× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডিজিটাল দেশের কৃষ্ণবিবর এবং আমরা

অভিনব বসু

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৫ পিএম

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৬ পিএম

ডিজিটাল দেশের কৃষ্ণবিবর এবং আমরা

অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ডিজিটাল দেশের কৃষ্ণবিবর লেখক মঞ্জু সরকারের কয়েকটি ছোটগল্পের সঙ্কলন। ডিজিটাল দেশের কৃষ্ণবিবর শীর্ষক গল্পটি ছাড়াও রয়েছে আরও সাতটি গদ্য। প্রতিটি গল্পই সুপাঠ্য, ভাষা সহজ ও গঠন আকর্ষণীয়।

পুস্তকের প্রথম তিনটি গল্প অতিমারি পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে। ২০২০-২১ আমরা যেন এক অদ্ভুত জীবনযাপন করছি। বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী এক মাইক্রোস্কপিক ভাইরাসের হাতে তুমুল নাকানিচুবানি খেয়েছে, কোথাও এখনও খেয়ে চলেছে। লকডাউন, প্যান্ডেমিক, পরিযায়ী শ্রমিক- এসবই আমাদের কাছে সব নতুন নতুন শব্দ। এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। বেশকিছু গদ্য, উপন্যাসও প্রকাশিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা নিজস্ব পরিকাঠামো, পরিবেশের বাইরে বেরোতে সক্ষম হয়নি। এখানেই মঞ্জু সরকারের গল্পগুলো আলাদা। প্রথম গল্প সংক্রমণ করোনাকালে এক মধ্যবিত্ত বয়স্ক দম্পতির অসহায়তা তুলে ধরেছে। এক বাড়িতে আলাদা থাকা, নিজেদের সংক্রমণ নিয়ে দোলাচলের মাঝে প্রতিবেশী, কাজের মেয়ে সব জায়গা থেকেই আসতে থাকা নেতিবাচক খবর স্বামী-স্ত্রীর মাঝের দূরত্ব কখনও বাড়িয়ে দেয়; আবার কখনও তাদের কাছে টেনে নিয়ে আসে।

জেলে একা ডা. আফ্রিনা আক্তার গল্পটি নখ-দন্তযুক্ত হিংস্র মানুষদের। অতিমারির সুযোগ নিয়ে কীভাবে ব্যাঙের ছাতার মতন গজিয়ে উঠেছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন্দ্র, কীভাবে ব্যাক চ্যানেল দিয়ে চলে আসছে লাইসেন্স, আর জলের দরে বিকোচ্ছে কোভিড টেস্ট রেজাল্ট, সার্টিফিকেট! লোভ, লালসা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখন মানুষকে অতলে তলিয়ে নিয়ে যায় তা কোনো দিব্যদৃষ্টিতেই দেখা যায় না। মানুষ সম্পর্ক ব্যবহার করে সিঁড়ি বানায় কিন্তু যখন পিছলায় তখন সে হয়তো একা, সম্পর্কহীনদের সঙ্গে রাত্রিবাসে।

মুখোশের আড়ালে গল্পটি আমাদের শহরের সেই শ্রেণির মানুষকে নিয়ে লেখা, যাদের আমরা দেখতে পাই না। মধ্য-নিম্নবিত্তের সঙ্গী রিকশাওয়ালা। আমাদের কত ঝগড়া, ভালোবাসার সাক্ষী সে রিকশাওয়ালা। লকডাউনে যখন মধ্যবিত্তরা ছুটি কাটাচ্ছে, তখন এদেরও কাজের ছুটি। মানুষ ঘরের বাইরে না গেলে রিকশায় কে উঠবে? কমর রিকশাওয়ালা বুঝে উঠতে পারে না- সে শহরে থাকবে, না গ্রামে ফিরে যাবে। অনেক চেষ্টা করে প্রায় পায়ে হেঁটে গ্রামে ফিরেও সে সম্মুখীন হয় একাধিক প্রশ্নের।

সংগ্রহটিতে বাকি যে গল্পগুলো আছে, সেগুলোও যেন আমাদের সমাজের নানান অসুখকে প্রত্যক্ষ করায়। হয়তো অতিমারি নয়, নয় কোনো শারীরিক অসুখ। কিন্তু কিছু অসুখ রয়ে গেছে আমাদের মনের অনেক গভীরে। বহু বছর, বহু প্রজন্ম ধরে আমরা তাকে লালন করেছি। কখনও এ অসুখ সংস্কারের, কখনও লোকলজ্জার, কখনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ বা যৌন হিংসার। মৃত্যুঞ্জয়ী লম্ফ গল্পটি আদতে ভালোবাসার গল্প, একাকিত্বের গল্প। এক বিপত্নীক বৃদ্ধের সঙ্গী খোঁজার গল্প। স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বৃদ্ধ স্বামী কি শুধুই অপেক্ষা করবে যে কবে তার ডাক আসবে? তাই তাকে ধর্মে মন দিতে হবে, স্বর্গের পথ সুগম করতে হবে? এই যদি সংসারের নিয়ম হয়, তাহলে সে নিয়ম কতটা সঠিক? কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো নিয়মে বাঁধা কতটা যুক্তিযুক্ত?- এ প্রশ্নগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরে গল্পটি।

টোপ গল্পটি যেন একটি আয়না। গল্পের শুরু মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রাক্কালে। রাজাকার সন্দেহে বিহারি এক অনাথ কিশোরকে মারতে উদ্যত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল। বাপ-মা মরা ছেলেটি এক গ্রাম্য বাঙালি পরিবারের আশ্রয়ে রয়েছে। যদিও গল্পের নায়কের একটি সিদ্ধান্তে তার জীবন বেঁচে যায়। তাকে টোপ হিসেবে বাঁচিয়ে রাখা হয়। ঠিক হয় যে যদি সে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়, তাহলে আশ্রয়দাতার পরিবারের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে, জ্বালিয়ে দেওয়া হবে তাদের ঘরবাড়ি। এর ফলে তার আর সে গ্রাম ছেড়ে যাওয়া হয় না। টোপ বসির নামে সে রয়ে যায় গ্রামে। বাঙালিদের সঙ্গে থেকে সে বাঙালিই হয়ে যায়। বহুদিন পরে আবার যখন তার সঙ্গে কথকের দেখা হয় তখন দুজনেই বৃদ্ধ। বসিরের গান কথককে এক প্রশ্নের সামনে দাঁড় করায়। তাকে প্রাণে বাঁচতে বাঙালি হতে হয়েছিল, আর আজ পেট ভরাতে হতে হচ্ছে দলদাস?

উৎসমূলের আগুন একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক গল্প। প্রাক্তন প্রেমিকার মেয়ের দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন হয়রানির অভিযোগের সম্মুখীন প্রাক্তন সচিব উমর আলী। মুহূর্তের মধ্যেই সংসার, সমাজ সবার কাঠগড়ায় তিনি। সত্য, মিথ্যা, কল্পনা, মনোবিজ্ঞানের ঘেরাটোপের মধ্যে আমাদের নিয়ে চলেন লেখক। মুহুর্মুহু দোলাচলে পাঠকের সামনে লেখকের প্রশ্ন, জীবনে যা ঘটে তা সবটাই কি সাদা-কালো?

সর্বশেষ গল্পটির নামেই গ্রন্থের নামকরণ, ডিজিটাল দেশের কৃষ্ণবিবর। গরিব গ্রামের পাঁকে পদ্মফুল এক সুন্দরী নারী ও তার সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে এই গল্প। শুধুমাত্র সুন্দরী হওয়ার কারণেই গ্রামের পুরুষদের চক্ষুশূল তারা বা হয়তো সুন্দরী কিন্তু অপ্রাপ্য, সেটাই মূল কারণ। ভূমিহীন এই পরিবার গ্রামের সরকার সাহেবের দেওয়া জমিতে থাকত। এরপরে একদিন হঠাৎ স্বামী, স্ত্রী, মেয়ে, জামাই সবাই উধাও হয়ে যায়। তাদের ফোন বন্ধ, সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। গ্রামের সবাই মিলে শুরু করে নিখোঁজদের সন্ধান।

সংকলিত গল্পগুলোর সব কটিই সমকালীন, এমনকি যে গল্পগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের পট আছে- সেগুলোও এসে মিশছে বর্তমানে। গল্পে বারেবারে ফিরে এসেছে মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট। হয়তো বয়স্ক মানুষদের হাতে এর অপটু প্রয়োগ হচ্ছে কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সব ক্ষেত্রেই এ ছাড়া গতি নেই। লেখকের শব্দ চয়ন অনবদ্য ও সাবলীল। সংলাপের ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্রভেদে ভাষা ও শব্দের পরিবর্তন মন কাড়ে। বিষয়বস্তু জটিল হলেও সাবলীল ভঙ্গিতে লেখা এই গ্রন্থ পাঠকদের মনে অবশ্যই স্থায়ী জায়গা করে নেবে।   

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা