আবদুর রব শরীফ
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৬ পিএম
সদ্য স্কুলে ভর্তি হবে বদরুল ভাইয়ের ছোট ছেলে। সে হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্ট পরবেই না! সেদিন অনেকটা জোর করে তার মা তাকে ফুল প্যান্ট পরিয়ে দিলেও সে বাবা যেই মাত্র অফিসের দিকে রওনা হলো, সেই মাত্র প্যান্টটি খুলে হাফ প্যান্ট পরিধান করে হাঁটা শুরু করল।
পাশের বাসার বল্টু শীতের সকালে পা টানা প্যান্ট পরে দিব্যি ঘুরছে, তা দেখিয়েও তাকে ফুল প্যান্ট পরানো যাচ্ছে না। দুশ্চিন্তা ভর করেছে পুরো পরিবারে। সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপও নেই। সেদিন মক্তবের হুজুর এসে অনেক বুঝিয়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করিয়ে দিল!
পাড়ার দাদিমা দুশ্চিন্তার এক ফাঁকে বলে উঠল কোন বদ জিন যে হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ায় সে মনে হয় ভর করেছে। পরে বাসায় একটা মিলাদের আয়োজন করা হলো। অথচ কারও কোনো তদবিরে কাজ হচ্ছে না। এক দফা এক দাবি। সে হাফ প্যান্ট ছাড়বেই না।
ইদানীং কেউ কী পরো, জিজ্ঞেস করলেও সে হাফ প্যান্ট পরি উত্তর দেয়, কিসে পরো জিজ্ঞেস করলে বলে হাঁটুর ওপরে!
বড় হয়ে কী হতে চাও জিজ্ঞেস করলে বলে, বড় হতে চাই না, সারা জীবন হাফ প্যান্ট পরিধান করতে চাই এমন,
আমার মনে হচ্ছিল, সে বড় হয়ে উসাইন বোল্ট হবে, তাই তার হাফ প্যান্টের প্রতি জন্মগত আকর্ষণ!
প্রথম প্রথম ব্যাপারটা কাকতালীয় মনে হলেও পরে ব্যাপারটা নিয়ে স্বয়ং তার বাবাও চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল।
সেদিন কয়েকটা খেলনা সঙ্গে টম জেরি আঁকা কিছু ফুল প্যান্ট নিয়ে গিয়ে বাবা ছেলেকে কোলে তুলে বললেন, এগুলো তোমার জন্য, দেখো কত সুন্দর সুন্দর কার্টুন! কিন্তু ছেলে নিশ্চুপ! পরবেই না!
এই যাত্রায় ব্যর্থ হয়ে মা কিছুক্ষণ পর বেত নিয়ে এসে কয়েকটা উত্তম মধ্যম দিয়ে এক প্রকার আড়কোলা করে ফুল প্যান্ট পরিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর মা আবিষ্কার করল, সে প্যান্ট খুলে কিক মেরে মেঝেতে ফেলে দিয়ে দিব্যি ঘুমাচ্ছে!
সেদিন বাবা বন্ধের দিন ছেলের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিল। বাবা-ছেলে নানা রকম খেলা খেলতে ছিল। খেলার ছলে বাবা জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা সোনা তুমি কেন হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্ট পরতে চাও না? তা শুনে ছেলে উত্তর দিল, ‘আমি ফুল প্যান্ট পরলে তোমার মতো বড় হয়ে যাব। বড় হলে এভাবে তুমি আদর করবে না! তাই আমি বড় হতে চাই না! সারা জীবন হাফ প্যান্ট পরে ছোট থাকতে চাই।’
তারপর থেকে বাবাও হাফ প্যান্ট পরিধান করে রুমে ঘুরতেছে! ছেলের মা ওদিকে চিল্লাচিল্লি করতেছে, ‘এবার বাবা-ছেলে দুজনের মাথাই গেছে! ওদের নিয়ে আমি আর পারি না।’