দ্য পটেটো ইটারস
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪১ এএম
‘অ্যারাডাপেলেটারস্’ বা ‘দ্য পটেটো ইটারস্’ চিত্রকর্মটির স্রষ্টা ডাচ্ শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। নেদারল্যান্ডসের নুয়েন শহরে বসে ১৮৮৫ সালে ছবিটি আঁকেন তিনি। এটি বর্তমানে রয়েছে আমস্টারডামের ভ্যান গগ মিউজিয়মে। ওই বছর মার্চ-এপ্রিলের দিকে বিষয়বস্তুর অনেক স্টাডি করেন প্রথমে। নতুন কাজের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে চিঠি লেখেন প্রাণের ভাই থিওর কাছে। এর আগেকার কাজগুলো নাকি তেমন ভালো লাগেনি তার। এপ্রিলের ১৩ তারিখ কাজে হাত দিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কাজটি শেষ করেন ভ্যান গগ।
‘কৃষকের জীবন হুবহু তুলে আনতে চেয়েছি এতে,’ জানান তিনি। ছবির জন্য রুক্ষ, কর্কশ এবং কিম্ভূত চেহারার কৃষক দেখে মডেল বাছাই করেন। ‘কাজটি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে লোকেরা ঘরের স্বল্প আলোয় আলু ভক্ষণরত মানুষগুলোকে দেখে বুঝতে পারে, এই হাতে কিছুক্ষণ আগে মাটি কর্ষণ করে তারা আলু ফলিয়েছে। আবার সেই ময়লা হাত ডুবিয়ে দিয়েছে খাওয়ার বাটির মধ্যে। এখানে আমি কায়িক শ্রমের মাহাত্ম্য বয়ান করেছি। তাদের ক্ষুণ্নিবৃত্তি নিবারণ করছে যে আহার্য, তা সৎপথে অর্জিত। আমাদের সভ্য জগতের প্রচলিত জীবনের বাইরে গিয়ে ভিন্ন এক জীবনের কথা বলতে চেয়েছি। আমি চাই না পেছনের গল্পটা না জেনে কেউ এ ছবির প্রশংসা করুক,’ লেখেন ভিনসেন্ট।
ছবিটি আঁকা শেষ হওয়ার দুই বছর পর বোন ভিলেমিনার কাছে এক চিঠিতে ‘দ্য পটেটো ইটারস্’ চিত্রকর্মটিকে নিজের সেরা কাজ হিসেবে অভিহিত করেন ভ্যান গগ। এদিকে ছবিটি শেষ হওয়ার পরপরই এর বিভিন্ন বাজে দিক খুঁটিয়ে বের করে তিক্ত সমালোচনায় লিপ্ত হন শিল্পীর বন্ধু অ্যান্থন ভ্যান রাপার্ড। উঠতি শিল্পী হিসেবে সদ্য তখন নাম কামাতে শুরু করেছেন ভ্যান গগ। বন্ধুর সমালোচনা গায়ে বিছুটি ধরিয়ে দিল তার।
ভ্যান গগের নামটি অনেকেই ইমপ্রেশনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে সমার্থক করে ফেলেন। যদিও তার সৃজনীর শেকড় ছড়িয়ে রয়েছে বস্তুত বাড়ির কাছে দ্য হেগ স্কুলের ঐতিহ্যবাহী কারিকুলামের গভীরে। তাকে বরং অনেক বেশি প্রভাবিত করেছে অ্যান্টন মভ কিংবা জোজেফ ইসরায়েলস্। ১৮৮৪ সালের গরমে থিওর কাছে লেখা পত্রে ভিনসেন্ট বলেন, তুমি যখন নতুন নতুন নাম বলো আমি বুঝি না তার তাৎপর্য। ওইসব বড় বড় বিশেষণের বিন্দুবিসর্গ আমার বোধগম্য হয় না। তোমার মুখে ইমপ্রেশনিজম কথাটা শুনে আমার মনে হয়েছে, এতকাল আমি শব্দটাকে যেভাবে বুঝতাম বিষয়টি আদৌ তা নয়। তবে আমি এটাও বুঝিনি, সে ক্ষেত্রে অন্য লোকেরাই বা শব্দটি থেকে কোন মানে খুঁজবে। নিজের কথা বললে, আমাকে বরং অনেক বেশি আকর্ষণ করে ইসরায়েলস্।
ভ্যান গগের বেশ আগেই কিন্তু একই বিষয়ে ‘আ পিজ্যান্ট ফ্যামিলি অ্যাট দ্য টেবল’ নামে এক চিত্রকর্ম এঁকে শেষ করেছিলেন ইসরায়েলস্। ১৮৮২ সালে থিওর কাছে লেখা চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে, ইসরায়েলসের কাজটি আগেই দেখেছেন ভ্যান গগ। তখনই এ বিষয়ে নিজের একটা সংস্করণ তৈরিতে অনুপ্রাণিত হন তিনি। কম্পোজিশনের দিক থেকে দেখলে ছবি দুটির মধ্যে সাদৃশ্য বিস্তর। দুটি ছবিরই প্রধান সাবজেক্ট পিঠ ফিরিয়ে বসে আছে দর্শকের দিকে।
১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে ক্রোলারমুলার মিউজিয়াম থেকে চুরি হয়ে যায় দ্য পটেটো ইটারস্, দ্য ওয়েভারস্ ইন্টেরিয়র এবং ড্রাইড সানফ্লাওয়ারস্। দ্য পটেটো ইটারসের মুক্তিপণ হিসেবে বিপুল অর্থ দাবি করে চোরেরা। কিন্তু দাবিমতো ২৫ লাখ ডলার সংগ্রহ করতে এসেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় তারা। পরের মাসে উদ্ধার করা হয় বাকি ছবি দুটি। ১৯৯১ সালে দ্য পটেটো ইটারসের পাশাপাশি ২০টি অত্যন্ত মূল্যবান চিত্রকর্ম লুট হয়ে যায় ভিনসেন্ট ভ্যান গগ মিউজিয়াম থেকে। অবশ্য ব্যাখ্যাতীত কারণে ডাকাতির মাত্র ৩৫ মিনিটের মাথায় চিত্রকর্মগুলো ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। পুনরায় মিউজিয়ামের দেয়ালে উঠে আসে মহান শিল্পী ভ্যান গগের মহান চিত্রকর্ম দ্য পটেটো ইটারস্।
[বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে মিলটন মোললা]