ভূমিকা আজাদ
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:১৭ পিএম
“মধুমাসের পরশে আপনার মিষ্টি হৃদয় দুলে উঠুক পরমানন্দে। একটা শতাব্দীকে চারখণ্ডে ভাগ করে দেখা গেল, ছোট কাগজ পুনশ্চ ২৫ বছরের অলংকারে আবৃত। নির্মাণ, বিনির্মাণের দুর্গম পথে শিল্প-সাহিত্যের এই সঞ্চয় আমাদের কাছে অনেক গৌরবের। এ বছর পুনশ্চর সিকিশতাব্দীকে কয়েকটি পর্বে উচ্ছ্বাসবন্দি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তারই প্রথম পর্ব ‘পুনশ্চ আনন্দ উৎসব-২০২৫’। আসুন, এ আনন্দে অবগাহন করি সানন্দে।” এই আমন্ত্রণে নওগাঁ শহরের বইপট্টির ‘আয়োজন রেস্টুরেন্ট’ ভরে উঠল লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও শুভানুধ্যায়ীতে। উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে কবি রহমান হেনরী বলে উঠলেন আসুন আমরা সবাই মিলে উদ্বোধন করি। এ আহ্বান কে উপেক্ষা করতে পারে! কবিদের পদভারে মঞ্চ যেন মুহূর্তেই ‘ছোট সে তরী’ হয়ে উঠল। তখন সন্ধ্যা ৭টার অনুষ্ঠান ৮টা পার হয়ে রাতের গভীরতাকে ডাকছে। তখন শুরু হলো ‘আনন্দধারা বহিছে ভূবনে...’ এর সঙ্গে নওগাঁর ত্রিতাল নৃত্য একাডেমির শিল্পীদের উদ্বোধনী নৃত্য এবং করতালি আর করতালি।
পাঁচ পর্বের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী আবৃত্তিতে কবি আতাউল হক সিদ্দিকীর কবিতা নিয়ে এলেন মাহমুদা সিদ্দিকী, কবি রহমান হেনরীর কবিতা কামরুল হক ও কবি সরদার মোজাফ্ফর হোসেনের কবিতা আবৃত্তি করলেন রওনক লায়লা মুন্নী। স্বাগত বক্তব্যে পুনশ্চ লেখক সংঘ নওগাঁর পক্ষ থেকে সংগঠনের সভাপতি সরদার মোজাফ্ফর হোসেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রবু শেঠ অল্প কথায় ‘পুনশ্চ’র আদ্যোপান্ত তুলে ধরলেন। নির্বাচিত কবিতা পড়তে উঠে কবি রহমান হেনরী উচ্চারণ করলেন, সবচেয়ে নরম সহজ অন্ধকার নামবে গোধূলিতে, কে যেন আসবে তোমাকে আমার ভেতরে উসকে দিতে... আগুনের আছে প্রয়োজন-আগুন রচিত হোক বৃক্ষে, ফুলে ফুলে... সে তাকে সামান্য ভালোবাসে। এক চিলতে তিলের মতো ছোটো...। রবু শেঠ উঠে বললেন, পঁচিশটি কবিতা পড়তে চাই কিন্তু ‘মনোবিজ্ঞান’ শিরোনামে ছোট্ট একটি কবিতায় বললেন, অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে প্রেমিকা দুঃখের সঙ্গমে...। শামীম হোসেন উচ্চারণ করলেন, আমিই তোমার গ্রন্থ, পাঠ করো আর নানা ব্যঞ্জনে বাজাও...। একে একে বললেন, শিবলী মোকতাদির ও তামিম মাহমুদ সিদ্দিক।
উৎসভূমি নওগাঁর অধুনালুপ্ত ছোট কাগজ চাষের গল্প শোনালেন আবৃত্তিশিল্পী ও ঋদ্ধবঙ্গের সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠে আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, সাকিল মাসুদ ও রিংকু রাহী মঞ্চে ছিলেন। কিন্তু কণ্ঠের অপারগতায় আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদের কবিতা পাঠ করলেন তার কন্যা তথাপি আজাদ।
নির্বাচিত ছড়া পাঠে মঞ্চ মাতালেন ছড়াকার কামাল খাঁ, মুসতাফা আনসারী ও এসএম খলিল বাবু। নওগাঁর কবিদের কবিতা পাঠ ছিল একটি বিশেষ পর্ব। পাঠ করলেন মুহ. ওয়ালিউল ইসলাম, অনিল কুমার দাস, তানিয়া রহমান তনি, ম আ ব সিদ্দিকী, অনিমা দেবনাথ, রওনক লায়লা মুন্নী, রবিউর রফিক, নূর নাহার সুষমা সাথী ও রহমান রায়হান।
নির্বাচিত কথামালায় ছিলেন আবর্তন সম্পাাদক শরিফুল ইসলাম খান, আবৃত্তিশিল্পী ময়নুল হক দুলদুল, গল্পকার সাজিদ রহমান, চিত্রশিল্পী রেজাউল হক ও সাংবাদিক নবির উদ্দিন। অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, কবি ও লেখক আশেক হোসেন, কবি ও গল্পকার মোতাহার হোসেন, ও সরদার মোজাফ্ফর হোসেন। সঞ্চালনা পরিষদে ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী মামুন হাসান, কবি ফারহানা রুপা, কবি রবিউর রফিক, গল্পকার আবদুল্লাহ আল রাফি সরোজ ও নাদিয়া ফাইরুজ।
উৎসব থেকে ফিরতে ফিরতে কানে বাজছিল কবি আতাউল হক সিদ্দিকীর সনেট পাড়াগাঁয়ের বিদায় দৃশ্য ‘কে যেন বিদায় নেয়। কাজ ভুলে অপরাহ্ন বেলা শীতের বিষণ্ন রোদ শূন্য মাঠে আঁচল বিছিয়ে অনিমেষ চেয়ে রয়...বিদায় আরতি করেÑ অনুরাগে পেতে চায় ফিরে।