× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুখোশ

পলি শাহীনা

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ১৬:৩০ পিএম

মুখোশ

‘ভালো করে হাতটা জড়িয়ে ধর, নইলে ফেসবুকে ছবি দেখে মানুষ ভাববে আমরা ভালো বন্ধু না।’

নাসরিনকে বলা রিপার কথাগুলো খুব জোরে এসে ধাক্কা দেয় গ্রুপ ছবির এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা আমার মনের দেয়ালে। এই তো, কয়েকদিন আগে রিপা ফোন করে আমার কাছে নাসরিন সম্পর্কে অনেক অভিযোগ করল। নাসরিন নাকি ওর পেছনে লেগে থাকে অকারণেই, সুযোগ পেলে খোঁচা মারে, লেখালেখিতে ঈর্ষা করে, টিপ্পনী কাটে ওর পোশাক নিয়ে। নাসরিনের এই স্বভাব আছে, কমবেশি আমরা সবাই জানি। শুধু রিপা নয়, অন্য সকলকে নিয়েও কোনো ইস্যু পেলেই পেছনে কথা বলে। যা ঘটে তা নিয়ে তো বলেই, যা ঘটে না তা নিয়েও শূন্য থেকে মুখরোচক ইচ্ছেমতো গল্প বানায়। রিপাও এই স্বভাবের ঊর্ধ্বে নয়, কার ট্রেকিং টেকনোলজি সম্পর্কে প্রথম ওর কাছ হতে জেনেছি। নাসরিনের গাড়ি ট্রেক করে ওর স্বামী, রিপার থেকে প্রথম শুনেছি। নাসরিন সংসারবিমুখ, সন্তানের প্রতি অমনোযোগী, দেখে দেখে প্রতিষ্ঠিত লেখকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, ভাব জমায়, বাসায় ডেকে এনে দাওয়াত খাওয়ায়, উপহার দেয়, গাড়িতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, এ বিষয়গুলো রিপা সারাক্ষণ বলে। অথচ সামনাসামনি দুজনের কী অন্তরঙ্গ মাখামাখি! লক্ষ করি, ওদের মাখামাখি দেখে তুলতুল ঠোঁট বাঁকায়, ছবি তোলা শেষে অন্যদিকে চলে যায়।

মুখে এক অন্তরে আরেক, এই বিষয়টি আজ দেখতে ভালো লাগছে না। অন্য সময় হলে হয়তো চুপচাপ শুনতাম, দেখতাম, কিন্তু আজ একটা উৎসবমুখর পরিবেশে এসেও এমন দ্বিচারিতা দেখতে, শুনতে ইচ্ছে হলো না। অপ্রয়োজনে কেন যে মানুষ মিছেমিছি মুখোশ পরে, বুঝি না। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ। পুল সাইড বার্বিকিউ পার্টিতে ঝর্ণার আমন্ত্রণে ওর বাসায় আমরা কয়েকজন একত্রিত হয়েছি। প্রায় সকলেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, এবং একে অপরের পরিচিত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই উপরে উপরে প্রাণের বন্ধু, যদিও প্রয়োজনে কিংবা কাজের বেলায় টের পাওয়া যায় আসলে কেউ কারও নয়, এবং এই বিষয়টিও সকলে জানে। এটি ছোটবেলায় স্কুলে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতার মতো মজারও বটে।

এই যে তুলতুল ফোয়ারার কিনার ছুঁয়ে স্বামীর আহ্লাদে আহ্লাদিত হয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের সামনে কত রকমের গভীর পোজ দিয়ে ছবি তুলছে, তা দেখতেও অস্বস্তি লাগছে। তুলতুলের স্বামী কবি মনোয়ার আহমেদ। স্বামীর পরিচয়ে সমাজে ও পরিচিত, স্বামীর সঙ্গে যেকোনো অনুষ্ঠানে সামনের সারিতে স্থান পায়, আমন্ত্রণ পায়। সামাজিক এইসব মর্যাদা, সম্মান খোয়ানোর ভয়ে তুলতুল স্বামীর ঘরের বাইরের সম্পর্কের কথা জেনেও না জানার ভান করে থাকে। উল্টো স্বামীকে নিয়ে এমন গর্ব করে কথা বলে যেন সে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। অথচ এখানে উপস্থিত প্রায় সকল নারীই জানে কবি মনোয়ারের চারিত্রিক দুর্বলতা এতটা প্রকট যে, সে আশপাশের সকল নারীর প্রতি কম আকৃষ্ট বোধ করে থাকতেই পারে না। এই তালিকায় তুলতুলের বান্ধবী, ভাবি, কাজিনসহ পরিচিত-অপরিচিত প্রায় এমন কোনো নারী নেই, যাদের প্রতি ওর স্বামীর কুদৃষ্টি পড়েনি। তার সামনে যেতেও দ্বিধা হয়। কারণ কথা বলতে বলতে গায়ে হাত দিয়ে ফেলে। তাকে এ বিষয়ে বারণ করা সত্ত্বেও সে মানে না। বোন বোন বলে কাঁধের উপর হাত দিয়ে যখন ছবি তুলতে চায় তখন অপর পক্ষ বিব্রত বোধ করলেও তার এতে কিছু যায় আসে না। স্বামীর চারিত্রিক এসব অতি দুর্বলতার কথা জেনেও তুলতুল স্বামীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। 

‘আরে ও তো আমাকে চোখে হারায়, আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না, প্রতিদিন আমাকে নিয়ে জিমে যেতে চায়, আমিই পারছি না শরীরটাকে মেইনটেন করতে, তবুও ও বলে আমি নাকি এখনও ওর প্রথম দেখার মতোই সুন্দর।’ 

তুলতুলের এসব কথা শুনে কেউ হাসি লুকায়, কেউবা হাই তুলে প্রস্থান করে। আমি একই জায়গায় বসে থেকে ভাবছি, বিচিত্র কারণে মানুষ ছদ্মবেশ ধারণ করে। হয়তো তুলতুল প্রচণ্ড বোকা, নয়তো সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে বোকা সেজে থাকে। যে মেয়েটার স্বামীর পরিচয় ছাড়া নিজস্ব কোনো পরিচয় গড়ে ওঠেনি, সে তো আর চাইবে না এমন পরিচয় হারাতে, কিংবা সংসারজীবনের অসুখের কথা বাইরের মানুষের কাছে বলে লাভের পরিবর্তে অশান্তি চায় না বলেই হয়তো এমন সুখী মানুষের অভিনয় করে যাচ্ছে রোজ।

কর্ন, মিষ্টি আলু, চিংড়ি, হটডগ, চিকেন বারবিকিউর ঘ্রাণে চারপাশ ম ম করছে। পুলের চতুর্দিকে ছুটোছুটি করা বাচ্চাগুলো দৌড়ে আসে ঝর্ণার হাতে হটডগ, চিকেন বারবিকিউর ট্রে দেখে। ‘চিকেন হটডগগুলো হালাল?’ রিপার এমন প্রশ্নে থমকে দাঁড়ায় ঝর্ণা। ‘হ্যাঁ, হালাল’ বলে বিস্ফারিত চোখে কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ঝর্ণা বাচ্চাদের হাতে খাবার তুলে দিতে থাকে। খানিক আগে ঝর্ণার মুখে লেপ্টে থাকা আনন্দের প্রলেপ বিস্ময় কিংবা ক্রোধের আড়ালে হারিয়ে যায়।

রিপার প্রশ্ন শুনে আমরা একে অপরের দিকে এমনভাবে কপাল কুঁচকে তাকাই, যেন ব্যাডমিন্টন খেলার পালকের কর্কের মতো প্রশ্ন ছুড়ছি একে অন্যের দিকে। উপস্থিত সকলেই জানে রিপার স্বামী আইনজীবী বসির উল্লাহর শুধু শরীর নয়, নিশ্বাস থেকেও ভুকভুক করে সুদের গন্ধ বেরোতে থাকে। ওরা কয়েকটা ডমিনোজ পিজা স্টোরের মালিক। শুনেছি কয়েক মাস আগে ল্যান্ডসহ একটি শপিং মল কিনেছে নিউজার্সিতে। রিপার স্বামী চড়া সুদে বাঙালি কমিউনিটির স্বল্প আয়ের মানুষদের অর্থ দেয় বাড়ি কেনার জন্য, ব্যবসা করার জন্য। অর্থের জোরে বসির উল্লাহ যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়, তেমনি মসজিদ কমিটিরও সভাপতি হয়। পত্রিকার প্রথম পাতায় তার ছবি, সভা-সমাবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফতোয়াবাজি, মাথায় টুপি, এসব নিয়ে কারও কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই, সকলে জানে, অর্থের নৌকা পাহাড় দিয়েও চলে। রিপা সম্প্রতি হিজাব ধরেছে, ওর ভাষায় মধ্যবয়স পেরিয়ে ধর্মের প্রতি আনুগত্য বেড়েছে। তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও কারও কিছু যায় আসে না। সমস্যা হলো, ও যখন অন্যদের ঘটা করে বলে আমেরিকান কালচারে ছেলেমেয়ে বড় করতে চায় না, দাওয়াত গ্রহণ করে হালাল, হারাম প্রশ্ন তুলে অন্যকে বিব্রত করে। ওর এমন দ্বিচারিতা অন্যদের গসিপের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। আমেরিকার সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করবে, সুদ খাবে, গীবত করবে, আয়েশি জীবনযাপন করবে, পার্টি দেবে, কিন্তু রাতদিন তাদের সমালোচনা করবে, অপছন্দ করবে, বিষয়টি খুবই হাস্যকর। ধর্ম লোক দেখানোর বিষয় নয়, ধর্ম হলো অন্তর হতে উপলব্ধির বিষয়। রিপা-বসির দম্পতি সেটি অনুভব করে কি না কে জানে!

গ্রীষ্মের উজ্জ্বল রোদ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসে। বন্ধুরূপী মানুষের এমন অসম আচরণে শরীর চিড়বিড় করতে থাকে। আগে ভাবতাম আমার অনেক বন্ধু আছে, যত বয়স বাড়ছে তত অনুভূত হচ্ছে বন্ধু এক সোনার হরিণ। বন্ধুত্বের ঘেরাটোপের মধ্যে কালো মেঘের চেয়েও ভয়াবহ কালো লুকিয়ে আছে, যেখানে সবকিছুতে মনে ধাঁধা লাগে। ইচ্ছে করছে চোখ বন্ধ করে রাখি। মুশকিল হলো চাইলেও চোখ বন্ধ করা যাবে না সকলের মাঝখানে। কেন এতসব মিছেমিছি ভাবছি, তা-ও বুঝি না। যার যেভাবে সুবিধা হয় সেভাবে ভালো থাকুক, যে যেভাবে অনুভব করে করুক, তাতে আমার কী! প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে নিজের পৃথিবীতে নিজের মতো করে ভালো থাকার। শুধু প্রয়োজন অন্যের ক্ষতি না করা, খোঁচা না মারা, অসম্মান না করা। এই অভিবাসী জীবনে কে কোন অপ্রাপ্তি থেকে জীবনটাকে ভাসিয়ে দিয়েছে সমুদ্রের মুক্ত শিকারির মতো কোন দিকে, এটাও তো জানি না। একেক পরিবেশ থেকে আসা একেকজনের জীবন একেক রকম। ভিনদেশের মাটিতে একই স্রোতে ভাসতে থাকা মানুষগুলোর জীবন পানসে না হোক, ক্লান্তি না আসুক, হেরে না যাক, যন্ত্রণা না পাক, যতটা সম্ভব সার্থক হোক। 

ব্যক্তিগত নানান ভাবনার বাহুবন্ধনে যখন আমি দুলছিলাম ঠিক তখনই অর্পার চিৎকারে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসি। দেখি, কয়েক হাত দূরে নাম না জানা বিশাল গাছের নিচে একটা কুচকুচে কালো কাঠবিড়ালি। বেচারি অর্পা ওকে দেখে ভয় পায়। ‘ও অনেকক্ষণ ধরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আন্টি’ কাছে যেতেই অর্পা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, কাঠবিড়ালি তোমাকে পছন্দ করেছে, চলো, আমরা ওকে খাবার দিই। ‘না, আন্টি’ বলে আলো-আঁধারে জোনাকির মতো জ্বলতে জ্বলতে অর্পা হই হই রই রই করা অন্য বাচ্চাদের ভিড়ে চলে যায়।

বেলি ফুলের ঘ্রাণে ভরে উঠেছে বাতাস। উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখি ঝর্ণার বাসার বারান্দায় কয়েকটা বেলির টব, প্রতিটি টবেই একটি দুটি করে বেলি ফুটেছে, পাশে নীল অপরাজিতা দুলছে। বেলির ঘ্রাণে, অপরাজিতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হই। লং আইল্যান্ডে অবস্থিত ঝর্ণার বিশাল বাড়িটি খুব সুন্দর, পরিপাটি করে সাজানো। ওর বাসার ব্যাকইয়ার্ডে রাখা দোলনায় কিছু সময় বয়ে যাওয়া হাওয়ায় দোল খাই। সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখি, আকাশে কোনো নক্ষত্র কিংবা তারা চোখে পড়ে না। নিউইয়র্ক কখনও ঘুমায় না বলে রাত গভীর হলেও চোখে পড়ে না ঘাপটি মেরে পড়ে থাকা অন্ধকার। দোলনায় বসেই কচ্ছপের মতো মাথা বের করে দেখি, পুলের দক্ষিণ পাড়ে মাদুর বিছিয়ে গল্প, কবিতা, আড্ডায় মজে আছে সকলে।

‘হাসি-কান্না হীরা পান্না দোলে ভালে

কাঁপে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে

হাসি-কান্না হীরা পান্না দোলে ভালে

কাঁপে ছন্দে ভালো মন্দ তালে তালে’ 

ঝর্ণার গলা ভেসে আসে কানে। ও গাইছে সঙ্গে ওর মেয়ে অর্পা নাচছে। কী চমৎকার দৃশ্য। ঝর্ণা আমার ক্লাসমেট ছিল। ও যেমন গাইত, তেমন নৃত্যেও ভালো ছিল। এখন লিখছেও ভালো। আনন্দে টইটম্বুর মায়াবী রজনীটি মন উদাস করে তোলে।

মুশফিকের কথা মনে পড়ে। অনেকদিন হলো ওর সঙ্গে দেখা হয় না। ফোনে আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা হতো, আজকাল ও কথা বলারও সময় পায় না। কাব্যচর্চা, সামাজিকতা, সংসার, বাচ্চা, নতুন চাকরির বাড়তি চাপ, সব মিলিয়ে আমাদের একান্ত সময়টা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকেছে। তবুও ওর প্রতি আমি অতল কৃতজ্ঞতা বোধ করি। অল্প বয়সে আমার বিয়ে হয়, তখন প্রেম-ভালোবাসা দূরের কথাÑ স্বামী, সন্তান, জীবন বোঝার আগেই সংসার নামক মহাসমুদ্রে ডুবে যাই। দাম্পত্য জীবনে শোভনের কোনোরকম সহযোগিতা পাইনি। জরুরি প্রয়োজনে কিংবা সাংসারিক কোনো সুখ-দুঃখের আলাপেও ওকে কাছে পেতাম না। অফিসের ব্যস্ততা শেষে ও সময় দিত মুঠোফোনে নয়তো বারে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। অবশ্য ওর জৈবিক প্রয়োজনে বিছানায় ডাক পেতাম। একটা সময় এসে বেঁচে থাকার সমস্ত উচ্ছ্বাস যখন হারিয়ে ফেলতে বসেছিলাম তখন পরিচয় হয় মুশফিকের সঙ্গে। জীবনের সমস্যাগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে শিখিয়েছে মুশফিক আমাকে। ওর ভাষায়, কোনো জীবনই সমস্যার ঊর্ধ্বে নয়, তবে সেগুলোকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সমাধান করতে জানতে হবে। ওর কথামতো অনেক সমস্যা উতরে যেতে পেরেছি। জীবনবোধ এবং জীবনের দুঃখগুলোকে দূরে সরিয়ে কীভাবে আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে হয়, ওর কাছে শিখেছি। আমার স্থবির জীবনে মুশফিক একটু একটু করে প্রাণের পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল। আমার ধূসর মনে ও ছায়াময় সবুজ অরণ্যের আবাদ গড়ে তোলে। মুশফিক আমার আকাশ হয়ে যায়, আমি ওর বুকে ডানা মেলে উড়তে থাকি, ও আমাকে নক্ষত্রদের গল্প শোনায়, আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি। ওর ভালোবাসা, যত্নে মনে হয় সারাটা জীবন ধরে আমি ওর মতো একজন মানুষের খোঁজ করেছি, এবং পেয়েছি। স্বচ্ছ নদীর জলের মতো ওর হৃদয়, তৃষ্ণা পেলেই আঁজলা ভরে সেই নদীর জল পান করেছি। 

ওর ব্যস্ততায় এখন সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলেও আমার চিন্তায়, মননে শুধু ওর আনাগোনা বিদ্যমান। আমার মন সারাক্ষণ ওর সঙ্গে কথা বলে। ওর প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। জীবনের এতটা পথ পাড়ি দিয়ে পেছন ফিরে তাকালে দেখি, একমাত্র মুশফিকই আমার সত্যিকারের বন্ধু ছিল, আছে, এবং শেষতক থাকবে। ওর মুখখানা মানস চোখে ভেসে উঠলেই আমি উজ্জ্বল হয়ে উঠি, বুকের গহিনে সুখের বুদবুদ জড়ো হয়, জগতের আর কিছুতেই এমন শান্তি পাই না। বেঁচে থাকার জন্য মুশফিকের এই ভালোবাসাই আমার জন্য যথেষ্ট।

অপার্থিব মায়াময় রাতটি আরও গভীর হতেই অতিথিরা একে একে বিদায় নেয়। ঝর্ণার কোলাহলমুখর বাড়িটি ক্রমশ নিস্তব্ধ হয়ে আসে। আমি আরও কিছুটা সময় সেই নৈঃশব্দ্যের রূপ-মাধুর্য হৃদয়ঙ্গম শেষে আমন্ত্রণের জন্য ঝর্ণাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিয়ে গাড়িতে এসে বসি। ঘড়িতে তখন ঘণ্টার কাঁটা ১২টা অতিক্রম করেছে খানিক আগে। হুট করে আসা এলোমেলো বাতাসে উড়তে থাকা চুল বাঁধতে গিয়ে শুনি ফোন বাজছে। শোভনের ফোন। ষোলো ঘণ্টা পর ওর মনে পড়েছে আমার কথা। হয়তো বিছানার প্রয়োজনে মনে পড়েছে। যা-ই হোক, আসছি, বলে ফোন রেখে গাড়ি স্টার্ট দিই। ঘরমুখো আমি স্টিয়ারিং হুইলে হাত রাখার আগে পিকচার গ্যালারি হতে মুশফিকের ছবি বের করি, ছবিটি জুম করে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখি, চোখ বুজে ওর বুকের গন্ধ শুঁকি, মুহূর্তেই ওর উষ্ণ আলিঙ্গন টের পাই। চোখের সামনে ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোতে স্পষ্ট যেন দেখতে পাই নীল রঙের পাঞ্জাবি পরা মেদহীন, ফর্সা, সুদর্শন চেহারার মুশফিককে। যার ঘন কালো চোখ দুটির মায়ায় ডুবে আমি সম্মুখে এগোতে থাকি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা