প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪ ২০:১৬ পিএম
চীনে পড়তে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জড়াচ্ছে প্রতারণা চক্রে। চক্রের তিন বাংলাদেশি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। প্রবা ফটো
প্রতি বছরই উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশ থেকে চীনে পাড়ি জমায় অনেক শিক্ষার্থী। সেখানে যাওয়ার পর অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য চায়নিজ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরে দেশে ফিরে শুরু করে প্রতারণা। এমনই একটি চক্রের তিন বাংলাদেশি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, রাকিবুল ইসলাম রাতুল, আসাদুজ্জামান রাজু ও মামুন হাওলাদার। ডিএমপির কলাবাগান থানায় এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় গোয়েন্দা কার্যক্রম ও তদন্তের ভিত্তিতে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের একটি দল গত শুক্রবার ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩০টি ভারতীয় সিম জব্দ করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর
মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর
রশীদ এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য চীনে
যায়। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং চাইনিজ বিভিন্ন প্রতারক
চক্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য নিজেরাই
চীনাদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে জড়িয়ে পড়ে। এ চক্রের মূলহোতা চীনারা। বাংলাদেশের বিভিন্ন
জায়গায় চীনাদের প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে। তারা ভালো বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারে না। তখন
চীনে পড়তে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। চীনা ভাষায় পারদর্শী বাংলাদেশি
শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিভিন্ন প্রতারণার কাজটি করছে। অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের
লোভে ফেলে, অ্যাপ ও জুয়ার সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চীনারা। কারণ প্রত্যেকটি
প্রতারণার সাইটের এডমিন চীনে।
ডিবি বলছে, বাংলাদেশে ১০ থেকে
১২ হাজার চাইনিজ নাগরিক অবস্থান করছে। তাদের অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছে। দেশজুড়ে অবস্থান
করা এই চাইনিজরা পেতেছেন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ। বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা চীনে পড়তে
গিয়ে এই প্রতারক চক্রের মূল অস্ত্র হয়ে যাচ্ছে।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোপূর্বে
অ্যামাজন, দারাজ, ফ্লিপকার্ট, পিকাবোর মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নামে ভূয়া সাইট
খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই চীনা নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা
হয়েছিল। সেটির তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে এই চক্রের সন্ধান মেলে।
গ্রেপ্তার রাতুল, রাজু ও মামুন সম্পর্কে ডিবি প্রধান বলেন, তারা বাংলাদেশ থেকে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে চীনে গিয়ে চীনা ভাষা শিখে প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং সবাই তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট পারদর্শি হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে চীনারা কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে বলে জানায়। অ্যাপস ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তাদের সেই কার্যক্রমে কিছু বাংলাদেশি সিম, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়। এই কাজে যুক্ত হয় এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। প্রতারনার কাজে তারা ভারতীয় সিম ব্যবহার করেন। রাতুল, রাজু, মামুন অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং, অনলাইন ফাইন্যান্সিং, বেটিং সাইট, সি-ফাইন্যান্স, লোন অ্যাপস, হানিট্রাপেও সরাসরি জড়িত বলে জানান ডিবি প্রধান।