নাসির আহমেদ
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:০৭ এএম
একজোড়া শাদা রাজহাঁস
বিস্তৃত দিঘিতে জলকেলি
দখিনা গুঞ্জনে সুবাতাস
ডেকে ওঠেÑ গোলাপ, চামেলী।
কোকিলের কুহু কুহু স্বরে
পলাশে শিমুলে কানাকানি
ফাগুনে আগুন হয়ে ঝরে
ইতিহাস। কজনা তা জানি!
তোমাকে যে এত ভালোবাসি
সে কথা কতটা তুমি জানো!
ভ্যালেন্টাইন-প্রেমে মৃত্যু-ফাঁসি
তবু তো প্রেমের কাছে আসি।
বসন্তে তোমার সঙ্গে দেখা
ফুল-ফাগুনের আলোড়ন!
আজ এ বসন্তে আমি একা
মনে পড়ে নিবিড় বন্ধন?
চোখে চোখ, ঠোঁট বন্দি ঠোঁটে
নিভৃতের গাঢ় আলিঙ্গন
যুগল ভাস্কর্য হয়ে ফোটে
স্মৃতিঝড়ে আজো কাঁপে মন!
বসন্তে তোমাকে মনে পড়ে
দখিনা বাতাসে ফুল ফোটে
অপূর্ণ স্বপ্নের কুঁড়ি ঝরে
স্মৃতি দীর্ঘশ্বাস হয়ে ওঠে।
সুহাসিনী! এই গ্লানিময়
জীবনে এখনো তুমি আশা
বসন্তেই দিয়েছি হৃদয়
তাইতো বসন্তে ফিরে আসা।
হলুদ পাখির গান
সোহরাব পাশা
দূর ডাকে মায়ার রোদ্দুর
হলুদ পাখির গান
মুখর বসন্ত ওড়ে
ফুলগুলি কেউ নিচ্ছে ছিঁড়ে--
নিদ্রিত স্পর্শের কোলাহল,
ভালোবাসার মৃত সংস্কৃতি
রুগ্নভোর -শান্তি নেই পৃথিবীর
নির্বাচিত অশ্রুর গণিত;
প্রসন্ন যাপন নেই
অন্ধ প্রতিশ্রুতি বিভাজিত শিল্পছায়া
বেড়ে যায় অবিশ্বস্ত অশ্লীল আঙুল
শূন্যতার অদ্ভুত ঐশ্বর্য -নিঃস্বদিন
ভিন্নপথ হাঁটার জীবন
স্বপ্নমুখর দীর্ঘ স্মৃতির গুঞ্জন
নৈঃশব্দ্যের অন্ধকারে
না-ফেরা পাখির গান।
তৃষ্ণা
জাহানারা পারভীন
মুঠোর ভেতর ধরে রাখা যায় কতটা আগুন?
পুড়ে যাচ্ছে ভুল, কাঠের আঙুল
পুড়ছে সেগুন কাঠের শরীর
জ্বালিয়ে নিতে পানো পুরো শীতকাল
কোনো কোনো শীতে কথারা হয়ে ওঠে ছুরি
হাসির আঘাতে ভেঙে যায় কাচের বাসন
ঘুমের পাশে জেগে থাকে নদী,
তীর ধরে চলে যাব কোথাও
বাদাম গাছের নিচে পড়ে থাকবে সব ন্যায্যতা
পাথরের বুক থেকে বেরিয়ে আসা জল
পান করবে পিতলের পাখিরা
বাদাম গাছের নিচে পড়ে থাকবে আরও কিছু তৃষ্ণা
বলা না বলা কথা
সারওয়ার-উল-ইসলাম
আমরা দু’জন কেউ কাউকে বলতে পারিনি কখনো,
দ্বিধা এসে ভর করেছে, হয়তো খানিকটা লজ্জাও।
তবে বুঝতাম দু’জন দু’জনের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টা।
পুরো সাতটা বছর একই বিদ্যাপীঠে,
শীতের সকালে ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় রেলিং ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে রোদ পোহানোর সময় তাকিয়ে দেখেছিÑ
একটু উষ্ণতার জন্য কী আকুতি দুজনের!
এখনও বছরে একবার হলেও দেখা হয় আমাদের
কোনো না কোনো গেট টুগেদারে।
দুজন হাঁটি পাশাপাশি, কথা হয়,
জানা হয় দু’জনের দাম্পত্য জীবনের কথা।
চোখে চোখ রেখে হয় না কথা আমাদের,
হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা নির্জনে গিয়েও ফেলে
আসা দিনের সেই না বলা কথা হয় না তবু বলা।
সময়কে সাক্ষী রেখে সন্ধ্যায় ফিরি যার যার সংসারে।
কবে আবার দেখা হবে? সেই অপেক্ষায় থাকি...
ফেরা
অতনু তিয়াস
তুমি হাসতেই ভোরের আকাশ পাখির উড়ালে জেগে ওঠে
ঠোঁট থেকে উঠে এসে হাসির ফোয়ারা নামে চোখে
মনের খিড়কিতে উঁকি দিলে উদ্ভিন্ন বাগান
ভেসে আসে বিচিত্র সুঘ্রাণ
তুমি কাঁদলে আকাশ কালো করে মেঘ জমে
জলের প্লাবনে নদীরা নাব্য ফিরে পায়
নদীর সূত্র ধরে উজানে গেলেই
দৃশ্যত পাথরহৃদয় এক দুঃখপাহাড়
ভেতরে নীলজল শান্ত সরোবর
আমি সেই সরোবরে পদ্মের পাপড়িতে বসে আছি ধ্যানে
সমুদ্রমন্থন শেষে তোমার প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষায়।
সমাজ সংসার জানে, নদীরা কেবল সমুদ্রেই যায়
উৎসমূলে ফেরে না কখনো।
আমি জানি, নদী ফিরবেই
আলোহাওয়ার হাত ধরে স্বপ্নে আকাশচারী হলে
মেঘরাখাল তাকে তাড়িয়ে নিয়ে আসবে ফের পাহাড়েই।
প্রেমের অমরতা আত্মার মতোই!
ধূলিবসন্তের দিনে
তুষার কবির
দূর থেকে কড়া নাড়া এই ধূলিবসন্তের ডাকে তোমার পায়ের ছাপ ধরে হেঁটে যাই জেগে ওঠা রক্তজবা বনেÑ পয়ার ও পায়রা ওড়া ঝিমানো দুপুরে!
ঘুঙুর গড়ানো নাচলিপি ধরে এ বসন্তে হারিয়ে যাই পাতা ঝরা বনের গহনেÑ ময়ূরের ইশারাভাষায়!
এ বসন্ত বিকেলে পিয়াল ডালের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছিÑ হাতে শেষ লেখা ছেঁড়া চিরকুটÑ তোমার সমাপ্তি বার্তাÑ মিহি প্রতারণালিপি!
বসন্তের রক্তধ্বনি শুনি; দূরের কানাড়া এখনো বাজেনি।
অপেক্ষা
তাসনুভা অরিন
যা কিছু বসন্ত না ভেবে উড়িয়ে দিই
সব হলুদ রেণুদের কাম ভ্রমণ।
ফুল থেকে ফুল,
মানুষ থেকে মানুষ
প্রজাপতি সমান দূরত্বে
বিবিধ হাতছানি।
আমার ভ্রমণ ছিল এক মানুষ।
অথচ কে জানত, এক মানুষে হাজার মানুষ।
তাকে ঘিরে নিজস্ব বসন্ত ভ্রমণে জেনেছিÑ
ঋতুচক্র ফুলের অপেক্ষা থেকে ঝরে পড়া ঘ্রাণ
তোমার বুকের থেকে উড়ে আসা প্রজাপতিদের রং।
আমার বসন্তের শেষে দাঁড়িয়ে আছো তুমি আরেকটি বসন্ত।