কামড়ের দাগ থেকে খুনি শনাক্ত
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২০:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৯ পিএম
হত্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। প্রবা ফটো
অভাবের তাড়নায় বোনের বাসায় চুরি করতে যান কামরুজ্জামান রুবেল। ধরা পড়ার ভয়ে বোনকে খুন করেন তিনি। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি গাজীপুরের কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়া গ্রামের। এই গ্রামের কোরিয়া প্রবাসী মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম ওরফে শিমু নিজ বসতঘরে খুন হন।
এ ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কুলগংগা গ্রামের সিরাজউদ্দিনের ছেলে কামরুজ্জামান রুবেল এবং শেরপুরের শ্রীবর্দী থানার মান্দারবাড়ি গ্রামের আসকর আলীর ছেলে মিনাল ওরফে মিস্টার।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এবং ডিএমপি ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার রাজউক কমপ্লেক্সের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার ৬ (এপ্রিল) গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এসব তথ্য পিবিআইয়ের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তা আবু ইউসুফ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন।
তিনি জানান, গত ২ এপ্রিল শিমুর হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে। পরে এ ঘটনায় মামলার তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্তে দেখা যায়, আসামি রুবেল একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করত। পাঁচ মাস আগে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কারণে সে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। অনেক টাকা ঋণ করে সে। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তার বোন শাহনাজ আক্তার শিমুর বাসা থেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা চুরি করার চিন্তা করে। ঘটনার দুই দিন আগে রুবেল তার পূর্বপরিচিত মিনাল ওরফে মিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বোনের বাসায় চুরির পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন বিকালবেলা মিনাল ওরফে মিস্টার জয়দেবপুর রেলস্টেশনে যায়। তারা একটি ব্যাগের মধ্যে একটি সুইজ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কাঁচি নিয়ে ট্রেনে করে শ্রীপুর যায়। তারা শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বরমী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে চা-সিগারেট খায়। কিছুক্ষণ পরে তারা সেখান থেকে অটোরিকশা করে রাত ৮টার দিকে সিংহশ্রী ব্রিজে পৌঁছে। সেখান থেকে হেঁটে রুবেলের বোন ভিকটিম শাহনাজ আক্তার শিমুর বাড়ির সামনে আখক্ষেতে লুকিয়ে থাকে। রাত ১২টার দিকে শিমুর পাশের বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের ওপর দিয়ে বাসার ছাদে উঠে পেছনের রান্নাঘরের সিমেন্টের টিন খুলে রান্নাঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। রান্নাঘর থেকে দরজা খুলে বাইরে এসে বাড়ির পেছনের খোলা জানালায় বাঁশের লাঠি দিয়ে ছিটকিনি খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।
শিমু আসামিদের শব্দে চিৎকার শুরু করলে প্রথমে আসামি মিস্টার সুইচ গিয়ার চাকু দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে বলে, আমরা তোর কোনো ক্ষতি করব না। আমরা যা নেওয়ার নিয়ে চলে যাব, চিৎকার বন্ধ কর। শিমু চিৎকার বন্ধ না করলে আসামি মিস্টার গামছা দিয়ে মুখ চেপে ধরে। রুবেল তার বোন শিমুর হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। চিৎকার করার সময় আসামিরা ভিকটিমের মুখ চেপে ধরলে হাতে কামড় দেয়। এতে আসামিদের আঙুলে জখম হয়।
শিমু রুবেলকে চিনতে না পারে সেজন্য চোখ ও মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে। রুবেল আলমিরা খোলার জন্য চাবি খুঁজতে থাকে। মিস্টারের সঙ্গে শিমু ধস্তাধস্তি শুরু করলে শিমুর মুখে আঘাত করে মিস্টার। শিমুর বুকের ওপর বসে গলা চেপে ধরে। রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে একটি স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, কানের ফুল ও নগদ ৩ হাজার টাকা, শিমুর ব্যবহৃত মোবাইল সেট নিয়ে নেয়। রুবেল ও মিস্টার শিমুর হাত ও পা পেছন দিয়ে বেঁধে বাড়ির পকেট গেট দিয়ে বের হয়ে চলে যায়। তারা লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
মঙ্গলবার রাতে হত্যার পরদিন সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিমুর স্বামী দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন।