× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাওয়ার

পলি শাহীনা

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৪ ১০:৩০ এএম

চিত্রকর্ম : সানজিদা আক্তার

চিত্রকর্ম : সানজিদা আক্তার

এ পড়ন্ত বেলায় হাওয়া যতই লাল-নীল স্বপ্ন ওড়াতে চাইছে মনের চিলেকোঠায়, আমার একদম ভালো লাগছে না। নাজমা খালা একনাগাড়ে কানের কাছে বলেই যাচ্ছিলেন তার কথা। এবার কোনোমতে তাকে থামাতে পারলাম না। বুঝলাম, ভদ্রলোক ভালোমানুষ, সবকিছু আছে, কিন্তু আমার যে এখন মন-সময় কোনোটাই নেই। পৃথিবী অনেক এগিয়েছে, দিন বদলেছে, মানুষ পাল্টেছে, শুধু আমাদের মা-খালাদের চিন্তা একই রয়ে গেছে। আকাশটা চিরকালই তাদের চোখে নীল, আর মাটির রঙ বাদামি। আকাশটা হাঁপিয়ে উঠলে যে কালো হয়, বাদামি মাটি পুড়ে ছাই হয়, এটি তারা খেয়াল করেন না, কিংবা এ বিচিত্র জগতের অংশ হয়ে উঠতে পারেননি এখনও। মাঝে মাঝে মনে হয় শুরু থেকে আবার যদি শুরু করা যেত! সেই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কাছে আসা। একদা সময় কত বর্ণিল ছিল, সে সময় কখন যে আমাকে ছেড়ে গেল টেরই পেলাম না দায়িত্ব নামক দানবের তলে চাপা পড়ে। জীবনের একটা হৃদয় আছে, সে হৃদয় কত রুমঝুম সুর তুলে কোনো সাড়া না পেয়ে হারিয়ে গেছে। কান পাতলে কখনও কখনও দূর কোথাও থেকে এখনও সে সুর যদিও শুনি, ধরতে পারি না। নিজ হৃদয়টাকে আজ বহুদূরের মনে হচ্ছে।

মেঘ জমে, বৃষ্টি হয়, রোদ ওঠে, আবার মেঘ করে। সবকিছু ফিরে ফিরে আসে, শুধু সময় ফেরে না জীবনের কাছে। বর্তমান সময় আমার কাছে ঝরা পাতার মতো বিবর্ণ, শুকনো। সময়ের চেয়ে দামি আসলে কিছুই নেই। সময়ের কথা ভেবে বুকের ভেতরটা কেমন দুমড়েমুচড়ে উঠল। মনে হলো দৌড়ে চলে যাই বাসায়, পারি না, মায়ের মতো যাকে সম্মান করি সেই নাজমা খালার মুখটা ভেবে। আটত্রিশ বছর বয়সে ক্যাফেতে বসে অপরিচিত কারও জন্য অপেক্ষা করা, দেখা করা, চোখে চোখ রাখা, কোনোটাই ইচ্ছে করছে না। আদতে আজকাল কারও সঙ্গে কথা বলতেই মন সায় দেয় না। শামুকের মতো ঘরের এক কোণে পড়ে থাকতে ভালো লাগে। মা গত হওয়ার পর ছোট ভাইবোন, খালার সঙ্গেই কথা হয় হাতে গোনা, একজন অজানা মানুষের সঙ্গে কী কথা বলব, ভেবেই অস্থির লাগছিল। অথচ, আগে আমি প্রচুর কথা বলতাম, কিংবা বলতে বাধ্য ছিলাম। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর তার বড় সন্তান হিসেবে মায়ের সঙ্গে সংসারের হাল ধরা, টিউশনি, ছোট ভাইবোনের বিয়ে দেওয়া, ঘরে-বাইরে দৌড়াদৌড়ি, বাজার করা, সংসারের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়াসহ সবকিছুতে যুক্ত হতে হয়েছে, কথা বলতে হয়েছে। সেই মানুষটা আমি আজ আর নেই। এখন কড়া লিকারের দুধ চায়ের জায়গায় রঙ চা প্রিয় হয়ে উঠেছে।

দিন কয়েক ধরে বৃষ্টিবাদলা হচ্ছে। ক্যাফেটা যেন শান্ত নদী, মানুষজন খুব একটা নেই। একা একটা টেবিলে বসে থাকতে নিজেকে বেমানান লাগছে। আসলে দোষটা আমারই, এখানে আসাটাই ঠিক হয়নি। এখন সঙ্গোপনে নিজের সঙ্গে নিজে বিদ্রোহ করি। সব সময়ের মতো এবারও খালাকে বুঝিয়ে ভদ্রলোককে না বলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, সফল হইনি। খালা যে তার মধ্যে কী পেয়েছে জানি না।

মানুষ আজকাল আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। ভালো লাগছে ক্যাফেতে ভিড় নেই দেখে। প্রায় জনশূন্য ক্যাফেতে বসে ধোঁয়াওড়া ভ্যানিলা কফিতে চুমুক দিতে দিতে বৃষ্টি দেখি। বৃষ্টিতে যদিও ভোগান্তি রয়েছে, তবু বৃষ্টি আমার সব সময় প্রিয়। এমন মায়াভরা বৃষ্টি, এমন মায়াভরা শীতল চরাচর, দুদ্দাড় হাওয়ার পরশে সমস্ত উৎকণ্ঠা ভুলে প্রাণে আরাম লাগে। ছোটবেলায় ঘুম ভেঙে যেদিন দেখতাম আকাশ ছেয়ে আছে কালো মেঘে, স্কুলে যেতে হবে না ভেবে খুব আনন্দ হতো। বড়বেলায় ঠিক উল্টোটি ঘটেছে। অঝোর বৃষ্টিতে বেরিয়ে পড়েছি বন্ধুদের সঙ্গে, ফাঁকা রাস্তায় হেঁটেছি, গলা ছেড়ে আব্বাসউদ্দীনের মতো গেয়েছি ‘আল্লা মেঘ দে, পানি দে’। আনন্দের ধরন বদলালেও মেঘবৃষ্টি জীবনভর আমার কাছে আনন্দের অনুষঙ্গ হয়েই রইল, এর ব্যত্যয় ঘটেনি আজও। রবীন্দ্রনাথের মতো আমারও মেঘের ওপর প্রচণ্ড লোভ রয়েছে। বাসায় থাকলে এখন জুত করে সোফায় শুয়ে নিশ্চিত প্রিয় কোনো বই পড়তাম।

বৃষ্টির গতি বাড়ছে। ভদ্রলোক মনে হয় আজ আর আসবে না। খালার কাছে শুনেছি তার নাম শোভন, ছবিও দেখেছি, কিন্তু ফোন নম্বর রাখিনি, ইচ্ছেও হয়নি। শুনেছি শোভন পেশায় শিক্ষক, পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করে, বিশেষ করে হতদরিদ্র শিশুদের পড়াশোনা শেখানোর প্রতি তার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। ধরে নিলাম সে কাজের কাজি, ব্যস্ত থাকবে, তো দেখা করার জন্য সময় দিল কেন? খানিক আগের বৃষ্টিস্নাত উৎফুল্ল মন পুনরায় বিগড়ে উঠছে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়ি। ঠিক সে সময় আমার সামনে একটি সাদা পালক এগিয়ে দিয়ে সে বলল, ‘আপনার জন্য কুড়িয়ে এনেছি আমার স্টাডি রুমের বারান্দা থেকে, কবুতরের পালক, আমার তিন জোড়া কবুতর আছে। ও হ্যাঁ, আমি শোভন।’

তার কণ্ঠস্বরে বেশ আকর্ষণ আছে। ফোনের গ্যালারিতে রাখা লাল গেঞ্জি পরা ছবিটি দেখি, সামনের মানুষটার সঙ্গে মিলিয়ে নিই। দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করার বিরক্তি ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করে সাদা পালকের জন্য ধন্যবাদ না দিয়েই বলি, বসুন প্লিজ। শোভন একগাল হেসে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, ‘আপনার জন্য বৃষ্টি নিয়ে এলাম, বৃষ্টি আপনার প্রিয় জানি।’ 

Ñকী করে জানলেন?

Ñনাজমা খালার থেকে জেনেছি।

Ñও।

আচমকা দেখি ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘এটাও আপনার জন্য।’ মেজাজ খারাপ হয়। ভ্রু কুঁচকে বলি, আমি কি বাচ্চা? কবুতরের পালক, চকলেট এসব কী?

বাচ্চারাই শুধু চকলেট খায়, এমন কথা কে বলেছে? আমার এক ষাটোর্ধ্ব স্বজন আছেন, নিজে চকলেট খান, অন্যকেও খেতে দেন। আকাশে মেঘ করলে তিনি বারান্দায় নেমে বেসুরো গলায় গাইতে থাকেন, ‘তুমি আমারি, তুমি আমারি, মম অসীমগগন বিহারী’। তার গান শুনে আমরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ি, বাড়ির ছাদে গিয়ে তার সঙ্গে গলা ফাটিয়ে গাই, বৃষ্টিতে ভিজি, হাসি, লাফাই, ফুটবল খেলি। কী যে আনন্দ হয়। আমার ওই স্বজনকে দেখেছি তীব্র উজ্জ্বল রঙের ফুল-ফুল ছাপের জামা পরতে, যে রঙ চারপাশে আলো ছড়াত। এমন কটকটে রঙ দেখে কেউ তাকে বয়সের কথা স্মরণ করালে ভীষণ খেপে যেতেন। তিনি বলতেন, ‘মনের রঙ শুকিয়ে গেলে জীবনের রঙ শুকিয়ে যায়। যতদিন বাঁচব, জুত করে বাঁচব।’ আমরা ধন্য এমন একটা মধুর জীবন পেয়েছি। বয়সের দোহাই দিয়ে আমরা আমাদের বন্দি করি, মনকে বিভ্রমে ফেলি, আনন্দ করতে ভুলে যাই, হাসি না, স্বপ্ন দেখি না, বিস্মিত হই না। সময়ের আগেই শরতের আকাশের মতো শুভ্রসুন্দর মনটাকে অনন্ত বেদনার ধূসর চাদর পরিয়ে দিই, এবং সেটি নির্বাচন করে ব্যক্তি নিজেই। চকলেট খাওয়ার জন্য শুধুই মন লাগে, আপনার মনে যদি চকলেটের জন্য জায়গা থাকে তো আর কিছুই লাগবে না।

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে শোভন থামে, আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। লক্ষ করি, একটা দৈবিক আলো খেলছে ওর চোখে। আমার কণ্ঠে জড়তা টের পাই। জড়তা ভেঙে বলি, জীবনের বৃহদাংশ পার করে ফেলেছি আমি। এ সময়ে এসে নরম কথার প্রেমে পড়াটা কঠিন হয়ে যায়। এ বয়সটা অদ্ভুত, এ বয়সটা আবেগমাখা হয় না। এ বয়সটা পাথরের মতো, সময় শুধু স্তরে স্তরে ধুলো জমায়। শোভন আমার মুখের কথা টেনে নিয়ে বলে, ‘আমি বেশ আগে এসেছিলাম, দূরের ওই টেবিলটায় বসে আপনাকেই দেখছিলাম। আপনি মগ্ন বৃষ্টিতে, আমি মগ্ন ছিলাম আপনাতে। আপনার নীল শাড়িতে মনে হয়েছিল শুষ্ক ক্যাফেতে শ্রাবণ নেমেছে। আপনি ভিজছিলেন, সঙ্গে আমি, সঙ্গে কদম ফুল, ঘুঘু, দোয়েল। হতাশা সব সময় মন্দ নয়, কিন্তু সব সময় জোর করে মনের জানালা বন্ধ করে দেওয়া খুব মন্দ বিষয়। মনের জানালা খুলে দিন; আলোর নাচন, পাখির গান, ফুলের ঘ্রাণ, নীলাকাশ, সবুজের হাসি দেখেন, দেখবেন খানিক আগের মতো মন আবার চাঙা হয়ে উঠবে। বয়সবিষয়ক স্থূল বিষয়টা নিয়ে মস্তিষ্কে দুশ্চিন্তার যে অযথা কাটাছেঁড়া করছেন, হতাশায় ডুবে আছেন, বিষয়টা অযৌক্তিক মনে হবে। আমি সামনে আসার পর আপনি জোর করে যতই মনের জানালা বন্ধ করতে চাইছেন ততই আপনার নীল শাড়িটা বৃষ্টির সুঘ্রাণ বিলিয়ে চলেছে। দয়া করে মনের মেঘ সরিয়ে দিন রঙধনুটা উঠতে দিন।

শোভন এবার অনেকক্ষণ ধরে চুপ হয়ে আছে, আমিও কোনো কথা খুঁজে পাচ্ছি না। বুকের ভেতর একটা অনির্বচনীয় ভালো লাগার অনুভূতির উদ্রেক হয়। ফোন গ্যালারিতে সেভ করে আনা লাল গেঞ্জি পরা ছবিটি আমার মনের দেয়ালে উজ্জ্বল আলো ফেলে, বুঝতে পারি। মেঘ, বৃষ্টি, শোভন সমান্তরালে ফল্গুধারার মতো বয়ে চলে আমার মনের ঘরে।

দিনের আলো যাই যাই করছে। বৃষ্টি তখনও অঝোরে পড়লেও আকাশ অনেকটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। শোভনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিকশায় চেপে বাসায় ফিরি। ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসানো বিভিন্ন রকমের ফুলের চারার যত্ন নিই। গাছগুলো হরেক রঙের ফুলে ভরে আছে, মুগ্ধ হয়ে দেখি। রুমের সবকটা জানালা খুলে দিই। ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগে। বাতাসের গায়ে কবিতার গন্ধ, কবুতরের ডানার গন্ধ, বৃষ্টির গন্ধ। অনুভব করি কত বিচিত্র গন্ধ নিয়ে শোভন পাশে না থেকেও যেন দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যাশাহীন জীবনে আমার এ ছোট্ট কক্ষে আজ হতাশ লাগছে না, দমবন্ধ হয়ে আসছে না। শোভন নেই, কিন্তু আছে। ফোন গ্যালারি, মনের গ্যালারি ছাপিয়ে শোভনের ছায়া পড়েছে আমার আপাদমস্তক। মায়া কোনো ব্যাকরণ মেনে জন্ম নেয় না। মায়া একবার জন্মালে এটি বাড়তেই থাকে।

ভেতরের কোলাহল আড়াল করে খালার রুমে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে চুলে বিলি কেটে দিতে বলি। খালার কোলে চোখ বুজে মায়ের ঘ্রাণ পাই। চুলে বিলি কাটতে কাটতে খালা বলেন, ‘তোর চোখেমুখে দীপ্তি, ভালো লাগছে। শোভনের সঙ্গে আলাপ হয়ে কেমন লেগেছে?’

কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘এ শহরে পাখির চাইতে, গাছের চাইতেও মানুষের সংখ্যা বেশি, তবু আমার একা লাগে কেন?’ শোভনকে কেমন লেগেছে ঠিক বোঝাতে পারব না খালা, কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমার আজ আর একা লাগছে না। বিশ্বাস করি তিনি আমাকে বুঝতে পেরেছেন, আমিও তার কথাগুলো বুঝতে পেরেছি, যেভাবে আগে ভাবিনি, বুঝিনি। ‘শোভনের মায়ের সঙ্গে কথা বলব?’ কোমলভাবে আমার থুতনি ধরে খালা জানতে চাইলেন। হ্যাঁ-সূচক সম্মতি জানাতে খালা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। আমার মাথাটা তার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন, শোভনের মা জাহানারা আমার বাল্যসখী। আমাদের দুই প্রাণের সখীর খুব শখ দেশটা ঘুরে বেড়াব, প্রাণভরে দেখব। আমি তো ফ্রি আছিই, তোদের বিয়ের পর জাহানারাকে বলব তোর হাতে ওর সংসারের চাবি মানে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়ে আমরা ঘুরতে বের হব।’

ক্ষমতা অর্থাৎ পাওয়ারÑশব্দটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে। এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ি। আমাকে হাঁপাতে দেখে খালা বিচলিত হয়ে ওঠেন।

কী হয়েছে রে মা?

ক্ষমতা খুব খারাপ জিনিস খালা।

কেন রে? আমি তো আনন্দে কথাটা বললাম!

ক্ষমতা নেই, আমি ভালো আছি।

কীসব বলছিস, তুই শান্ত হ মা। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

বাবা-মায়ের মতো আমিও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শর্তহীনভাবে শ্রদ্ধা করি। ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধু জাগিয়ে তুলেছেন, মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা এক মহান বীর, তিনি ধ্রুব সত্য, তিনি চিরসুন্দর। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ আমার কাছে সমার্থক শব্দ। আমি রাজনীতি ভালোভাবে বুঝি না, এই আমি অতিনগণ্য, অতিসাধারণ মানুষ, কিন্তু বাবা-মার মুখে বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনে শুনে তাঁর কন্যার প্রতি এবং মুক্তিযুদ্ধে নেত্বতৃ দেওয়া আওয়ামী লীগের প্রতি একটা মোহ তৈরি হয়। ক্ষমতা কীভাবে মানুষের ব্যক্তিচরিত্র বদলে দেয় সেটি আমি দেখছি গত জুলাই থেকে। ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে আত্মম্ভরিতায় এতটাই নিমজ্জিত হয়ে পড়েন, তিনি ছাত্রদের ভাষা, সাধারণ মানুষের আর্তনাদ কোনোটাই বুঝতে পারেননি, আমলে নেননি। কয়েকশ ছাত্র, নিরীহ শিশু, সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে তার একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতার কারণে। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। বঙ্গবন্ধু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আত্মোৎসর্গ করেছেন, সারা জীবন ন্যায়বোধ, অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর কন্যা শুরুতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা আন্দোলনের দাবি মেনে নিলে অকালে এত প্রাণ ঝরে যেত না, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাঁর কন্যার ক্ষমতার অপপ্রয়োগের জন্য অসম্মানিত, লুণ্ঠিত হতো না।

আমি ক্ষমতা চাই না খালা। শোভন একজন মানবিক মানুষ, তার সঙ্গে মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই।

খালা আমার চোখের পানি আঁচল দিয়ে মুছে দিতে দিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, কী হতে কী হইয়া গেল, দোয়া করি আমাদের দেশে শান্তি আসুক, মানুষ স্বস্তি পাক, ক্ষমতার অপব্যবহার আর না হোক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা