× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমাদের কবিবাড়ি

টিয়া রাহমান

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১২ পিএম

আমাদের কবিবাড়ি

পাকিস্তান আমল, পঞ্চাশের শেষের দিক। তখন শ্যামলী সত্যিকার অর্থেই সবুজ-শ্যামলে ভরপুর। ততটা ঘনবসতি নেই। সবে এদিকটায় লোকজন বসবাস আরম্ভ করেছে। আব্বু (কবি শামসুর রাহমান) এখানে বসবাস শুরু করেন ১৯৯০ সালে। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শ্যামলীর বাড়িতেই আমরা এক সঙ্গে থেকেছি। এই বাড়িতে বসেই তিনি রচনা করেছেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলো। শ্যামলীর প্রধান সড়ক থেকে ১ নম্বর রাস্তা ধরে আমাদের বাড়িতে আসা কঠিন কাজ নয়। দ্বিতল বাড়িটাই বলে দেবে এখানে একজন কবি থাকতেন। খুবই সাধারণ একটা বাড়ি। বাড়ির সম্মুখভাগে নামফলকে কালো অক্ষরে লেখা আছে কবি শামসুর রাহমান। আমাদের বাড়ির সামনে এখনও দুটি আমগাছ, মেহেদির ডালপালা আর গুল্মলতা ছড়িয়ে আছে। বাড়ির একতলার একপাশে খানিকটা খোলা জায়গা রয়েছে। তার পাশেই লোহার তৈরি দোলনাটি আছে আগের মতোই। আব্বু অসুস্থ হওয়ার আগে নিয়মিত এখানে পায়চারি করতেন আর দোলনায় বসে দোল খেতেন। দোলনায় দোল খাওয়ার সঙ্গী ছিল আমাদের মেয়েরা। মাঝে-মধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্ন ঘুমে এখনও তাঁর পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই, শুনতে পাই তাঁর হাসির আওয়াজ। মনে হয় আব্বু বুঝি আগের মতোই পায়চারি করছেন, নয়তো নাতনিদের নিয়ে দোলনায় দোল খেতে খেতে কোনো ছড়া কেটে নাতনিদের সঙ্গে হাসিতে মেতে উঠেছেন। এই খোলা জায়গার চারপাশের দেয়ালে তাঁর কয়েকটি ছবি টাঙিয়েছি আমরা। কোনো ছবিতে লিখছেন, কোনোটাতে পড়ছেনÑ আবার কোনোটায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় ব্যস্ত। প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন এমন ছবিও আছে। প্রত্যেকটা ছবিই আমাদের কাছে এখনও জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়। মনে হয় ছবির মানুষটা এখনও আমাদের চারপাশে তাঁর সরব উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন।



আমাদের বাড়ির দোতলায় ছিল আব্বুর লেখার ও শোবার ঘর। দোতলায় উঠতে গেলে সব সময় আগেই চোখে পড়ে দেয়ালে টাঙানো আব্বুর ছবি। ছবিতে দাদি (কবির মা) তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ করছেন। সিঁড়ি ডিঙিয়ে দোতলায় উঠলেই আমাদের খাবার টেবিল ও তার পাশেই আব্বুর ঘর। এখনও সেই ঘরটা আমরা সেভাবেই রেখেছি। খাবার টেবিলটাও ঠিক আগের মতোই আছে। গোলাকার একটি টেবিলকে কেন্দ্র করে ছয়টি পুরোনো চেয়ার আব্বুর উপস্থিতি কামনা করে আছে। তার তিনপাশে দেয়ালে ছবি আর ছবি। আব্বুর ব্যক্তিগত ও আমাদের পারিবারিক এই ছবিগুলো আমাদের ইতিহাস। আব্বু, মা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, আমি, আমাদের মেয়েরা, আর আব্বুর সঙ্গে মায়ের আবেগময় সময়ের তোলা ছবিগুলো আমার কাছে খুবই জীবন্ত স্মৃতি। বিশেষত নায়না ও দীপিতার সঙ্গেই তাঁর বেশি ছবি। এই ছবিগুলোয় অন্যরকম এক মায়া ছড়িয়ে আছে। আমি কখনোই এই মায়ার বন্ধন ছিন্ন করতে পারব না। আব্বুর লেখার ঘরটি একেবারেই সাদামাটা। একটি কাঠের চেয়ার, একটি টেবিল আর তিনটি বুকসেলফ ছাড়া তেমন কিছুই নেই তাঁর ঘরে। ছিলও না তেমন কিছু। ছোট একটা খাট ছিল, ভেঙে যাওয়ায় সেটাই শুধু সরিয়েছি আমরা। আব্বুর লেখার টেবিলের সামনে আছে চারটি ছবি। দাদা-দাদি ও আম্মার সঙ্গে এই ছবিগুলো আব্বু একদম চোখের সামনে রেখেছিলেন। আব্বুর শোবার ঘরের অন্য প্রান্তে আরও একটি দরজা আছে। ওটা দিয়ে বারান্দায় যাওয়া যায়। অনেক সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতেন আব্বু। হয়তো মুক্ত বাতাসে নিজের মতো করে ভাবতেন কিছু। আমাদের বাড়ির সবকিছুই আগের মতো রয়ে গেছে। শুধু আব্বু নেই।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা