ফ্রিল্যান্সার শাওন হত্যা
সুবল বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:৪৫ পিএম
নিহত কলেজছাত্র শাওন বড়ুয়া। প্রবা ফটো
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের শীলঘাটা গ্রামের টিপু বড়ুয়া ও এপি বড়ুয়ার বড় সন্তান শাওন বড়ুয়া। আত্বীয়স্বজনদের ভাষ্যমতে, কর্মঠ শাওন ছোটবেলা থেকেই ধার্মিক। চট্টগ্রাম নগরীর এমইএস কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে শখের বশে শেখেন ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফি রপ্ত করে ‘ফ্রিলেন্সার’ হয়ে পেশা হিসেবে নেওয়াটাই কাল হলো তার। ফ্রিলেন্সার হিসেবে কন্ট্রাক্টে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে শাওনের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিল খুনিরা। গত সোমবার রাতে নগরীর অনন্যা আবাসিক এলাকায় শাওনের বুকে, পিটে ও মাথায় উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।
পুলিশ এখনো এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। তবে হত্যাকাণ্ডস্থল থেকে পুলিশ একটি হাতঘড়ি উদ্ধার করেছে। এখন পর্যন্ত এই হাতঘড়িই প্রধান আলামত হিসেবে পেয়েছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছাবেদ আলী। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে অনন্যা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের বিপরীত পাশে একটা নির্জন জায়গায় শাওনের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।’ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শাওনকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে সেটা অনেকটা নিশ্চিত জানিয়ে পরিদর্শক ছাবেদ আলী বলেন, ‘তার বুকে, পিঠে ও মাথায় একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। রাতের কোনো একসময় তাকে ছুরিকাঘাতে খুন করে ফেলে চলে গেছে খুনিরা। খুনিরা শাওনের পকেটে মোবাইল থাকলেও সেটা নিয়ে যায়নি। ঘটনাস্থলে দুটো হাতঘড়ি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটা শাওনের হতে পারে। অন্যটা খুনে জড়িত কারো হতে পারে। খুনিদের শনাক্তে সেই হাতঘড়ি নিয়ে আমরা তদন্তে নেমেছি। পাশাপাশি ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শাওনের বাবা একজন কাঠ ব্যবসায়ী। প্রায় সময় ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যাতায়াত করেন তিনি। আর মা গৃহিণী হওয়ায় গ্রামের বাড়ি শীলঘাটা থাকেন। দুই বোনের এক ভাই শাওন। শাওন পরিবারের বড় সন্তান। এইচএসসি পাস করার পর শাওন নগরীর এমইএস কলেজে বিএ পাস কোর্সে ভর্তি হন। থাকতেন বহদ্দারহাট এলাকায়। সেখানে থেকেই হাসান নামে এক ফটোগ্রাফি শিক্ষকের হাতে ফটোগ্রাফি শেখেন। প্রায় দুই বছর তার অধীনে থেকে বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেন ফটোগ্রাফি। এরই মধ্যে শাওন বিভিন্ন বিয়ে, গায়ে হলুদ ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ভিডিও ও ক্যামেরায় ছবি-ভিডিও তোলার কন্ট্রাক্ট নেন। বছর খানের মধ্যে শাওনের বেশকিছু পোগ্রাম কন্ট্রাক্ট চলে আসে। বেশ কিছু আয়ও করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় একটি কন্ট্রাক্ট ছিল। সেখানে যাওয়ার পথেই খুন হন শাওন।
শাওনের রুমমেট নোবেল বড়ুয়া প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘শাওনের নিজের ক্যামেরা ছিল না। তাই প্রোগ্রাম আসলে বন্ধুদের কাছ থেকে ক্যামেরা ভাড়া নিয়ে প্রোগ্রাম করে কিছু আয়রোজগার করতেন। সোমবার রাতে শিহাব নামে এক বন্ধুর ক্যামেরা নিয়ে তিনি প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য সন্ধ্যায় আমাদের বহদ্দারহাট বাসা থেকে বের হন। এরপর আমি আর কিছু জানি না। তবে এখন আমরা শিহাবের মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি।’
মর্গে আসা শাওনের কাকা তাপস বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের জানামতে শাওনের কোনো শত্রুত্র নেই। সে খুব ধার্মিক এবং কর্মঠ। কী কারণে শাওনকে এভাবে খুন করা হলো বুঝতেছি না।’ খুনি শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
মর্গে এসেছিলেন শাওনের মামা তপন বড়ুয়া ভুট্টো। তিনি বলেন, ‘আমার ভাগিনাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। তার সঙ্গে চলাফেরা করে কিংবা বন্ধুদের কাছ থেকে ভালোমতো জিজ্ঞেস করলে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হবে। আমরা খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার চাই।’ মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছাবেদ আলী। তিনি বলেন, ‘খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। একটু সময় দেন।’