে নুভা, হাততালি দিতে নিতেই থেমে যায়।

ভালোলাগা মানুষের ছায়া ভালো লাগলে, তার কথাও ভালো লাগে। এমনকি তার স্পর্শে থাকা চিনে বাদামের খোসাটাও। নুভার চোখ দুটো একটু বড় হয়ে গেছে। আমি ওর ডান চোখটা ছুঁয়ে দিয়ে বলি, একদিন, ওই যে আকাশটা দেখছো... বাঁ হাতটা আকাশের দিকে বাড়াই আমি, ওর ঠিক ওপাশে একটা কফির দোকান আছে, আইসক্রিমেরও। আমরা ওখানে যাব, বসে থাকব অনেকক্ষণ। গল্প করব। মাঝে মাঝে চুপ হয়ে যাব একেবারে। কোনো কথা হবে না তখন। আমরা দুজন কেবল দুজনকে দেখব। তোমার চোখের ভেতর যে আমার ছায়াটা পড়বে, তা দেখব। দেখতে দেখতে আমি হঠাৎ হারিয়ে যাব, মিলিয়ে যাব নিমেষে।

কোথায় যাবে তুমি?

তা তো জানি না।

ফিরে আসবে না আবার?

তুমি চাইলে আসব।

চোখ দুটো হঠাৎ ভিজে ওঠে নুভার। আমি মাথায় হাত রাখি আবার। সঙ্গে সঙ্গে কেমন যেন চমকে ওঠে ও। পাশ ফিরে তাকায়। পেছনে, ঘুরে সামনে। আমার এপাশেও।

অসংলগ্ন হয়ে যাচ্ছে নুভা। আমি টের পাচ্ছি, বদলে যাচ্ছে ও। কিন্তু এ বদলে যাওয়াও থামাতে হবে। এখনই। ওর দুই হাত আমার দুই হাতের মাঝে আনি আমি। ঝটকা দিয়ে আরও একটু কাছে আনি আমার। বলি, একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো তুমি?

কী? অস্ফুট শোনায় নুভার স্বর।

কেউ একজন ছিল, পাশে, আমাদের দুজনের পাশেই।

হ্যাঁ, ছিল তো। নুভা অস্থির হয়ে যায়, আমি তোমাকে এ কথাটাই বলতে চাচ্ছিলাম।

তুমি জানো মানুষটা কে

জানি।

আমিও। নুভা আর কিছু বলে না, আমিও না। দূর থেকে একটা শব্দ আসছিল একটানা, আমরা দুজনই শুনতে থাকি তা। রাত বাড়ছে। প্রিয়জনের টানে বাড়ি ফেরা মানুষগুলোর দু-এক জন এখনও রয়ে গেছে ক্রমে নির্জন হতে যাওয়া এই রাস্তায়। পোয়াতি একটা বিড়াল পাশ দিয়ে যেতে যেতে মিউ করে ওঠে। নুভা ফিরে তাকায় তার দিকে। দুই হাতের আঁজলায় মুখের দুই পাশটা চেপে ধরি আমি ওর। নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে বলি, তোমার পায়ের কাছে এতক্ষণ যে আলোটা ছিল, ওটা কীসের আলো, জানো?

নুভা কোরো উত্তর দেয় না, আমিও কিছু বলি না। কেবল টের পাই মিহি বাতাসের সঙ্গে চাঁদের আলোও ভাসছে। সেই আলোয় আমি ভাসছি, নুভাও ভাসছে। নুভা হঠাৎ উচ্ছল হয়ে ওঠে, একটা কথা বলি তোমাকে?

নুভার দুই ঠোঁটে একটা আঙুল ঠেসে দিই আমি না, তুমি না, আমিও না। অথচ কথা না বলেও আমরা এখন কথা বলব, অনেক কথা, অনেক কথা...। তারপর ভাসতে থাকব ইচ্ছেমতো।

 

ভাসতে ভাসতে হঠাৎ চোখ বুজে ফেলি আমরা। নুভা আমার বুজে যাওয়া চোখে হাত রাখে, আমি নুভার।

আমরা ভাসছি, ভাসছি আমরা।

নুভার হাতের উল্টো দিকে একটা খামচির দাগ, চোখে পড়ল একটু আগে! কিসের দাগ, ভাবছি তা-ও।

কিছুক্ষণ আগের পোয়াতি বিড়ালটা ফিরে এসেছে আবার। মিউ মিউ করছে নুভার পায়ের কাছে। হাত বাড়াল নুভা, এগিয়ে এলো ওটা, ছোট্ট একটা লাফে উঠে বসল ওর কোলে।

টুকরো সেই আলোটার দিকে তাকিয়ে আছি আমরা এখন তিনজনই। নুভা হাত বোলাচ্ছে বিড়ালটার গায়ে, আমি নুভার গায়ে। চোখ বুজে এসেছে দুজনের। কেবল আমার দুই চোখ স্থির, থমকে আছে আলোতে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা