প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৮:২৭ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২০:০২ পিএম
গ্রেপ্তারের পর প্রতারক চক্রের হোতা সাজ্জাত হাওলাদার। প্রবা ফটো
গত বছর এইচএসসিতে জিপিএ—৫ পেয়েছে ছাত্রীটি। সম্প্রতি তার আইনজীবী বাবার নম্বরে একটি মেসেজ আসে। এতে জানানো হয়, ভালো ফলাফলের জন্য তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। এজন্য উল্লিখিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ফোন দেওয়ার পর শুরু। নানাভাবে বিশ্বাস অর্জনের পর বিভিন্ন সংখ্যার সঙ্গে বিকাশের পিন নম্বরের সংখ্যাটি যোগ-বিয়োগ করে ফলাফল জানাতে বলা হয়।
যেহেতু সরাসরি পিন নম্বর চাইছে না তাই সরল বিশ্বাসে যোগ-বিয়োগ করে প্রাপ্ত ফলাফল জানিয়ে দেন ভুক্তভোগী। এতেই ধরা। দুবারে প্রায় তিন লাখ টাকা খোয়া যায় তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে।
অভিনব এই প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশ কিংবা নগদের পিন নম্বর বের করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল একটি চক্র। এক আইনজীবীর এমন একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতারক চক্রটির হোতা সাজ্জাত হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বাহিনীটি জানায়, শনিবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে মো. সাজ্জাত হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে তিনটি মোবাইল তিনটি সিম উদ্ধার করা হয়।
রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘ফরিদপুরের বাসিন্দা সাজ্জাত হাওলাদার ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। স্বল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে এলাকার সমবয়সি বন্ধুদের সঙ্গে মিলে বিকাশ/নগদের টাকা আত্মসাতের কৌশল রপ্ত করেন সাজ্জাত। পরে একটি চক্র গড়ে তোলেন তিনি।’
ঘটনার বিবরণে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘ভুক্তভোগী এক অ্যাডভোকেটের মেয়ে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ২২ জানুয়ারি ওই অ্যাডভোকেটের ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয়, ভালো রেজাল্টের জন্য তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। এজন্য উল্লিখিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়।’
সে অনুযায়ী পরদিন নির্ধারিত নম্বরে ফোন করলে বকশিবাজার শিক্ষা বোর্ডের (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, ঢাকা) অফিস বলে জানায়। এ সময় তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে সাত মাস এবং এক বছর পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাসিক ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে বলে জানানো হয়।
এ সময় ভুক্তভোগীর ব্যাংকের নাম, হিসাব নম্বর ও শাখার নাম জানতে চায়। যে অ্যাকাউন্টে মেয়ের স্কলারশিপের টাকা জমা হবে সেজন্য একটি বিকাশ নম্বর ও মেয়ের মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি নম্বর জানতে চায়। ভুক্তভোগী এসব তথ্য দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে আরও কিছু তথ্য চাইবে বলে জানানো হয় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে।
এরপর বিকাশ নম্বরে একাধিক মেসেজে কোড নম্বর আসে এবং সেসব কোড সরবরাহও করেন ভুক্তভোগী। একপর্যায়ে ফোন করে মোবাইলে ক্যালকুলেটর দেখতে বলা হয়। নির্দিষ্ট একটি নম্বরের সঙ্গে অপর একটি নম্বর এবং বাদীর বিকাশের পিন যোগ করে যোগফল জানতে চাইলে ভুক্তভোগী যোগফল জানান।
তখন তাকে ১২ ঘণ্টা তার বিকাশ লেনদেন বন্ধ রাখতে বলা হয় এবং অ্যাকাউন্ট চেক করতেও নিষেধ করা হয়। সন্দেহ হলে ১০-১৫ মিনিট পর ভুক্তভোগী বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখেন তার এক লাখ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এভাবে পরে আরও এক লাখ এবং ৮০ হাজার টাকাসহ মোট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।
পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী। পরে মামলার তদন্তে নেমে সাজ্জাতকে গ্রেপ্তার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম দক্ষিণ বিভাগ।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘চক্রটি বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে বিকাশ/নগদ অফিসের লোক আবার কখনও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ফোন করে প্রতারণা করে আসছিল। টার্গেটকৃত ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করে বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত।’
তাই বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্টের তথ্য, পাসওয়ার্ড অপরিচিত কাউকে না দিতে অনুরোধ করে বা প্রতারিত হলে পুলিশের আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানান তিনি।