অমল সাহা
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:২০ পিএম
ভিসা অফিসার কবিকে দেখেই বললেন, আপনাকে অভিনন্দন। আমাদের দেশে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য আপনাকে স্বাগতম।
- ধন্যবাদ। একটা সিগারেট হবে? অনেকক্ষণ ধরে সিগারেট খেতে পারছি না। আর বোঝেনই তো কবিদের সিগারেট-বিড়ি না খেলে মাথা খোলে না। কী বলতে কী বলে ফেলব, তখন দেখবেন আপনে হালায় বিদিশা হয়ে যাবেন।
ভিসা অফিসার একটু রাগেন, বিদিশা! বিদিশা মানে কী?
কবি মনে মনে ভাবেন, শালায় মূর্খ, বিদিশার অর্থ জানে না। মনে করছে এটা গালি। কবি হেসে বলেন, আরে বিদিশা মানে দিশাহীন। আমাদের এক বড় কবি বলেছেন, চুল তার কবেকার বিদিশার দিশা। জীবনানন্দ দাশের নাম শোনেন নাই?
- না শুনি নাই। কিন্তু এখানে তো আপনাকে সিগারেট অফার করতে পারব না। স্যরি।
- এটা কিন্তু ঠিক না। আপনাদের এরিয়ায় ঢোকার পর থেকে সিগারেট-বিড়ি বন্ধ। কেন? এম্বাসির মধ্যে কেউ অ্যালকোহল খায় না? আপনারা সব ধোয়া তুলসী পাতা?
ভিসা অফিসার থতমত খান, তা খায়, খাবে না কেন? আপনি এমনভাবে কথা বলছেন কেন?
- আমি কবি। কবিরা স্বাধীনচেতা হয়।
ভিসা অফিসার মনে মনে বলেন, স্বাধীনচেতা না পাগলচেতা। কিন্তু মুখে হাসি টেনে বলেন, আচ্ছা আপনি কেন যেতে চাচ্ছেন?
- ঢংয়ের প্রশ্ন রাখুন। আপনি জানেন না, দেশ থেকে কবি রপ্তানি হচ্ছে।
- ও হো আগে বলবেন তো! আপনার রপ্তানির ফাইল? আপনাকে একটা বিষয়ে বলছি, আপনাদের দেশের মতো কিন্তু না যে খালি যাবেন আর ময়লা চাদর গায়ে দিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরবেন আর বিড়ি টেনে রিং বানিয়ে ধোঁয়া ছাড়বেন।
- কবিতা তো লিখব।
- কবিতার সঙ্গে হাড়ভাঙা খাটনিও কিন্তু করতে হবে।
- তাই নাকি!
- জি। বিদেশে কেউ বসে খায় না। এটা বাংলাদেশ না। একজন রোজগার করবে বারোজন বসে বসে গিলবে।
- চিন্তার বিষয়। কিন্তু কবিদের ব্যাপারটা তো অন্যরকম। কবিদের চাহিদা কম সারা দিনে পাঁচটা সিগারেট আর বাইশ কাপ চা। এ হলেই চলে যায়।
- বলেন কী, কবিরা ভাত খায় না?
- প্রায়শই না। তারা পাউরুটি চায়ে ভিজিয়ে খায়।
- মারাত্মক। তাহলে তো ডায়েটও হয়ে যায়।
- কেন আপনি কোনো কবিকে মোটা দেখেছেন? সবাই শুঁটকি প্যাক বডি।
- সিক্সপ্যাক বডি শুনেছি কিন্তু শুঁটকি প্যাক বডি!! ইন্টারেস্টিং! শুধু এই শব্দটার জন্যই আপনাকে ভিসা দেওয়া যায়। আচ্ছা দিয়ে দিচ্ছি।
- উহু... আপনি ভিসা দিলেই আমি নিয়ে নেবÑ এমন কোনো কথা আছে নাকি?
এ পর্যায়ে ভিসা অফিসার মনে মনে ভাবেন, নাহ, কবিরা আসলেই পাগলচেতা। কোন পাগলের পাল্লায় পড়েছি!
- আমার কিছু কথা আছে। আচ্ছা আমাকে কী কাজ করতে হবে সেখানে?
কবি জানতে চান।
- এটা ওখানকার লোকাল গভর্নমেন্ট ঠিক করবে।
- নাহ, আমাকে তো জানতে হবে আমাকে কী কাজ দেবেÑ তাই না?
- আপনি কোন কাজে দক্ষ?
- কবিতা লেখায় দক্ষ।
- সেটা বোধ হয় দেওয়া যাবে না। আপনাকে মেয়রের অফিসের দরজা, জানালার গ্রিল মোছার কাজ দেওয়া যেতে পারে বা শরণার্থীদের মধ্যে খাবার বিতরণ।
- মেয়র কি মেয়ে না ছেলে?
- সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। মেয়েও হতে পারে ছেলেও হতে পারে। তবে আমি বলছি কি, মেয়রের মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা কম। মেয়র হতে হতে বুড়ি বয়সে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
- তাহলে কবিতা লেখব কার মুখ দেখে? এদিকে সময়ও কম। পাইছেন কী?
- কবিতা লেখার বেইল নাই। গ্রিল মুছতে মুছতে হাতে খিল ধরে যাবে। কলম ধরা বাদ।
ভিসা অফিসার জানান।
- মেজাজটা কিন্তু খারাপ কইরেন না। কবিতা ছাড়া কবি বাঁচবে কীভাবে? গুষ্টি কিলাই ভিসার।
কবি ঝট করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান।
ভিসা অফিসার বলেন, আরে আপনি রাগছেন কেন? না গেলে না যাবেন। রাগারাগির কী আছে?
- নাহ, আমি যাব না।
কবি বেরিয়ে যেতে চান।
ভিসা অফিসার নিজেও উঠে দাঁড়ান, শুনুন, আপনাকে কনগ্রাচুলেশনস।
- কেন?
কবি জানতে চান।
- না, মানে এই প্রথম একজন লোক আমাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করল!