সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০১ পিএম
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০৯ পিএম
চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে ভুয়া সুফি সাগর শামসকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রবা ফটো
প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি। তবে নিজেকে পরিচয় দিতেন ডক্টরেট ডিগ্রিধারি হিসেবে। এছাড়া আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হিসেবেও পরিচয় দেন। এসবের আড়ালে করেন চাঁদাবাজি ও প্রতারণার কারবার। এরকম অভিযোগে ভুয়া সুফি সাগর শামস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সোমবার (১ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের প্রধান হারুন অর রশীদ এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সুফি সাগর সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তি, শিল্পপতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জনকে টার্গেট করে তাদের নামে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভুয়া তথ্য সম্বলিত অভিযোগ তৈরি করে বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। পরে চক্রের সদস্যরা ওই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেলে ‘মানবাধিকার’ সংগঠনের ব্যানারে মনগড়া অসত্য তথ্য দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সামাজিক মর্যাদাহানি ও হয়রানি করে। এভাবে তারা চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করে থাকে। অনেকে সামাজিক হেনস্থার ভয়ে তাদেরকে টাকা দিয়ে দেন।’
ডিবি প্রধান বলেন, ‘ সুফি সাগরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। ডিবি জানায়, গত ২৮ মার্চ সুফির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এজহারে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের নিবার্চিত সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ এর নিকট থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করার লক্ষ্যে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করেন। আসামি সুফি সামস সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। আব্দুল ওয়াহেদের মামলার পর গত ৩০ মার্চ রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
হারুন বলেন, ‘সুফি সাগর সামসের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী। অথচ তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী ব্যবহার করেন। তার নামের সঙ্গে ডক্টরেট ডিগ্রির বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তিনি দ্য রিজেন্টস অফ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইউনিভার্সিটি ইউএসএর সনদ দেখায়। যে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছে সে নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েরই খোঁজই তিনি দিতে পারেননি। তিনি কখনো ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, তাকে আমেরিকা প্রবাসী এক ভাই এই ‘সম্মানসূচক পিএইচডি’ সনদ সংগ্রহ করে দিয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তার হেফাজত থেকে বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড ও একটি ডক্টরেট ডিগ্রীর ভুয়া সনদ জব্দ করা হয়েছে।’
প্রাথমিক তদন্তে ডিবি জানতে পেরেছে, আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি ভূঁইফোড় সংগঠনের আড়ালে সুফি সাগর একটি চক্র পরিচালনা করেন। যাদের কাজ হলো সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে চাঁদাবাজি করা।
ডিবি আরও জানিয়েছে, ইতোপূর্বে মানব পাচারের অভিযোগে আমেরিকান দূতাবাসের করা একটি মামলায় আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়্যারম্যান ও মহাসচিব গ্রেপ্তার হয়। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে জাতিসংঘের ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দেখিয়ে সাধারণ লোকজনকে আমেরিকা পাঠানোর নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রেপ্তার হওয়া সুফি সামস নিজেকে বাংলাদেশ হিউম্যানিস্ট পার্টি-বিএইচপি এর মহাসচিব হিসেবে দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশনে এরকম নামের কোনও দলের নিবন্ধন নেই।
সুফি সাগর সামসের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। তাকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।