× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিল্প মানেই প্রতিরোধের কর্মযজ্ঞ - জ্যঁ-লুক গোদার

ভূমিকা ও অনুবাদ : রুদ্র আরিফ

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৪০ পিএম

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:১৫ পিএম

জ্যঁ-লুক গোদার

জ্যঁ-লুক গোদার

জ্যঁ-লুক গোদার [৩ ডিসেম্বর, ১৯৩০-১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২]। ফ্রেঞ্চ-সুইস মাস্টার ফিল্মমেকার। তর্কসাপেক্ষে ‘ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ’ ফিল্ম মুভমেন্টের প্রধান যোদ্ধা। জগতের সবচেয়ে প্রভাববিস্তারী ফিল্মমেকারদের অন্যতম। আমৃত্যু বিপ্লবী; তবে নিজস্ব পন্থায়। ৯১ বছর বয়সে, আইনের সুবিধা নিয়ে, স্বেচ্ছামৃত্যুর মাধ্যমে জীবনকে জানিয়েছেন বিদায়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমা বানিয়েছেন। শুরুর জীবনে ছিলেন সিনেমা-সমালোচক। প্রচুর লেখালেখি করেছেন। একজীবনে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন অনেক। সবই একেকটি গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট হিসেবে গণ্য। বলা বাহুল্য, কালোত্তীর্ণ। ২০০১ সালে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ফিল্ম ‘ইন প্রেইজ অব লাভ’ ঘিরে দুটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফরাসি সাংবাদিক ও লেখক মিশেলা অ্যালবার্স্তাদকে। ইউরো স্ক্রিনরাইটারস ফিল্ম জার্নাল ও বিবিসিতে প্রকাশ পাওয়া সেই দুই সাক্ষাৎকার একত্রে বাংলা অনুবাদে হাজির করা হলো এখানে...


মিশেলা অ্যালবার্স্তাদ : ‘ইন প্রেইজ অব লাভ’-এর আবির্ভাব কীভাবে?

জ্যঁ-লুক গোদার : শিরোনামসহকারে, একটি অস্পষ্ট আইডিয়া ছিল আমার। তথাকথিত প্রেমকাহিনী হিসেবে সাধারণত পরিচিত, এমন কিছু ছিল মাথায়। আমার আইডিয়াটি ছিল একে পাল্টা-কালানুক্রমিকভাবে সম্পৃক্ত করার। সেই আইডিয়ার কিছুটা রয়েই গেছে। সমাপ্তি দিয়ে সূচনা ঘটানোর কথা ভেবেছিলাম; যেমন ধরুন, চার দিন আগে, তারপর ছয় মাস আগে, এক বছর আগে... এভাবে ক্রমাগত পিছিয়ে সূচনাবিন্দুতে উপসংহার টানা। পরবর্তীকালে কিছু থ্রিলার অনুষঙ্গ জুড়ে দিয়েছি ঠিকই, তবে তা পরিণত হয়েছে সর্বনাশে, দুঃস্বপ্নে। এরপর যুগলদের ঘিরে বোঝাপড়ার আইডিয়া মাথায় এলো।

আর,  চূড়ান্ত ফিল্মটিতে রয়েছে তিন যুগল?

গোদার : হ্যাঁ; এ তিন যুগলের ভাবনা ছিল আমার; তবে অনেকটা মুহূর্তেই প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর হোঁচট খেয়েছিলাম। আমি একটি অসঙ্গত কাহিনী দিয়ে ফিল্মটি শুরু করেছিলাম এবং সমাপ্তিতে ভেবেছিলাম, আমার পক্ষে, কারও পক্ষেই কোনো প্রাপ্তবয়স্ককে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের শুধুই কাহিনীর গঠনবিন্যাসের মধ্যে বোঝাপড়া করা সম্ভব। রাস্তায় নামলে আপনি বলেন নাÑ ওই যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক যাচ্ছে। আপনি বলেন, ওই যে যাচ্ছে পল, ওই যে ফাবিয়ান, কিংবা ওই যে একজন উন্মাদ খুনি। আপনি একটি কাহিনী বলেন। অন্যদের সঙ্গে; তাতে তরুণ ও বুড়োÑ এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পেইন্টিংয়ের বেলায়ও ব্যাপারটি একই রকম। আপনি যখন কোনো প্রাপ্তবয়স্কের ছবি আঁকেন, তিনি একজন তাস খেলোয়াড়। একমাত্র উপন্যাসের পক্ষেই এটিকে টেনে বের করে আনা সম্ভব। (স্তেন্দালের) ‘দ্য রেড অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক’, (ফিওদর দস্তয়েভস্কির) ‘দ্য ব্রাদারস কারামাজভ’ কেবলই ছোট্ট কাহিনী নয়, বরং জুলিয়া রবার্টসের মুভিগুলোর মতোই বাস্তব গল্প।

অন্য ফিল্মমেকাররা হয়তো এর উল্টোটাই বলবেন : ‘তরুণ কিংবা বুড়ো লোকজন সম্পর্কে বলার কিছুই নেই আমার, বরং কোনো প্রাপ্তবয়স্ককে ঘিরে একটি কাহিনী শোনানোর আছে...’

গোদার : হ্যাঁ; এ কথা সত্য। কিন্তু মূলসূত্রের বাইরে গিয়ে আমি বরাবরই এমন কিছু বেছে নিই, যা নিয়ে অন্যরা কাজ করে না। অন্যরা করে না বলেই কাজটি করা বাকি থেকে যায়; তাই আমি সেটির চেষ্টা চালাই; যা ইতোমধ্যে করা হয়ে গেছে, সেগুলো আমার করার কোনো মানে হয় না।

প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার মধ্যে কি কোনো নির্দিষ্ট হাঙ্গামা রয়েছে?

গোদার : হ্যাঁ; এ ফিল্ম সম্পর্কে আপনার পক্ষে এ কথা বলা সম্ভব, এটি এমন কারও কাহিনী যে একজন প্রাপ্তবয়স্কে পরিণত হয়েছে।

(ফিল্মটিতে) বর্তমানকালকে সাদাকালোয় আর অতীতকে রঙিনে দেখানোর কথা কীভাবে ভাবলেন?

জ্যঁ-লুক গোদার : এটিকে কালানুক্রমিকভাবে দেখাতে চাইনি। নিজের বয়সের দিকে তাকিয়ে, একটি ন্যারেটিভ ফিল্মের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে গিয়েছিলাম, যেটি ইগ্লঁতিনা চরিত্রটি ও অন্যদের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এ অনুভূতি দেওয়ারই ইচ্ছা ছিল আমার। ফলে ভেবেছিলাম, নিউজরিলে যেমনটা দেখি, বর্তমানকে রঙিনে আর অতীতকে সাদাকালোয় দেখানোর এ সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য আইডিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করাই আরও বেশি যথাযোগ্য হবে। বিপরীতে, অতীতকে তীব্র করে তোলায় একটি উপায় খুঁজে পেতে চেয়েছিলাম আমি।

ইন প্রেইজ অব লাভ সিনেমার দৃশ্য

অতীত আসলে বর্তমানের ওপর ছায়া ফেলে- এতে কি এমন ছাপ পড়েনি?

গোদার : না। আমার ধারণা, রঙ আমাদের বেশ নিকটবর্তী। কেননা, এটি ফিল্ম প্রজেকশনের, আবেগাত্মকভাবে কথা বলার বর্তমান বাচ্য। (ফরাসি সাহিত্যিক মার্সেল) প্রুস্তের উপন্যাস আমার সব সময়ই প্রিয়। (‘দ্য ফিউগেটিভ’ উপন্যাসে) তিনি যখন আলবের্তিন চরিত্রটির কথা (ইমপারফেক্ট টেন্স বা) অসম্পূর্ণকালে বলেন, পাঠক এটিকে বর্তমানকাল হিসেবে অভিজ্ঞতালব্ধ হন। বিশেষ করে একজন কিশোর হিসেবে।

(আপনার) অভ্যস্ত ধরনের চেয়ে ‘ইন প্রেইজ অব লাভ’ তুলনামূলক অনেক বেশি কাঠামোবদ্ধ।

গোদার : এর কারণ, এটির জন্য প্রচুর সময় লেগেছে। আজব হলেও সত্য, আমার ফিল্মগুলোতে সব সময়ই একটি শূন্যস্থান থাকে; সিনেমার পর্দায় প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে। একে ঘিরে প্রচুর ফিল্ম-মন্দা খুঁজে নিই আমি। আর যেহেতু স্ক্রিপ্ট হলো একটি প্রাণের উচ্ছ্বাস, স্ক্রিপ্টটির শুটিংয়ের মাধ্যমে সেটিকে ঠিকই বাইরে বের করে ডিরেক্টর। তবে এ প্রক্রিয়ায় তিনি সিনেমাটিকে খুইয়ে ফেলেন। এর ফলে এখানে এক ঘণ্টার মধ্যে ব্ল্যাঙ্ক স্পেস ছিল। ফিল্মটির ঠিক এক ঘণ্টার মাথায় প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটে, আর ব্ল্যাঙ্ক স্পেস হাজির হয়। তবে এ বেলা এটি এভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং এর সঙ্গে যা কিছু জড়িত ছিল, সেগুলোও পেয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। এটি বয়সের কারণে, সময়ের কারণেও; অর্থাৎ ফিল্মটি বানাতে যে সময় আপনি ব্যয় করেছেন। সমস্যা হলো, এ ছিল একটি দীর্ঘ ও বিচ্ছিন্ন শুটিং, কয়েকটি ভাগে বিভক্ত; আর মিশ্রণ ছিল দুরূহ। এ ছিল ছেঁকে তোলার মতো ব্যাপার।

ফিল্মটি বানাতে এত বেশি সময় লাগল কেন?

গোদার : কারণ, আমি খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম; তবু যে করেই হোক চেষ্টা চালিয়ে গেছি। আসলে আপনাকে কাজটি স্রেফ করে ফেলতেই হবে এবং তারপর করতে হবে এডিট। ফিল্ম ব্যাপারটি কঠিনতর; কেননা, সময়, অর্থ, মানুষ ও মনস্তত্ত্বের সমস্যাবলিসহকারে এটি একেবারেই একটি সামাজিক দুনিয়া।

ফলে কোনো চিত্রশিল্পী কিংবা ঔপন্যাসিকের তুলনায় এ কথা বলা অনেক বেশি মুশকিল : ‘আমরা “এর” শুট করব, কিন্তু জানি, অন্য কোনো কিছুর শুটিংয়ে চলে যাব; তবু, আপনাকে “এর” ভেতর দিয়েই যেতে হবে, এটিই অনুশীলন। কোনো ভালো শট পাওয়ার জন্য নয়, বরং অনুশীলনের জন্য শুট করবেন আপনি। অনুশীলনের কারণ, দুই সপ্তাহ পরই আসছে আসল খেলা।’ এমনটা করা বেশ কঠিন; তার ওপর এ ব্যাপারে আপনি অবগত নন। তবে পরবর্তীকালে, এডিটিংয়ের সময় হুট করেই বলে উঠবেন : ‘এগুলো থাকবে, আর ওগুলো বাদ পড়বে।’ আর এ বেলা আমি বলেছিলাম : ‘এ তো অলৌকিক কাণ্ড!’

তার মানে, ফিল্মটির শুট বিভিন্ন ভাগে করা হয়েছিল। প্রথমে ফেব্রুয়ারিতে, তারপর সেপ্টেম্বরে। (ফ্রান্সের) ব্রিটানি অঞ্চলে। সেই মুহূর্তে আমি জানতাম না কী করতে চাচ্ছি। এ ছিল খানিকটা বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠার ব্যাপার। আমি সত্যিকার অর্থেই জানতাম না; তবে কিছু একটা শুনেছিলাম। ব্রিটানিতে আমি তখন পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাচ্ছিলাম। প্রচুরসংখ্যক ব্যক্তিগত বিষয় আশয় ছিল তাতে। কোনটি ব্যক্তিগত আর কোনটি ফিল্মেরÑ এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

মনে পড়ে, ‘জেএলজি/জেএলজিÑ সেলফ-পোর্ট্রেট ইন ডিসেম্বর’ ফিল্মটির শুটিং আমি খুব দ্রুত করেছিলাম। কেননা, একদিন চুক্তিপত্রটি পড়েছিলাম: ‘এক মাসের মধ্যে ডেলিভারি।’ কিন্তু ফিল্মটি ছিল আমাকে ঘিরে; এটি আমাকে জবাব দিয়েছে। অন্যদিকে, ‘ইন প্রেইজ অব লাভ’-এ আমাকে জবাবদিহি করতে হয়েছে ফিল্মটির কাছে; তবে বুঝে গিয়েছিলাম, এ ফিল্মকে আমিই বলছিলাম আমার কাছ থেকে জবাব নেওয়ার জন্য, এবং ব্যাপারটি আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না। তাই ব্রিটানিতে শুটিং করা অত সহজ ছিল না। এরপর আমি আনা-মারি মিভিলার ফিল্মে অভিনয় করলাম, যা আমার মনে প্রচুর ভালো অনুভূতি এনে দিয়েছিল। তবে সব কাজ চার মাসের মধ্যে গুছিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল আমাদের; এ কারণেই প্রোডাকশনটির কাজ খাপছাড়া হয়ে উঠেছে।

ফিল্মটি বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধ নিয়ে বোঝাপড়া করেছে। আমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানিদের প্রতিরোধ, আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, এবং নিশ্চিতভাবেই আপনার ফিল্মমেকিং স্বয়ং প্রতিরোধ...

গোদার : হ্যাঁ; শিল্পগত কর্মকাণ্ড মানেই হলো কোনো কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি কর্মযজ্ঞ। এটিকে আমি স্বাধীনতার কর্মযজ্ঞ বলব না; তবে প্রতিরোধের কর্মযজ্ঞ। একজন শিশুর জন্মগ্রহণ মানে হলো প্রতিরোধের একটি কর্মযজ্ঞ। তাকে নিজের দুই পায়ে ভর দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব দাঁড়াতে হবে। পশুদের এমনকি মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত সময়ে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে পড়তে হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রতিরোধটি এমনই এক বিষয়, যেটি ধরতে পারা আমাদের জন্য বেশ মুশকিল। মোটামুটি অর্ধশতাব্দী পরে, পিতা-মাতা প্রজন্মকে এড়িয়ে যাওয়ার মতো সময় পেরিয়ে এটি আবারও ফিরে এসেছে। পরবর্তীকালে ঢুকে গেছে পাঠ্যপুস্তকে আর মানুষের স্মৃতিশক্তির ভেতর। গেল শতাব্দীর মধ্যভাগের, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালটির প্রতি আমি বরাবরই বুঁদ হয়ে থাকি; এ ছিল আমার নিষ্পাপ কৈশোরের দিনগুলো, আর এ নিয়ে পরে অপরাধবোধে ভুগেছি।

(ফরাসি রাজনীতিক, সাংবাদিক ও ফ্রেঞ্চ রেজিস্ট্যান্সের সদস্য) ইমানুয়েল দেস্তিয়ে (দো লে ভিজেরি) একবার বলেছিলেন, প্রতিরোধকালের শুরুর দিকে একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত ছিল, যে সময়ে টাকা কোনো শেষ কথা নয়, বরং ছিল অজুহাত। কথাটি আমি বুঝতে পারি। যেন ফিল্ম বানানোর সময় আপনি আসলে কিছু একটা সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে সক্ষম; আর তাতে টাকা শেষ কথা নয়, বরং অজুহাত; শেষ কথা হলো প্রোডাকশনটি, যদি সেটি খাঁটি হয়ে থাকে। এরপর আসে অন্য খাতগুলো, যেগুলোতে ফ্রান্সে সবাই নিজেদের নাম কামানোর যোগ্য। ভাষা স্পষ্টভাবে তিনটি শর্তের বর্ণনা করে : প্রোডাকশন, ডিস্ট্রিবিউশন ও এক্সিবিশন। হলিউডে এখন আর কোনো প্রোডাকশন নেই, সবই ডিস্ট্রিবিউশনের হাতে চলে গেছে; যেটি নাচে এক্সিবিশন ও টেলিভিশন ব্রডকাস্টিংয়ের আঙুলের ইশারায়। টেলিভিশনে আর কোনো প্রোডাকশন নেই, সময়ে সময়ে সামান্য কিছু পকেটের কথা বাদ দিলে শুধুই নির্দিষ্ট স্পোর্টিং ইভেন্ট কিংবা সাক্ষাৎকার। তা ছাড়া, আমরা ওয়ার্ল্ড লাইফ ফিল্ম প্রোডাকশন বলি না; বলি ওয়াইল্ডলাইফ প্রোগ্রাম। টিভি নেটওয়ার্কের কথা আমরা বলি যেন কোনো ফুড ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের কথা বলছি। ড্যারিল (এফ.) জানুক ও লুইস বি মায়ারের মতো প্রডিউসাররা যেখানে বছরে ৪০টি ফিল্ম বানাতেন, তারা কোনো সমাবেশ লাইনে ফিল্ম বানাতেন না। আজকের দিনে এ কাজ বেশ কঠিন। (অটোমোবাইল কোম্পানি) রিনল্ট কারের বিজ্ঞাপনগুলো এটিকে এভাবে বলে। অতীতে তারা অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার বলায় অভ্যস্ত ছিল; আজকাল আমরা বলি, অটোমোবাইল ক্রিয়েটর।

ঠিক কোন পর্যায়ে আপনি বুঝতে পারেন, কোনটি কাজ করবে আর কোনটি করবে না?

গোদার : আপনি যদি লেখেন ‘এক চাঁদনি রাতে এসেছিল মেয়েটি,’ আর মুহূর্তেই কথাটি বুঝে ফেলা মুশকিল হয়, তাহলে ভালো কিছু হলো না। একে বোঝাতে আপনাকে যদি এর শুটিং করা লাগে, সে ভালো কথা নয়। এমনটা কখনও কখনও ঘটে। কিছু একটার শুট করলেন, ক্রু রয়েছে সেখানে, আপনি জানেন শুটিংটি বাজে হয়েছে, অথচ বলতে পারছেন না; ‘না, এ শুট আমরা করব না,’ তাহলে তো খুবই বাজে ব্যাপার। আপনার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট অনুভূতি রয়েছে, অথচ সেটা প্রকাশ করতে পারছেন না; কেননা, এ ব্যাপারে আপনি সুনিশ্চিত নন। সিনেমাও (এ রকমই), বাস্তব দুনিয়ার একটি অনুলিপি।

কখনও কখনও কোনো দৃশ্যের একটি টেকের জন্য আটটি টেকের শুট করতে হয়; এ আট টেক কেন নেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে আপনার যদি কোনো বোধ না থাকে, তা নিশ্চিতভাবেই একটি ভয়ানক লক্ষণ, একটি উপসর্গ। ফিল্মটি যদি ভালো হয়ে থাকে, তাহলে উপসর্গটিও সঠিক।

(ফিল্মটিতে) কখনও কখনও কিছু ইমেজ বারবার ঘুরেফিরে আসে; যেমন ধরুন সৈকতে ঢেউয়ের ভেঙে পড়া। এর কারণ কি কোনো কিছুর সময় আসাকে বিলম্বিত করা?

গোদার : হ্যাঁ; এ হলো টাইমফ্রেমের মধ্যে থেকে যাওয়ার ব্যাপার। সিনেমা হলো স্থান ও কালের একটি শিল্প; তবে তা কোনো গড়পরতা উপন্যাসের ন্যারেটিভ সময়ের নয়। ফিল্মে আপনাকে কিছু দিতে হবে ঠিকই, তবে সবার আগে গ্রহণ করতে হবে। দর্শক এখন আর দেন না; কেননা, টেলিভিশনের কারণে দেওয়া থামিয়ে দিয়েছেন তারা। এতে শুধুই রয়েছে গ্রহণের প্রান্ত।

কিছু কিছু শটে ফ্রিজ ফ্রেম ব্যবহার করেছেন; যেমন ধরুন, একটি শটের শুরুতে আপনি ভাবছেন, যেন কোনো পেইন্টিং দেখছেন।

গোদার : আমরা যখন (ইমেজগুলো) থার্টি ফাইভ মিলিমিটারে ট্রান্সফার করেছি, এ ইমেজকে ফিক্সড করে দিতে ভালো লেগেছে আমার; ফলে এর খানিকটা ব্যবহার করেছি। তবে কী করছি, তা না বলেই একে কাজে লাগিয়েছি। যদি ভাবতাম এটি দেখতে কোনো পেইন্টিংয়ের মতো, তাহলে এ শট রাখতাম না। কোনো কিছুকে উদ্দেশ্যমূলক দেখাচ্ছে মনে হওয়া ভালো কিছু নয়। তবে যে মুহূর্তে অনুভব করবেন মুখের কথার আগে কোনো কিছু জুড়ে দেওয়া সম্ভব, যে মুহূর্তে আপনি কোনো আইডিয়ার সন্ধান পাবেন, তখন খুশি লাগবে আপনার।

আপনি বলে থাকেন, কোনো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় গোদারকে দেখতে পাওয়া আপনার ফিল্মের জন্য ক্ষতিকর।

গোদার : এ আমার বিশ্বাস। এটি ফিল্মকে সাহায্য করতে পারবে বলে মনে করি না। কোনো ফুটবল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে বলের ছবির বদলে তারা কেন (জিনেদিন) জিদানের ছবি ছেপে দেয়, আমি ঠিক বুঝতে পারি না। আমার মতে, তারা যখন গোদারকে নিয়ে কথা বলে, আমি আমার বাবার কথা ভাবতে থাকি। গোদার ছিল তার নাম; না, তার নয়, তার বাবার নাম।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা