প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪১ পিএম
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৫ পিএম
প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে গত ৩১ মার্চ সুফি সাগর সামসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছবি : সংগৃহীত
স্কুলে যায়, এমন একটি শিশুকেও যদি প্রশ্ন করা হয়- দেশের শীর্ষস্থানীয় ভূমিদস্যু গ্রুপ কোনটি, তাহলে এক কথায় জবাব মিলবে, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ।’ ৩৭ বছর ধরে জালজালিয়াতি, জবরদখল, হাজার হাজার একর খাসজমি দখল, ভূমিদস্যুতা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, লুণ্ঠন, ব্যাংক লুটপাটসহ হেন অপকর্ম নেই যার সঙ্গে জড়িত ছিল না এই গ্রুপটি? আইটি বিশেষজ্ঞ সাব্বির আহমেদ হত্যাকাণ্ড, কলেজছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা, ধর্ষণের পর মডেলকন্যা আরাফা প্রধানের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে লাঞ্ছিত করা, পরকীয়া ধামাচাপা দিতে কাজের ছেলেকে হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা- এসব খবর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ছাড়িয়ে বিদেশের মিডিয়াতেও ঘুরপাক খাচ্ছে। গ্রুপটির এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ এই গ্রুপের পরিচালনাকারীদের অপকর্মের ফিরিস্তি কখনোই লিখে বা বলে শেষ করা যাবে না।
সমাজের ঘৃণিত এই ব্যক্তিদের হাত ধরেই দেশে বড়মাপের দুর্নীতির যাত্রা শুরু, তারাই এখন অন্যের দুর্নীতি খুঁজে বেড়ান! নানা ফাঁকফোকর তৈরি করে প্রতিপক্ষকে সর্বদা ঘায়েল করার অপচেষ্টা চালান। ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ রফিকুল ইসলাম এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে উঠে-পড়ে লেগেছে ভূমিদস্যু মাফিয়া চক্রÑ বসুন্ধরা গ্রুপ। বিভিন্ন কাল্পনিক অভিযোগ এনে কয়েক মাস ধরে তারা এই শিল্পপতিকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা চালিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যানকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ ভুয়া সংগঠন আইন ও মানবাধিকার সংগঠন সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা পঞ্চম শ্রেণি পাস কথিত ডক্টর উপাধিধারী সুফি সাগর সামস নামের এক প্রতারককে ব্যবহার করে দুদকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আবার এই সুফি সাগরকে দিয়ে হাইকোর্টে রিট করাসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে রফিকুল ইসলামের নামে কাল্পনিক অভিযোগও দিয়েছে।
সুফি সাগর একজন পেশাদার প্রতারক। ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া, কাল্পনিক অভিযোগ তুলে চাঁদাবাজি করা, চাঁদা না পেলে সংবাদ সম্মেলন করাই তার পেশা। এ রকম প্রতারণার প্রমাণ পেয়েই গত ৩১ মার্চ সুফি সাগর সামসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সুফি সাগর সামস জানিয়েছে, বিভিন্ন মহলের হয়ে তার সংগঠন ভাড়ায় খেটে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় বসুন্ধরা গ্রুপও তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে সাজানো ও কাল্পনিক অভিযোগ দিয়েছে সুফি সাগর। এসব কাজে তার সংগঠনের পক্ষ থেকে যা কিছু করা হচ্ছে তার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন মাফিয়া সাম্রাজ্যের অধিপতি সায়েম সোবহান আনভীর।
সুফি সাগরের বিষয়ে ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন-উর-রশীদ বলেন, মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সুফি সাগর নিজেকে ডক্টর পরিচয় দিত। সে মূলত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে তার সংগঠনকে ব্যবহার করত। সত্য-মিথ্যার মিশেলে অভিযোগ বানিয়ে সরকারি দপ্তর দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করা ও চাঁদাবাজিই তার পেশা ছিল। ডিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, সুফি সাগর সামস জিজ্ঞাসাবাদে বসুন্ধরার কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধে কাল্পনিক অভিযোগ দেওয়া ও সংবাদ সম্মেলন করার কথা স্বীকার করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ভূমিদস্যু মাফিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুদকে অনুসন্ধান চলমান আছে। দুদকের তিন সদস্যের বিশেষ টিম অভিযোগটি তদন্ত করছে। এতে বলা হয়েছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার (ইস্টওয়েস্ট প্রপার্টিজ) ই ব্লক থেকে কে ব্লক পর্যন্ত ৪ হাজার ৩০২ বিঘা (প্রায় ৮৬ হাজার ৪০ কাঠা) জমির দাম ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর সঙ্গে এম ব্লক থেকে পি ব্লক পর্যন্ত আরও পাঁচটি ব্লক যুক্ত হওয়ায় বর্ধিত জমির মূল্য এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব জমি হাতিয়ে নিতে সব ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। এই অভিযোগটি দুদকে জমা হয় ২০১৩ সালে। বর্তমানে এই জমির দাম কমপক্ষে ৫ লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি বেআইনিভাবে দখল করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
এ ছাড়া বসুন্ধরা গ্রুপের জালজালিয়াতি, কর ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং করে শুল্ক ফাঁকি, ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগেরও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে দুদকে। একজন পরিচালকের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি অনুসন্ধান দল এই অনুসন্ধান চালাচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, ২০১৩ সাল থেকে বসুন্ধরার দুর্নীতি নিয়ে তদন্তকাজ চালাচ্ছে দুদক। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও তাদের বিরুদ্ধে কেন দুদক ব্যবস্থা নিতে পারল না তা বিস্ময়কর। এত অপকর্ম, অপরাধ করে তারা কীভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে সে প্রশ্নও উঠেছে। তাদের ভাষ্যÑ তাহলে কি বসুন্ধরা গ্রুপ সমস্ত শক্তির ঊর্ধ্বে অবস্থান করছে! বসুন্ধরার নানা অপকর্ম, দুর্নীতি নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের তথ্যানুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। আগামী পর্বে বসুন্ধরা গ্রুপের অপকর্ম নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর কাহিনী প্রকাশিত হবে।