× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শ্যামদেশের চাও ফ্রায়া নদী

মার্জিয়া লিপি

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৪ পিএম

আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৫ পিএম

শ্যামদেশের চাও ফ্রায়া নদী

ব্যাংককের বহু আকর্ষণের ভেতর চাও ফ্রায়া নদীপাড়ের এলাকাটি পৃথিবীজোড়া পর্যটকদের প্রিয় একটি গন্তব্য। নাম এশিয়াটিক দ্য রিভারফ্রন্ট। নদী জড়িয়ে থাকা এই শহরটিতে রয়েছে অনেক মন্দির এবং আশ্চর্য সব স্থাপত্য- আয়ুত্থায়া শহর, ব্যাং পা-ইন সামার প্যালেস, ওয়াট চাই ওয়াট্টানরম- রকম নানা কিছু। ব্যাংককের বাণিজ্যপথ চাও ফ্রায়া নদী। নদীতে নৌকাবিহারেই এই শহরটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। বিকাল থেকেই এখানে জমতে শুরু করে দর্শনার্থীদের ভিড়। হৈ-হুল্লোড়, লাইভ মিউজিক, ক্লাবিং, নাইট শপিং চলে গভীর রাত অবধি।



এক সময় ইস্ট এশিয়াটিক কোম্পানির ডক হিসেবে ব্যবহৃত হতো ঘাট। উনিশ শতকের শুরুর কিছু আগেই ডেনমার্কের ইস্ট এশিয়াটিক কোম্পানি থাইল্যান্ডের প্রদেশ সিয়ামের সঙ্গে বাণিজ্য স্থাপনের জন্য ডক তৈরি করে। চাও ফ্রায়া নদীকে কেন্দ্র করে কোম্পানি বাণিজ্যঘাঁটি গড়ে তোলে। নদীর দুই কিনারে গড়ে ওঠে নয়নাভিরাম বিভিন্ন স্থাপত্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব পর্যন্ত এখানেই বাণিজ্য চলে। ২০১১ সালে রিয়েল এস্টেট কোম্পানি টিসিসি ল্যান্ড স্থানটিকে বিনোদন এবং পর্যটনের জায়গা হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেয়। নতুন করে সংস্কার করে এই এলাকা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।


এশিয়াটিক স্কাই রাউন্ডে চড়ে রাধা চক্করের মতো চাও ফ্রায়া নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখনও নদীর ঘাটে ডেনিশ স্থাপনার মতোই বিভিন্ন ডেক রয়েছে। নদীর পাড়ে কাঠের ডেকে হেঁটে বেরিয়ে নদীর দুই পাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর আলোকসজ্জায় চাও ফ্রায়ায় বিমুগ্ধ সন্ধ্যার রূপ যেন আলো ঝলমলে। নৌকাবিহারেই রয়েছে ক্যালিপসো শো। শোতে থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী নাচগুলো প্রদর্শন করা হয়। সব বয়সির জন্য রয়েছে নানা ধরনের রাইড।


ইচ্ছে করলে সারা দিন কাটিয়ে দেওয়া যায় প্যালেস চত্বরে। চায়না টাউন পেরিয়ে চাও ফ্রায়া রিভার সাইড। সমস্ত নগর নদীর মতো চাও ফ্রায়ার ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে রাজধানী ব্যাংককের ইতিহাসের সঙ্গে। চাও ফ্রায়া নদীর পূর্বপাশ দিয়ে খাল খনন করে একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হয়। ব্যাংকককে অভিহিত করা হয়প্রাচ্যের ভেনিসনামে। পাশ্চাত্যের খ্যাতনামা অনেক লেখক চাও ফ্রায়াকে দূরপ্রাচ্যের অন্যতম প্রিয় জায়গা বলে অভিহিত করেন। ব্যাংককের মাঝখান চিড়ে চাও ফ্রায়া নদী বয়ে গেছে। নদীর এক পারে ওয়াট ফো আর অন্য তীরে ওয়াট অরুণ। অসম্ভব শৈল্পিক কারুকাজ জড়িয়ে রয়েছে মন্দিরের গায়ে গায়ে। সংস্কারকাজের জন্য বড় চূড়াটি ঢেকে রাখা হয়। বনসাই দিয়ে বিভিন্ন নকশা করে রাখা মন্দিরের বাইরের চত্বরটি। সন্ধ্যার বিভিন্ন সময়ে রিভারক্রুজ চলে দোতলা একটা জাহাজের মতো। নির্ধারিত সিটে বসার পর যাত্রা শুরু করে ঘড়ির কাঁটা মেনে। কী নেই সেখানে? ক্যাফে, আলো ঝলমলে মার্কেট, লাইভ মিউজিক; সেই সঙ্গে বুফে খাবার দুপাশের রাতের ব্যাংকক দেখতে দেখতে জাহাজ এগোতে থাকে রাজহংসীর মতো ডানা মেলে। পুরো জল বিহারই যেন রঙ-বেরঙের আলোর বুক চিড়ে এগিয়ে যায়। দুই পাশের স্থাপনার ঝলমলে আলোর প্রতিফলনে চারপাশকে মনে হয় স্বপ্নপুরী। চাও ফ্রায়া নদীর বুকে আলো প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আবার তীরে ভেড়ে। সেখান থেকে ব্যাংককের জ্যাম ঠেলে হোটেল পৌঁছাতে শরীরে টের পাই ক্লান্তির অবসাদ।


এর মধ্যেই সুকুম্ভিতে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতেরিভার ক্রুজেরপ্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়। পাশের রেস্তোরাঁয় গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম মাইক্রোবাসের জন্য। সন্ধ্যার আগেই মাইক্রোবাস এলো। আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ছিলেন। রাতের ঝলমলে শহর দেখতে দেখতে ড্রাইভার বিশাল ১৬ তলাবিশিষ্টকার পার্কিং’-এর ১৬ তলায় মাইক্রোবাসটি রাখলেন। সেখান থেকে একটি শপিংমলে তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন।


তখন বিকাল ৫টা। ড্রাইভার আমাদের চারটি টিকিট দিয়ে বললেন ৭টার দিকে শপিংমলের পাশে অবস্থিত রিভার পোর্টে পৌঁছে যেতে। বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম চারপাশ দেখতে দেখতে। ৭টার সময় পোর্টে চলে গেলাম। এর পর দেখলাম বিশাল আকারের একটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে, যার নামসিলভার মুন রিভারক্রুজ রাতের আঁধারে নদীর ওপরে সাদা আর নীল রঙের মিশেলে জাহাজটি ছিল অপূর্ব সুন্দর; সঙ্গে ছিল জাহাজজুড়ে সাদাদে-নীলচে রঙের মরিচবাতি, যা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। যেন স্বপ্নের আলোর পথে আমি উঠছি।


জাহাজটি ছিল তিনতলা, ওপরতলায় উঠে বসি। ওঠার সময় জাহাজের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কেবিন ক্রুরা আমাদের অভ্যর্থনা জানায়। একদম কর্নারে একটি টেবিল আমি আর সহকর্মী বসার জন্য বেছে নিই। এর আগে আমার কখনও শহরের মাঝখান দিয়ে রকম পরিবেশেরিভার ক্রুজভ্রমণের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।


নদীর দুধারেই আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর আলো এবং মাঝখানে নদী। বাইরের অট্টালিকাগুলোর আলো, জাহাজের সাদা-নীল আলো আর আকাশের চাঁদের আলোÑ সব মিলিয়ে ছিল এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি! জাহাজের ভেতরে লাইভ কনসার্টের আয়োজনও ছিল। গান শুনতে শুনতে পরিবেশটা উপভোগ করছিলাম, তবে আমার ভালো লাগছিল আলো-আঁধারের প্রকৃতিতে নদীর চারপাশের নাগরিক আয়োজন।


কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার নিয়ে যেতে বলা হয়। বুফে সিস্টেমের আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী থাই খাবারের সঙ্গে মহাদেশীয় অনেক খাবারের সমারোহ। বাদামসহকারে সালাদ, জাপানিজ স্যুসিসহ বেশকিছু থাই খাবার প্লেটে তুলে নিই ডিনারের জন্যে। যদিও থাইল্যান্ডের থাই খাবারের স্বাদ আমাদের দেশের থাই খাবার থেকে একেবারেই ভিন্ন স্বাদের। ডিনারের সঙ্গে উপভোগ করছিলাম কনসার্টের সুর। পাশ দিয়ে আরও অনেক জাহাজ আসা-যাওয়া করছিল। ব্যাংককের অনেক বিখ্যাত জায়গাও দেখলাম। নদীর ওপর দিয়ে বেশকিছু বড় বড় রাস্তাসহ ব্রিজ ছিল। যখনই আমাদের জাহাজটির ব্রিজ অতিক্রম করার সময় হচ্ছিল, তখনই মাইক্রোফোনে সতর্ক করা হচ্ছিল- কেউ যাতে না দাঁড়ায়, সবাই যেন বসে থাকে।

পুরো ব্যাংকক শহরে ঘুরিয়ে দুই ঘণ্টা পর জাহাজটি আমাদের আবার সেই শপিংমলের পাশে অবস্থিত পোর্টে নামিয়ে দেয়। স্কাই ট্রেনে ফিরে এলাম হোটেল সিয়াম আনান্তারায়। অসম্ভব সুন্দর একটি সন্ধ্যা কাটিয়েছিলাম আমরা।

এসব বৈচিত্র্যময় আয়োজনের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। রোমাঞ্চকর ভ্রমণের জন্য থাইল্যান্ডের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। অনেক বড় বড় প্রাসাদ-অট্টালিকার ভিড়, শপিং মল, আকাশছোঁয়া স্কাই ট্রেনে চোখের পলকে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলা- এসব কিছুই শহরের বৈশিষ্ট্য। শপিং করার জন্য সস্তা কিছু রাতের মার্কেটও রয়েছে ব্যাংককে। কী নেই এই দেশে! আধুনিক শহরের আলোর ঝলকানি থেকে শুরু করে পাহাড়ের ভাজে ছোট্ট গ্রাম আর বিশাল সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন, বেলাভূমি, কোরাল দ্বীপ, ওয়াকিং স্ট্রিটে লাইফ ড্যান্স শো, মিউজিক শো, বার, স্ট্রিট ফুড আর ম্যাজিক শোসহ হরেক আয়োজন রয়েছে রাজধানীর পথে-প্রান্তরে। নির্জন প্রকৃতি ভ্রমণ আর শহুরে হৈহুল্লোড় সবকিছুর সমাহারে ব্যাংকক সমৃদ্ধ। আর রয়েছে ট্রাফিক জ্যাম। এই একটি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ঢাকা শহরের মিল রয়েছে।


রাস্তায় কিছুটা যানজট রয়েছে। প্রথমবারের মতো আসা এক সময়ের শ্যামদেশ আর বর্তমানে থাইদেশের রাজধানী শহর ব্যাংককে। চারপাশের সবকিছুকেই দেখছি অতি আগ্রহী বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে। বিস্তীর্ণ খোলা জায়গা রাস্তার দুই ধারে। পথে পথে অনেক বড় বড় শপিংমল। বহুতল প্রাসাদ আর বাণিজ্যিক ভবন সাজানো রয়েছে রাস্তার দুপাশে- নানা রকমের নকশায় শৈল্পিক সাজে। ড্রাইভার চ্যাঙ শেন থাইল্যান্ডের স্থানীয় অধিবাসী। ইংরেজি ভাষায় তেমন স্বাচ্ছন্দ্য নয়; তবে আমাদের সঙ্গে কোনোরকমে ভাব বিনিময়ে হোটেল পৌঁছে দেয়। তখন প্রায় ঘড়ির কাঁটায় সময় রাত আটটা। এয়ারপোর্ট সুবর্ণভূমি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে পাতমে অবস্থিত কনফারেন্সের জন্য নির্ধারিত হোটেলটি। আমাদের থাকার ব্যবস্থা পাঁচতারকাখচিত হোটেল আনান্তারা সিয়ামে। আনান্তারার প্রবেশপথেই রাখা ভেলভেটের মতো উজ্জ্বল জারুল রঙের অর্কিড। রঙবেরঙের অর্কিডের দেশ থাইল্যান্ড। এই শহরটি শিল্প, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং দৈব প্রকৃতির মিলিত রূপ। লবির বেগুনি রঙের অর্কিডের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে থাই পোশাকের দুই জন গোলাপি চিবুকের মেয়ে অভ্যর্থনা জানায় আমাদের। মোট চার দিনের বুকিং দেওয়া আছে হোটেল সিয়ামে। যদিও কনফারেন্স শেষের তিন দিন থেকেছিলাম সুকুম্বির হোটেল রিজেন্সিতে। থাইল্যান্ডে ঘুরতে এলে সাধারণত বাংলাদেশিরা সুকুম্বিতে অবস্থান করে। ৫শ/৬শ বাথে হোটেল পাওয়া যায় এলাকায়। সহকর্মী রাজু আমাদের জন্য অনলাইনে হোটেল বুকিং করে রেখেছিল বারোশ বাথে। পাঁচ তারকায় থাকার পর পরবর্তী দিনগুলোতে সুকুম্বির হোটেলটিতে স্বাচ্ছন্দ্য ছিল অনেকটাই কম। খুব স্বাভাবিকভাবেই টাকার মানের সঙ্গে বৈভব আর স্বাচ্ছন্দ্য সম্পর্কিত। ব্যাংককের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান মার্কেটে শপিং করতেই সময় চলে যায়। রাতটুকুই শুধু আমাদের হোটেলে থাকা।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা