সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ১৬:১১ পিএম
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী- আমাদের সকলের প্রিয় ‘সিক’ স্যারÑ এই কিছুদিন পর, ২৩ জুন, নব্বই বছরে পা রাখবেন। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু থেকে তাঁর বয়স বেশ কয়েক বছর বেশিই বলা যায়, কিন্তু তাঁর সারা জীবনের অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে, এবং আমাদের এই চিরসংকটের দেশের সামাজের নৈতিকতা এবং সক্রিয়তার অভাব, শিক্ষার এবং বিদ্যা ও বুদ্ধিজীবিতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় তাঁর উপস্থিতিটা প্রয়োজনীয়, সব সময় ছিল, এখনও আছে। তাঁর একটা বড় কাজ হচ্ছে এসব ক্ষেত্রে সমৃদ্ধির আর সক্রিয়তার আবশ্যকতা সম্পর্কে আমাদের সচেতন করা, এবং নিজে উদাহরণ সৃষ্টি করে আমাদেরকে পথ দেখানো। এই বয়সেও তিনি যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, ফিলিস্তিনিদের, অধিকার হারানো আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের সমর্থনে রাজপথে থাকেন এবং সামাজিক বৈষম্য, শ্রেণিবিভাজন, পুঁজির শাসন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ থাকেন। একটি সফল এবং সৃষ্টিশীল জীবন তিনি পার করেছেন, অসংখ্য শিক্ষার্থীকে জ্ঞান ও উদ্দীপনা দিয়ে জগতের জন্য তৈরি করেছেন, আরও অসংখ্য তরুণের জন্য পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আমাদের জীবনে এক প্রয়োজনীয় উপস্থিতি। এদেশের নানা ক্রান্তিকালে তিনি জাতিকে পথ দেখিয়েছেন- মানুষের শুভচেতনা ও আদর্শের জায়গাগুলোতে জোরালো আলো ফেলেছেন। তাঁর পরিচয় অনেকÑ তিনি একজন শিক্ষক, একজন মৌলিক চিন্তাবিদ, একজন মননশীল লেখক; তিনি সৃষ্টিশীল লেখালেখিও করেছেন, গল্প লিখেছেন, নাটক অনুবাদ করেছেন। তাঁর লেখালেখি মননশীল-সৃজনশীল বিভাজনটিকে গৌণ করে ফেলে, যেহেতু তাঁর প্রবন্ধ, অথবা সাহিত্য ব্যাখ্যা অথবা সমাজচিন্তা বিকশিত হয় সৃষ্টিশীলতার সূত্রগুলো ধরে। তিনি একসময় খবরের কাগজে কলাম লিখতেন। সেই কলামগুলিকে আমার কখনও মনে হতো সমকালীন রাজনীতির ব্যাখ্যা, কখনও মনে হতো অর্থনীতি অথবা সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে বিশ্লেষী প্রতিবেদন, কখনও কখনও আত্মজৈবনিক কোনো বয়ান। তিনি শ্রেণিকক্ষে যখন পড়াতেন, তাঁর বিষয় শুধু সাহিত্যে সীমাবদ্ধ থাকত না- সাহিত্যের নন্দনতত্ত্ব, সাহিত্যের সমাজতত্ত্ব অথবা সাহিত্যের রাজনীতিতে তা পরিব্যাপ্ত হতো। পশ্চিমা এবং পরবর্তীতে আমাদের ভূখণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ব্যাপকভাবে সাহিত্যতত্ত্বের পঠনপাঠন শুরু হয়, তার প্রভাবে সেই জেফ্রি চসার থেকে নিয়ে গার্সিয়া মার্কেজ পর্যন্ত কবি-সাহিত্যিকদের লেখার নতুন মূল্যায়ন হয়েছে। মার্ক্সবাদী তত্ত্বের আলোকে পড়া হয়েছে চার্লস ডিকেন্স বা জেন অস্টেনকে, ফ্রয়েডীয় তত্ত্বের আলো ফেলা হয়েছে ডিএইচ লরেন্স অথবা ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ডের ওপর। এডওয়ার্ড সাঈদের প্রাচ্যবিদ্যার চিন্তা ও সূত্রগুলো প্রয়োগ করা হয়েছে জোসেফ কনরাড অথবা ইএম ফস্টারের ক্ষেত্রে। সাহিত্যতত্ত্বের প্রয়োগ অনেকটাই বদলে দিয়েছে প্রথাগত সমালোচনা সাহিত্যকে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই তাঁর নিজস্ব জ্ঞানচর্চা ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাহিত্যের তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন। তাঁর ক্লাসে প্রাচ্যবাদী-প্রতীচ্যবাদী নানা চিন্তার সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি। ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব ও চিন্তাকে চেতনাপ্রবাহ পদ্ধতির বিশ্লেষণে অথবা কোনো ঔপন্যাসিক/কবির ব্যাখ্যাদানে আমরা ব্যবহার করতে শিখেছি। মার্ক্সবাদে স্যারের দীক্ষা তাঁর জীবনের শুরুতেই; এই সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবনদর্শন কীভাবে রাজনীতিতে, সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রয়োগ করা সম্ভব, তাঁর কাছে তা জেনেছি।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারকে আমি মৌলিক চিন্তাবিদ হিসেবে উল্লেখ করি শুধু তাঁর ব্যাখ্যা ও তত্ত্বের নিজস্বতার জন্য নয়, বরং পুব-পশ্চিম মিলিয়ে সামগ্রিক বৈশ্বিক চিন্তার জগৎটাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেও তিনি নিজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জাতীয়তা-চিন্তা, শিক্ষাব্যবস্থা ও জীবনাচরণকে পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে যেভাবে এসব সম্বন্ধ নতুন পাঠ উপহার দেন, সেজন্য। একজন চিন্তাবিদ তখনই মৌলিক যখন তিনি প্রচলিত জ্ঞানের কাঠামোটিকে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার আলোকে নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে পারেন। পশ্চিমা জ্ঞানকে স্যার গ্রহণ করেছেন, তিনি জ্ঞানের পেছনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশ্ন করেছেন। পশ্চিমা একাডেমি যে জ্ঞান উৎপাদন করে, বিতরণ করে পুবে, তার সবকটাই কি নির্মোহ, অথবা স্থান-কাল নিরপেক্ষ? জ্ঞানের রাজ্যে কি আধিপত্যবাদ অনুপস্থিত? অথবা জ্ঞানের রাজ্যে সহিংসতা? যে জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতার কথা এডওয়ার্ড সাঈদ অথবা গায়ত্রী-স্পিভাক বলেন, তা কি বায়বীয় কোনো বর্ণনা? অবশ্যই নয়। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার জ্ঞানের রাজ্যে স্ববিরোধী এসব সূত্রগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। আধিপত্যবাদ নিয়ে তাঁর অসংখ্য লেখালেখিতে জ্ঞানতাত্ত্বিক আদর্শবাদ ও তার ক্ষতিকর দিকগুলোর বিশ্লেষণ করেছেন। বিশ্বায়নের ঢেউ এখন আছড়ে পড়ছে আমাদের তীরে। জলোচ্ছ্বাস হয়ে সেই ঢেউ ডুবিয়ে দিচ্ছে আমাদের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও অর্থনীতির নানা স্থাপনা। বিশ্বায়ন শব্দটি সচল মুদ্রা হওয়ার অনেক আগেই এই দিকটি সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। পশ্চিমা সংস্কৃতির কোনটা ভালো কোনটা মন্দ, কতটা গ্রহণীয় কতটা বর্জনীয়Ñ এ ধরনের পরিমাণসূচক আলোচনা তিনি কখনও করেননি, কেননা তিনি ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্যে, তার পছন্দ-অপছন্দের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু তাঁর লেখা পড়লেই বোঝা যায়, তিনি সংস্কৃতির শক্তি ও শক্তিহীনতার বিষয়টি কীভাবে দেখেন। তাঁর উদ্বিগ্নতা বাড়ে যখন পড়ার ও দেখার মধ্যে এই যে দ্বন্দ্ব, তাকে তিনি বিচার করেন একটি সামূহিক সংস্কৃতিচিন্তার প্রেক্ষিতে।
ব্যক্তি সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারের যে-বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করা হলো তার সঙ্গে যোগ করতে হয় সমষ্টির কথাও। বস্তুত যদি তাঁর ব্যক্তি ও সমাজচিন্তার একটি সারাংশ করতে হয়, তাহলে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে একই বন্ধনীতে রাখতে হবে। তিনি ইউরোপীয় রেনেসাঁসের ব্যক্তিচিন্তাকে যতখানি মূল্যবান মনে করেন, জ্ঞানসাধনা ও নতুন সমাজচিন্তা নিয়ে বাঙালির জেগে ওঠাকেও ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। পশ্চিমা বিশ্বে ব্যক্তির বেড়ে ওঠা আর আমাদের ভূখণ্ডে ব্যক্তির বেড়ে ওঠার মধ্যে তফাত আছে। এই তফাতটুকু সমষ্টির গুরুত্বের নির্ণায়ক। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার ব্যক্তির উত্থান চান, বরাবরই চেয়ে এসেছেন, কিন্তু ব্যক্তি যেন সমষ্টিকে ছাড়িয়ে না যায়, তার উত্থান যেন স্বার্থপর কোনো আকাশযাত্রা না হয়, সেদিকে তিনি ব্যক্তির দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন। রবীন্দ্রনাথের পাত্রপাত্রীদের নিয়ে স্যার অনেক লিখেছেন, শেক্সপিয়রের নারীদের নিয়ে লিখেছেন। শেক্সপিয়রের নারীদের মধ্যে তিনি রেনেসাঁসের ব্যক্তি-জিজ্ঞাসা আর হয়ে-ওঠার সূত্রগুলোর সন্ধান করেন; কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নারী (অথবা পুরুষ) চরিত্রে এসবের বাইরেও সমাজের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়গুলোর সংবেদী ব্যাখ্যা করেন। এই সমাজ-সম্পৃক্ততা শুধু তার মার্ক্সবাদী বীক্ষণের বহিঃপ্রকাশ নয়, এর শিকড়টি অনেক গভীরে প্রোথিত। বাংলাদেশের শ্রেণিবিভাজিত সমাজে নিম্নবর্গীয়দের বঞ্চনা ও শোষণের সঙ্গে এর সম্পর্ক, তাদের অধিকারহীনতা ও সামাজিক কাঠামোয় তাদের প্রান্তবর্তিতাÑ এই পুরো ইতিহাসটিই তাঁর অনুসন্ধানের ক্ষেত্র।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার কোনো সমাজ বা সাহিত্যভাবনাকে খণ্ডিতভাবে দেখতে নারাজ। তিনি এর বিস্তৃত প্রেক্ষাপট খোঁজেন, যে প্রেক্ষাপটে সমাজনির্মাণের উপকরণসমূহ ছাড়াও মানুষের চিন্তা ইতিহাসটি সম্পর্কিত। পুঁজিবাদের বিকাশ বিশ্ব ও সমাজকে যেভাবে বিভাজিত করছে এবং মূল্যবোধের ক্ষেত্রে ব্যাপক অধঃপতন ঘটিয়েছে, তা আমাদের দেশে শুধু পশ্চিমের এই অপশক্তির কারণে ঘটেছে বলে তিনি মনে করেন না, বরং আমাদের সামন্তবাদী সমাজে, আমাদের ভূমিতেই যে বৈষম্য-বঞ্চনা-শোষণের ক্ষেত্রটি বহুদিন ধরে প্রস্তুত হয়েছে, তাকেও চিহ্নিত করেন। পুঁজি যদি শুধু পশ্চিমা একটি উদ্ভাবন এবং আধিপত্য ও শোষণের হাতিয়ার হয়, তাহলে আমাদের দেশে এত দ্রুত এর সমর্থক-পূজারি-প্রচারক কীভাবে তৈরি হয়? পুঁজি যে শুধু একটি অর্থনৈতিক শক্তি বা অপশক্তি নয়, একটি প্রবণতারও নাম, সে বিষয়ে স্যার আমাদের সজাগ করেন।
সমাজের মৌলিক পরিবর্তনে আজীবন প্রত্যয়ী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার। তিনি আশা করেন, তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজ বদলাবে। সমাজ কখনও স্থবির নয়, সমাজের ভেতরে অসংখ্য দ্বন্দ্ব থাকে, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থাকে। এসবের প্রভাবে সমাজ গতিশীল হয়। সমাজের ভেতরে অনেক প্রতিক্রিয়াশীলেরও বসবাসÑ অনেক অন্ধতা, অনেক মূঢ়তার উপস্থিতি সমাজে। কিন্তু এর পরও সমাজে অগ্রসরচিন্তার প্রভাবটা টিকে থাকেÑ সমাজ এগোয়। কিন্তু এর জন্য সমাজের দেহে শক্তির জোগান দিতে হয়, এবং সেই শক্তি আসে শিক্ষা থেকে, সংস্কৃতিভাবনা ও সংস্কৃতিচর্চা থেকে। ব্যক্তির, বিশেষত নারীর ও শ্রমিক-কৃষকের অবস্থার উন্নয়ন থেকে। তিনি শিক্ষাকে কখনও জীবনধারণের একটি উপায়সৃষ্টির প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেননি। আজ শিক্ষা যে পণ্যে পরিণত হয়েছে, এবং অনেক উচ্চমূল্যে, সাধারণ মানুষজনের ক্রয়ক্ষমতার অনেক বাইরে তা বিকোচ্ছে, তার ভয়াবহতা সম্পর্কে তিনি আমাদের অনেক আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। এই উচ্চমূল্যের শিক্ষা মানুষকে স্বার্থপর করে, সমষ্টি থেকে তাকে আলাদা করে দেয়। আরও ভয়ানক যা, ব্যক্তি সেই শিক্ষার প্রভাবে সমষ্টিকে ব্যবহার ও শোষণ করতে শেখে। স্যার যে শিক্ষার কথা বলেন, তা ক্রমাগত চর্চা ও অর্জনের বিষয়Ñ সেটি শ্রেণিকক্ষে আহরণ করা যায়, শ্রেণিকক্ষের বাইরেও করা যায়, কিন্তু সেই আহরণের পদ্ধতিটি হবে বৈজ্ঞানিক, এবং সেই শিক্ষার ভিত্তি হবে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারের শিক্ষাভাবনার সঙ্গে সম্পর্কিত তাঁর ভাষাচিন্তা, যে ভাষা হবে শিক্ষার বাহন। তিনি বিশ্বাস করেন, মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। কেননা, তাঁর ভাষায়, মাতৃভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ইতিহাসটি এবং এ দুয়ের প্রাসঙ্গিকতা শুধু মাতৃভাষা চর্চার মাধ্যমেই অনুধাবন করা সম্ভব। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষাকে তিনি প্রাধান্য দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, একজন শিক্ষার্থী প্রয়োজনে ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষা শিখবে, কিন্তু তার চিন্তার প্রকাশের জন্য মাতৃভাষাকেই বেছে নেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভাষার ক্ষেত্রে একটা অরাজকতা আমরা দেখেছি। ইংরেজিকে বর্জন করা হলো, আবার গ্রহণ করা হলো। বাংলাকে শিক্ষার মাধ্যম করা হলেও এর শিক্ষণ ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কোনো উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা হলো না। ইংরেজিকে নানাভাবে পুনর্বাসিত করা হলো। অথচ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে, ইংরেজির প্রাবল্য সত্ত্বেও, দৈন্য রয়ে গেল। মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের হীনম্মন্যতাকে স্যার আমাদের অনুন্নয়নের জন্য দায়ী বলে মনে করেন।
চিন্তাচেতনার একটা স্থানে স্যার ক্লাসিসিস্ট, অর্থাৎ ধ্রুপদপন্থি। সেটি তাঁর সাহিত্য রুচিতে প্রতিফলিতÑ যদিও নতুন সাহিত্যকে এবং বিশ্বজুড়ে নিরীক্ষাধর্মী সাহিত্যের প্রকাশকে তিনি স্বাগত জানান, তাঁর পড়াশোনার পরিধিতেও এসব সাহিত্য স্থান পায়। ধ্রুপদী চিন্তাটি তাঁর দুটি ক্ষেত্রে সক্রিয়Ñ একটি ঐতিহ্য নির্ণয়ে এবং অন্যটি জীবনদর্শনে। ক্লাসিক্যাল সাহিত্য যে ঐতিহ্য উপহার দিয়েছে আমাদের তাকে তিনি মূল্য দেন। এর অন্তর্গত জীবনদর্শনের যে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা, তাকেও তিনি উচ্চ স্থান দেন। এই ধ্রুপদী চিন্তার মূলে আছে কিছু সর্বজনীন বিষয় আশয়Ñ যেমন ব্যক্তির দায়দায়িত্ব, সমাজের সঙ্গে তার সম্পর্ক, প্রকৃতি, প্রেম ইত্যাদি। একই সঙ্গে একটি কাঠামোচিন্তাও, যে কাঠামোটি গভীরতা প্রত্যাশী। মাতৃভাষার ক্ষেত্রে এই সমাজ ও কাঠামোচিন্তার প্রেক্ষিতটি আপনা থেকেই তৈরি হয়ে যায়। যে মাতৃভাষা একজন ব্যক্তিকে নির্মাণ করবে, তার ভাবনা ও চিন্তার জগৎ তৈরি করে দেবে, তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে তার সম্পর্কটি অবধারিত করবে, তাকে অবহেলা করলে মানুষ শেষ পর্যন্ত অনিকেত ও উন্মূল হয়েই থাকবে। তা ছাড়া মাতৃভাষা চর্চা একজন ব্যক্তিকে অপসংস্কৃতি অথবা উন্মূল সংস্কৃতির প্রভাব থেকে রক্ষা করবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার এক বিরল, বহুমাত্রিক প্রতিভা। তাঁকে আমাদের সামনে একজন পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় দীর্ঘদিন দেখতে চাই।
স্যারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধা।