সেজুল হোসেন
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:২৫ পিএম
শীতটা কেন জানি এসেও আবার ফিরে যাচ্ছে। ফিরে এসে আবার চলে যাচ্ছে। দোটানায় পড়া মাছের স্রোতের ঘূর্ণিতে খাবি খাওয়া সিদ্ধান্তের মতো শীতের এমন বেহায়াপনা গ্রামের মানুষ মেনে নিলেও শহরের মানুষের মন খারাপ। সকালে ওম ছেড়ে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় তারা ভারী কাপড় সঙ্গে নেবে কি না এ নিয়ে প্রতিদিন দ্বিধায় ভুগছে। কেউ কেউ শীতের এ নয়া চরিত্রকে অদ্ভুত ও তাজ্জব বলে চাউর করছে পাড়ামহল্লায়।
অন্যদিকে শীতের বেইজ্জতি কাজকারবার আমলে না নিয়ে ক্ষমতার ওমে থাকা মানুষ এখন দৌড়ের ওপর। কেউ দেশে, কেউ ভাগ্যগুণে বিদেশে। কেউ বসে, কেউ হেঁটে, কেউ বা ভাতঘুমের ভেতর দৌড়াচ্ছে। দৌড়টাকেই আপাতত গন্তব্য ধরে নিয়ে ক্ষমতাবানেরা একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারলেও বেকায়দায় পড়েছে আমজনতা। তারা বসবে নাকি একটু শুয়ে থাকবে এ নিয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করছে। বাজারে খবর প্রকাশ, শিড়দাঁড়া সোজা না করে থাকায় তাদের জীবনের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। শীত সেই সুযোগে তাদের ভাগ্য নিয়ে খেলা করছে। একটু ওম পাওয়ার আশায় রাত গভীরের আগেই যারা নিজস্ব রমণীদের বুকে সমর্পণ নেওয়ার কথা, চোখ বন্ধ করতে হবে ভেবে তারাও সেদিকে পা বাড়াতে ভয় পাচ্ছে। চোখ-কান খোলা রাখাই এখন তাদের প্রধান কর্তব্য বলে সংবাদপত্রে খবর ছাপা হয়েছে।
এদিকে আমি নদীর পাড় ভাঙা গ্রামের নীরব এক ঢেউ চুপিসারে কোনো এক পরিত্যক্ত মাছের খামারে নিজের ভাগ্য রচনা করার স্বপ্ন দেখি। দুপুরের ঘুমলাগা গরমে বসে আছি জানালায়। অল্প বন্ধ চোখে দূরের কোনো জানালা দেখছি। টের পাচ্ছি বেড়ালছানার গুটিগুটি পায়ে কেউ একজন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে ঘুমন্ত মানুষের শীতকাল। এ রকম একটা অস্পষ্ট ভাবনা-পরিবেশে, যখন হলুদ রঙের রোদ অনেকটা আয়োজন করেই পুড়িয়ে দিচ্ছে মন ও মগজ, পাশের বাড়ির বারান্দায় সাদা টি-শার্ট পরা এক মধ্যবয়স্ক লোক পায়ের ওপর পা তুলে চা-সিগারেট খেতে খেতে কাকে যেন তার অনাগত দুর্ভাগ্যের কাহিনী বলেই চলেছে। ঠিক তখন একটা হাত লোকটার কাঁধে এসে স্থির হয়। বিরস মুখে দূরে বসে থাকি আমি। খুব ক্লান্ত দেখায় আমাকে। নদী ও নৌকার উত্তাল সঙ্গম আমার হৃদয়ে শীত জাগায়। আমি বন্ধ চোখে সঞ্জীব চৌধুরীর হাত ধরি।
‘বর্ষা দেখাও গ্রীষ্ম দেখাও
শীত বসন্ত শরৎ দেখাও
স্বর ব্যঞ্জন বর্ণ শেখাও
ওম ছাড়া শীত মরে না
ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও
করি প্রেমের তরজমা।’