× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বনভূমি দখলকারীদের সেই তালিকা হারাল কোথায়

ফসিহ উদ্দীন মাহতাব

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৯ এএম

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৫৪ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বনভূমি দখলকারীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছিল সরকার। এটি ছিল প্রায় পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার। সেই বিশাল নথিতে সবিস্তারে উল্লেখ ছিল দখলকারীদের নামধাম সবকিছুই। বিগত সরকারের শেষ সময়ে তা প্রকাশের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

ওয়েবসাইটে তালিকাটি প্রকাশ করার কথাও ছিল। কিন্তু আজ অবধি সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। শুধু তাই নয়, তালিকা প্রকাশ না হলেও বন বিভাগ থেকে সাত দিনের মধ্যে সব স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য দখলকারীদের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়- নির্দেশনা না মানলে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সেই নির্দেশনাও কার্যকর হয়নি। বর্তমানে এক লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সারা দেশে দুই লাখ ৫৭ হাজার একর বনভূমি দখল করে রেখেছে। এর মধ্যে এক লাখ ৩৮ হাজার একর হচ্ছে সংরক্ষিত বন, যা রয়েছে ৮৮ হাজার ২২৫ জন ব্যক্তি ও সংস্থার দখলে। দেশের ২৮টি জেলার বনভূমির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে কক্সবাজার জেলায়।

এখানে মোট দখল হওয়া জমির পরিমাণ ৫৯ হাজার ৪৭১ একর। এক বছর আগে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বন বিভাগ অভিযান চালিয়ে সারা দেশে মাত্র ৫৩৪ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করেছিল। গত এক দশকে সব মিলিয়ে ২৭ হাজার একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অভিযান প্রক্রিয়া স্থায়ী না হওয়ায় উদ্ধার প্রক্রিয়া থমকে গেছে। বনভূমি দখলকারীদের নামের তালিকাটিও আদৌ প্রকাশ করা হবে কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সরকার সকল দখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। দেশের ২ লাখ ৫৭ হাজার একর জমি এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে। এসব ভূমি পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২৭ হাজার একর জমি পুনরুদ্ধার হয়েছে। বাকি জমি উদ্ধারের কাজ শিগগির শুরু করা হবে।

মন্ত্রী আরও জানান, বিভিন্ন ক্যাটাগরির বনের জমি দখল হয়ে আছে। সংরক্ষিত বনের জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে। এই কার্যক্রম শুরু হলে অন্য দখলদাররা সতর্ক হয়ে যাবে। সরকারের লক্ষ্য বেদখলে থাকা বনভূমি উদ্ধার করা। গেজেটভুক্ত সংরক্ষিত বন দখলে রাখলেও দখলদাররা আদালতে গিয়ে কিছু করতে পারবে না। 

মন্ত্রণালয় ও বন বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সর্বত্রই একের পর এক বনাঞ্চলের ভূমি জবরদখল চলছে। বৃক্ষ নিধনসহ বনজসম্পদ ধ্বংসের মহাযজ্ঞ কিছুতেই থামছে না। সুযোগ সন্ধানী ব্যক্তিরা সব সরকারের আমলেই যোগসাজশ করে এসব বনের জমি দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো, বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার কারণেই সরকারের এসব মূল্যবান সম্পত্তি দখল হয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বনভূমি দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতের উদ্যোগ নেওয়া হয় তৃতীয় মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী শাহাব উদ্দীন আহমদ পরবর্তীতে তালিকাটি প্রকাশের ঘোষণাও দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেটি আর প্রকাশ করা হয়নি। 

তথ্যসূত্র বলছে, অতীতে সকল সরকারের আমলে বন বিভাগের সম্পত্তি যোগসাজশে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল, বিরোধীদল এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় শিল্পপতি নামধারীরা এসব জমি কব্জায় নিচ্ছে। যারা সম্পত্তি দখলে নিচ্ছেন তারা সবাই প্রভাবশালী। এদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারি দল বা বিরোধী দলের নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। এসব জমি উদ্ধারে নিদের্শনা থাকলেও সীমিত জনবলের কারণে তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারছে না দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ সুযোগে বনের জমির বেশুমার দখল চলছেই। তবে অনেকেই জনবল সংকটের বিষয়টিকে খোঁড়া অজুহাত বলে মনে করেন। আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়াকে এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করেছেন তারা। 

জানা গেছে, সারা দেশে বন বিভাগের মোট জমি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ১২৪ একর। এর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় রয়েছে (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) ১৭ লাখ ১৬ হাজার একর জমি। বন অধিদপ্তরের পরিবর্তে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার বনভূমি নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ও নিয়মিত অভিযান না চলায় পার্বত্য এলাকায় বেশি বনভূমি দখল হয়েছে। বিগত ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন বিভাগের দখল হওয়া জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু হয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর অভিযানে ভাটা পড়ে। জবরদখল হওয়া আড়াই লাখের বেশি বনভূমির মধ্যে সিলেট বন বিভাগে ৬৫ হাজার ১১৯ একর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন বিভাগে ৫০ হাজার ৬৮২ একর, উত্তরাঞ্চলের ৭ জেলায় (দিনাজপুর, নওগাঁ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়) ১৩ হাজার ৬৬৫ একর বনভূমি, গাজীপুরে ২৫ হাজার ৫৭০ একর জমি, তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৭৮০ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে।

ভূমিদস্যুদের সঙ্গে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। একশ্রেণির দালালের মাধ্যমে এসব জমি দখল করা হয়। দালালরা বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ করে দিয়ে দখলে সহায়তা করে। যে কারণে যেসব বনভূমিতে বনাঞ্চল গড়ে ওঠার কথা সেখানে দালানকোঠা বানিয়ে বসবাস করছেন লোকজন। এভাবে বছরের পর বছর ধরে বন বিভাগের ৫০ শতাংশ ভূমি জবরদখল করে নিয়েছেন অনেকেই। এসব জমি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও রয়েছে। অনেকেই আইনি প্যাঁচে ফেলে বছরের পর বছর ধরে বনের জমি অবৈধ দখলে রেখেছেন।

প্রায় প্রতিটি সরকারের আমলে বনের জমি দখল হয়েছে। শুধু গাজীপুরের ৮টি মৌজার বনভূমি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থাসহ ৫৯টি প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে। এ ছাড়াও কোথাও কোথাও মার্কেট, বড় শিল্প স্থাপনা নির্মাণ করে বছরের পর বছর ধরে বনের জমি দখল করে রেখেছে। অভিযানের মাধ্যমে প্রতি বছর কিছু কিছু বনের জমি উদ্ধারও করা হয়। সেখানে বনায়ন কার্যক্রম চালানো হয়। বন বিভাগের জমি জবরদখলের ক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমি অফিস ও বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে তা বজায় রাখতে হবে। জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে নতুন বনায়ন ও বৃক্ষরোপণের আওতা বাড়াতে হবে। যেগুলো করলে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য সহায়ক হবে। যেভাবেই হোক যত বন নিধন ও দখল হবে (শিল্পকারখানা বা বসতি) ততই দেশের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি দেখা দেবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বনের প্রয়োজন। বায়োডাইভারসিটির জন্য বন সংরক্ষণ করা অতি জরুরি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা