প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ২০:৫২ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ২১:১৫ পিএম
ছয় অস্ত্র কারবারিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ছবি : সংগৃহীত
ভারতের কলকাতায় ও আসামের শিলিগুড়িতে প্রায় ১২ বছর ধরে ভাস্কর্য-মূর্তি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর দেশে এসে তৈরি করেছেন অবৈধ অস্ত্র তৈরির চক্র। সোমবার (১১ মার্চ) মধ্য রাতে রাজধানীর বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরীদ উদ্দীন এ তথ্য জানান।
এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি পিস্তল, চার রাউন্ড কার্তুজ, পিস্তলের কাঠের সাতটি ফর্মা, ১০টি ফায়ারিং মেকানিজম, চারটি ট্রিগার, পিস্তলের দুটি হ্যান্ডগ্রিপসহ অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন—মো. মোখলেছুর রহমান সাগর, তার প্রধান সহযোগী মো. তানভির আহম্মেদ, অনিক হাসান, মো. আবু ইউসুফ সৈকত, রাজু হোসেন ও মো. আমির হোসেন।
মোহাম্মদ ফরীদ উদ্দীন বলেন, ‘সম্প্রতি র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী বেশ কিছু দিন ধরে অবৈধভাবে পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদককারবারি ও বিভিন্ন নাশকতাকারীর কাছে অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। অভিযানে প্রথমে অবৈধ অস্ত্র কারবারি চক্রটির মূল হোতা অস্ত্র তৈরির কারিগর মোখলেছুর রহমান সাগর ও তানভিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে র্যাব-১০-এর একটি আভিযানিক দল মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর বাড্ডা থানাধীন হাজী আব্দুল হামিদ রোডস্থ পূর্ব-পদরদিয়া এলাকায় আরেকটি অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও কারবারি চক্রের অপর চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার মোখলেছুর রহমান পেশায় ভাস্কর্য-মূর্তি তৈরির কারিগর ছিলেন। ভাস্কর্য-মূর্তি তৈরির দক্ষতার সুবাদে তিনি ভারতের কলকাতায় ও আসামের শিলিগুড়িতে প্রায় ১২ বছর ভাস্কর্য-মূর্তি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে সুকুমার নামে অস্ত্র তৈরির এক কারিগরের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সুকুমারের কাছ থেকে মোখলেছুর অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করেন। এরপর মোখলেছুর দেশে এসে অল্প দিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় অবৈধ অস্ত্র তৈরি করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরবরাহের পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ হিসেবে প্রথমে তিনি তানভির, অনিক ও সৈকতদের নিয়ে অস্ত্র তৈরি ও সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।’
ফরীদ উদ্দীন বলেন, ‘গ্রেপ্তার তানভির পেশায় একজন লেজার সিএনসি ডিজাইনার। লেজার সিএনসি ডিজাইনার হওয়ায় তিনি যেকোনো কিছু কম্পিউটারে টু-ডি নকশা অনুযায়ী অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাটিং করার দক্ষতা অর্জন করেন। এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তানভির মোখলেছুরের দেওয়া নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে অস্ত্র তৈরির প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। মোখলেছুর ও তানভির অস্ত্র তৈরি করে সেগুলো অনিক ও সৈকতের কাছে হস্তান্তর করতেন। পরে অনিক ও সৈকত এসব অস্ত্র বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করতেন। এক্ষেত্রে প্রতিটি পিস্তল-অস্ত্র তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। তারা সবাই স্বল্পসময়ে অধিক অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে এই ব্যবসার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার আমির ও রাজু তাদের অন্যতম অস্ত্রের ক্রেতা। আমির ও রাজু এসব অস্ত্র ক্রয় করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদককারবারি ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের কাছে বেশি মূল্যে বিক্রি করতেন। তারা উভয়ই অস্ত্র কেনার উদ্দেশ্যে অনিক ও সৈকতের কাছে আসেন এবং অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় করার সময় হাতেনাতে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।’