কবীর হোসেন
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৬ এএম
পত্রিকার শব্দগুলো যতই কালো মনে হোক
তার অভ্যন্তরে লাল রক্ত
মনোযোগ দিয়ে চোখ রাখলে পাতাজুড়ে তৈরি হচ্ছে
আবু সাঈদের অবয়ব, স্পষ্ট হচ্ছে মুগ্ধ।
প্রতিটি আলাদা আলাদা খবরে
ক্রমাগতভাবে উঠে আসছে অন্ধ হয়ে যাওয়া তরুণ-তরুণী
শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের চিরবিচ্ছেদ।
পা নেই অনেক শব্দের, অনেক শব্দ চিরতরে অন্ধ
অনেক শব্দ তারুণ্যের রক্তে জবুথবু
মায়েদের চোখের জলে ভেজা।
সমাজমাধ্যম থেকে এডিট ছাড়া পুলিশের গুলি এসে
লাগছে বুকে
ভেসে যাচ্ছে উত্তরা, রামপুরা, সায়েন্সল্যাব, শনিরআখড়া।
আদতেই দুই হাজার চব্বিশের জুলাই থেকে
লাল হয়ে গেছে বাগানের সব ফুল
মানুষের স্বর থেকেও বেরোচ্ছে লাল আওয়াজ
ব্যাংকে জমানো মানুষের রক্ত খেয়ে
উড়ে গেছে শকুন-শকুনির দল।
বকেয়া বানানের জন্য কবিও উত্ত্যক্ত করবে না নারীকে
বাংলাদেশবিরোধী হবে না তার আগামী দিনের শব্দরা।
সেনানিবাস থেকে ভেসে আসছে হারমোনিয়ামের সুর
ধ্বনিত হচ্ছে খাঁটি সমরবিদের কণ্ঠে :
‘আমিতো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার ওপরে পড়েছে’
গানে গানে জওয়ানেরা বুনে যাছে দেশরক্ষার কৌশল।
পাখিরা ভাবছে বিপুল সন্তানের স্বপ্ন
যেন পরবর্তী যুদ্ধে তারাই নেতৃত্ব দেবে
বাংলাদেশ আবার হয়ে উঠবে কলকাকলিমুখর।
জেগে উঠেছে তৃণলতা
শরীরের জল ঝেড়ে হংসকুল প্রকাশ করছে মুক্তির আনন্দ
পদ্মা মেঘনা যমুনা থেকে আনন্দ বিহ্বল স্রোত এসে
প্রাণ সঞ্চার করছে মরা বুড়িগঙ্গায়।
যে তরুণ-তরুণীরা নাওয়াখাওয়া ভুলে
দিনরাত নিমগ্ন ছিল ল্যাপটপ-মোবাইল স্ক্রিনে
তারাই সামলাচ্ছে ট্রাফিক
রাস্তার ধুলো মুছে পরিষ্কার করছে মানুষের মন।
রিকশাওয়ালারা স্যালুট দিচ্ছে তাদের
কথা না বলতে বলতে যারা বোবা হয়ে গিয়েছিল
তাদের কণ্ঠ চিড়ে বেরিয়ে পড়ছে লাল সূর্যের তেজ
দেশের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত হয়ে সে কণ্ঠ দেশে দেশে।
চায়ের খুপরি থেকে বিত্তবানের কফিশপেও
মানুষ লাল এখন
সাধারণ সভা থেকে জাতিসংঘ
বাংলার লালে লাল।
দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারবিহীন গ্রাফিতির লাল
হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান।