প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৭ এএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৪৪ পিএম
শিক্ষক মুরাদের লাম্পট্য প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রবা ফটো
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজিমপুর শাখার শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন অভিযোগের পাল্লা আরও ভারি হচ্ছে। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত একাধিক ভিডিও এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশের হাতে, যেখানে মুরাদ হোসেন খেলার ছলে অশালীন ইঙ্গিত করছেন, মন্তব্য করছেন এবং শিক্ষার্থীদের শরীর স্পর্শ করছেন। আরও অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষকের ভাইসহ কিছু লোক স্কুলের আশপাশে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের চলাফেরার ছবি এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে শুক্রবার লালবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন একজন অভিভাবক। জিডিতে তিনি নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগও এনেছেন।
এদিকে এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি মুরাদ হোসের বিরুদ্ধে আগের অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে মুরাদ হোসেনকে প্রত্যাহার করে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে অনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গিয়াছে। শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এবং এ বিষয়ে বিধিমোতাবেক আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে অদ্য ২৪.০২.২০২৪ খ্রি. তারিখ থেকে অধ্যক্ষ কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো।’
‘ভিকারুননিসায় আরেক পরিমল’ শিরোনামে শুক্রবার প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। মুরাদ হোসেনকে অপসারণের পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
আরও পড়ুন: ভিকারুননিসার শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির সত্যতা মিলেছে
অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন শিক্ষক ন্যায়বিচারের জন্য সোচ্চার হলে অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী তাদের মুখ বন্ধ রাখতে চাপে রেখেছেন। তাদের ঢালাওভাবে বদলির হুমকি দিচ্ছেন। কয়েকজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে গালমন্দ করে চাকরিচ্যুত করার হুমকিও দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসেন স্কুলের অনেক অভিভাবক। তাদেরও নানাভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে মুরাদের পক্ষ নিতে। অনুরোধে কাজ না হওয়ায় একাধিক অভিভাবক হুমকিও পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
একজন অভিভাবক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, শিক্ষক মুরাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা আইনের দ্বারস্থ হবেন। আরও কয়েক অভিভাবক জানিয়েছেন, সকল ভুক্তভোগীর অভিভাবকরা একত্র হয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে শিগগির সিদ্ধান্তে আসবেন। কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি এবং অধ্যক্ষের ওপর আস্থা না পেয়ে তারা যোগাযোগ করেছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম বিপ্লবের সঙ্গে। তদন্ত কমিটি রবিবার প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হলে কমিশনার প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে অভিভাবকদের আশা।
একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, শিশুদের একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা, সামাজিক এবং পারিবারিক নানা চাপ এলেও এই শিক্ষকের মুখোশ উন্মোচনে পিছপা হবেন না তারা। ন্যায়বিচার পেতে সর্বসাধারণের সহযোগিতাও চেয়েছেন একাধিক অভিভাবক।
একাধিক অভিভাবক এবং ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। রবিবার দুপুর ১২টায় স্কুলের সামনে মানববন্ধন করবেন তারা। পরে বিকালে প্রেস ক্লাবের সামনে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
শুক্রবার গভীর রাতে ফেসবুকে লাইভ করেন শিক্ষক মুরাদ। ভিক্টিমদের বিরুদ্ধে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, টিউশন দ্বন্দ্ব এবং তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে শিক্ষকদের ষড়যন্ত্রে প্রভাবিত হয়ে তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন শিক্ষার্থীরা। লাইভে তিনি বিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের সদস্য শিক্ষক লাভলী ইয়াসমিন, খুরশীদ জাহান, কানিজ ফাতেমা ও তাদের পরিবারকে জড়িয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন।
ওই লাইভে তিনি বলেন, যৌন নিপীড়নের অভিযোগসহ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে এই মর্মে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন।