দেশে বসে তুর্কি সেনাবাহিনীতে ‘চাকরি দিতেন’ বাবা-ছেলে

তুরস্কে সেনাবাহিনীর অধীনে লোক নিয়োগের নামে টাকা আত্মসাৎকারী বাবা-ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল, বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড, প্যাড সিল, দুটি কম্পিউটার, বিদেশে পাঠানোর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র ও ভিসা জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কামরুল হাসান ও তার ছেলে ফাহাদ হাসান সিয়াম।

শনিবার (৩০ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। রবিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে এপ্রিল মাসে বাবা-ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয় সুনামগঞ্জের ছাতকের বাসিন্দা সহিদুল ইসলামের। সহিদুলকে কামরুল হাসান প্রস্তাব দেন- তুরস্কে সরকারিভাবে সেনাবাহিনীর অধীনে অনেক লোক নিয়োগ করা হবে, তাকে সেখানে তিনি পাঠাতে পারবেন। তুরস্কে গিয়ে তিনি এই চাকরি করে ভালো বেতন পাবেন। কামরুল হাসানের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান সহিদুল। তবে তুরস্কে যেতে সহিদুলকে সাত লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানান কামরুল হাসান।’

হারুন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কামরুল হাসান ও তার ছেলে সিয়ামকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন সহিদুল। চুক্তি মোতাবেক গত ৭ মে কামরুল হাসান ও তার ছেলেকে ২০ জন ২ লাখ ৩০ হাজার করে টাকা দেন। টাকা দেওয়ার পর তাদের মেডিকেল করানো হয়। কিছু দিন পর বাবা-ছেলে আরও ২০ জনকে তুরস্কে যাওয়ার ভুয়া জব অফার দেন। এর কিছু দিন পর কামরুল ও সিয়াম সহিদুলসহ আগের ২০ জনকে বলেন, এখন তুরস্কে পাঠানো যাবে না। তাই তাদের সবাইকে মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। এই কথা বলে তাদের কাছ থেকে আরও ৩২ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। তবে কাউকেই বিদেশ পাঠাতে পারেননি কামরুল ও সিয়াম। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের ওয়ারীর অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান তারা। সহিদুলের অভিযোগের ভিত্তিতে কামরুল ও সিয়ামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ডিবিপ্রধান বলেন, ‘কামরুল ও তার ছেলে সিয়াম ভিকটিমদের কাছে বলত তারা চার-পাঁচটি রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠানের বৈধ লাইসেন্সধারী। প্রকৃতপক্ষে তার কোনো লাইসেন্স নেই। ভুয়া লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন তারা। এ ছাড়াও তিনি বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস ভাড়া নেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সরকারিভাবে তুরস্ক, কানাডা, মালয়েশিয়া, সার্বিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। বিশ্বাস অর্জনের জন্য টাকা ও পাসপোর্ট নেওয়ার পর কিছু কিছু পাসপোর্ট তিনি বিভিন্ন বৈধ এজেন্টের কাছে জমা দেন ভিসা করার জন্য। এগুলো দেখিয়েই পরবর্তীতে অন্যদের কাছ থেকে আরও টাকা নেন। টাকা নেওয়ার পর সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ ছাড়াও কেউ টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। একপর্যায়ে গোপনে তিনি তার অফিস পরিবর্তন করে ফেলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কামরুল হাসান ১৯৯৮ সাল থেকে ১০ বছর মালয়েশিয়াতে কাটান। দেশে ফিরে ২০০১ সাল থেকে আল-রিফাত ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকরি করেন। ২০২২ সালে এজেন্সিটির মালিক মারা যাওয়ার পর তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করতেন। এভাবে প্রতারণা করে তিনি তুরস্ক, কানাডা, সার্বিয়া, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে এই পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ জন বিদেশে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন এবং তাদের মেডিকেল করানোর কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। এ ছাড়া ভিসা প্রসেসিংয়ের কথা বলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২ লাখ থেকে শুরু করে ৩০-৩৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।‘