হাসনাত মোবারক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৪ এএম
মিতিয়া ওসমান, প্রকাশক, ময়ূরপঙ্খি
পাঠকের হাতে বই তুলে দিতে অসামান্য ভূমিকা রয়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের। আসন্ন বইমেলার বিষয়-আশয় নিয়ে ময়ূরপঙ্খি প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মিতিয়া ওসমানের সঙ্গে কথা বলেছেন হাসনাত মোবারক
বইমেলা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা?
আশা করছি বইপ্রেমীরা প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় আসবেন। নতুন সময়। অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটে গেছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিক আছে। সামনে আরও ভালো হবে। বর্তমানে যেহেতু তরুণরা নেতৃত্বে। আমি নিজেও একজন তরুণ প্রকাশক। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই। মেলার ঢাক বেজে উঠলে মানুষ দলে দলে মেলায় এসে উপস্থিত হবেন। আমরা শিশুদের উপযোগী বই প্রকাশ করি। কোমলমতি শিশুরা দলবেঁধে আসবে। জমবে মেলা। মিডিয়ার কাছে দাবি জানাচ্ছি মেলার খবর যেন বেশি বেশি প্রচার করা হয়। আমি আশা করি সবাই তাদের পরিবার, বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে নিয়ে বইমেলায় আসবেন। শিশুদের জন্য এটি কেবল বই কেনার জায়গা নয়, বরং একটি শিক্ষণীয় ও আনন্দময় অভিজ্ঞতা হতে পারে। মেলায় তাদের জন্য আলাদা কার্যক্রম এবং আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি করা গেলে তারা আরও বেশি আকৃষ্ট হবে এবং বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হবে।
কীভাবে প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হলেন?
পারিবারিকভাবে আমি প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত। ছোটবেলা থেকেই প্রকাশনায় কাজ করছি। কিন্তু আমাদের পারিবারিক প্রকাশনা শিশুদের বই তেমন প্রকাশ করত না। কিন্তু আমার পছন্দ শিশুদের বই। তাই আমি আলাদাভাবে শিশুদের বইয়ের প্রকাশনা শুরু করেছি।
মেলাকেন্দ্রিক বই প্রকাশকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
বইমেলা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য সবচেয়ে বড় একটা উৎসব। আর আমাদের প্রকাশনা শিল্পের কাছে উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। যেখানে পাঠক ও প্রকাশকের সরাসরি সংযোগ ঘটে। ফলে বইমেলা কেন্দ্র করে নতুন বই প্রকাশের একটি উদ্দীপনা তৈরি হয়, যা ইতিবাচক। তবে শুধু বইমেলার জন্য তাড়াহুড়ো করে বই প্রকাশ করলে মানের সঙ্গে আপস করতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমি মনে করি, বইমেলা নতুন বই প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম, তবে বই প্রকাশের পরিকল্পনাটি বছরজুড়ে হওয়া উচিত। বইমেলার বাইরেও পাঠকের কাছে নতুন বই পৌঁছানোর সুযোগ বাড়ানো গেলে প্রকাশনা শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।
এতে সম্পাদনার ঘাটতি থাকে কি না?
হ্যাঁ, বইমেলাকেন্দ্রিক তাড়াহুড়োর কারণে অনেক সময় সম্পাদনার ঘাটতি থেকে যেতে পারে। পর্যাপ্ত সময় না থাকলে বানান, ভাষাগত ও কাঠামোগত ত্রুটি রয়ে যেতে পারে। তবে পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব। মানসম্পন্ন বই প্রকাশে সম্পাদনার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া জরুরি। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি নতুন প্রজন্মের জন্য মানসম্পন্ন শিশুতোষ বই প্রকাশ করতে। বইমেলায় পাঠকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি, যা বছরের অন্যান্য সময়ে সম্ভব হয় না। আরেকটি বিষয় বলা দরকার বলে মনে করি, যা শিশুদের বইয়ের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। সেটি হলো শিল্পীর অলংকরণ। তাড়াহুড়ো করলে শিশুদের পছন্দসই কাজ পাওয়া যায় না। কিন্তু লেখকরা সে বিষয়টি বুঝতে চান না। তাই ভালো কাজের জন্য শিল্পীকে সময় দিতে হবে।
এবার বইমেলায় আপনার প্রকাশনী থেকে কয়টি এবং কী ধরনের বই প্রকাশ করছেন?
আমরা সারা বছরই বই প্রকাশ করি এবং এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। এখন পর্যন্ত আমরা ১৬টির বেশি বই প্রকাশ করেছি এবং আরও অনেক বই প্রকাশের পথে রয়েছে। আমাদের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে গল্পের বই, কমিকস, রং করার বইসহ অন্যান্য।
আমাদের লক্ষ্য হলো শিশুদের জন্য মানসম্মত এবং সৃজনশীল বই তৈরি করা, যা তাদের শেখার অভিজ্ঞতা মজার ও আকর্ষণীয় করে তোলে। আমরা সব সময় চেষ্টা করি এমন বই প্রকাশ করতে, যা শিশুদের কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটাবে।