× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কঠিন সমুদ্রে প্রবাল লুটে

রুমা মোদক

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ১৬:২৮ পিএম

কঠিন সমুদ্রে প্রবাল লুটে

মাঠে সারি সারি মানুষ, পিঁপড়ার মতো ভাষাহীন শৃঙ্খলা সেই সারিতে। অবাক লাগে এজাজ আহসানের। এই চৈতের গরমে একটা কার্ডের জন্য কত দীর্ঘ অপেক্ষা। এমন অভাবী মানুষ আছে দুচার টাকা কমে জিনিস কেনার জন্য চৈত্রের দহন নিঃশব্দে মাথায় পেতে নেয়! ঠিকঠাক হিসাব মেলাতে পারে না সে। নিজেকে নিজে শাসন করে, জাহাজের ব্যাপাররিরা কোন কালে আদার খবর রেখেছে?

এক কোটি মানুষের খুব সামান্য অংশই এখানে, অল্প ক্ষমতাই আছে তার। মিটিং সারতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় লেগেছে আজ। এদের সময় দেওয়া ছিল সকাল দশটা। ঘড়িতে এখন সাড়ে বারো। এর মাঝে মিটিংয়ে বসেই দুঃসংবাদটি পেয়েছে সে। এই সময়ে দেরি করার ফুরসত মেলানো অনুচিত, তা সে যেকোনো কারণেই হোক। এই সারি সারি লোকগুলোর জন্য দেরি করার কোনোই মানে হয় না। ইলেকশান আসতে এখনও আঙুলের কড়ে গুনে চার বছর। ততদিনে আরও কত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এসে সামনে দাঁড়াবে! যে কাজের জন্য এদের ডেকে আনা তাতে এজাজ আহসানের না থাকলেও চলে, তবু দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাওয়া সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে গোটা কয়েককে কার্ড ধরিয়ে দিয়ে ফটোসেশান করে গাড়িতে উঠে বসে এজাজ আহসান। কাল পত্রিকাগুলোর হেডলাইন দখল করবে তার অপেক্ষমাণ নাগরিকদের মধ্যে অত্যন্ত সফল আর সুশৃঙ্খলভাবে টিসিবির কার্ড বিতরণের ছবি। যাক একটা কাজের কাজ হলো। 

রাস্তার পাশে পলাশফুলের গাছটা একলা দাঁড়িয়ে ছিল। একদম একলা। শুকনো ডাল জুড়ে গোটা গোটা পলাশরাঙা ফুল। তার নিচ দিয়ে মাটির রাস্তা সম্প্রতি পিচে কুচকুচে হয়ে উঠেছে বয়ঃস্থর চুলের মতো। দিন দুই আগে আকাশ ভেঙে ঝড়বৃষ্টি নেমেছিল বলে রাস্তার রঙটা ধুলোর আঁচড়ে সাদা হয়ে যাবার অবকাশ পায়নি তখনও। এই পিচ করা রাস্তা ধরে হেঁটে গেলে যে পাড়া শহর, সে শহরের নিরীহ এক ভদ্রলোক আজিজুল মিয়ার পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোক। শুধু শোক হয়তো বা কাটিয়ে ওঠা যায়, নানা বাস্তবের নগদ অর্জন কিংবা প্রাপ্তিতে ভুলে থাকা যায়, কিন্তু বেঁচে থাকা মানুষদের অজানা পরিণতির আশঙ্কা জীবনকে শোকের চেয়েও দুর্বহ করে তোলে। আজিজুল মিয়ার বড় পুত্রবধূর মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়েছে তার বাসায় ঝুলন্ত অবস্থায়। বাড়িটি শহরে ঢোকার মুখে গলি রাস্তার মুখে। অপেক্ষাকৃত কম ব্যস্ত এই রাস্তাটি দিয়ে কেবল দুয়েকটা রুটের গাড়ি যায়। এখনও পাড়ার কিশোরেরা বের হয়ে রাস্তায় ক্রিকেট খেলে। এদেরই কেউ একজন হঠাৎ জানালা দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত বধূর মৃতদেহটি দেখতে পায় আর চিৎকার দিয়ে জানান দেয় পাড়াময়। চব্বিশ ঘণ্টায় যা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহর আর নানা রসালো উপকথার ডালপালা মেলেছে। 

গাড়িটা শহরের কাছাকাছি নতুন গড়ে ওঠা শহরতলির দিকে এগুতে থাকলে এজাজ আহসানকে অতীত এসে ছোঁ মেরে নিতে চায়। পাড়ার সবচেয়ে টলটলে দীঘিটি শায়লা আপাদের। চারপাশে বাঁধানো ঘাট। ভরদুপুর পর্যন্ত শায়লার মা-চাচিরা কাজ করত সিঁড়ির ধাপে ধাপে বসে। বিকেল বিকেল একদঙ্গল ছেলে মাঠে ফুটবল খেলে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ত। এজাজ আহসান ছিলেন তাদের একজন। সবাই দাপাদাপি করত আর বারো বছরের এজাজ আহসান খাঁ খাঁ ঘাটলায় চাতকের মতো তাকিয়ে থাকত কখন পরির মতো শায়লা আপা সুগন্ধি সাবানের কেইস নিয়ে বিকেলে গা ধুতে আসে আর তার তামাটে যৌবন থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে পড়ে ছড়িয়ে যায় পুকুর পেরিয়ে পুরো গ্রাম। শায়লা আপা গা ধুয়ে গেলে শায়লা আপার মতোই রহস্যময় অন্ধকারে ছেয়ে যেত পুরো গ্রাম। শায়লা আপাদের পারিবারিক পুকুরের পাড়ে হাতে কঞ্চি নিয়ে ঘুরতেন শায়লার আব্বা। পুকুরে অবাধ্য দাপাদাপিতে মাছের রাজ্যে মড়ক লাগে এমনই অভিযোগ শায়লা আপার আব্বার। এজাজ কেবল একদিন দেখেছিল মরা মাছ পুকুরে ভেসে উঠেছিল রুপোলি বরফের টুকরোর মতো। ঝাঁপিয়ে সেদিনও মাছ ধরেছিল দামাল ছেলেরা। কিন্তু সেই মাছ রান্না হয়নি কারও ঘরে। এজাজ সেদিন অবাক হয়ে ভেবেছিল দিনমান একটা মাছের জন্য ছিপ ফেলে বসে থাকা। কত গালি বকা! তবু কতদিন কোনো মাছ ধরা দেয়নি ছিপে। আজ সেই মাছ দলে দলে ভেসে বেড়াচ্ছে পুকুরের উপরিতলে অথচ কেউ নিচ্ছে না। এক মানুষ যখন বেঁচে থাকে তখন তার অপরিসীম প্রয়োজন মৃত্যুতে মুহূর্তে ফুরিয়ে যায়।

পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে শায়লা আপার বাড়িটি দেখা যায়। এজাজ আহসান ড্রাইভারকে গাড়ি রাখতে বলে নিচে নেমে আসেন স্মৃতির ডাকে। কত স্মৃতি এই বাড়ি ঘিরে। সিরাজ ভাই চিঠি লিখত। এজাজ ছিল বাহক। ঘরে ঢুকলেই ছোঁ মেরে হাত থেকে চিঠি নিয়ে যে শরীরের কোথায় লুকিয়ে ফেলত শায়লা আপা! আর এজাজ আহসান বুভুক্ষুর মতো বসে থাকত শায়লা আপা বাটিভরতি ফিন্নি নিয়ে এলে। ফিন্নির এলাচ বাদামের গন্ধ নয়, শায়লা আপার গা থেকে যে ভুরভুরে পাউডারের গন্ধ আসত তার লোভে। কী পাউডার মাখত শায়লা আপা? তারপর সেই গন্ধ কত খুঁজেছে এজাজ আহসান, আর পায়নি কোথাও। 

আব্বা বারবার ফোন দিচ্ছেন। আর কতখান লাগব রে পুত, তাগদা কইরা আয়। গাড়ি একশ মাইল স্পিডে চালিয়ে এসেছে সে। যত দ্রুত পারা যায়। চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। আসলে খবরটা তাকে দিতেই দেরি করেছে ওরা। আগে দিলে হয়তো এত ঝামেলা পোহাতে হতো না। বাড়ির বাইরে জটলা। হর্নের শব্দে সবাই পেছন ফেরে। এজাজ আহসানের উপস্থিতি সেই মুহূর্তে অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে উপস্থিতির কাছে। সম্ভ্রমে আদাব সালাম দেয় তারা। ফিসফিসানি থ মেরে যায় হঠাৎ। বড় উঠানে খাটিয়ায় বড় বউয়ের মৃতদেহ। এবড়ো-থেবড়ো মানুষ সারা উঠান জুড়ে। এমন ঘটনা তারা দেখবে দূরের কথা, শোনেওনি কোনোদিন। হাসপাতাল থেকে সরাসরি নিয়ে আসা হয়েছে গ্রামের বাড়িতে। দুজন কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার মোড়ে। যত তাড়াতাড়ি লাশ দাফন হয় তারা ফিরতে পারে। তাদের চোখেমুখে রাজ্যের বিরক্তি। সবাই অপেক্ষা করে আছে এজাজ আহসানের জন্য। তার উপস্থিতিতে দাফন কাফন হলে অন্তত ভবিষ্যতের ভোগান্তি থেকে যদি বাঁচা যায়।

তড়িঘড়ি ঘর থেকে চেয়ার আনে কেউ। বোধহয় অন্দরে কেউ শরবত দেওয়ার কথাও ভাবে। আরেকজন ইশারা দেয়, মুর্দা উঠানে রেখে কাজটা বেমানান। মৌলানা কোরান তেলাওয়াত বন্ধ করে মিনিট কয়েকের জন্য। এজাজ আহসান দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করার আদেশ দেয়। সবাই অধীর অপেক্ষায় ছিল শুধু এই আদেশটার। চারদিকে ফোনটোন করে সব ঝামেলা মিটিয়ে এজাজ ঢাকায় ফেরার পথ ধরে। সবাই যখন মৃতদেহ নিয়ে কবরস্থানে, তখন চুপচাপ শায়লাদের বাড়িটা ঘুরে আসে এজাজ আহসান। কবরের মতো নিস্তব্ধতা এখানেও। কী জমজমাট ছিল শায়লা আপাদের বাড়িটা। সব সময় যেন ঈদ লেগে থাকত। কতগুলো ভাইবোন ছিল শায়লারা। ছোট্ট এজাজ দূর থেকে দেখত দিনে ভাইবোনগুলো কলেজ স্কুল মিটিং মিছিল কত কিছু নিয়ে ব্যস্ত। আর রাতে সব কাছারি ঘরে হৈ হৈ করে ক্যারাম খেলত। শায়লা আপা ছিল এদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। এজাজ তাকে ডাকত আগুন আপা। কী দুর্দান্ত স্লিভলেস ব্লাউজ আর জর্জেট শাড়ি পরে টাউন হলের মঞ্চে মাইকে ঘোষণা দিত, এবারে সংগীত পরিবেশন করতে আসছে...। স্কুলচুরি করে সিনেমা হলের বড়পর্দায় শাড়ির আঁচল খুঁটে গান গাইত যে নায়িকারা মনে হতো যেন তারাই নেমে এসেছে স্টেজে। শুধু শায়লা আপাকে দেখার জন্য শহরের কোনো অনুষ্ঠান মিস করত না এজাজ। শায়লা আপা হঠাৎ ইশারা দিয়ে ডাকতেন, আমারে একটা গ্লাস পানি খাওয়াসনে বে এজাজ। পানি তো পানি শায়লা আপা চাইলে আকাশের চাঁদটারে এনে দিতে পারত। 

পিএস এগিয়ে ফোন দেয়। তিন মাসের ইউরোপ ট্যুর চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। কয়েকশ কোটি টাকার প্রজেক্ট স্বাক্ষর হবে। ছেলের টিউশন ফিটা দ্রুত ট্রান্সফার করতে হবে স্টেইটে। সাবিহাকে জানিয়ে দিতে হবে এসময়ে আর না ফিরতে। দপ্তরের কাজগুলো নয় বরং ব্যক্তিগত কাজগুলোই গুরুত্ব দিয়ে ভাবে এজাজ আহসান। 

ঢাকায় ফিরে শায়লার নাম্বারে ফোন করলে ওপাশ থেকে সুইচড অফ শোনা যায়। শায়লার নাম্বারটা কখনোই ডিলিটও করা হয়নি, কলও করা হয়নি। কেন এতদিন ফোন করল না শায়লাকে, প্রশ্নটার কোনো উত্তর খুঁজে পায় না এজাজ আহসান। 

২. আজিজুল মিয়ার বড় ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এজাজ আহসান ফেরার পথে থানায় নামে। তাকে দেখে বেশ একটা হুড়োহুড়ি পড়ে যায় চত্বরে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে এসপি সাহেব নিজে এসে পৌঁছান। উপস্থিত সাংবাদিকদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দেন এজাজ আহসান। মধুর লোভে আসা মৌমাছির মতো গল্পের সন্ধানে এসে ভিড় করেছে এরা। শহরের বুকে সুন্দরী নারীর আত্মহত্যা। পরকীয়ার কত রসালো গল্প যে শহরে হাওয়ায় ধাক্কা দিচ্ছে পাকা কাঁঠালের গন্ধের মতো। কেউ বলেÑ বউটির সম্পর্ক ছিল, কেউ বলেÑ না স্বামীটির। সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারা তাদের অতলান্ত উৎসাহকে আরও বাড়িয়ে দেয়। আরও আদিম রসালো গল্পের আগ্রহে থাকে তারা।

ততক্ষণে এসপি নিজ দায়িত্বে হাসপাতাল থেকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আনিয়ে নেয়। স্পষ্ট আত্মহত্যা। কিচ্ছুই করতে হয় না এজাজ আহসানের। এসপি নিজেই দ্রুত কাগজপত্র ঠিক করে আজিজুল মিয়ার ছেলেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। এসপি বারবার কৈফিয়ত দেন, নিজের স্মার্টনেস যতটা পারা যায় বজায় রেখে তিনি বলেন, স্যার আপনার আত্মীয় আগে জানলে ব্যাপারটা এতদূর গড়ায় না স্যার। এজাজ নির্লিপ্ত থাকেন, না আপনারা আইনমাফিক কাজ করবেন, আইনের বাইরে কেন যাবেন। কোনোভাবেই এদের কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে নিজের ভাবগাম্ভীর্য একফোঁটা শিথিল হতে দেওয়া যায় না।

৩. সিরাজ ভাইয়ের সাথে যেদিন শায়লা পালিয়ে গিয়েছিল সেদিন শহরে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল। সুন্দরী স্মার্ট সম্ভ্রান্ত ঘরের মেয়ে শায়লাকে মনে মনে কামনা করত শহরের কত ছেলে। ভাবত লন্ডন আমেরিকা কিংবা উচ্চপদস্থ কোনো আমলার বউ হবে শায়লা, সেই শায়লা পালিয়ে গেল চালচুলোহীন ছাত্রনেতার সঙ্গে। এজাজ আদ্যোপান্ত জানত। কেবল জানত না ওদের পালিয়ে যাবার দিনক্ষণ। কলেজপড়ুয়া এজাজ খুব কষ্ট পেয়েছিল। কেন তা সেদিনও স্পষ্ট বোঝেনি, আজও সে বোঝে না। প্রথম চিঠি দেওয়ানেওয়া থেকে কলেজের পেছনে ডেটিং করা সবই জানত এজাজ, অথচ এদের পালিয়ে বিয়ে করার খবরটা দিব্যি লুকিয়ে গেল ওরাÑ এই কষ্ট বড় ছিল নাকি চিরতরে শায়লাকে হারানোর কষ্ট বড় ছিল পরিমাপ করতে পারেনি সে। আজও পরিমাপ করে না। দীর্ঘ বিশটি বছর আর যোগাযোগ নেই শায়লার সঙ্গে। ব্যস্ত জীবনে শায়লার খবর নেওয়ার মতো অবকাশ মেলেনি। শুধু নাম্বারটাই যা একবার নেওয়া হয়েছিল শায়লার শ্বশুরের কাছ থেকে আর সেইভ করা ছিল অন্তরে।

গাড়িতে উঠে মুখ খোলে এজাজ আহসান। কেমন আছেন সিরাজ ভাই? সিরাজ ভাইয়ের চেহারা বিধ্বস্ত, বিমর্ষ, মলিন। কোনো উত্তর না দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। আহা সিরাজ ভাই। তখন একটা চিঠি হাতে গুঁজে দিলে দৌড়ে পৌঁছে দিয়ে আসত শায়লা আপার কাছে। সিরাজ ভাইয়ের নামে বাকিতে সিগারেট আনতে সঙ্গীসাথিদের সাথে দৌড়ের প্রতিযোগিতায় ফার্স্ট হতো ও। এই সিরাজ ভাইকে এভাবে দেখতে অসহনীয় লাগে আজ! 

কী হয়েছিল সিরাজ ভাই? শায়লা আপা কেন আত্মহত্যা করল? ঝগড়া করেছিলেন? পরকীয়া কারও? যা সবাই বলছে? 

না না না। সব প্রশ্নের উত্তরেই না বলছে সিরাজ ভাই। কী চেহারা হয়েছে সিরাজ ভাইয়ের! রাস্তাঘাটে দেখা হলে হয়তো চিনতই না এজাজ আহসান। সুদর্শন লম্বা যুবকটি আজ কেমন ভাঙাচোরা এক প্রৌঢ়। মাথায় চুল নেই। দাঁত পড়ে গাল ঢুকে গেছে চোয়ালের ভেতরে। টিকে থাকা দাঁতগুলোতে পান খয়েরের গাঢ় দাগ। পুরো সিরাজ ভাই পরাজিত এক মানুষ যেন। তবু বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তরই বের করতে পারেনি এজাজ আহসান। সিরাজ ভাই বারবার নিশ্চিত করেছে তাকে, না তাদের কোনো দাম্পত্য অশান্তি ছিল না। খুব ভালো ছিল তারা দুজন। তবে যে এত গল্প ডালপালা মেলছে তার একটা হেনস্থা করা দরকার। যে-কেউ একটা কিছু গপ্পো বানিয়ে ছেড়ে দিলে মুশকিল, ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যৎ। এজাজ আহসান সিরাজ ভাইকে আশ্বস্ত করে, ব্যাপারটা সে দেখছে। 

৪. দক্ষিণমুখী বারান্দায় শখের বাগান তার। নানা ধরনের গাছ। একটা গামলায় শাপলারও চাষ করা হয়েছে। এখানে ইজি চেয়ারে বসে এককাপ গ্রিন টিতে চুমুক দিতে দিতে দিনটা শুরু হয় তার। অনেক দিনের অভ্যাস। সাথে দৈনিক পত্রিকাগুলো উল্টানো। হ্যাঁ গতকাল টিসিবির কার্ড বিতরণের ছবি প্রায় সব পত্রিকায়। পত্রিকাটা হাতে নিয়ে থমকে যায় সে। সিরাজ ভাই না? টিসিবির কার্ড নিচ্ছে তার হাত থেকে! 

শায়লা আপার আত্মহত্যার খবরটা অন্য গল্পের দিকে ছুটে যায়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মারুফ কামাল খান

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা