প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০১ এএম
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:২৬ পিএম
জমি দখল, লুটপাট, চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালত ও থানায় পৃথক ৬টি মামলা হয়েছে। একটি স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপ ও ভুক্তভোগীরা মামলাগুলো করেছেন। ভাটারা থানা, পিবিআই ও সিআইডি ৬টি মামলার তদন্ত শুরু করেছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (ল্যান্ড) নাজমুল আলম ভূঁইয়া, নির্বাহী পরিচালক (ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) মাহবুবুর রহমান তুহিন, হেড অব সিকিউরিটি মোহাম্মদ মাহবুবুল ওয়াদুদ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ লিয়াকত হোসেন, ৪৩ মামলার আসামি রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশা, তার ভাই আলী আজগর, চিহ্নিত সন্ত্রাসী আমির হামজা ও তার ভাই আব্বাস।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাড়িঘর, জমি, স্থাপনাসহ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ। শুধু দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি, ভূমিদস্যুদের সর্দার মাফিয়া ডন আহমেদ আকবর সোবহান ও তার ছেলে সায়েম সোবহান আনভীরের নির্দেশে পালিত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ওই শিল্প পরিবারটিকে বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা এসময় বাড়িতে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মূল্যবান দলিলপত্র, সই করা বিভিন্ন ব্যাংকের চেকের পাতাসহ প্রায় ২০-৩০ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এ ছাড়াও সন্ত্রাসীরা আই এক্সটেনশন ব্লকের ২২১৯/এ প্লটের ১৯০ কাঠা জমি, আই এক্সটেনশন ব্লকের ১১৩৬/টি প্লটের এক একর সাত শতাংশ, আই ব্লকের ১১ নম্বর সড়কের ৮৪৪/বি প্লটের ৩৮ দশমিক আট শতাংশ, ডি ব্লকের ৯ নম্বর সড়কের ৩৮৯ প্লট, জি ব্লকের আফরোজা বেগম সড়কের জি৩২৯ নম্বর প্লটটি দখল করে নিয়েছে। ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপ এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। ওই শিল্পগ্রুপটির প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় মেহেদী মার্টটি বন্ধ করে দিয়ে লুটপাট চালিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিসাধন করে। দখলকৃত জমি উদ্ধার ও নিজ বাড়িতে ফিরতে চাইলে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর উচ্ছেদ হওয়া শিল্পগ্রুপের কাছে ৫০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দখল করে নেওয়া প্লট, বাড়ি ও স্থাপনায় পাহারা বসিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। প্রতিদিন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে এসব সন্ত্রাসী মহড়া দিচ্ছে- যাতে করে কেউ দখল করে নেওয়া বাড়ি ও জমিতে যেতে না পারে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্দেশ্য হচ্ছে এসব সম্পত্তি আত্মসাৎ করা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে যারা বাড়ি বানিয়ে অবস্থান করছেন তারাও সারাক্ষণ ভয়ে থাকেন কখন পালিত সন্ত্রাসীদের হাতে তাদেরও উচ্ছেদের শিকার হতে হয়।
জালজালিয়াতির মাধ্যমে দীর্ঘ ২৭ বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এই গ্রুপটির বিরুদ্ধে শুধু মানুষের জমি দখল নয়, খাসজমি দখল, খাল ভরাট করে প্লট করে বিক্রি করে দেওয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দস্যুতা, নারী নির্যাতনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্লট কিনে কত মানুষ যে প্রতারিত হয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই। এক ব্লকের প্লট দেখিয়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ১০-১৫ লাখ টাকার প্লট নিতে বাধ্য করা, এক দাগের প্লট দিয়ে অন্য দাগ দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্লট কিনে সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছেন প্রবাসীরা। বেশিরভাগ প্রবাসী টাকা দিলেও ২০-২৫ বছরেও প্লট বুঝে পাননি।
বসুন্ধরার ভূমিদস্যুতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেও সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রবাসীরা। দিনের পর দিন মামলা হামলার ভয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের নানান জালিয়াতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা না বললেও এখন প্রতিকার চাইতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। নিজেদের হারানো সম্পদ ফিরে পেতে আইনি লড়াইয়ের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, সামনের দিনগুলোতে ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে তাদের জালজালিয়াতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মামলা করবেন।