× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উড়ুক্কু-এর নীনা

নাসরীন জাহান

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৫৮ পিএম

উড়ুক্কু-এর নীনা

উড়ক্কু লেখার আগে আমার পাঁচটি গল্পের বই বেরিয়ে গেছে। পাঁচটা গল্পের বই বেরুনোর পর আমি তড়পাতে লাগলাম, কেন এখনও উপন্যাস লিখতে পারছি না? মনে হচ্ছিল- আমি কি শুধু গল্পই লিখে যাব, উপন্যাস লিখব না? সে সময়ে মাথার ভেতর কাজ করছিল, উপন্যাস না লিখলে আমার কথাসাহিত্য অসমাপ্ত থেকে যাবে। আমার গল্পগুলো ছিল সুররিয়ালিস্টিক। সেসব গল্প চাইলেও অনেকদূর এগোনো সম্ভব ছিল না। এর প্রভাব উপন্যাস লেখার চেষ্টার ক্ষেত্রেও ঘটেছে। যতবারই আমি উপন্যাস লিখতে গিয়েছি, ততবারই কিছু লাইন লিখে থেমে যেতে হতো। এটা আসলে আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। সব সময় অস্থিরতা কাজ করছিল। বিরাট একটা ক্ষোভও জন্মেছিল নিজের ভেতর। বিছানায় বসে বসে আমি অনেক গল্প লিখে ফেলেছি, কিন্তু উপন্যাস লিখতে গিয়ে কাহিনির বিস্তার ঘটাতে পারছিলাম না। কিছুতেই ৩০-৪০ পৃষ্ঠার বেশি আগাতে পারছিলাম না। বাক্য কমপ্যাক্ট হয়ে আসছিল। এজন্য মনের ভেতর গভীর যন্ত্রণা হতো।

আমি যখন অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াতাম, তখন খুব ভোরে উঠে স্কুলে চলে যেতাম। যাওয়া-আসার পথে পুরো পথচিত্র পর্যবেক্ষণ করা ছিল আমার প্রিয় একটা কাজ। এই আসা-যাওয়ার ভেতর আমার মস্তিষ্কে কী জানি একটা ঘুরতে শুরু করল। একবার দেখলাম, কুকুর মেরে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। এই দৃশ্যটা আমাকে খুবই যন্ত্রণা দিতে লাগল। আমি কষ্ট অনুভব করলাম। আমার গল্প লেখার যে ফর্ম, সেই ভাবনাতেও নাড়া খেল। আমি ভাবতে শুরু করলাম- আমার যে জীবন, আমার পরিপার্শ্ব, আমার দেখার যে জগৎ, সেটা নিয়েই উপন্যাস লেখা শুরু করি। লিখলেই যে বই প্রকাশ করতে হবে বিষয়টা এমন নয়। এমন চিন্তা থেকেই আসলে আমি উত্তম পুরুষে উড়ক্কু লেখা শুরু করি।

লিখতে গিয়েই আমার স্কুলে যাওয়া-আসার রাস্তার প্রসঙ্গটা চলে আসে। এই প্রথম আমার দেখা বাস্তবিক চিত্র উড়ক্কু উপন্যাসে উঠে আসে। সরাসরি আমার সাহিত্যের জগতের সঙ্গে বাস্তবের জগতের মেলবন্ধন আগে হয়নি। এক সময় আমি ঠিক করলাম আমার শৈশব থেকে জীবন ঘিরে যা দেখেছি, তার সঙ্গে আমার গড গিফটেড ইমাজিনেশনের জলরঙ- তেলরঙ মিশিয়ে যা হয় লিখব। পরে তো আমার বাড়ির কাছের অপার্থিব মেথরপট্টির দুর্গাপূজা থেকে শুরু করে একের পর এক কত কী দুর্বিষহ জীবন লেখায় আসতে লাগল। সেই সঙ্গে রাজনীতির যে প্রেক্ষাপট, বিশ্বচিত্র, যুদ্ধ, তাও কিন্তু আমি বাদ দিইনি। আমার উড়ক্কু উপন্যাসের পরতে পরতে নীনার চলা একদিকে, অন্যদিকে উপসাগরীয় যুদ্ধের বর্ণনা পাশাপাশি চলেছে। যুদ্ধ শেষে বুশ ব্যাপক লাভবান হয়েছে, আমার উপন্যাসও শেষ হয়েছে। এখানে বলা যায়, রাজনীতি ততটা প্রকটভাবে প্রকাশ হয়নি। নীনার জীবনটা ডিটেইলে এগিয়ে গেছে আর যুদ্ধের বর্ণনা এসেছে পত্রিকার টাইটেলের মতো। নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির চাকরিজীবী মেয়ের জীবন আখ্যান উড়ক্কু উপন্যাস। বিয়েপরবর্তী বিচ্ছেদ, অন্য এক পরিবারের সঙ্গে সাবলেটে বাস, দারিদ্র্য, গভীর মনঃকষ্ট, চাকরিতে আপস- সব মিলিয়ে দুর্বিষহ জীবনচিত্র হয়ে উঠেছে নীনা। এমন বন্ধুর সময়ে তার পরিচয় হয় মায়ের প্রেমিকের সঙ্গে। তার সান্নিধ্যে এসে নীনা নতুন করে জগৎ ও জীবনকে অন্যভাবে দেখতে ও চিনতে শেখে। মানুষটির প্রতি প্রগাঢ় এক শ্রদ্ধাবোধ জন্ম নেয় তার মনের গভীরে। এদিকে তার একদা স্বামী আবার মিলিত হতে চায় তার সঙ্গে। তবু মাঝেমধ্যে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়লে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে নীনা। সদ্যোজাত সন্তানের জন্ডিসে মৃত্যু, হাসপাতাল তোলপাড় করা চিৎকার তাকে আতঙ্কিত করে তোলে। ইতোমধ্যে ওমরের সঙ্গে তার পরিচয়। রাগ-ঘৃণা-আনন্দ-বেদনা কিছুই যেন তাকে ছুঁতে পারে না। সমাজের চোখে আত্মসম্মানবোধ-বিবর্জিত ছেলেটির সহমর্মিতায় নীনা আপ্লুত হয়। গর্ভে আবার সন্তানের উপস্থিতি টের পায় সে। প্রথম সন্তানের মৃত্যু সে ভুলতে পারে না। অথচ এই নতুন ভ্রƒণকে নষ্ট করে দিতেও মন চায় না। এই যে প্রবল আত্মসংকট, এটা তো আমাদের সমাজেরই সংকট। শুধু তো আমার উপন্যাসের নীনার সংকট না। এটা তো শুধু একজন নারীর সংকট না। আমাদের পুরো সমাজের সংকীর্ণতা ও সততারও চিত্র। সমাজের রূঢ় বাস্তবতার এক দৃশ্যকল্প। এসব দৃশ্যপটকে ধরেই নীনার নির্মাণ ও এগিয়ে চলা। আমার কষ্ট হয়, কেউ কেউ মূল চরিত্র নীনাকে ধরতে পারে না। নীনা চরিত্রে রীতিমতো স্থবির করে তোলার শক্তি রয়েছে, সেটা অনুভব করতে হবে। অনুভব না করলে আসলে উড়ক্কুর প্রেক্ষাপটও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।

নীনা চরিত্রটা প্রথম যখন ভেবেছি, তখন আমার নিজের নাম নাসরীন জাহান থেকে নীনা নামটা নিয়েছি। চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নানা কল্পনা এর সঙ্গে যোগ হয়েছে। দেখা যাচ্ছে আমার পরিবার ছিল খুব উদার, কিন্তু নীনার বাবা খুব কট্টর এক চরিত্র। আবার দেখা যাচ্ছে, নীনা স্বামী-সংসার জীবনে অসুখী- ডিভোর্স পাওয়া এক নারী। কিন্তু আমি নিজে একটি সুখী সংসার জীবনযাপন করছি। এই যে উত্তম পুরুষে লেখা উপন্যাস, সেখানে ঔপন্যাসিকের সঙ্গে একটা সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা পাঠক করে। কিন্তু বাস্তবে নীনা চরিত্রটা আসলে আমার পঠন-পাঠন, দেখা জগৎ থেকে প্রাপ্ত চিন্তার ফসল। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা