প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় খুঁড়িয়ে চলা এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ১০ কোটি টাকা আত্মাসাতের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এমডিসহ ২৮ জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
বৃহস্পতিবার (২ মে) দুদকের উপপরিচালক রেভা হালদার বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন। এই মামলায় বিভিন্ন টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলের ছয় মালিক-পরিচালক ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এজাহার থেকে জানা যায়, আসামিরা যোগসাজশে, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অসদাচরণের মাধ্যমে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিশিটডে থেকে অবৈধভাবে ৯ কোটি ৮৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ পাস করিয়ে ভাগাভাগি করে নেন।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১ মার্চ মেসার্স হুমায়রা টেক্সটাইল মিলসের মালিক মোস্তফা কামাল ১০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। এফএএস ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়া প্রতিষ্ঠানটির ক্রেডিট কমিটির মতামত ছাড়া ১৯ মার্চ হুমায়রা টেক্সটাইলের অনুকূলে ১০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুরির সুপারিশসহ বোর্ড অব ডিরেক্টটরসের সভায় মেমোরেন্ডাম উপস্থাপন করেন। এর তিনদিন পর ২২ মার্চ ক্রেডিট কমিটির মতামত ছাড়া বোর্ড অব ডিরেক্টরসের ১৬৬তম সভায় তা উপস্থাপিত ও অনুমোদিত হয়। পরে এই টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নিজেরাই ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেন।
জাললিয়াতি করেছেন জমি বন্ধকেও
ঋণ মঞ্জুরি করতে মোস্তফা কামাল ও শাহজাহান ভূঁইয়া (বর্তমানে মৃত) ঋণের বিপরীতে ১০১ (৬৪+৩৭) শতাংশ জমি বন্ধক দেখান। ওই বন্ধকী দলিলে তারা উল্লেখ করেন জমিটি ২০১২ সালে ১৯ মার্চ তাদের নামে রেজিস্ট্রি হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে আসে, ওই তারিখে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় দলিল নং-৩২১৮ রেজিস্ট্রি হয়নি। ৩২১৮ নম্বরের দলিলটি রেজিস্ট্রি হয়েছে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ। দলিলের প্রকৃতি হলো- অখণ্ডনীয় সাধারণ আম মোক্তারনামা দলিল; যার দাতা মো. আমির হোসেন ও গ্রহিতা প্রাইম ব্যাংক লিমিটিডে। অর্থাৎ বন্ধকী দলিলের বর্ণনা মোতাবেক কোনো মিল পাওয়া যায়নি।
এজাহারে বলা হয়, ঋণের টাকা (কিস্তি) পরিশোধ না করে আসল ৯ কোটি ৮৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা যা সুদসহ ২৭ কোটি ১৩ লাখ ৩ হাজার ৬৮৪ টাকা আত্মসাত করে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন; হুমায়রা টেক্সটাইলের মালিক মোস্তাফা কামাল, মাকসুদা স্পিনিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হোসেন, জাহান টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সূজন ভূঁইয়া, ভাই ভাই টেক্সটাইল মিলসের প্রোপ্রাইটর আলাউদ্দিন, মেসার্স মাহমুদা টেক্সটাইলের আফজল হোসেন ভূঁইয়া, মরিয়ম টেক্সটাইল মিলসের পরিচালক কাজী জহিরুল আলম।
এফএএস ফাইন্যান্সের ২২ আসামি হলেন; প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ার, প্রাক্তন চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ এ হাফিজ, ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক উজ্জল কুমার নন্দী, পরিচালক মোস্তাইন বিল্লাহ, পরিচালক উদ্দাব মল্লিক, পরিচালক কাজী মাহজাবীন মমতাজ, পরিচালক আবুল শাহজাহান, স্বতন্ত্র পরিচালক সত্য গোপাল পোদ্দার, স্বতন্ত্র পরিচালক প্রদীপ কুমার নন্দী, স্বতন্ত্র পরিচালক অঞ্জন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট আজিমুল হক, তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার মহিত উজ্জামান, তালিকাভুক্ত আইনজীবী নুরুল করিম, প্রিন্সিপাল অফিসার নুরুল আমীন, ভাইস প্রেসিডেন্ট মনিরুজ্জামান আকন, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রাণ গৌরাঙ্গ দে, অফিসার আউয়াল হোসেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, অফিসার ইসরাত জাহান তমা ও সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মাহরু তানজিনা হক।