× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজশাহীতে প্রকাশ্যেই চলে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান

রাজু আহমেদ, রাজশাহী

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:০০ পিএম

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:২৫ পিএম

হেলথ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রবা ফটো

হেলথ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রবা ফটো

রাজশাহী নগরীর ঘোষপাড়া মোড়ের কাছে পরিবার পরিকল্পনা অফিসের বিপরীতে দ্বিতল একটি বাসভবনের নিচতলায় হেলথ লাইন ডায়াগনস্টি সেন্টার। বছরের পর বছর প্রকাশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি চলছে অবৈধভাবে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান স্বত্বাধিকারী মো. সামিউল।

তিনি জানান, অনুমোদন না থাকার পরেও মো. শরিফুল ইসলামের কাছ থেকে তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি কিনে পরিচালনা করছেন। নগরীর লক্ষীপুর জিপিও পোস্ট অফিসের বিপরীতে মার্ডান ক্লিনিক, কৃষি ব্যাংকের ১০ তলা ভবনের বিপরীতে সেফ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠান দুটিও বছরের পর বছর চলছে অনুমোদন ছাড়াই। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত রাজশাহী সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্যের পরিচালকের কার্যালয়।  

স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্সে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের ব্যবসা করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাওয়া তথ্যমতে, রাজশাহীর ক্লিনিকপাড়া হিসেবে পরিচিত এক লক্ষীপুর এলাকাতেই প্রায় ২২টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় এই ধরণের অবৈধ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গুণে শেষ করা যাবে না। অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে থাকলেও স্থানীয় সিভিল সার্জন নাকি তাদের খুঁজেই পান না।

অভিযোগ পেলেই শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে স্বাস্থ্য বিভাগ। দু-একটি সিলগালা করা হলে, নাম পাল্টে আবারও চালু হয় একই ব্যবসা। রোগী ও স্বজনসহ বৈধ ব্যবসায়ীদের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি, অন্যান্য জেলার চেয়ে রাজশাহীতে অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের সংখ্যা কম।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক বছরের লাইসেন্স হাতে মেলে মেয়াদ শেষে। মেয়াদোত্তীর্ণ সেই লাইসেন্স হাতে পেতেই শুরু হয় পরের বছরের লাইসেন্সের কার্যক্রম। লক্ষীপুরে অবস্থিত ‘লিভ হেমাটোলজি সেন্টার’ এর প্রাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের লাইসেন্সটিতে দেখা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া রয়েছে ৩০ জুন ২০২৩, যার অনুমোদনের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২৩। অর্থৎ আবেদনকারী স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স পেয়েছেন মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের পর। সকল লাইসেন্সধারীর ক্ষেত্রেই একই চিত্র। এভাবে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগই দিচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় অনুমোদিত প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা মোট ২ হাজার ৮৩টি। এর মধ্যে ক্লিনিক ৭৭৭টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১ হাজার ২৯০টি এবং ব্লাড ব্যাংক রয়েছে ১৬টি।

রাজশাহী জেলায় প্রাইভেট ক্লিনিক ১২১টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২২৬টি এবং ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৪টি। বগুড়ায় ক্লিনিক ১৭২টি, ডায়াগনস্টিক ২১৭টি এবং ব্লাড ব্যাংক ৫টি। চঁপাইনবাবগঞ্জে ক্লিনিক ৬৫টি, ডায়াগনস্টিক ১০৬টি এবং ব্লাড ব্যাংক ১টি। জয়পুরহাটে ক্লিনিক ২৪টি, ডায়াগনস্টিক ৬০টি, নেই কোনো ব্লাড ব্যাংক। নওগাঁয় ক্লিনিক ৯০টি, ডায়াগনস্টিক ১৩৭টি এবং ব্লাড ব্যাংক ১টি। নাটোরে ক্লিনিক ৮১টি, ডায়াগনস্টিক ১৫১টি এবং ব্লাড ব্যাংক ২টি। পাবনায় ক্লিনিক ১২৪টি, ডায়াগনস্টিক ২১০টি, নেই ব্লাড ব্যাংক। সিরাজগঞ্জে ক্লিনিক ১০০টি, ডায়াগনস্টিক ১৮৩টি এবং ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ৩টি।

অনুমোদনহীন রাজশাহীর সেফ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যনেজার সোহেল কামাল বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে চলছে তাদের প্রতিষ্ঠানটি। স্বাস্থ্য বিভাগে নির্ধারিত ফি জমা দিলেও এখন পর্যন্ত লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। তবে তারা ঠিকই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সাধারণ সম্পাদক মুখলেছুর রহমান বলেন, লাইসেন্স প্রক্রিয়াটা খুবই জটিল। ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার করতে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। এমনকি লাইসেন্স পেতে যেসব শর্ত দেওয়া আছে তা মানাও সব ক্ষেত্রে সম্ভব না। যেমন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টির ভবনে আবাসিকভাবে বসবাস বা মার্কেট থাকা যাবে না। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান চলে ভাড়া বাড়িতে। বাড়িওয়ালা এই শর্ত মানে না। পরিবেশ অধিদপ্তর ও নারকোটিক্সের লাইসেন্স পেতেও বেগ পেতে হয়। তা ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স। এই অভিযোগ আমরা কার কাছে করবো?

ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ব্যবসায়ীদের এই নেতার দাবি, লাইসেন্স নিতে প্রতিটি দপ্তরে প্রতিটি পদে হতে হয়রানি করা হয়, সেই সঙ্গে দিতে হয় ঘুষ। ঘুষের পরিমাণটাও কম না। আর এই হয়রানি কমানো গেলে বৈধভাবে ব্যবসাসহ সেবার মান আরও বাড়নো যেত। এর জন্য প্রয়োজন লাইসেন্স প্রণয়নে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার এবং তদারকি।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুকের দাবি, অবৈধ ও অনুমোদনহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টির সেন্টারগুলো বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রায়েছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযানে বন্ধ এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন না পেয়ে অন্য নামে ব্যবসা শুরু করে। এসব ধরা কঠিন। তবে খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হয়। এমন ৬টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে। তবে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তাদের কাছে নাই বলে জানান তিনি।

অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টি এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া নিয়ে বৈধ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাজশাহী বিভাগের স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিচালক আনোয়ারুল কবীরকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনিয়ে আছেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা