× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অন্য এক হেমন্ত

আলফ্রেড খোকন

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১১ এএম

আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৫১ পিএম

আলোকচিত্র : আক্কাস মাহমুদ

আলোকচিত্র : আক্কাস মাহমুদ

প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ পেতে চাইলে আপনি আসুন হেমন্তনির্ভর বাংলাদেশের গ্রামে, আপনাকে আসতেই হবে। নইলে নগরে বসে হেমন্তের স্বাদ শুধু মেসেঞ্জারের মধ্যেই পেতে হবে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। যদিও যা অবস্থা, তাতে আগামীতে হেমন্তকে মেসেঞ্জারে কিংবা ফেসবুকের পোস্টেই দেখা যাবে বলে মনে হচ্ছে। এখন যেমন বর্ষা আসে অ্যানিমেশনে, চিত্রকরের পেন্টিংয়ে। তাতে কি ভেজা যায়! ভিজলে ঠান্ডা লাগবে, জ্বর আসবে, জ্বর এলে ডেঙ্গুজ্বর চলে আসতে পারে! ফলে চিলেকোঠায় বসে যুবক তার প্রেমিকাকে বর্ষার ছবি তুলে মেসেঞ্জারে পাঠায়, কিন্তু বৃষ্টিতে সহসা ভিজতে বেরোয় না। গ্রীষ্মে ঝড় আসবে, যেকোনো গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়তে পারে। আবার বজ্রপাতও মাথায় পড়তে পারে। শীতের সমস্যা তো আরও ব্যাপক। যার গরম কাপড় নেই সে-ই শুধু শীত টের পায়। শরতে থাকে ভ্যাপসা গরমÑ অসহনীয়। শুধু কাশফুল আর শাদা মেঘ খেয়ে বাঁচা যায় না। কিন্তু হেমন্ত সব ঋতু থেকে আলাদা, যদিও সময়ের হাত ধরে হেমন্ত তার রঙ কিছুটা বদলায়। অবশ্য প্রকৃতি বদলায় না, আমরা প্রকৃতিকে বদলাতে বাধ্য করি!

হেমন্ত আমার প্রিয়, নানাভাবেই সে কথা নানান রূপে বলেছি, পড়ে নিও। সে এক ধরনের দার্শনিক ঋতু। চারদিকে এমন শান্ত ও স্নিগ্ধতার আবেশ, যেখানে জীবনের উৎসব আছে, উদ্‌যাপন আছে। কিন্তু সবকিছু ঘটা করে করতে হবে, এমন নয় সে। তার নিস্তব্ধতার মধ্যে শব্দেরা খেলা করে। সে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে, গালে হাত দিয়ে চলে যায়; যদিও এক জীবন আরেক জীবনকে দেখে ভাবে খুব প্রাচুর্যময়; জীবন এসে আরেক জীবনের ওপর তার ভার বিছিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে চলে যায়। কারণ হেমন্ত তার ভার নিঃশব্দে শীতের কাছে দিয়ে ধীরে চলে যায়, আবার আসবে বলে।

হেমন্তে এমন এক চিরকালীন বাংলাদেশ ফোটে, যার তুলনা হেমন্তই। ষড়ঋতুর অন্য পাঁচটিতে আপনি যেকোনো এক ধরনের অভাব বোধ করবেনÑ কী যেন নেই! কিন্তু হেমন্তের মধ্যে সব পাওয়া একাকার হয়ে আসে। শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডার প্রকোপ। গ্রীষ্মে অতিরিক্ত গরম। বর্ষায় অতিরিক্ত বৃষ্টি। শরতে অতিরিক্ত শাদা মেঘের ওড়াউড়ি। কিন্তু হেমন্ত সবার থেকে আলাদা; এ কারণে যেন কোথাও কোনো অতিরিক্ত শব্দটিকে জোর করে বসাতে হয় না। অতিরিক্তহীনতার লাবণ্যে ঘেরা হেমন্ত নৈঃশব্দ্যের মতো আসে, আবার নৈঃশব্দ্যে মিলিয়ে যায়। হেমন্ত এমনই স্নিগ্ধরূপে আমাদের আমন্ত্রণ করে, যেখানে জোরাজুরি নেই, চাপাচাপি নেই, গা ঘেঁষাঘেষি করে বসতে হয় না। যদিও শীতে গা ঘেঁষাঘেষি করে বসতে পারায় আনন্দ লাগে। কিন্তু তাতেও আছে প্রকারভেদ। যেমন যার অন্য কোনো গা নেই, তার তো আনন্দ লাগবে না!

হেমন্তের শেষে শীতের শুরুতে গাছেদের পাতা ঝরে। ঝরাপাতার বোঁটায় গাছেদের শাখার বেদনা কি ঝরে যায়? যায় না। পাতার সঙ্গে বোঁটার বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা লেগে থাকে। উভয়ের বুকের মধ্যে তাই হুহু করে, এ হুহু করা বুক সৃষ্টি করে হেমন্ত। কিন্তু এ হুহু করাকে আমরা কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারি না; হেমন্ত পারে। কিন্তু সে করে না। যে পারে অথচ পারার ক্ষমতা দেখায় না সে-ই হেমন্ত। ফলে হেমন্ত এমন এক অনিবর্চনীয় ঋতুর নাম, যে ঘাসের ডগায় শিশিরমুকুট হয় সারারাত ধরে, আর সকালবেলায় নিঃশব্দে ঝরে পড়ে মুকুটবিহীন নৃপতির মতো, মাটিতে মিলিয়ে যায়।

হেমন্তকে মনে হয় গালে হাত দিয়ে বসে থাকা একজন কবি, সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো। যে জানে জীবন এমন প্রচুর ও প্রচণ্ডময়; অথচ তাকে চলে যেতে হবে। হেমন্তরা চিরকাল পাতা ঝারার মতো নিঃশব্দে চলে যায়। কিন্তু পাতার সঙ্গে বোঁটার যে অমূল্য জীবন তারা রচনা করেÑ সংগ্রামে, মানুষের মুক্তির আশায়...।

দুই হাজার চব্বিশের হেমন্ত এমনই আলাদা; যেন আর এ হেমন্ত আসেনি আগেÑ দেয়ালে গ্রাফিতির ওপর শিশির পড়ছে চুইয়ে, আবারও অনাগত বিপ্লবীদের হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা