× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রতারণার টাকায় তিনি উদ্যোক্তা, দিতেন রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩০ পিএম

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ

রাজধানীর কল্যাণপুরের অরভী ওভারসীসের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ খালিকুজ্জামান হিরা। দীর্ঘদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকসহ নানা ভিসায় মানুষ পাঠানো ও সৌদি আরবে হজ যাত্রীদের পাঠান। সম্প্রতি সাবেক সেনা সদস্য ও অস্ট্রিলিয়ান নাগরিক এবং রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়ে আব্দুল আজিজ ওরফে রাসেল নামের এক ব্যক্তি হিরাকে বলেন, দেশটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে চান। হিরাসহ ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস অর্জনে আজিজ ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এক কর্নেলের সঙ্গে মিটিং করান। লেনদেনের চুক্তি শেষে ৫০টি ভিসা দেওয়ার নামে হিরার কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু পাসপোর্টে ভুয়া ভিসা দেওয়ায় কোনো শ্রমিক বিদেশে যেতে পারেননি। ফলে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে দেখেন, আজিজ ও তার সহযোগিরা সবাই আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু হিরা নয়, আজিজের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে র্স্ববশান্ত হয়েছেন বহু ট্রাভেল ব্যবসায়ী ও রিক্রুটিং এজেন্সী।

প্রতারণার শিকার হিরা বলেন, নিজেকে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক ও সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে আমাদের সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ভিসা দেওয়ার কথা বলে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এমনকি তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে টাকা ফেরত চাইতে গেলে এই সকল পরিচয় ব্যবহার করে আমাদের হুমকি-ধমকি দেওয়া হতো। আর রাসেল অস্ট্রেলিয়ান নাম্বার ব্যবহার করতেন। তিনি সরাসরি আমাদের সঙ্গে দেখা করতেন না, এজেন্টদের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন।

ডিএমপির রমনা থানায় ভুক্তভোগীদের মামলার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেনাবাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট আব্দুল আজিজসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, মূলহোতা আব্দুল আজিজ ওরফে রাসেল (৫৫), তার অন্যতম দুই সহযোগী মো. নুরুল হুদা (৬৪) ও লুৎফর রহমান রতন (৪৮)। সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার টাকা হাতিয়ে নিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাংকের কাগজ, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট ও নকল সিল উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। ডিবি প্রধান বলেন, রাষ্ট্রপতির গ্রামের বাড়ি পাবনায়। তারই এলাকার সাবেক সেনা সদস্য আব্দুল আজিজ নিজেকে রাষ্ট্রপতির আত্মীয় ও অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক পরিচয়ে দিয়ে বিদেশে চাকরির ভিসা দেওয়ার নামে বিভিন্ন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আজিজের অন্যতম সহযোগী নুরুল হুদা। মাঠ পর্যায়ে তাদের হয়ে কাজ করে  ফারুক, তুহিন, সরোয়ারসহ বেশ কয়েকজন এজেন্ট। তারা বিভিন্ন ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলেন। আজিজের কথিত গ্রামীণ ট্রাভেলসের মাধ্যমে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভিসা দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেন। আর নিজেকে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক বিশ্বাসক করাতে আজিজ অস্ট্রেলিয়ার একটি ফোন নাম্বার ব্যবহার করে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। সবাইকে বলেন, তিনি অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন এবং নুরুল হুদা হলেন তার বাংলাদেশি প্রতিনিধি। ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা সাবেক সেনা সদস্য এবং অস্ট্রেলিয়ার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দেখে বিভ্রান্ত হয়ে তাকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী হিসেবেই বিশ্বাস করে। তারা বিভিন্ন মানুষদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা এনে আজিজের কাছে দেন ভিসা পাওয়ার আশায়। প্রতারক আজিজ তাদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে অফিস গুটিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। আর  এই টাকা নিতে ব্যবহার করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ভুয়া এনআইডি কার্ড ও ঠিকানা দিয়ে। ফলে তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহজে খুঁজে পেত না।

আজিজের প্রতারক হয়ে ওঠার বিষয়ে হারুন বলেন, আজিজ ১৯৬৮ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে সৈনিক পদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ২০০৯ সালে সার্জেন্ট পদ থেকে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরে রাজধানীর কাকরাইলে ভিশন-২০২০ নামের একটি মাইক্রোক্রেডিট নামের একটি ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন। 

সেই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মানুষের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এরপর ২০২০ সাল থেকে নুরুল হুদার সঙ্গে গ্রামীণ ট্রাভেলস এজেন্সি থেকে অস্ট্রেলিয়া-কানাডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশে শ্রমিক পাঠানোর কথা বলে প্রতারণার জাল বিস্তার করতে শুরু করেন। আজিজের বিরুদ্ধে পাঁচটি ও নুরুল হুদার বিরুদ্ধে দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।


প্রতারণার টাকায় আজিজের যত প্রতিষ্ঠান 

ভিসা দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ট্রাভেল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন প্রতারক আজিজ ও তার চক্র। এই টাকা দিয়ে আজিজ রাজধানীতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে সেই সব প্রতিষ্ঠানের নাম। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর এলাকায় ক্যাফে রেট্রো, মহাখালীর ডিওএইচএস এলাাকর ৬ নম্বর রোডের ১১৬ নম্বর বাড়িতে এরিস্টোক্রেট ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড টিএ এন্টারপ্রাইজ, মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার আলোক হাসপিটালের পেছনে তার হেলথ প্রডাক্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বায়োব্লু লিমিটেড, গ্রামীণ ট্রাভেলস, এয়ার প্রজেক্ট এভিয়েশন, গ্রামীণ এয়ার ট্রাভেলস, প্রাণ গ্রুপের ডিলার, গ্রামের বাড়িতে ফিশারিজসহ বিভিন্ন প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

বিদেশী নাগরকি ও দেশের সম্মানিত কোনো উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের পরিচয় ব্যবহার করে কোনো ধরনের সুবিধা দেওয়ার কথা বলে সহজেই বিশ্বাস না করে যাচাই-বাছাইসহ সংশ্লিষ্ট্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করে লেনদেন করার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা