প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৯:২৬ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ২০:২১ পিএম
রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে স্বপ্ন সুপার শপে ডাকাতির ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তাররা আন্তঃডাকাত বাহিনীর সদস্য। এই বাহিনীর সর্দারের সম্প্রতি নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে— রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার স্বপ্ন সুপার শপে ডাকাতি করা। দলটি সবশেষ আটটি ডাকাতিই করেছে স্বপ্ন সুপার শপের বিভিন্ন আউটলেটে।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলতে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার বড় খাজুরা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের রামপুরা থানা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ডাকাত দলের সর্দার রিপন খান ওরফে জাফর, সোহেল খান, মো. নজরুল ইসলাম, জুয়েল ইসলাম। অপর দুইজন হলেন- তারেক হাসান ও তালহা। তারা ডাকাতির মালামাল কেনাবেচা চক্রের সদস্য।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য। চক্রটি ডাকাতি করতে গিয়ে ধরা পড়লে জেল থেকে বেরিয়ে ফের অন্ধকারের চোরা গলিতে চলে যায়। ডাকাত সরদার রিপনসহ এই চক্রের প্রতিটি সদস্যের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০ মার্চ গভীর রাতে বনশ্রীর বি-ব্লকের স্বপ্ন সুপার শপের তালা কেটে ঢুকে বিদেশি ব্যান্ডের বিভিন্ন পারফিউম, শ্যাম্পু ও কসমেটিকস আইটেমসহ দুই বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে যায় ডাকাতরা। যাওয়ার সময় শপের দুই নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করে পিকআপে উঠিয়ে নিয়ে আহত অবস্থায় রামপুরা বিটিভি ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে রাস্তায় ফেলে যায়।
এ ঘটনায় সুপার শপ কর্তৃপক্ষ রামপুরা থানায় মামলা করে। পুলিশ বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আন্তঃডাকাতদলের চার সদস্য ও ডাকাতির মালামাল কেনাবেচা চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ডাকাত সরদার রিপনসহ এই চক্রের প্রতিটি সদস্যের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। এই চক্র সাম্প্রতিক সময়ে ডিএমপির কাফরুল, বাড্ডা, শেরেবাংলা নগর থানাসহ ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি এবং নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে স্বপ্নের একাধিক সুপার শপে চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।
ডাকাতির কৌশল নিয়ে তিনি বলেন, চক্রটি টার্গেট আউটলেটে আগে থেকে রেকি করে। পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে চাপাতি, মুগুরসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দলের একজন অথবা দুজন সদস্য আউটলেটের নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলে। অন্য সদস্য নিরাপত্তাকর্মীর ঘাড়ের পেছনে মুগুরের আঘাতে বেহুশ করে ফেলে। তারপর হাত-পা বেঁধে নিজেদের পিকআপে বসিয়ে রাখে ওই নিরাপত্তাকর্মীকে। নির্বিঘ্নে ডাকাতি শেষে নিরাপত্তাকর্মীকে ফেলে রেখে চলে যায়।
হায়াতুল ইসলাম আরও বলেন, এই বাহিনীর পুরো দলকে আটক করেছে ডিএমপির রামপুরা থানা পুলিশ। সাব ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম জিহানের টিম বাগেরহাটের ফকিরহাট থেকে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের তথ্যঅনুযায়ী- স্বপ্ন সুপার শপের লুণ্ঠিত মালামাল ঢাকা জেলার আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন গফুর মণ্ডল মার্কেটের আশা কসমেটিকস এবং গোপালগঞ্জ কসমেটিকসের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়।
মতিঝিল বিভাগের ডিসি বলেন, ২০১৭ সালে মাদারীপুরে প্রথম ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয় ডাকাত সর্দার রিপন। জেলেও যায় যথারীতি। জামিনে এসে আগের চেয়ে কৌশলী ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে সে। ২০২১ সালে তার গ্যাং ১৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটায়। ২০২৩ সালে সাতটি ডাকাতি করে। প্রায় প্রতিবারই গ্রেপ্তার হয়ে আদালতে সোপর্দ হয়েছে। পেয়েছে জামিনও। আবারও ফিরেছে অন্ধকারের চোরাগলিতে। ২৪ বছর বয়স থেকে শুরু করে গত আট বছরেই এতসংখ্যক ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধ ঘটিয়েছে সে। সম্প্রতি তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার স্বপ্ন সুপার শপে ডাকাতি করা। সর্বশেষ আটটি ডাকাতিই করেছে স্বপ্ন সুপার শপের বিভিন্ন আউটলেটে।