× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিদ্দিকী

ইকরাম কবীর

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:০৫ পিএম

সিদ্দিকী

বলতে বলতে সিদ্দিকীর চোখ ছলছল করে। তার চোখে অশ্রুর উপস্থিতি চশমার পুরু কাচ ভেদ করেও দেখা যায়। টলটল করছে। আমি বিব্রত হই। রুকাইয়ার কথা বলতে গিয়ে এই প্রথম তার চোখে জল এলো। তবে সিদ্দিকী নিজে লজ্জা পায় না। চোখ থেকে জল মোছারও চেষ্টা করে না। কারও চোখের জলের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই আর তার কথা শুনি।

সে বলে, এ জল আনন্দের, রবি। খুশিতে ঝরছে। কষ্টের নয়। আপনাকে এতক্ষণ যা বললাম সেই অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করেই আমার চোখে জল এলো। রুকাইয়া আজ আমার হাতে হাত রেখেছিল। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে, রবি; এ জল আনন্দের।

আমি বুঝতে পারি। সিদ্দিকীর মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভালোবাসার কথা আমি আর কাউকে আজোবধি বলতে শুনিনি। অপেক্ষা করি তার পরের কথাগুলো শোনার জন্য। সে আর কিছু বলে না। আমি বুঝি। সিদ্দিকী এমনই। কিছুটা বলার পর বুঝে নিতে হবে। কোনো না কোনো রহস্য সে জিইয়ে রাখবে। আমি না হয়ে অন্য কেউ হলে আর কোনো কথা না শুনে উঠে চলে যেত। আমার ভালো লাগে। মাঝে মাঝে সিদ্দিকী মন উজাড় করে আমার সঙ্গে কথা বলে। বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গিয়ে সে আমার মনের কথা জানতে চায়। আমি বলতে পারি না। সিদ্দিকী যেভাবে মনের কথা বলে, আমি বলতে পারি না। সে পারে তাই ওর কথা ভালো লাগে। সিদ্দিকী ছাড়া আর কেউ আমায় তার মনের কথা শুনিয়েছে বলে আমি মনে করতে পারি না।

রবি, কাল দেখা হবে। এই বলে সিদ্দিকী রাত সাড়ে ১১টায় অফিসের বেবিট্যাক্সিতে বাড়ি যাবে বলে উঠে চলে যায়। আমি যাব ১২টার গাড়িতে। কালকের জন্য কিছু কাজ গুছিয়ে যেতে হবে।

আমি এবং সিদ্দিকী একই কাগজে কাজ করি। সে ফিচার লেখে, আমি কূটনীতিকদের পেছন পেছন দৌড়াই। আমাদের অফিসে আরও অনেক প্রতিবেদক আছে। সবাই সবার কাজ ও আড্ডা নিয়ে মশগুল থাকি। প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে, হাটে-মাঠে ঘুরে, বেলা শেষে আপিসে এসে দুই ছিলিম লিখে দিয়ে ভাবি, আগামীকাল সকালে দেশবাসী আমাদের লেখা পড়ে পরিণত হবে। সিদ্দিকী এমন নয়। আগে সে নিজে জানতে চায়। তার কাজের প্রভাব নিয়ে ভাবে না। নিজের নাম ছাপিয়ে দেশবাসীর কাছে বিখ্যাত হতে চায় না। মানুষের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় সে গবেষণা করে বের করে। তার লেখাগুলো অতিমাত্রায় আবেগী হয়। প্রতিদিন দু-তিনটি লেখা জমা দিয়ে সে বাড়ি যায়। আমাদের কাগজের কর্তাব্যক্তিরা তার এত লেখা কোথায় ছাপবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে হাবুডুবু খান। সিদ্দিকীর লেখা হাজারো মানুষ পড়ে এবং তারা আমাদের পত্রিকায় চিঠি লিখেও জানায়। কোনো রাজনৈতিক প্রতিবেদকের লেখা নিয়েও এমন চিঠিপত্তর আসতে দেখিনি। সে কারণেই আমাদের আপিসে সিদ্দিকীর প্রতি সবার এক ধরনের শ্রদ্ধা তৈরি হয়েছে।

পরদিন সকালে আমি একবার আপিসে এলেও সারা দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা হয় না। সন্ধ্যায় অন্য সহযাত্রীরা আসেন, কিন্তু সিদ্দিকী আসে না। তার প্রেমের গল্প আমার আরও শুনতে ইচ্ছা করে। তার এ গল্প আমায় কেমন যেন আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। আপিসের অন্য কেউ তাদের প্রেমের গল্প বলেন না। সিদ্দিকী বলে। আমার নিজের জীবনে প্রেমের অনুপস্থিতিই বোধহয় রুকাইয়ার প্রেমগাথা জানতে আমার মাঝে আগ্রহ তৈরি করে। প্রেম আমায় টানে না তা নয়। আমি আসলে সাহস পাই না। আমার ভালোবাসার সাহস সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হারিয়ে গেছে। অনেক বান্ধবীজনকে আকর্ষিত করার মনোদৈহিক যোগ্যতা হয়তো আমার ছিল, তবে পকেটে ফুচকা কেনার মতো অর্থ না থাকায় তারা আকর্ষণ হারিয়েছেন। তারপর আমার আর সাহস হয়নি। সিদ্দিকীর সাহস আমার ভালো লাগে। পেশায় ছাপোষা সাংবাদিক হয়েও যে মানুষটি জীবনে প্রেম আহ্বান করে, তাকে পছন্দ না করে পারা যায় না।

আমরা সারা দিন পথে-প্রান্তরে হেঁটে, সরকারি- বেসরকারি কর্তাদের গালমন্দ খেয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসি আপিসে দুই কলম লিখব বলে। সিদ্দিকী এসব বোঝে। সে বলে, রবি, আপনি কর্তাদের নিয়ে লেখেন কেন? মানুষ নিয়ে লেখেন। কর্তাদের কোনো সমস্যা নেই; সমস্যা সব মানুষের; মানুষ কর্তাদের কথা শুনতে চায় না; তাদের নিজেদের গল্পগুলো শুনতে চায়।

পরদিন সন্ধ্যায় একটু আগেই অফিসে ফিরতে পারি। বিকাল ৩টার দিকে। দেখি সিদ্দিকী তার টেবিলে বসে আছে। চশমার কাচের ভেতর দিয়ে তার দৃষ্টি দেখে মনে হয় সে যেন আমারই অপেক্ষা করছিল। চশমার কাচ ভেদ করে সিদ্দিকীর চোখগুলো বড়র চেয়েও বড় মনে হয়। আমি তাকে কখনও চশমা খুলতে দেখিনি। রুকাইয়ার কথা বলতে গিয়ে যখন তার চোখে জল এসেছিল, তখনও সে চশমা খোলেনি। তার বড় আকারের চোখ দেখতে বেশ অন্যরকম লাগে।

রবি, বসেন; খবর আছে। আপনাকে না বলে শান্তি পাচ্ছি না। আমি কিন্তু খুররমকে চিকেন-টিক্কা আনতে বলে দিয়েছি; আমার মনে হয়েছে আপনি এই সময়ই আপিসে ঢুকবেন; চিকেন-টিক্কা চলবে তো? নাকি ডিম-পরোটা খাবেন?

মনে হয় তাকে বলি- আরে, টিক্কাফিক্কা রাখেন; আগে বলেন কী খবর দিতে চাইছেন? কিছু বলি না। আমার চাউনি দিয়ে শুধু বোঝানোর চেষ্টা করি যে আমি তার কথা শুনতে চাইছি।

রুকুর সঙ্গে আজও দেখা হয়েছে। ওর আপিসে গিয়ে ওকে নিয়ে আমরা ধানমন্ডির খালের পাড়ে গিয়ে বসে ছিলাম পাশাপাশি। রুকাইয়ার গা থেকে অদ্ভুত এক বাসনা আসছিল; না, কোনো পারফিউমের গন্ধ নয়, গন্ধটা ওর গায়ের। আজ একটা গান গেয়ে শুনিয়েছি ওকে।

কী গান শোনালেন তাকে? আমি জানতে চাই।

সিদ্দিকী বলে, কী দ্বিধা রেখে গেলে মনে...

সিদ্দিকীর প্রেমিকা কেমন দেখতে, আমি কল্পনা করি। কেমন সে?

আপনি বললেন ওনার আপিসে গিয়েছিলেন। উনি কোথায় কাজ করেন? আমি জানতে চাই।

আরে, এত কথা বলেছি আর সেটাই আপনাকে বলা হয়নি, রবি; রুকু একটা বিদেশি সংস্থায় কাজ করে; আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় রাস্তা বানানোর টাকা দিচ্ছে- জিজিআই। ও ওখানেই কাজ করে; ওই আপিসে গিয়েই তার সঙ্গে দেখা। রবি, আপনার মনে আছে আমাদের দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া কয়েকটি শিশু ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসেছিল। নয়জন ফিরেছিল। আমি ওদের সঙ্গে দেখা করে রিপোর্ট করেছিলাম? রুকাইয়ার অফিসই ওদের ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল। বাচ্চারা কেউ বাংলা বলতে পারত না; রুকু দোভাষীর কাজ করছিল, রুকাইয়া হিন্দি জানে। তখন ওর সঙ্গে পরিচয়।

সিদ্দিকী আমায় কেন রুকাইয়ার আপিসের খবর জানিয়ে দিল! সে কি চায় তার প্রেমিকার প্রতি আমার আগ্রহ বাড়ুক। না, তা কেন চাইবে! আমি জানতে চাওয়াতেই বলেছে। আরও আগে বলতে পারত তবে বলেনি। আগ্রহটা আমার সত্যিই বেড়েছে। জিজিআইতে আমি কয়েকবার গিয়েছি, তা অবশ্য সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে। আর গিয়েছিলাম একবার তাদের কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাক্ষাৎকার নিতে। এখন আর যাওয়ার তেমন প্রয়োজন হয় না; টেলিফোনেই কাজ সেরে নিই।

জানেন রবি, রুকু বলে আমি নাকি বেশি আবেগী; সে আমায় অস্তিত্ববাদ নিয়ে পড়াশোনা করতে বলে। আচ্ছা বলেন অস্তিত্ববাদীদের কি আবেগ নেই? তারা কি সব সময় যুক্তি দিয়েই জীবন চালাতে পারে? এই যে দেখেন, ও আমায় বিলেতি এক অস্তিত্ববাদী লেখক কলিন উইলসনের দ্য আউটসাইডার উপহার দিয়েছে।

সিদ্দিকী তার ব্যাগ থেকে বইটা বের করে আমায় দেখায়।

আজই দিয়েছে? আমি জানতে চাই।

না, গেল সপ্তাহে দিয়েছে; পড়ে ফেলেছি। দুর্দান্ত বই।

বইতে আছে কী? আমি জানতে চাই।

সিদ্দিকীর চোখ জ্বলজ্বল করে। বলে, হাঁ, হাঁ, এখানে লেখক মানবের জীবনের ও চিন্তার পরিধি দেখিয়েছেন; রোমান্টিকতার পরিধি, মূল্যবোধের পরিধি, মূল্যহীনতার পরিধি, ব্যথার পরিধি, ব্যক্তির পরিচয়, আগন্তুকত্ব। মানে আপনি সমাজের কাছে কতটা বহিরাগত হতে পারেন এসব কথা। জানেন, এই কলিন সাহেব দাবি করেছেন যে ইংল্যান্ডের রোমান্টিক কবিরাই সবার আগে অস্তিত্ববাদের কথা বলেছিলেন; দিস ম্যান ইজ সুপার্ব। আপনি পড়বেন, বইটা? নেন, নিয়ে যান।

আমি বেশ অবাক হই; যে বই তাকে রুকাইয়া দিয়েছে, তা সিদ্দিকী আমায় পড়তে দিচ্ছে! আমি হলে তো বইটা উইল করে লিখে দিতাম- আমার মৃত্যুর পর বইটি আমার সঙ্গে দাফন করতে হবে। আমি রুকাইয়ার দেওয়া বইটা নিই না। বলি, না, আপনি একটা রিভিউ করেন; মুস্তাফা ভাই উইক-এন্ড ম্যাগাজিনে ছাপতে পারবেন।

সিদ্দিকী খুব খুশি হয়। আমি এই লেখকের নাম কখনও শুনিনি। দেশের কোনো পত্রিকায় এই লেখককে নিয়ে কোনো লেখাও দেখিনি। আমাদের কোনো লেখক-সমালোচককেও কলিন উইলসনকে নিয়ে আলোচনা করতে শুনিনি। যেই নারী এই লেখকের লেখা পড়েন, তাকে নিয়ে আমার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।

আমি বলি, সিদ্দিকী; বইটি আপনার কাছে থাক। রুকাইয়া আপার উপহার, আপনার কাছে থাক; আপনাদের বিয়ে হোক, তারপর বইটা নিয়ে আমি পড়ব।

সিদ্দিকী হো হো করে হেসে ওঠে। সেদিন তার সঙ্গে আর কথা হয় না। আমি রিপোর্ট লিখতে বসি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিদ্দিকী কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলে, রবি, চললাম; আজ রাত হাইকোর্টের মাজারে কাটাব; মানুষ ওখানে বসে কী করে তা দেখব; কাল দুপুরে এসে লিখব; গুডনাইট।

নিজের রিপোর্ট লিখে, দুটি প্রেস রিলিজকে খবরে রূপান্তরের পর ভাবছি বাড়ি যাব, কিন্তু সম্পাদক তালীম সামাদ ভাই ডেকে পরদিন টেকনাফ যেতে নির্দেশ দিলেন। পরদিন দুপুর ১২টায় টেকনাফ পৌঁছে দেখি জিজিআই অফিস থেকেও দুজন এসেছেন। একজন পুরুষ, অন্যজন নারী। আমার মন কী যেন বলে ওঠে। জিজিআইয়ের নারী সদস্যের নাম জানার জন্য ব্যগ্রতা শনশন করে। তার সঙ্গে পরিচয়ও হয়, তিনি নুসরাত। অনেকক্ষণ কথা হয় তার সঙ্গে; শরণার্থীদের নিয়ে তারা কী কাজ করছেন সে বিষয়ে। নুসরাতের বাহ্যিক বিন্যাস অতি আনুভূতিক। ইংরেজি বেশি বলেন, বাংলা উচ্চারণে বিদেশি একটা টান আছে। তার সামনে বসে, রুকাইয়ার একটা ভাবতরঙ্গ খেলে যায় আমার মনে। একবার ভাবি, রুকাইয়ার কথা জানতে চাইব। চিন্তা করতেই আমার মস্তিষ্কের স্পন্দন বাড়ে; মনে দ্বিধা আসে। সিদ্দিকীর প্রতি বিশ্বস্ততার কারণে আর জানতে চাই না। তবে রুকাইয়াকে দেখার ব্যাকুলতা রয়েই যায়।

চার দিন পর ফিরে এক দিন ছুটি কাটিয়ে এসে দেখি সিদ্দিকী হেমিংওয়ের আত্মজীবনী পড়ছে। আমায় দেখেই সে বলে, জানেন, হেমিংওয়ের বাবা তাকে প্রায়ই বাগার বলে গালি দিতেন?

না, জানি না; আপনি হাইকোর্টের মাজারে কী পেলেন?

সিদ্দিকী শুনেও মনে হয় শুনল না। বলল, ওর বাবাকে সে একবার জিজ্ঞেস করল বাবা, বাগার মানে কী? বাবা বললেন, বাগার মিনস্ আ পারসন হু ফাকস্ হিমসেলফ্। সুপার না? কী সুন্দর বাবা! সব প্রশ্নের উত্তর দেন। আমার বাবাকে একবার বলেছিলাম আমি চিত্রশিল্পী হব; বাবা থাপ্পড় দেওয়ার ভঙ্গি করে বলেছিলেন, তোকে ডাক্তার হতে হবে। ভাগ্যিস বাবা আমায় বাগার বলেননি; হা হা হা।

সিদ্দিকী এ কথা আগেও বলেছে। বাবার জোরাজুরিতে সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিল। ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে, ভর্তি হয়ে, পড়তে পড়ড়ে, ফার্স্ট-প্রুফ পাস দিয়ে তার কাছে মনে হয়েছে সে বৃথাই সময় নষ্ট করছে। বেরিয়ে এসেছে, আর পড়াশোনা করেনি। অনেকেই নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে এসে ছোটখাটো কোনো একটা কলেজ থেকে বিএ-বিএসসি পাস করে; সে তা-ও করেনি। এই পত্রিকায় কাজ নেওয়ার আগ পর্যন্ত সিদ্দিকী কী করত তা আমায় বলেনি। আমি জানতে চেয়েছিলাম, সে এড়িয়ে গেছে।

আমি সিদ্দিকীর সঙ্গে চোখে চোখে কথা বলি। আমি আসলে জানতে চাই রুকাইয়ার কথা। নুসরাতের সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা তাকে জানাতে চাই। সিদ্দিকী বোঝে। কেমন করে বোঝে জানি না। হেমিংওয়ের বইটি দেখিয়ে সে বলে, রবি, এইটা রুকাইয়ার উপহার; ওই-ই আমায় পড়তে দিয়েছে।

আমি ব্যাকুলতর হই। নিজের আকুলতার কারণ খোঁজার চেষ্টা করি; চিন্তাটির তল খুঁজে পাই না। সিদ্দিকী এবং রুকাইয়ার সম্পর্কটি আবার প্রথম থেকে ভাববার চেষ্টা করি। রুকাইয়াকে নিয়ে আমি নিজের আগ্রহ নিবৃত্ত করতে পারছি না কেন? সিদ্দিকীর প্রেম নিয়ে কি আমার মনে কোনো ঈর্ষার জন্ম হয়েছে? আমি হলফ করে বলতে পারি, বিষয়টি তেমন নয়। বোধহয় আমার নিজের জীবনের শূন্যতার কারণেই রুকাইয়ার একটা কাল্পনিক প্রতিমা আমার মনে তৈরি হয়েছে। হতেই পারে; এটা ঈর্ষা নয়। তবে সমস্যাটা বেধেছে যখন আমি বুঝতে পারি রুকাইয়াকে একনজর দেখার একটা বাসনা আমার মনে ভিত গেড়েছে। এমন ইচ্ছা আমার মনে জেগেছে নুসরাতকে দেখার পর থেকে। এর আগে, সিদ্দিকীর কাছে তার প্রেমের গল্প শুনে আমি শুধুই বিস্মিত হতাম। নুসরাতের সঙ্গে পরিচয়ের পর সেই বিস্ময় এক ধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে।

নুসরাতের সঙ্গে দেখা করার জন্য একটা কাজ আবিষ্কার করি। তিনিই আমায় রুকাইয়াকে একনজর দেখার পথ করে দিতে পারেন। শরণার্থীদের মধ্যপ্রাচ্যে কাজের সুযোগের বিষয়টি আলাপ করে আসা যায়।

নুসরাতকে ফোন করি। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই দেখা করতে রাজি হয়ে যান। তার সঙ্গে আলাপে দুটি রিপোর্টের আইডিয়াও পেয়ে যাই। ঘণ্টাখানেক আলাপের পর তিনি তাদের আপিসের কয়েকজনের সঙ্গে আমার পরিচয়ও করিয়ে দেন। এ সূত্রেই তাকে বিদায় জানানোর সময় আমি তার কাছে জানতে চাই- আপা, রুকাইয়া আপা কি আপনাদের এখানে কাজ করেন?

উত্তর দিতে তাকে বেশি চিন্তা করতে হয় না। আমদের আপিসে রুকাইয়া নামে তো কেউ নেই ভাই।

তাই! আগে কি ছিলেন? আমি জানতে চাই। না, আমি এখানে কাজ শুরু করেছি পাঁচ বছর হয়ে গেল; এই সময়ে রুকাইয়া বলে আমাদের এখানে কোনো সহকর্মীকে পাইনি। না, এখানে ওই নামে কেউ নেই।

বাকরুদ্ধ হতে হতে নুসরাতের কাছ থেকে কোনোমতে বিদায় নিয়ে আমি বাইরে বের হই।

সিদ্দিকীর চশমা পরা চেহারাটা আমার মনে ভেসে ওঠে। সিদ্দিকী তাহলে কার গল্প সারাক্ষণ আমায় শোনায়!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা