কবিতা
বেনজির শিকদার
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৬ এএম
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৩৭ পিএম
চিত্রকর্ম : মোহাম্মদ ইউনুস
দুঃখ আমার পায়ে পায়ে হাঁটে পিছু;
দুয়ারে দাঁড়িয়ে খিস্তি করে যে কত!
দুঃখের গাড়িটি চলে গেল ভিনদেশে
বুকেতে এখনও জমানো অরূপ ক্ষত!
বন্ধু হিসেবে ছিল যারা কাছাকাছি
সবাই এখন গাছের শুকনো পাতা।
জন্ম-জখমে মলিন হয়েছে শুধু
পাড়ার মোড়ের মুদিদোকানির খাতা!
সন্ধ্যাবেলার বকুলতলার ঘ্রাণে
ভেসে আসে মনে বিশাখার শ্যামামুখ।
মেয়েটার সবে বয়স বারো কী তেরো
রমণীর মতো ছিল শুধু দুটি চোখ!
আমার তখন চিনচিনে ব্যথা মনে
বেণুদার বাঁশি, সুরে সুরে যাই ভেসে।
উঁকি দিয়ে দেখি উলানের মধুরূপ
নদীর লোভেতে জলহারা অবশেষে।
জলের অতলে পায়ে পায়ে যাই হেঁটে
কানে ভেসে আসে কলহ-ক্রিয়ার সুর;
তামাটে মুখোশে রঙ মাখি চুপিচুপি
ছবিয়াল জানে, মাধুর্য বহুদূর!
সম্পর্কের সোনালি সিঁড়ির কোণে
জমেছে অনেক ধুলোবালি মাখা কালি;
মানুষ থাকেনি মানুষের কাছাকাছি
রাত ভার হলে এখনও লাগে যে খালি!
সন্ধ্যা গিয়েছে রাতের গভীরে মিশে
রাতের দুচোখে আঁধার জমেছে ধীরে।
চেনাপথ ধরে চলে গেছে মনপাখি
ভালোবাসামূলে আসেনি সে আর ফিরে!
দুঃখ আমার চারপাশ আছে ছেয়ে
সময়ই শুধু থাকেনি কোথাও থেমে।
জীবনের মধু, বিষ নামে করি পান
ভোরহারা পাখি সন্ধ্যাবেলার প্রেমে।
প্রকৃতির কাছে দাঁড়িয়েছি বহু দিন
রেখেছি চরণ মমতার ঘন ঘাসে!
সোনা সোনা ডাকে প্রখর হয়েছে ওম
ভেজা শিশিরের গন্ধ বাতাসে ভাসে!
ধানের ক্ষেতের আড়ালে দাঁড়ানো বধূ
মাখনের মতো পায়ের কাছেতে পাড়।
আঁচল জমিতে সবুজের ছায়ারূপ
কিষান চুমিছে উষ্ণ নরম ঘাড়।
উড়ে উড়ে ডাকে স্মৃতির বাবুই একা
বসে থাকি রোজ মন-জানালার পাশে।
উদাসী বাতাসে প্রণয়ের ঘন ঘ্রাণ
দুয়ার ভেজাতে আধ-ফোঁটা মেঘ হাসে!
চোখ-চত্বরে চারু ফুল-ফল ফোটে
আলপনা আঁকি বিষাদবালুর চরে।
সম্ভাবনার ঘূর্ণিচক্রে থেমে
মরে মরে যাই ভালোবাসাহীন জ্বরে!
কপালে রাখেনি আদরের হাত কেউ
যতনে ধরেছি বিদায়-পাখির ছায়া।
দুঃখের কাছেতে স্বভাব হয়েছে থিতু
জমিয়েছি রোজ শতজনমের মায়া।
জমিয়েছি ভ্রমে চেতনের দমে প্রেম
নেমে নেমে গেছি জলহীন নদে একা।
সবার দেখাই পেয়েছি তো কমবেশি
দুঃখের মতন মেলেনি কারও যে দেখা!
দুঃখ বুঝি মোর মর্মেই ছিল মিশে
কানের কাছেতে বাতাসের ফিসফাস!
প্রাণের নিকটে প্রাণের গল্প জমে
ঘরহারা আজ ভবঘুরে সন্ত্রাস!
ফসলের কাছে ফসিল হয়েছে ক্ষণ
স্মরণের কাছে ক্ষরণের মৃদুরেখা।
ঝরনা সাগর দেখেছি কঠিন ক্রমে
পাইনি কেবল মন-মুনিয়ার দেখা।
দুঃখ আমার পায়ে পায়ে হাঁটে পিছু
পাইনি কোথাও ছায়ারোদে মাখা ঘর।
পাইনি কোথাও মমতার মনলিপি
নিজের কাছেতে নিজেই এখন পর!