গাজী মুনছুর আজিজ
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৫ ১১:১২ এএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৫ ১১:২৫ এএম
মারিনো রিগন যাজক হিসেবে বাংলাদেশে এলেও বাংলা সাহিত্যের প্রতি ছিল তার গভীর আকর্ষণ। বিশেষ করে রবীন্দ্রসাহিত্য আর লালনের প্রেমে তিনি ছিলেন অন্ধ। এজন্য প্রায়ই তিনি বলতেন, রবীন্দ্রনাথ তার মগজে বসবাস করে, আর লালনের বসবাস তার অন্তরে। এমনকি গির্জায় প্রার্থনা বা বিভিন্ন ধর্মীয় আলোচনায়ও তিনি প্রায়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঙ্ক্তি বা লালন সাঁইজির গান কিংবা বাণীর উদাহরণ টানতেন।
এ দেশে তিনি বসবাস করেছেন ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ এ সময়ে সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি বেশ কিছু মানবিক কাজ করেও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধে তার যে অবদান তা সত্যিই অতুলনীয়। তার এসব অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে। এ ছাড়া পেয়েছেন বিভিন্ন পুরস্কার, সম্মাননা।
ইতালির ভেনিসের নিকটবর্তী ভিল্লাভের্লা গ্রামে তার জন্ম ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। হিসাব অনুযায়ী এবারের ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল তার জন্মশতবর্ষ। তিনি ১৯৫১ সালের ১০ মার্চ ইতালির পিয়াসো শহরে জেভেরিয়ান সম্প্রদায়ের যাজক হিসেবে অভিষিক্ত হন। এরপর রোম ত্যাগ করেন। একজন মিশনারি হিসেবে প্রথমে আসেন পূর্ব পাকিস্তানে, এরপর কলকাতা এবং সবশেষে বাংলাদেশে।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৫৩ সালের ৭ জানুয়ারি প্রথম বাংলাদেশে আসেন তিনি এবং ঢাকার বিশপস হাউসে চার মাস অবস্থান করেন। এরপর কুষ্টিয়ার ভবরপাড়া মিশনে আসেন বাংলা শিখতে। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে আসেন সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাট জেলার মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ লীলাভূমিতেই তিনি খুঁজে পান তার আপন ঠিকানা। তার সাহিত্যচর্চার হাতেখড়িও এখান থেকেই।
বাংলা সাহিত্যের প্রতি মারিনো রিগনের প্রথম আগ্রহ তৈরি হয় বাংলা শিখতে গিয়ে। এরপর শেলাবুনিয়ার ললিতবাবুর সঙ্গে রিগনের পরিচয় হয়। ললিতবাবু রিগনকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পণ্ডিত মশাই’ বইটি পড়তে দেন। বইটি পড়ে বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। পর্যায়ক্রমে তিনি বাংলা সাহিত্যের আরও অনেক বই পড়েন। আর এভাবেই বাংলা সাহিত্যের মধুমাখা রসবোধ তাকে বাংলা সাহিত্যের প্রতি দুর্বল করে তোলে। ফলে বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার এ ভালোলাগা তিনি তার নিজের দেশের মানুষের কাছে জানাতে ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ শুরু করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা ফকির লালন সাঁইজিকে নিয়ে তার বিশেষ দুর্বলতা থাকলেও আরও অনেক লেখকের সাহিত্য নিয়েও রয়েছে তার বিশেষ চর্চা ও সাধনা। বিশেষ করে আমাদের জাতীয় কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকের লেখা তিনি অনুবাদ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতি এমন প্রেম খুব কম ভিনদেশির বেলাতেই চোখে পড়েছে।
তার অনূদিত গীতাঞ্জলি ১৯৬৪ সালে ইতালিতে প্রকাশিত হয়। পর্যায়ক্রমে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৪০টির বেশি কাব্যগ্রন্থ অনুবাদ করেন। এর মধ্যে আছে গীতাঞ্জলি, শান্তিনিকেতন, স্ফুলিঙ্গ, নৈবেদ্য, বলাকা, লেখন, চিত্রা, শিশু, শেষখেলা, সোনার তরী, কড়ি ও কোমল, চৈতালী, শ্যামল, রোগশয্যায়, আরোগ্য, জন্মদিনে, স্মরণ, কল্পনা, কথা ও কাহিনী, মহুয়া, নবজাতক, কণিকা, চিত্রাঙ্গদা, পূরবী, সন্ধ্যা সংগীত, প্রভাত সংগীত, ছবি ও গান, ক্ষণিকা, পূর্বদিকে, পুনশ্চ, খেয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া তার ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করা ‘নৈবেদ্য’ স্প্যানিশ এবং ‘চিত্রা’ পর্তুগিজ ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। বিশেষ করে তিনি যে ইতালীয় ভাষায় গীতাঞ্জলি অনুবাদ করেছেন, এটিই মূলত বাংলা থেকে সরাসরি ইতালীয় ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রনাথের প্রথম বই।
এ ছাড়া তার অনুবাদ করা জসীমউদ্দীনের বইয়ের মধ্যে আছে নক্সী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, সুচয়নী ও নির্বাচিত কবিতা। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ ও পণ্ডিত মশাই। সুকান্ত ভ্ট্টাচার্যের সুকান্ত সমগ্র। পাশাপাশি আল মাহমুদ বা শামসুর রাহমানের কবিতায়ও তার আকর্ষণ ছিল।
তিনি শুধু আল মাহমুদের কবিতা পছন্দ করতেন তা নয়, তারা পরস্পর বন্ধু ছিলেন। আল মাহমুদও রিগনকে তার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের একজন হিসেবে বিবেচনা করতেন। রিগনের ওপর আল মাহমুদ স্বতন্ত্র ধরনের প্রবন্ধও লিখেছেন; যা তার রচনাবলিতে আছে। এ ছাড়া আল মাহমুদ লোকছন্দে রিগনকে নিয়ে একটি ছড়াও লিখেছেন; যা তার ছড়াসমগ্রে আছে। আল মাহমুদ যখন মগবাজারে থাকতেন, তখন রিগন মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তার বাসায় আসতেন। তারা সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।
রিগনকে নিয়ে আল মাহমুদের ছড়াÑ
ফাদার রিগন ফাদার রিগন
ঝোলার মাঝে কী আছে ধন?
কী আছে নিন খ্রিস্টপ্রণাম
কানাকড়িও লাগবে না দাম।
ফাদার রিগন ইতালীয়
বাংলাদেশের সালাম নিঅ।
রবীন্দ্র, নজরুল বা জসীমউদ্দীনের কবিতার পাশাপাশি লালন ফকিরের প্রায় ৪০০ গান তিনি ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তার অনূদিত একটি বইয়ের নাম ‘আমার প্রিয় লালনগীতি’। এ বইতে স্থান পেয়েছে লালনের নানা প্রসঙ্গের ১০০ গান। বইটির ভূমিকা লিখেছেন লালন-গবেষক, প্রাবন্ধিক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। লালন ফকির ছাড়াও বাংলার অন্যান্য বাউল বা বাউল গান নিয়েও তিনি কাজ করেছেন।
বাংলা সাহিত্য ও গান অনুবাদের পাশাপাশি তিনি শেলাবুনিয়া গ্রাম নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন। বাংলা ও ইতালীয় ভাষায় লেখা এসব বইয়ে তিনি শেলাবুনিয়ার রূপসৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন দারুণভাবে। এর মধ্যে আছে শেলাবুনিয়ার রূপকথা, ভিল্লাভের্লা থেকে শেলাবুনিয়া, আমার গ্রাম। পাশাপাশি বাংলাদেশের সৌন্দর্য বা শিল্পসংস্কৃতি নিয়ে বাংলাদেশ, নকশিকাঁথাসহ তার একাধিক বই রয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন কার্লো কল্লোদির ‘কাঠের মানুষ পিনোকিও’। এ ছাড়া ‘রবীন্দ্রনাথ ও নারী’ ও ‘সমর্পিতা’ নামেও তার বাংলায় বই আছে। সব মিলিয়ে বাংলা ও ইতালীয় ভাষায় তার মৌলিক বা গবেষণাধর্মী বইয়ের সংখ্যা ৯টি।
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি মানবসেবা, চিকিৎসাসেবা বা শিক্ষাসেবায়ও রয়েছে তার অনন্য অবদান। আর এসবের জন্যই তিনি এ দেশের মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন একান্ত আপনজন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার রয়েছে অনন্য ভূমিকা। এজন্য ২০১২ সালে পেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ফরিদপুরের বানিয়ারচর মিশনে। এ মিশনের হাসপাতালে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাদ্যসহায়তা, তথ্য প্রদানসহ নানা সেবা দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতায় এক অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার এসব অবদানের কথা অনেক মুক্তিযোদ্ধাই তাদের স্মৃতিকথায়, গল্পে, সাক্ষাৎকারে বলেছেন বা লিখেছেন। বিশেষ করে হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রম ছিলেন এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
মুক্তিযুদ্ধে রামশীলের যুদ্ধে গেরিলা দলনেতা হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমের মুখের বাঁ পাশে গুলি লেগে ১১টি দাঁত পড়ে যায় এবং গুলি তার মুখের ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়, জিবের একটি অংশও পড়ে যায়। আহত অবস্থায় তিনি রিগনের মিশনে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রিগন মাতৃসম সেবা দিয়ে হেমায়েত উদ্দিনকে সুস্থ করে তোলেন। সুস্থ হয়ে তিনি আবার ফিরে যান মুক্তিযুদ্ধে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রিগনের লেখা ডায়েরি, আলোকচিত্র ও অন্যান্য স্মৃতি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। রিগন নিজেই এসব স্মৃতি দান করেছেন জাদুঘরে।
তার উদ্যোগে ১৯৫৪ সালে মোংলায় গড়ে ওঠে সেন্ট পলস বিদ্যালায়। নিজ হাতে ইটও গেঁথেছেন এ প্রতিষ্ঠানের জন্য। এ বিদ্যালয়ের জন্য হাঁটুসমান কাদাপানি ভেঙে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীও সংগ্রহ করেছেন। এরপর অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি। শুরু থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনও করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার উদ্যোগ বা সহযোগিতায় খুলনার ফাতেমা উচ্চবিদ্যালয়সহ যশোর, বাগেরহাট ও মোংলায় ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি অসহায় ও দুস্থ নারীদের জন্য শেলাবুনিয়ায় ১৯৮৩ সালে গড়ে তোলেন একটি সেলাইকেন্দ্র। এ কেন্দ্রে কেবল আবহমান বাংলার লোকজ ঐতিহ্য নকশিকাঁথা সেলাই করা হয়। এসব নকশিকাঁথায় উঠে আসে আমাদের সবুজ-শ্যামল বাংলার ফুল, পাখি, কবিতা, নদী, পালকি, ঢেঁকি, গ্রাম্য বধূ, কিষান-কিষানি কিংবা ধানক্ষেতসহ বাংলার রূপবৈচিত্র্য। এখানকার নকশিকাঁথা দিয়ে ১৯৮৬ সালের ২ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ইতালির ভিসেঞ্জা শহরের মনতে ডি পিয়েত্রা হলে; ১৯৯১ সালে ভেনিসে এবং ১৯৯৪ ও ২০০২ সালে রোমে প্রদর্শনীরও আয়োজন করেন তিনি। পাশাপাশি এসব নকশিকাঁথা ইতালিতে বিক্রির ব্যবস্থাও করেন। শুধু তাই নয়, এ দেশের নকশিকাঁথার ইতিহাস-ঐতিহ্য বা মূল বিষয়কে তিনি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে ইতালীয় ও ইংরেজিতে বইও লিখেছেন। নকশিকাঁথা সেলাই, নকশাসহ নানাভাবে পরামর্শ দিয়ে তাকে সহযোগিতা করতেন শিল্পী সুরাইয়া রহমান।
মারিনো রিগনের উদ্যোগে বাংলাদেশের শিশুশিল্পী অরিন হক ১৯৮৬ সালের ২৩ নভেম্বর ইতালিতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শিশু সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় সে প্রথম স্থান অধিকারও করে। এ ছাড়া ১৯৮৭ সালের ১৯ সেপ্টম্বর থেকে ২ অক্টোবর তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একটি সাংস্কৃতিক দল নিয়ে ইতালি ভ্রমণ করেন। তারা সেখানকার ফ্লোরেন্স, ফায়েঞ্জা, চেরনুসকো, মিলান, ভেনিস ও ভিসেঞ্জায় জসীমউদ্দীনের নক্সী কাঁথার মাঠ অবলম্বনে নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন। এ সাংস্কৃতিক দলে ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, শামীম আরা নীপা, অপি করিম প্রমুখ। এ ছাড়া ১৯৯১ সালেও শামীম আরা নীপা, অপি করিমসহ নাচের একটি দল নিয়ে তিনি ইতালি এবং ভ্যাটিকান সিটি ভ্রমণ করেন।
সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্তও তিনি রেখেছেন। তার নামে মোংলার হলদিবুনিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশন প্রতি বছর হলদিবুনিয়া গ্রামে রিগন মেলার আয়োজন করে। রিগন বেঁচে থাকতেই এ মেলা শুরু হয়। এখনও প্রতি বছর রিগনের জন্মদিন ঘিরে এ মেলা আয়োজিত হয়। এ ফাউন্ডেশন ও মেলার মূল উদ্যোক্তা হলদিবুনিয়া গ্রামের সুভাষ বিশ্বাস। এ ছাড়া শেলাবুনিয়াসহ আশপাশের সনাতনধর্মীদের পূজাপার্বণেও তিনি অতিথি হিসেবে হাজির হয়ে রেখেছেন ভিন্ন দৃষ্টান্ত।
তার ভাই-বোন অনেকেই তার কাছে বেড়াতে একাধিকবার মোংলায় এসেছেন। তারাও রিগনের দেখাদেখি বাংলার শিল্পসংস্কৃতি বা রূপসৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি তাদের ছেলেমেয়ের বিয়েও হয়েছে মোংলায় বাংলাদেশের লোকজ রীতিতে। অর্থাৎ বর-কনে ইতালিয়ান, কিন্তু বিয়ে হলো বাংলাদেশে। এর মধ্যে ২০০০ সালে রিগনের বোন তেরেজার ছেলে অ্যাংরিকোর বিয়ে হয়; কনে ছিল ইতালিয়ান মিরকা। এরপর রিগনের ভাই ফ্রান্সিসকোর মেয়ে মনিকার বিয়ে হয়; বর ছিল ইতালিয়ান মাইকেল। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সিসকোর উদ্যোগে রিগনের জন্মস্থান ভিল্লাভের্লা গ্রামে রবীন্দ্রনাথের নামে একটি সড়ক হয়েছে। এ ছাড়া তিনি সেখানে গড়েছেন রবীন্দ্র অধ্যায়ন কেন্দ্র।
ছয় দশকের বেশি সময় ধরে তিনি এ দেশে বসবাসের ফলে এখানকার মানুষ, মাটি, প্রকৃতি, শিল্পসাহিত্যের প্রতি তার যে ভালোবাসা জন্মেছে, সে ভালোবাসার বন্ধন তিনি কখনোই ছিন্ন করতে চাননি। ফলে তিনি সব সময় চেয়েছেন বা বলেছেন এ দেশের মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। তার সে ইচ্ছে অনুযায়ী মোংলার শেলাবুনিয়া গ্রামেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে মারিনো রিগন ইতালির ভিচেঞ্চায় প্রয়াত হন। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী মৃত্যুর প্রায় এক বছর পর ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর তার মরদেহ ইতালি থেকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে গার্ড অব অনারও প্রদান করা হয়।