কবিতা
রাবাত রেজা নূর
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১ এএম
রাতের তারা দেখে জাহাজ চালাত ফিনিশীয়রা আর আমাদের বারবার ভুল হয়ে যেত পিতাপুত্রের অংকটা। পিতার চেয়ে পুত্রের বয়স বারবার বেশি হয়ে যায়; আর আমরা গুলিয়ে ফেলি তেইশ নম্বর উপপাদ্যকে তেইশ নম্বর তৈলচিত্র দিয়ে। তৈলচিত্রের কথা মনে হতেই মনে হয় তৈলচিত্রের ভূতের কথা।
ব্যাটা, তোর বাপের চেয়ে কি তোর বয়স বেশি? মাথা কি গোবরে ভর্তি? এই সহজ অংকটা মাথায় ঢুকে না? স্যার গর্জে উঠতেন। পিতাপুত্রের অংক তো দূরের কথা, আমাদের মাথায় ঢুকত নাÑ কেন অতগুলো কলা কিনত ওই লোকটা, কেন কাজ ফেলে বাকি লোকগুলো চলে যেত দূর ময়ূরভঞ্জের দেশে; কেন হারুন সাহেব অত কষ্টে সংসার চালাতেন, আর কেনইবা প্রতি মাসে ব্যাংকে জমা করতেন ৪২৫ টাকা। কী দরকার ছিল তার।
মামুন বলত, পুত্রের বয়স পিতার চেয়ে বেশি হলে আমি কী করব? এর উত্তর আমিও জানতাম না। একদিন অগোছালো হয়ে স্কুলে গেলাম, সে আমার শার্টের কলার গুছিয়ে দিতে দিতে বলল, কলারটা একটু গুছিয়ে রাখতে পারিস না? তারপর ফট করে একদিন মরেই গেল, কয়েক দিনের জ্বরে। তখন বুঝতে পারলাম, শুধু অংকেই পুত্রের বয়স বেশি হয়ে যায় না, কখনও কখনও বাস্তবেও পিতার চেয়ে পুত্রের বয়স বেশি হয়ে যায়। তার বাবার চোখের দিকে আমি সেই থেকে আর কোনো দিন তাকাতে পারিনি।
তারপর এলো অগ্রহায়ণের দিন; শহুরে হাওয়া গায়ে লেগে গেল। মহামতি আইনস্টাইনের সাথে দেখা হলো; আমরা বুঝতে লাগলাম তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র; লরেঞ্জ রূপান্তর ও থিউরি অব রিলেটিভিটি। প্রসঙ্গ কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে এই প্রথম আমরা অনুভব করলাম, সময় সংকোচনের ফলে কখনও কখনও পুত্রের বয়স বেশি হতে পারে।