প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৯:০৫ পিএম
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪ ২১:০৫ পিএম
শুক্রবার রাতে দিদারুল ও তার ভাগ্নি তাপসী রাবেয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রবা ফটো
ত্রিশোর্ধ দিদারুল ইসলাম। নিজেকে পরিচয় দেন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের ক্যাপ্টেন হিসাবে। অন্যদিকে তারই ভাগ্নি একটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তপসী রাবেয়া বসরি পরিচয় দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অথচ এ দুজনের পরিচয়ই ভুয়া। তার চাকরির নামে বা জমি কেনার নামে টার্গেটকৃত ব্যক্তির সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা।
শুধু তাই নয়, আস্থা অর্জনের জন্য মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ভুক্তভোগীদের বাসায় যেতেন দিদারুল। এরপর বিভিন্ন প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে সটকে পড়তেন সেখান থেকে। এমনই ভাবে কিশোরগঞ্জের বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. এমাদ উদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয় দিদারুলের। নিজেকে ক্যাপ্টেন পরিচয় দিয়ে এমাদ উদ্দিনের সঙ্গে জমি কেনার নামে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এরপর ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মেয়েকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে ধাপে ধাপে হাতিয়ে নেন প্রায় ৪৩ লাখ টাকা।
কিন্তু মেয়েকে চাকরি ও ছেলেকে বিদেশে না পাঠানোয় প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী। মামলার তদন্তে নেমে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারক চক্রের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- সেনাবিহানীর ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া দিদারুল ইসলাম ও তার ভাগ্নি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেওয়া তাপসী রাবেয়া বসরি।
গোয়েন্দারা বলছেন, দুজনেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। দুজনে মিলে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছে। এমন কি তাদের হাতে পুলিশ সদস্যও প্রতারিত হয়েছেন।
শনিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর নামে ধাপে ধাপে প্রায় ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারণা চক্র। কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের কাছে এসে অভিযোগ করেন, তার একজন পরিচিতের সঙ্গে প্রতারণা করে ৪৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয়ে ভুক্তভোগীর ছেলেকে অস্ট্রেলিয়া ও মেয়েকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক চক্র।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন আরও বলেন, প্রতারক দিদার সেনাবাহিনীর পোশাক পরে ভুক্তভোগী ইমামের বাসায় যেতেন। এই সময় তার সঙ্গে তাপসী রাবেয়া বসরি নামের এক তরুণীকে নিয়ে যেতেন। দিদারের ভাগ্নি বসরি নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেয়। এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা মূলত বিভিন্ন ব্যক্তিদের টার্গেট করে। এরপর জমি কেনার নামে পরিচিত হয়ে সখ্যতা গড়ে তুলত। সেনাবাহিনীর পোশাক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে তারা টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে আসছিল।
ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরির ক্ষেত্রে প্রতারক চক্রটি প্রথমে এডমিট কার্ড জাল করে। পরবর্তীতে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে প্রতারক চক্রের সরবরাহ করা এডমিটের রোল নম্বর না মেলায় আবারও নতুন করে এডমিট কার্ড বানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ভাইভাতেও একই ভাবে জাল এডমিট ও ভুয়া রেজাল্ট শিট দেওয়া হয়। তবে ইমামের মেয়েকে কোনো ধরনের পরীক্ষায় বসতে হয় নি। বিনা পরীক্ষায় চাকরি হয় কি ভাবে ভুক্তভোগীরা এমন প্রশ্ন করলে প্রতারক তাদের উত্তরে বলে, পরীক্ষা দেওয়া লাগে না। এটা সবই টাকা খেলা। টাকা দিচ্ছেন আর পরীক্ষায় পাস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জে এক পুলিশ সদস্যের পরিবারের এক সদস্যকে একই ভাবে চাকরি দেওয়ার নামে ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই ঘটনায় কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা চলমান রয়েছে। আমরা তাদের রিমান্ডে এনে প্রতারণার বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার দুই প্রতারকই উচ্চ শিক্ষত। গ্রেপ্তার দিদারুল অর্নাস পাশ। তার ভাগ্নি ও কথিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তপসী দেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত রয়েছে। তারা মামা-ভাগ্নি মিলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে।