× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এক রাতের গল্প

টুটুল রহমান

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:৪৫ পিএম

এক রাতের গল্প

রশিদালীর যখন ঘুম ভাঙল তখন পশ্চিম আকাশে ঝুঁকে গেছে চাঁদ। তবে চাঁদের জোৎস্নার টুঁটি চেপে ধরে আছে বর্ষার মেঘ। বাইরে আবছা অন্ধকার। সেই অন্ধকার চারকোনা ঘরের মতো ওয়াগনের ভেতরে জমাট বেঁধেছে। চুপিসারে ঢুকছে হিমহিম বাতাস।

রশিদালী অবশ্য এই অন্ধকারে থাকতেই ভালোবাসে। প্রায় কুড়ি বছর ধরে স্টেশনের পরিত্যক্ত এক ওয়াগনের ভেতর তার বসবাস। সন্ধ্যায় স্টেশনের ভিক্ষার পাট চুকিয়ে চটের বস্তায় ঘেরা রাস্তার পাশের হোটেলে সে রাতের খাবার খেয়ে নেয়। ১৫ টাকার ভাত অথবা খিচুড়ি। সঙ্গে কোনো কোনো দিন ডিম থাকে। কোনো কোনো দিন কাঁচকি মাছ। আর যেদিন গরুর মাংসের এক টুকরা পাতে পরে সেদিন ১৫ টাকার জায়গায় দিতে হয় ২৫ টাকা। খেয়ে রশিদালী খোঁড়াতে খোঁড়াতে, লাঠি ভর করে ওয়াগনের ভেতর ঢোকে। অর্ধেক পোড়া মোম ধরায়। কারণ বিছানা একটু ঠিক করতে হবে। বিছানার কথা মনে পড়তেই রশিদালীর হাসি পায়। কী বিছানা! মনে হয় শত বছরের আধোয়া একটা বালিশ-কাঁথা। কবে কোথায় পেয়েছিল তা মনে নেই।

রশিদালী ভাবে এগুলোর গন্ধ এখন মানুষের গু-মুতের চেয়ে বেশি দুর্গন্ধময়। রশিদালী সেগুলোই ঝেড়ে-মুছে শোয়ার বন্দোবস্ত করে। শোয়া হয়ে গেলে মোমটা নিভিয়ে দেয়। জমাট অন্ধকার আর নীরবতা নেমে আসে কিছুক্ষণের মধ্যে। যেন কবরের ভেতর ঢুকে আছে রশিদালী। যখন প্ল্যাটফর্মের হাড়গোড় কাঁপিয়ে, ছিটি বাজিয়ে ট্রেন থামে তখন খানিকটা ঘুমের বেঘাত ঘটে তার। শুনতে পায় ট্রেনের ইঞ্জিনটা হাঁপাচ্ছে। তার ফোঁসফোঁস নিঃশ্বাস যেন অজগর সাপের নিঃশ্বাসের মতো ওঠানামা করছে। বিষ ছড়াচ্ছে চারদিকে। রশিদালী তখন পাশ ফিরে শোয়। ব্যস, এটুকুই তার প্রতিক্রিয়া।

কিন্তু ট্রেনের দানবীয় চিৎকারে তার ঘুম আজ ভাঙেনি। একটা দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সেই কবে থেকে। মনে পড়ে না। সে কাউকে বলতে পারে না। সেটা কী যে এক স্বপ্ন রে বাবা!

রশিদালী দেখে মাঠভর্তি মানুষ মাছির মতো ভনভন করছে। হাজার জনের কথা একত্রিত হয়ে ভনভন করছে। শরতের মেঘছাড়া আকাশ। মিষ্টি রোদ উঠেছে সকাল-সকাল। কিন্তু মানুষগুলো কী নিষ্ঠুর। বড় বড় গরু কাটার ছুরি শানাচ্ছে। মোষের মতো চেহারার এক কসাই মাঝেমধ্যে হাঁকডাক ছাড়ছে-

হই একটুখানি শুকনা বালু দেসনা ক্যারে। দাওডা ভালালে ধার দিয় নেই। হালার ডাহাতি করা ছুটাইতাছি। এক কোপে কল্লাডা নামায়া ফেলামু। হেংলা-পাতলা ১৮-১৯ বছরের এক চেংরা ছোরা রোদে ঝলসানো তামাটে বর্ণের বালি এনে দেয় ওই লোকটার হাতে। ছুরি ধারের শাঁশাঁ শব্দ যায় রশিদালীর কানে। ঘষঘষ আওয়াজ করে। আজ তার রক্ষা নাই।

রশিদালীর হাত-পা শক্ত করে বাঁধা গাছের সঙ্গে। রাতে ধরা পড়ার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সে কী মাইর। কাঁঠালগাছের ডাল কয়টা তার পিঠে ভেঙেছে তার কোনো হিসাব নাই। শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা। পায়ের তলায় পিটুনি। শরীরের কোথাও বাদ যায় নাই। কতবার অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে, একটা পাউরুটি খেতে দিয়ে আবার মারধর। এভাবে চলেছে ভোর পর্যন্ত। অবশ্য এই মারধর তার জীবনে প্রথম না। আগেও ধরা খেয়েছে। বিষম মার খেয়েছে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত মারতেই থাকে। পুলিশ এলেই তাদের নিস্তার। হাজতে নাও। তারপর কোর্টে চালান করে দাও। ব্যস। আবার জামিন। আবার ডাকাতি।

এবার মনে হয় পার পাবে না। অবশ শরীরে যখন দমটা যাওয়া-আসা করছে তখন রশিদালী শুনতে পায় এক কোপে কল্লা নামায় ফেলামু। রশিদালীর বুকের ওঠানামা বাড়ে।

আরে কয়কি। তাইলে তো আইজ আর রক্ষা নাই। কাটা মুণ্ডু নিয়া কবরে যাইতে হব। দোয়া-দুরুদ পড়তে থাকে সে। আল্লাহরে ডাকে। খোদা গো আমি তো ইচ্ছা কইরা ডাহাইত হই নাই। তুমি সব জানো। তোমার হুকুম ছাড়া তো গাছের পাতাডা লড়েচড়ে না। এবারের মতো আমারে বাঁচায়া দাও। হালার ডাহাতি আর করমু না। রশিদালী বিড়বিড় করতে থাকে।

পাশ থেকে এক যুবক বলে ওঠে- ও ফজল কসাই কাহা, হালার কল্লাটা নামান। মাইরে কিছু হইব না। হালায় তাবিজ গাড়ছে হাতের মইদ্যে।

গলায় কোপ পড়ার আগে পুলিশ এসে হাজির।

আরে মিয়ারা করেননি। আমরা থাকতে আইন নিজের হাতে নিচ্ছেন কেন?

কিয়ের বালের আইন ভাই, হালায় জেলে যাইব, আবার বাইর হইব। আবার ডাহাতি। হালারে মাইরা ফেলান ভালা।

সম্মিলিত মানুষের ঝাঁজ এখন পুলিশের দিকে। রশিদালী স্বস্তির শ্বাস ফেলে। যাক, বাঁচা গেল। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে আর ডাকাতি না। মনে মনে কান ধরে হাজারবার ওঠাবসা করে।

ব্যস, এই স্বপ্ন তার ঘুম ভেঙে দেয়। রশিদালী ভাবে, ওই দিন তার মাথা ধর থেকে আলাদা হলে আজ আর সে বেঁচে থাকত না। জীবনটা কত সুন্দর। জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে কষ্ট আছে, খাওয়া আছে, না খাওয়া আছে, স্বপ্ন আছে, স্বপ্নের মৃত্যু আছে। তবু জীবনটা কত সুন্দর। এই জীবন যে হারাতে চায় না। মৃত্যুর কথা মনে আসতেই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসে তার।

পায়ে বল্লমের ঘা নিয়ে সে ওই দিনই সোজা ঢাকায় চলে আসে। সারাটা রাত পাড়ি দিয়ে বাস যখন মহাখালী এসে থামল তখন ভোর হয়ে গেছে। আকাশে ছড়িয়ে পড়েছে লাল আভা। চলতে শুরু করেছে মানুষজন। একটা হিমেল হাওয়া রশিদালীর পাষান হৃদয়ে হানা দিচ্ছে। সে কোথায় যাবে এই রক্তাক্ত পা নিয়ে। এখনও রক্ত ঝরছে। ভাবে দারোগা সাব ভালো মানুষ। এবার আর চালান করেনি।

বলেছে, তোকে চালান করে বারবার কী হবে রে বানচোৎ। সেই তো বাইর হয়া আসবি।

দারোগা বাবু বলেছেন, ভালো চাস তো এলাকা ছেড়ে চলে যা। না হলে রাতের অন্ধকারে গুলি করে বুক ঝাঝরা কইরা দিবু। রশিদালী কোনো কথা বলে নাই। থানা থেকে বেরিয়ে সোজা ঢাকার বাস।

মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে নেমে সে একটু এদিক-সেদিন হাঁটাহাঁটি করে। রক্তঝরা পা নিয়ে বেশিক্ষণ হাঁটতে পারে না। বসে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ তার এই চলাচল লক্ষ্য করছিল নুরু ফকির। হাতের ইশারায় কাছে ডাকে রশিদালীকে।

-কী মিয়া, নতুন নি ঢাকা শহরে?

-হ চাচা, কালকই আইছি।

-তা পায়ে কী হইছিল?

পায়ের প্রসঙ্গ উঠতে ঘাবড়ে যায় রশিদালী।

-কিছু না চাচা, এই একটু কাইটা গেছে।

-মিছা কইয়ো না মিয়া। মিথ্যা বলা পাপ।

নুরু ফকিরের কথায় একটু লজ্জা পায় রশিদালী। ভাবে এখন কি তাকে বলতে পারবে সে ডাকাতি করতে গিয়ে পায়ে বল্লমের খোঁজা খেয়েছে? সারা শরীরের পিটানোর চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কাছে বন্ড সই করে সে ঢাকায় চলে এসেছে।

নুরু ফকির আবার কথা বলে ওঠে।

-চিন্তা নাই মিয়া। মিথ্যা কওয়া পাপ হইলেও জীবন বাঁচাইতে কওন যায়। শোনো মিয়া, তোমারে দেইখাই আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আইছে।

-কী চাচা?

-তোমার ওই কাটা পাও দেখাইয়া অনেক টাকা ভিক্ষা করতে পারবা।

-কন কী চাচা?

-এর চেয়ে সহজ কাম আর নাই। বাসে ওঠবা আর মানুষের কাছে কইবা এক্সিডেন্ট করছি। চিকিৎসার জন্য ভাই- বোনেরা কিছু দ্যান গো। দেখবা সারা দিনে হাত ভইরা উঠেছে।

রশিদালী কিছুই ভেবে পায় না। তার সংকোচ লাগে। কিন্তু কী করবে তাছাড়া? ঢাকায় সহজে তো কাজ মিলবে না। খাবে কী? কোথায় থাকবে।

সেই শুরু রশিদালীর। তার পায়ের ক্ষতের কোনো চিকিৎসা হয় নাই। কিন্তু মুঠোভর্তি টাকা এসেছে। লোভ বেড়েছে। ইচ্ছা করে ক্ষত সারায়নি। বরং ক্ষতটাকে আরো জ্যান্ত করে তুলেছে। যত্ন করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আরো বাড়িয়েছে। ঘা পচে-গলে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধে তার কাছে ঘেঁষতে পারে না কেউ। তবুও রশিদালী ক্ষত সারায়নি। ব্যথা-যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠেছে রশিদালী, তবুও ডাক্তারের কাছে যায়নি। ঘায়ের চিকিৎসা করেনি। ভেবেছে ঘা শুকালে মানুষ তো এই জুয়ান মর্দাটাকে আর ভিক্ষা দেবে না। এভাবে কেটে গেছে ২০ বছর। এখন তার বয়স বেড়েছে। এখন আর বাসে বাসে ছোটাছুটি করে না। স্টেশনে বসেই সারা দিন আওরাতে থাকে মা গো, বাবা গো দেন গো। এই যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না। ওষুধ খামু। কবরে যাওয়ার আগে একটু সোজা হইয়া হাঁটতে চাই।

দিন শেষে তার ভাঙা থালাটা কানায় কানায় ভরে ওঠে পাঁচ-দশ-বিশ টাকার নোটে। রশিদালী চুমা খায়। আহা টাকা। কত সহজে আমার ঘরে আসে। পুঁটলির ভেতর গুনে গুনে রাখে। ভাবে আজকেরটা দিয়া প্রায় লাখ খানেক হইব। সে হাসে। যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী সে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে। আর পাটের চটে মোড়ানো রাস্তার হোটেলে যায় না রশিদালী। ঢোকে মাঝারি মানের এক রেস্তোরাঁয়। নোংরা কাপড়চোপড় আর ক্ষতের গন্ধে অনেক মানুষ নাকে হাত দেয়। বয়- বেয়ারা দুরদুর করে।

-হেই চাচা, বাইর হন। ভিক্ষা-টিক্কা হইব না। এহানে ভদ্রলোকেরা খায়।

-আমি কি অভদ্রনিরে হালার পুত। জানস এই আমার কাছে কত টেহা। মাগনা খাইতে আসি নাই। দে এক পেলেট বিরিয়ানি দে, হালার পুত। আর হোন, ইয়া করিস, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ দিবি। খাওন শেষে একটা ঠান্ডা দিবি, বুঝছোস। বলেই সে পেছনের একটা টেবিলে বসে পড়ে। আড় চোখে অনেকেই তাকাচ্ছে। তাতে রশিদালীর কিছু যায়-আসে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেটে বিরিয়ানি দিয়ে যায় ওয়েটার। সে গ্রোগ্রাসে গিলতে থাকে। খাওয়া শেষে সেভেন আপে নল দিয়ে সুরুত-সুরুত টান মারে। যেন পুরো পৃথিবী আজ তার হাতের মুঠোয়। সে বীরদর্পে বিল পরিশোধ করে ওয়াগনের দিকে হাঁটতে থাকে।

কত কথাই তার মনে পড়ছে আজ রাতে। মনে পড়ছে দুলালীর সঙ্গে তার পরিচয়ের কথা। চটঘেরা রাস্তার হোটেলটায় সে সবেমাত্র খেতে বসেছে। ঠিক ওই সময় খলবল খলবল করতে করতে এসে দুলালী তার পাশে বসে। বয়স আর কত হবে। দেখে তো কুড়ি বছর পার হয়নি। কালো কুচকুচে। ময়লা কাপড়। শাড়ি-ব্লাউজ পরা। শাড়ির ভেতর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে লাল পেটিকোট। সেটার মধ্যেও লাল-খয়েরি রঙের ছোপ। যেন হাত-পা কেটে গেলে রক্ত মোছার পর যে রং ধারণ করে, সেই।

সেদিন দুলালীই আগে কথা বলেছে। কোনো রকম রাকঢাক না করে বলেছিল, তার বাড়ি বরিশাল। পেটের ধান্নায় ঢাকা এসেছে। বড় লোকের বাড়িতে কাজ নিয়েছিল। কিন্তু বাড়ির মালিকের ছেলে তাকে প্রতিদিনই খারাপ প্রস্তাব দিত। একদিন বাসা ফাঁকা পেয়ে তার ইজ্জত নিয়ে নেয়। বাড়ির কাজ ছেড়ে দেয় দুলালী। হয়ে যায় নির্মাণ শ্রমিক। কাজের যে সর্দার তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি দুলালী। তাকে দেহ না দিলে কাজে রাখে না। সব শেষে দুলালী কমলাপুর স্টেশনে খদ্দেরের কাছে অল্প দামে দেহ বিক্রি করে।

কত কথা বলে দুলালী। তার স্বামী আছে। কমলাপুর বস্তিতে থাকে তারা। বাসের কন্ডাক্টর। ভালোই চলছি। হঠাৎ দেশের অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। বাসে পেট্রল বোমা পড়ে প্রায় প্রতিদিনই। সপ্তাহের চার দিনই তার স্বামী হারুন বেকার থাকে। কী আর করা, পেটে তো দানাপানি দিতে হবে।

রশিদালীর কেন জানি ওই রাতে শরীরটা জেগে ওঠে। ঢাকায় আসার পর কোনো নারীর সংস্পর্শে সে যায়নি। কোথায় পাবে? তার এই পুঁজ পড়া শরীরটার সঙ্গে কোনো নারী শরীরটা ঘেঁষবে। আজ দুলালীর দেখা পেয়ে মনে হচ্ছে বহুদিন পর তার তৃষ্ণা মিঠতে পারে।

-তুই যাবি আমার লগে?

-দুর, আপনি তো বুইড়া মানুষ? পায়ে ঘাও। গন্ধময়।

-আরে ডবল টেকা দিবু। এক রাতে যা কামাস, তার ডবল।

-আমি তো দুইশ কামাই

-পাঁচশ পাবি। চল?

দুলালী একটুখানি ভাবে। শালা বুইরা হাবড়া। পায়ে দগদগে ঘা। কী আর করব। কোনো রকমে মিনিট দশেক কাটালেই ৫০০ টাকা।

তারপর রশিদ আলী আর দুলালী, শহরের কোলাহল পেরিয়ে, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পেরিয়ে নির্জন অন্ধকারের ভেতর হারিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই দুলালীর শারীরিক চিৎকার ট্রেনের দানবীয় হুইসেলের কাছে হার মানে। সেই রাতে জেগে উঠেছিল ডাকাত রশিদালীর শরীর। খামছে ধরেছিল দুলালীকে। দুলালী হার মানে রশিদালীর শারীরিক অত্যাচারের কাছে।

ওয়াগন থেকে বেরিয়ে স্যাঁতসেঁতে শরীরে একটু ঘেন্না ঘেন্না ভাবে হাঁটতে থাকে দুলালী। তখন ভাড়ার তার শূন্য। অবসন্ন শরীরে সাপের মতো সে হেলছে-দুলছে। মধ্যরাত। ট্রেনের অপেক্ষায় কিছু যাত্রী জেগে আছে। হকারের হাঁকডাক। প্ল্যাটফর্মে তিন টাকায় পার্টি ভাড়া নিয়ে শুয়ে আছে অনেক মানুষ। এসব মাড়িয়ে দুলালী কমলাপুর স্টেশনের সামনে আসতেই সেই দাঁত উঁচা পুলিশের কনস্টেবলের সঙ্গে দেখা। পুলিশের কোনো ভূমিকা লাগে না রাস্তার মেয়েদের সঙ্গে কথা শুরুর। দু-চারটে টিটকারি-মশকরা করে পুলিশ। পুলিশের কথা ঠিকঠাক দুলালীর কানে যায় না। সে হু হা করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। তার মাথার মধ্যে আজ অন্য কিছু চলছে। ভাবে বুইড়া ভালো ঝাঁকানি দিছে শইলডারে। আরাম আর ব্যথায় কেমন কেমন লাগে দুলালীর। স্বামীর সঙ্গে তো সাত বছর কাইটা গেল। এমন তো হয় নাই।

দুলালী ওয়াগনে আসে বুইড়া রশিদালীর খোঁজে। ওয়াগনে ঢোকে। রশিদালী তো । দুলালী সময় নষ্ট করতে চায় না। তার আজ দরদামও নেই কোনো। সোজা গিয়ে রশিদালীর বুকের মধ্যে নুয়ে পড়ে। তারপর নিশিতের অন্ধকার তাদের দেখতে থাকে কেবল। সব পৃথিবী বিলীন হয়ে যায়।

ওই রাতে দুজনের মধ্যে বিলীন পৃথিবী আবার জেগে ওঠে। জেগে ওঠে রশিদালীর শরীর। দগদগে ঘায়ের পা। দুলালীকে জড়িয়ে ধরে সে বলে, ওই বাক্সের ভেতর মেলাগুলান টেহা আছে। পাওডা কি ভালো করন যাইব রে? একটা ঘর ভাড়া হইব? সংসার করবি আমার লগে?

দুলালী ছোট্ট করে জবাব দিয়ে রশিদালীর বুকের মধ্যে ঢুকে পড়ে নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে। এই রাতে তারা আর ক্রেতা-বিক্রেতা নয়।

হঠাৎ একটু ফিসফিসানি। দুই যুবকের কণ্ঠ। আরে শালা পুলিশ আইব। বোমাটা মার। ম্যাচ । ম্যাচের কাঠিতে বারুদপাতার ঘষা লাগে। আগুন জ্বলে পেট্রল বোমার সলতেয়। ওয়াগনের ভেতর ছুড়ে দেওয়া হয় সেই বোমা। তারপর আগুন শাসন করতে থাকে সব। আলোয় ভরে ওঠে পুরো স্টেশন। মধ্যরাতে পুড়তে থাকে ওয়াগন। পরদিন আগুনে পোড়া হাড়গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। কেউ একজন হাড়গোড় জোড়া দিয়ে মানুষের আকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নির্বাচন ঠেকাতে রাজধানীর আরও কিছু জায়গায় পেট্রল বোমা ফেটেছে, যা সামাল দিতে পুলিশের হিমশিম অবস্থা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা