× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নাসিবের ‘দুষ্টগ্রহ’ সাবেক সভাপতি শোভন

আলাউদ্দিন আরিফ

প্রকাশ : ১০ মে ২০২৪ ১২:১৭ পিএম

আপডেট : ১০ মে ২০২৪ ১২:২৪ পিএম

মির্জা নুরুল গনি শোভন। ছবি : সংগৃহীত

মির্জা নুরুল গনি শোভন। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশের (নাসিব) প্রশিক্ষণ ও মেলা আয়োজনসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় এক যুগ সভাপতির পদে থেকে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখানোসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ি সভাপতি মির্জা নুরুল গনি শোভন ও তার কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মির্জা নুরুল গনি শোভন বলেছেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিছু অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই এসব অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৩ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সভাপতি পদে ছিলেন মির্জা নুরুল গনি শোভন। কমিটিতে রয়েছেন ৫ জন সহসভাপতি ও ২৫ জন সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি পদে থেকে শোভন সরকারি-বেসরকারি অনুদানের কোটি কোটি টাকা অপচয় ও আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা যায়। নাসিবে প্রতি বছর এসএমই ফাউন্ডেশন ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ তহবিল দেওয়া হয়। লোক দেখানো প্রশিক্ষণ গ্রোগ্রাম করে ও ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে ওই সব অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, নাসিব দেশের ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সদস্য। বহিরাগত লোকজনের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের ভোটার বানানোর অভিযোগও রয়েছে এই সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া নাসিব সভাপতি একটি ‘অনারারি’ পদ। কিন্তু মির্জা নুরুল গনি শোভন প্রভাব খাটিয়ে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাতা হিসেবে নিতেন। বিভিন্ন দেশে মেলায় অংশ নেওয়ার নামে অবৈধভাবে অর্থগ্রহণ ও মানব পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধ। বিভিন্ন জেলায় কমিটি দিয়ে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়া ও নাসিবের মেলার নামে অর্থ আদায় করতেন তিনি। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় প্রসার ঘটিয়ে দেওয়া ও বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখানোসহ নানা উপায়ে অর্থ আদায় করা হতো। অ্যাওয়ার্ড বিতরণের নামে সদস্যদের কাছ থেকে নাসিবের কর্মকর্তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেন বলেও জানা গেছে। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, কিছুদিন আগে মির্জা নুরুল গনি শোভন ও নাসিবের সিনিয়র সহসভাপতি মজিবর রহমান বেলালের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার অভিযোগে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার বাদী ছিলেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি রূপখালী গ্রামের মোকছেদুল হক। বাদীর অভিযোগ, আমেরিকান বাণিজ্য মেলায় স্টল বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলে নাসিব সভাপতি ও সিনিয়র সহসভাপতি যৌথ স্বাক্ষরে তার কাছ থেকে চেক দিয়ে অগ্রিম টাকা নেন। পরে তাকে স্টল দেওয়া হয়নি। এমনকি চেকের টাকাও ফেরত দেয়নি। 

এছাড়া পঞ্চগড়ের শাহরিয়ার সজল নামে এক ব্যক্তি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও নাসিবের প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, পঞ্চগড় জেলা কমিটি দেওয়ার নামে বিকাশে তার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন নাসিব সভাপতি ও প্রটোকল অফিসার আবুল কাশেম। সজল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রটোকল অফিসার আবুল কাশেম আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, আপনি ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে দেন। আমি ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি দিয়ে তাকে ২৭ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাই। তারা কমিটি করে দেয়। তিনটা প্রশিক্ষণ আসে। আমি সর্বশেষ ট্রেনিংয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করি। কিন্তু তারা আমাকে ১ লাখ টাকা দেয়। আমাকে তারা লাস্ট ট্রেনিংয়ে অফার দেয় ৯০ জন সদস্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে পাবে। ৭৫ জন ট্রেনিং নেবে, কিন্তু আমরা ৯০ জনের টাকা তুলব। অতিরিক্ত টাকার অর্ধেক আপনি নেবেন; অর্ধেক আমরা নেব। আমি তাদের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হইনি। আমি চেয়েছি উদ্যোক্তারা উপকৃত হোক। পরে তারা আমাকে বাদ দিয়ে পঞ্চগড়ে গোপনে কমিটি করে দেয়। এরপর তারা আমাকে নানাভাবে নাজেহাল করার চেষ্টা করে। পরে আবার নতুন কমিটি দেওয়ার কথা বলে শোভন আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়। নেওয়ার পরও তারা আমাকে কমিটি দেয়নি। আমি বহুবার তাদেরকে কাগজপত্র পাঠিয়েছি। উকিল নোটিস দিয়েছি। কিন্তু কোনো সুরাহা করেনি। আমার নিচের পদে থাকা দুজন কিছু অর্থ আত্মসাৎ করে। আমি তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করি।’ 

সজল আরও বলেন, ‘শোভনের বয়স হয়েছে। সে আপদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ লোক। তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।’  

দুর্নীতি-সংক্রান্ত বিপুল অভিযোগ আসার পর সভাপতির পদ থেকে শোভনকে সরিয়ে নাসিবে প্রশাসক হিসেবে বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বর্তমানে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‍যুগ্ম সচিব সুব্রত কুমার দে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা নুরুল গনি শোভন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সরকারের একটি টাকাও আসেনি। এখানে এসএমই ফাউন্ডেশনের ট্রেনিংয়ের টাকা আসে। প্রতি ট্রেনিং বাবদ ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা আসে। প্রোগ্রাম আসে বছরে ১০ থেকে ১১টা। ট্রেনিংয়ে খাবারের জন্য জেলায় আমরা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা দিই। নিয়ম মেনে ভেন্যু চার্জ, অন্যান্য ব্যয় কেন্দ্র থেকে বহন করা হয়। ৫০০ টাকা করে এসএমই ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা। সেই টাকাও তারা দেয় না। সেটা কেন্দ্র থেকে ম্যানেজ করে দিতে হয়। এছাড়া ভ্যাট, ট্যাক্স আছে। কোনো প্রোগ্রামে হয়তো ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লাভ থাকে। প্রতিষ্ঠান চালাতে মাসে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিপিসির মাধ্যমে যেসব ট্রেনিং আসে, সেটাও একই প্রক্রিয়ায় হয়। আমাদের অনুষ্ঠান হওয়ার পর আমাদের নির্দিষ্ট কমিটি আছে, তারা যাচাই-বাছাই করে। পরে সেটা ইসি কমিটিতে আসে। ৫ জন সহসভাপতিসহ ৩৩ জনের বোর্ডে পাস হওয়ার পর জেনারেল মিটিংয়ে ওঠে। এখানে সভাপতি একার কিছু করার নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাস্তা থেকে সংগঠনকে বড় জায়গায় নিয়েছি। আমাকে বেতন দেওয়া হয় না। ৫০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হতো। বিভিন্ন লোকজন আসে, তাদেরকে আপ্যায়ন করাতে হয়। প্রতিদিন ৪/৫টা মিটিং থাকে। এগুলো মেইনটেন করার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হতো। আমি বিদায় নেওয়ার সময় ২৭ থেকে ২৮ লাখ টাকার ফান্ড রেখে এসেছি।’

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে শোভন বলেন, আমার বিরুদ্ধে ময়মনসিংয়ের আব্দুল হামিদ নামে একজন অভিযোগ করেন। আমি তাকে নেতা বানিয়েছি। কিন্তু সে অনিয়ম করায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছি। সে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগ তদন্ত করেছে। আমার কোনো অনিয়ম তারা পায়নি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা