× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কবিতা যেন পায় পরিপূর্ণ ধ্যানের জ্যোৎস্না, জল ও প্রয়োজনীয় অন্ধকার

স্বরলিপি

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৮ এএম

চিত্রকর্ম : আলপ্তগীন তুষার

চিত্রকর্ম : আলপ্তগীন তুষার

কবি শামসুর রাহমানের কথা ধরে শুরু করি, ‘কখন যে কী করে একটা শিল্পকর্ম তৈরি হয়ে যায়, অনেক সময় স্বয়ং শিল্পীও ঠিকঠাক বলতে পারেন না।’Ñ কবিতা ও কবিতাভাবনা সম্পর্কে মন্তব্যটি আমার কাছে একেবারে ঠিক মনে হয়। আমার কবিতার বই দুটিÑ ‘মৃত্যুর পরাগায়ন’ ও ‘আয়ুর আমিষ’। এই দুটি বই আমাকে দুই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। মনে হয়, গভীর বেদনাবোধ থেকে লেখা একটি কবিতাও কবিকে আনন্দের জোয়ারে ভাসাতে পারে। যেন এইমাত্র কোনো কিশোরী স্কুল থেকে ছুটি পেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ির দিকে পাল্লা দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে সে কোনো গল্প করে, তারপর গল্পটি শেষ হয় না, কিন্তু রাস্তা শেষ হয়ে যায়। শেষ না হওয়া গল্পের রেশ নিয়ে দিনটি কেটে যায় আবার পরদিন সেই আনন্দ তাকে স্কুলে যেতে উৎসাহ দেয়। এভাবে একের পর এক গল্প যাওয়া-আসার পথে পথে, টিফিনের ফাঁকে, বেঞ্চিতে, দেয়ালে, ভাঙা জানালায়, স্কুলমাঠের গাছের ছায়ায় সে বলে আর শোনে, শোনে আর বলে। কখন যেন ওই কিশোরী বড় হয়ে যায়! কিন্তু সে গল্প বলা আর শোনার যে মায়া জড়ানো স্মৃতি, সে ভোলে না। একেকটি কবিতার কাছে কবি এভাবে আত্মসমর্পণ করেন। কবিতা জন্ম ও মৃত্যুর ছায়ায় রচিত হয়। 

আবুল হাসান যেমন লিখেছেন, ‘গোলাপের নিচে নিহত হে কবি কিশোর আমিও ভবঘুরেদের প্রধান ছিলাম’। এই কবি স্বীকার করেছেন কবিতা হলো কবির প্রবণতা। বলে-কয়ে হয় না। কিন্তু অভ্যাসে আর চর্চায় এই প্রবণতাকে এগিয়ে নিতে হয়। অফুরন্ত কোলাহল জমে যে নির্জনতা তৈরি হয় সেই নির্জনতা কেটে কেটে ‘অক্ষরে’ আর ‘না-অক্ষরে’ লেখা অনুভূতি হয়ে উঠতে চায় কবিতা। কবিতা একটি শব্দ থেকে অন্য শব্দে যাওয়ার আগে যে শূন্যস্থানটুকু পায় সেখানেও প্রেম, পূর্ণতা, জীবন, যৌনতা, সময় ও সভ্যতাকে দেখিয়ে দিতে পারে। কবিতা হলো সূক্ষ্মবোধের যাত্রা। কবি একটি কবিতা লিখতে বসে বোধগুলোর অবাধ স্বাধীন হতে দেখার আনন্দ উদযাপন করতে পারেন। তা যদি গভীর ক্ষত দিয়ে তৈরি হয় তবুও। আমার কাছে মনে হয়, কবিতা কবির কাছে একান্ত জটিল বিমূর্ত চিত্রকল্প। কবি এই চিত্রকল্প যেভাবে দেখেন অন্যরা সেভাবে নাও দেখতে পারে। বেশিরভাগ সময় তা দেখা যায় না। কবিতার নৈর্ব্যক্তিক হয়ে ওঠার অধিকার আছে। সেজন্যই পাঠকের বোঝাপড়া কবির একটি সাধারণ কবিতাকে অসাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। কবিতায় শূন্যতা রাখার সুযোগ অনেক বেশি। সেজন্য কবিতা পাঠককে অধিক ভাবনার জায়গা তৈরি করে দিতে পারে। কবিতা হাসি ও কান্নার মতো সংক্রামক। 

চলতে চলতে আমরা জীবনধারণের অনেক অনুষঙ্গ হারিয়ে ফেলি। যেমন টেপ রেকর্ডারে গান শোনা কিংবা বাড়ি ফেরার মাটির রাস্তা। তখন হয় কিÑ ওই টেপ রেকর্ডারের সৌন্দর্য ও হারানোর বেদনা কবিতা ভেতরে তুলে নেয়। অনেক সময় এই বেদনার সমকক্ষ পেলেই কবি টেপ রেকর্ডারের জায়গায় বসিয়ে দিতে পারেন অন্য শব্দ। আমার মনে হয়, কবিতা লেখার জন্য জীবন পড়া প্রয়োজন। চোখের সামনে হেঁটে যাওয়া মানুষের আসা ও যাওয়া পড়া প্রয়োজন। শীতের পুকুরে মাছেরা কেন জলের উপরিভাগে চলে আসে সেটা পড়া প্রয়োজন। কেন সাদা ফুলেরা বেশি গন্ধপ্রবণ হয় সেটা বোঝা প্রয়োজন। এদিকে কবির বোঝাপড়াগুলো সময় ও বিষয়ের সঙ্গে পাল্টে পাল্টে নেওয়া যেতে পারে কবিতায়।

কবি হেলাল হাফিজের ভাষায়Ñ কবিতা যদি শিল্পগুণসমৃদ্ধ হয়, তাহলে সেটারও প্রাণ থাকে। শেষে বলা যায়, পরিপূর্ণ ভালো না বেসে কবিতার একটি শব্দও কবির হত্যা করা, গোপন করা বা সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। কিন্তু এসব ঘটনা কবিকে ঘটাতে হয়। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা